সকল হিন্দু ধর্ম মতালম্বীমাত্রই জানেন ওঁ শব্দটি একটি বিশেষ মাহাত্ব্য রাখে। এর মানে বলতে আমরা সবাই জানি ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর(শিব)। তবে এর উচ্চারণ নিয়ে আমরা প্রায়শই ধাধায় পরি। একটি মন্ত্র যদি সঠিকভাবে উচ্চারিত না হয় তবে যে উদ্দেশ্যে মন্ত্র পড়া হয় তার কিছুই হয়না। শুধু শুধু পাখির মত বুলি বলে গেলে মন্ত্র হয়না। আমরা অনেককেই দেখি হাতে ঝোলা, বস্তা নিয়ে হাঁটছে, কথা বলছে আর মন্ত্র জপ করছে, সেই মন্ত্র শুধু লোক দেখানো ও নিজের মনকে প্রশান্তির জন্যই কাজে দিতে পারে । কিন্তু আধ্যাত্বিক কোন কাজে সেই মন্ত্রের কোনপ্রকার লাভ নাই। আজকে প্রণব মন্ত্র যথা ওঁ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।
প্রথমত এর লিখনভঙ্গি নিয়ে একটু কথা না বললেই নয়। অনেক যায়গায় ই দেখা যায় ঔঁ লিখতে আবার কোথাও ওঁ লিখা হয়। এটা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। দুইটাই ঠিক, তবে সংস্কৃত ভাষায় লিখা হয় ঔঁ আর বাংলা ভাষায় লিখতে হলে লিখতে হয় ওঁ। তাই আমার মনে হয় আমাদের বাঙালিদের ওঁ ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা ওঁ ব্যাবহার করি তবে এর ব্যাতিক্রম ও দেখি। এবার মূল আলোচনায় আসি। অ-উ-ম এই তিনটি শব্দ নিয়ে ওঁ শব্দ হয়েছে। ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু, ও শিবাত্মম এই তিনটি অক্ষর- সত্ত্ব, রজ: ও তমোগুণের ব্যক্ত বীজ। সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিতেরা উদারা, মুদারা, তার, স্বরের এই তিনটি বিভাগ করেছেন। ওঁ এই শব্দটি উচ্চারণ করতে যে স্বর ঝঙ্কারটি উত্থিত হবে, তার মধ্যে ঐ তিনটি বিভাগ থাকবে। এবং জীবের অবস্থান স্থল ষড়দল কমল(ষট চক্র) হইতেই প্রথমে স্বরের উৎপত্তি হইবে। তারপরে অনাহত পদ্মে (বুকে)প্রতিধ্বনি করিয়া সহস্রারে (মাথার চাঁদিতে) হইবে, এমন ভাবে একটানে স্বরটি চালিত করতে হবে। চীৎকার করে বললেই যে এমন হবে তা নয়। মনে মনে বলিলেও ঠিক এরুপ স্বর কম্পন করা যায়। সংসারে কাজ করিতে করিতেও ঐ ধ্যানে, ঐ জ্ঞানে নিমগ্ন থাকা যায়। সর্বদা প্রণবের (ওঁ) অর্থধ্যান ও প্রণব জপ করিলে সাধকের চিত্ত নির্মল হয়। তখন প্রত্যেক চৈতন্য অর্থাৎ শরীরার্ন্তগত আত্মা সম্বন্ধীয় যথার্থ জ্ঞন উৎপন্ন হয়। ঈশ্বরের সহিত উপাসনার যে সঙ্কেত ভাব অর্থাৎ ওঁ বলিলে ঈশ্বরের স্বরুপ সাধকহৃদয়ে সমুদিত হয়। কেন হয়, তাহা বড় জটিল ও কঠিন সমস্যা। তবে ইহা নিশ্চিত যে প্রণব (ওঁ) ঈশ্বরের অতি ঘনিষ্ঠ অভিদেয় সম্বন্ধ। ওঁ জপের সহজ নিয়ম প্রথম প্রথম একটি আসনে বসে (যে আসনে বসে সাধক স্বস্তি লাভ করবেন) শুদ্ধ মনে অ......উ....