হিন্দুপেইজ প্রতিবেদকঃ গত ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রামের সদরঘাটের শ্রী শ্রী
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির প্রাঙ্গনে সর্বস্তরের সনাতনী ধর্মপ্রাণ নরনারীর
উৎসাহ ও সহযোগিতায় সনাতনী সমাজের চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে ও ধর্ম চর্চ্চার
প্রত্যয়ে সদরঘাট শ্রীশ্রী গীতা সংঘের যাত্রা শুরু হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে
প্রতি শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সনাতনী সমাজের কচিকাঁচা
ধর্মপ্রাণ প্রায় ৩০০ ছাত্র-ছাত্রীদের বিনাবেতনে শ্রীমদ্ভগবদ গীতা শিক্ষা ও
সন্ধ্যায় কালী মায়ের আরতির পর প্রায় ৫০০/৬০০ ভক্তের সমস্বরে গীতাপাঠ ও
ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় নয়, বরঞ্চ এলাকার সনাতন ধর্মপ্রাণ
গরীব দুঃখী জনের সুখ দুঃখে পাশে থাকার মানসিকতায় এই গীতা সংঘের কার্যক্রম।
এই গীতার সংঘ আয়োজিত ধর্ম আলোচনায় দেশ বিদেশ হতে আগত বহু ধর্মীয় মনিষী,
সন্ন্যাসী, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদ অংশগ্রহণ করে গীতা
সংঘকে করে আলোকিত ও প্রসিদ্ধ। সদরঘাট শ্রীশ্রী গীতা সংঘের প্রাপ্তিও কম
নয়, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম কর্তৃক আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলা ভিত্তিক বার্ষিক গীতা
প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকার করণ সহ বিগত ৯ বছর যাবৎ বিভিন্ন পুরুস্কার এই
সংঘের ছাত্রছাত্রীদের বিরাট অর্জন। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ
করে স্বর্ণপদক সহ বহু পুরস্কার প্রাপ্তিও রয়েছে তাদের প্রাপ্তির থলিতে। এত
প্রাপ্তির পরও গত ৩০শে এপ্রিল শুক্রবার সকালে সিডিএ কর্তৃক রাস্তা প্রশস্ত
করার জন্য কালী মন্দিরের সামনেস্থিত দোকানের কিছু অংশ ভেঙ্গে দেওয়ার পর,
অদৃশ্য শক্তির নির্দেশে ও তাদের কালো থাবা আরো করুন রূপ ধারণ করে গীতা
সংঘকে মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক গীতা সংঘের কর্মকর্তা ও ছাত্রছাত্রী ও ভক্তবৃন্দ থেকে জানা যায়
সদরঘাট কালী বাড়ির সেবায়েতবৃন্দ ও তাদের সন্তানদের কয়েকজন গীতা শিক্ষা
ক্লাস ও গীতা বিষয়ক ধর্মীয় অনুষ্ঠান কালীবাড়ির প্রাঙ্গন থেকে উচ্ছেদ করার
ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। গীতা সংঘ যাতে শুক্রবার ক্লাস ও গীতা বিষয়ক ধর্মীয়
অনুষ্ঠান কালীবাড়ীর প্রাঙ্গণে করতে না পারে তার জন্য কালী মন্দিরের নাচ
খানার মাঝখানে এবং আশেপাশের জায়গা লোহা লক্কর, ইট, বালি, গাছ ইত্যাদি ছড়ানো
ছিটানো অবস্থায় রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। গীতা সংঘের
ছাত্রছাত্রীদের গীতা শিক্ষা ও ধর্মীয় আলোচনা থেকে বিরত থাকার জন্য সদরঘাট
কালী বাড়ির সেবায়েতবৃন্দ ও তাদের সন্তানেরা ছাত্রছাত্রীদের কালীবাড়ি
প্রাঙ্গণ থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের উপস্থিতিতে মধ্যস্থতা হয় যে,
গত ১৪ই মে থেকে গীতা সংঘের কার্যক্রম যথারীতি সদরঘাট কালী মন্দির প্রাঙ্গণে
চলিবে। কিন্তু গত ১৪ই মে শুক্রবার দেখা যায় কালী মন্দিরের সেবায়েতবৃন্দ
গীতা ক্লাস ও অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য একই সময়ে মন্দিরে অন্য একটি ধর্মীয়
অনুষ্ঠান চালু করে যা তারা পূর্বে কখনও করে নাই। পরবর্তী ২১শে মে শুক্রবারও
একই অনুষ্ঠান কালী মন্দিরে চালু রাখে যাতে গীতা সংঘের কার্যক্রম চলতে না
পারে। গীতা সংঘের কার্যক্রম বন্ধ করার পিছনে সদরঘাট কালী বাড়ির
সেবায়েতবৃন্দ ও তাদের সন্তানদের মন্দিরকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি হিসেব দাবী
করাকে বিশেষ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় কোতয়ালী
থানায় গত ১১ই মে গীতা সংঘের কর্মকর্তা ও ভক্তদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত
করে তাদের নামে সাধারণ ডায়েরী করা হয়। বর্তমানে বিগত ১২ বছরের
সুপ্রতিষ্ঠিত একটি ধর্মীয় সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সদরঘাট গীতা
সংঘের এ করুন কাহিনী হয়তো অনেকের জানা। এর একটি সুষ্ঠু সমাধান আশা করেন
সনাতন সমাজের প্রতিটি সদস্য। শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থে ধর্মীয় স্থানকে
ব্যবহার করে ব্যক্তির আর্থিক উন্নতিকরন নিশ্চয়ই এই আধুনিক সমাজে কাম্য হতে
পারেনা। গীতা সংঘ যদি কোন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ভিন্ন অন্য কোন সংঘটন হলে
হয়তো কারো মাথা ব্যথা হতো না। সার্বজনীন একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থানেই তো
গীতা শিক্ষার মতো কার্যক্রম চলতে পারে। সমাজ সহ এই সরকারের উধর্ক্ষতন
মহল যদি এ বিষয়ে এগিয়ে আসে তবেই হয়তো এই মহাসমস্যার সমাধান হতে পারে অথবা
শ্রীশ্রী কালী মাতার কৃপায় যদি মন্দিরের সেবায়েত ও অন্যান্যদের মনে এতটুকু
বোধদয় হয় তবেই হয়তো এই করুন কাহিনীর সফল ইতি ঘটতে পারে।