শ্রীমদ্ভগবদগীতা হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান ধর্মগ্রন্থ। মহাভারত থেকে আমরা জানি, পুরাকালে কুরুক্ষেত্রে কুরু-পাণ্ডবদের মধ্যে এক ভীষন যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সেকালের অনেক রাজা অংশ নেন। কেউ পাণ্ডব পক্ষে, কেউ কৌরব পক্ষে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠির, ভীম ও অর্জুনাদী পাণ্ডব পক্ষের রথের সারথি হয়ে যুদ্ধে অংশে নিয়েছিলেন। তাঁর সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ ( দশ অক্ষৌহিনী সৈন্য) দুর্যোধনাদি কৌরব পক্ষে অংশ নিয়েছিল। যুদ্ধ যখন শুরু হবে, তখন দুপক্ষেই আপনজনদের দেখে মহাবীর অর্জুন খুব বিষন্ন হলেন। কাকে আঘাত করবেন? সবাই যে আপনজন! কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি লীলা। তিনি তাঁর প্রিয় সখা অর্জুনকে যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন তাই শ্রীমদ্ভগবদগীতা, সংক্ষেপে গীতা। মহভারতের ভীষ্ম পর্বের পঁচিশ অধ্যায় হতে বিয়াল্লিশ অধ্যায় পর্যন্ত আঠারটি অধ্যায়ই গীতা। মহাভারতের অংশ হয়েও গীতা একটি পৃথক ধর্মগ্রন্থর মর্যাদা পেয়েছে এবং হিন্দুদের ঘরে ঘরে পঠিত হচ্ছে। এ গ্রন্থে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শ্রীমুখনিঃসৃত ৫৭৫টি শ্লোক, অর্জুনের ৮৪টি, সঞ্জয়ের ৪০টি এবং ধৃতরাষ্ট্রের মাত্র ১টি শ্লোকসহ মোট ৭০০টি শ্লোক আছে। এই জন্য একে সপ্তশতীও বলা হয়। আঠারটি অধ্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে। যথা : বিষাদ যোগ, সাংখ্য যোগ, কর্মযোগ, জ্ঞান যোগ, সন্ন্যাস যোগ, ধ্যান যোগ, জ্ঞান-বিজ্ঞান যোগ, অক্ষরব্রহ্ম যোগ, রাজযোগ, বিভৃতি যোগ, বিশ্বরূপ দর্শন যোগ, ভক্তি যোগ, ক্ষেত্র ক্ষেত্রজ্ঞ যোগ, পুরুষোত্তম যোগ, দেবাসুর সম্পদ, বিভাগ যোগ, শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগ ও মোক্ষ যোগ। এর মধ্যে পণ্ডিতগণ যে তিনটি অধ্যায়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সে অধ্যায় তিনটি হল : “কর্মই” ধর্ম। তুমি ক্ষত্রিয়, যুদ্ধ করাই তোমার ধর্ম। আসক্তিহীনভাবে যুদ্ধ কর তাহলে তার একটি সুফল অবশ্যই পাবে। তাই ভগবান বলেছেন,
“র্ম তব অধিকার কর্মফলে নয়, ফল আশা ত্যাগ কর, কর্ম যেন রয়” ( ২য় অধ্যায়, ৪৭ নং শ্লোক)
তাই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন, “ এখন যুদ্ধের মাঠে যুদ্ধ করাই তোমার কর্ম। তুমি যুদ্ধ ত্যাগ করে যে-সব মত কথা বলছ তাতে তোমার ধর্ম নষ্ট হবে। স্ব স্ব বৈশিষ্ট অনুসারে কর্ম সম্পাদান করাই ধর্ম।
ভগবান সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে কর্ম সম্পাদনাকে কর্মযোগ বলেছেন। কর্মে সিদ্ধি লাভ হলেই জ্ঞানের উদয়। জ্ঞান যখনই পরিপূর্ণতায় আসে তখনই আসে ভক্তি। ভক্তির ঊদয় হলে তখনই নিজের বলে আর কিছু থাকে না। ভক্তের দৃষ্টিতে এই বিশ্বের সব কিছুরই মধ্যেই ঈশ্বর রূপ মনে হয়। তিনি রথী, আমি রথ। এই ভক্তিসহ আমাদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অনেক উপদেশ গীতায় রয়েছে। এজন্য গীতা আমাদের নিত্য পাঠ্যপুস্তক। গীতা সমস্ত উপনিষদের সার। যিনি প্রতিদিন ভক্তিযুক্ত হয়ে গীতা এক অধ্যায় পাঠ করেন, তিনি বেদ পুরাণাদী পাঠের সমস্ত ফললাভ করেন। যিনি গীতা পাঠের পর গীতা মাহাত্ম্য পাঠ করেন তিনি পূণ্য লাভ করেন।