ম..... এভাবে উচ্চারন করতে হবে। চোখ বন্ধ থাকবে, মেরুদন্ড সোজা। এবার কল্পনা পালা, উচ্চারন করতে করতে সামনের সব কিছু অন্ধকার হয়ে যাবে। প্রতিবার উচ্চারনে সামনের সর্বত্র অন্ধাকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে। ঘন থেকে ঘনতর। অমানিশার রাতের চেয়েও আধার হবে। চারদিকের সব শব্দ নিস্তব্ধ হয়ে যাবে। সমগ্র পৃথিবীতে শুধু একটি মাত্র শব্দই ধ্বনিত হবে অ....উ....ম...। ধীরে ধীরে সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে অস্পষ্ট আকারে একটি ওঁ ভেসে উঠবে, মন্ত্রের তালে তালে ধীরে ধীরে সেই ওঁ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হবে। একসময় সম্পূর্ণ ওঁ দৃষ্টিগোচর হবে এরপরে তার মাঝে নিজ নিজ ইষ্টদেবতার রুপ দর্শন করতে হবে। যদি কেউ শিব ভক্ত থাকে তবে কল্পনা করতে হবে ওঁ এর মাঝে সুন্দর শিবমূর্তি, তিনি সদা হাস্যময়, তিনিই একমাত্র এই পৃথিবীর ঈশ্বর। এই পৃথিবী তার মাঝেই সমাহিত। ধীরে ধীরে সেই ইষ্টদেবতা ও ওঁ সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে ওঠবে। এভাবে যে যতক্ষণ করতে পারে অভ্যাস করতে হবে। যেহেতু আমাদের মন চঞ্চল তাই এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আমাদের মাঝে চাইলেই একবারে সম্ভব না। তবু ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে করতে একসময় অবশ্যই সম্ভব হবে। ওঁ মন্ত্রটি অনেক শক্তিশালী একটা মন্ত্র তবে এই মন্ত্র ঠিকমত কিছুদিন উচ্চারন ও জপ করতে পারলে সাধক মন্ত্রের মর্মার্থ বুঝতে পারবে। হিন্দু শাস্ত্র নিয়ে যাদের মনে সংশয় আছে তারা এর মাহাত্ব্য অচিরেই বুঝতে পারবে। যদিও মন্ত্র উচ্চারনের আরো কিছু ধাপ আছে তবে আমার মনে হয় প্রাথমিক পর্যায়ে এটুকুই যথেষ্ট। কেননা প্রকৃত ধারনা না থাকলে পরবর্তী কার্য সম্পাদন করতে গেলে সাধককে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হবে। তবে অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কারণে রাস্তাঘাটে অলস সময় কাটাই তখন ও যদি মনে মনে ওঁ জপ করতে পারি, তবে অশেষ উন্নতি হবে নিজের আধ্যাত্বিক জীবনের ও মানসিক, শারিরীক উভয় ক্ষেত্রেই। *** উপরের জপের নিয়ম আমি নিজ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানবলে লিখলাম যদি সেখানে কেউ ভুল পান তবে অবশ্যই জানাবেন। আমি সেখানে ধ্যান এর সাথে মন্ত্র জপের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করেছি। এবং এটা অনেক দ্রুত কাজ করে। ধন্যবাদ সবাইকে।
মন্ত্র টাকে আত্মস্থ করতে হয়। শরীর মন দিয়ে একসাথে এর ঝংকার টা অনুভব করতে হয়। তবেই সত্যিকার ভাবে মন্ত্র উচ্চারিত হয়। আমি আগে হিসাব করতাম এক মিনিটে কত বেশি বার উচ্চারন করতে পারি। কিন্তু পরে ভুল টা বুঝতে পারি।