ইসলাম গ্রহণ করেও স্বামীর ঘরে ঠাঁই হচ্ছে না ঋষিকন্যার
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার পল্লীতে সিঁথির সিঁদুর মুছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ
করার পর মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করেও স্বামীর বাড়িতে ঠাই হল না ৭ মাসের
অন্তঃসত্ত্বা ঋষি সম্প্রদায়ের এক নব-মুসলিমের। জোর পূর্বক তার গর্ভের
সন্তান নষ্ট করার জন্য হাত-পা বেঁধে প্রতিনিয়ত চালানো হচ্ছে মধ্যযুগীয়
নির্যাতন। ফলে অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধু তার গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের
দাবিতে এলাকার সমাজপতিদের দারে দারে ঘুরছেন। চাঞ্চল্যকর এঘটনাটি ঘটেছে
খেদাপাড়া গ্রামের ঋষি পল্লীতে। মেয়ের পরিবার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা
যায়, ওই গ্রামের রবিন কুমার দাসের একমাত্র মেয়ে কমলা রানী দাসকে কয়েক বছর
পূর্বে ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামে বিয়ে দেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে
আসে সুমন নামের এক পুত্র সন্তান। সন্তান আর স্বামী ওয়াসিমকে নিয়ে ভালই
কাটছিল তাদের সংসার। হঠাৎ কমলার ছেলে সুমন (৬)লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
এরপর ২০০৯ সালে তিনি ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন বাবার বাড়িতে। খবর
পেয়ে চিকিৎসা দিতে হাজির হন খেদাপাড়া গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে গ্রাম্য
ডাক্তার দুই সন্তানের জনক আলমগীর হোসেন। তিনি ছেলের বিভিন্ন রোগের কথা বলে
সহজে বস করে ফেলেন সুন্দরী কমলাকে। দেখতে অনেকটা কমলার মত হওয়ায় কু নজর পড়ে
লম্পট আলমগীরের। হুমকি ধামকি দিয়ে জোর পূর্বক প্রেমের ফাঁদে ফেলে কৌশলে
তাকে দিয়ে তালাক করান সাবেক স্বামী ওয়াসিমকে। পূর্বের স্বামী তালাকের পর
আলমগীরের বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে কমলা ২০১০সালের ২৬মে যশোর নোটারি পাবলিক
কার্যালয়ে হাজির হয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে। মুসলমান
ধর্ম গ্রহনের সময় তার নাম রাখা হয় সুরাইয়া আক্তার সাথী। এর তিন দিন পর ওই
বছরের ২৯ মে আলমগীর মুসলিম শরিয়াত মোতাবেক সুরাইয়া আক্তার সাথীকে ৫০হাজার
টাকা দেনমহর ধার্যকরে বিয়ে করেন। বিয়েরপর আলমগীর তাকে প্রথমে যশোরের
খোলাডাঙ্গায় একটি বাসা ভাড়া করে রাখে। পরে সেখান থেকে বাসা পরিবর্তন করে
রায়পাড়ায় বাসা ভাড়া নেয় আলমগীর। নব-বিবাহিত স্ত্রীকে সেখানে রেখে পালিয়ে
যায় আলমগীর। দীর্ঘদিন স্বামীর কোন খোঁজ খবর না পেয়ে সুরাইয়া আক্তার সাথী,
কমলা হয়ে আবারও ফিরে আসেন বাবার বাড়ি খেদাপাড়া গ্রামে। গ্রামে এসেই সে
আলমগীরের সন্ধান পায়। এরপর গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে আলমগীরের সাথে
সুরাইয়া আক্তার সাথীর কয়েকদফা কথাকাটাকাটি হয়। কথাকাটাকাটির একপর্যায়
আলমগীর সুরাইয়া আক্তার সাথীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে হবে বলে হুমকি দেয়।
গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় তাকে প্রতিনিয়ত হাত-পা বেঁধে
চালানো হচ্ছে মধ্যযুগীয় নির্যাতন। এছাড়া এই বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি
করলে সুরাইয়া আক্তার সাথীসহ তাদের পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি
দেয়। স্বামীর অব্যাহত হুমকিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে সুরাইয়া আক্তার সাথী। কোন
উপায় না পেয়ে হুমকির পর সে গ্রামবাসিকে আলমগীরের বিষয়টি জানায়। এরপর
গ্রামবাসি বহুবার উদ্দ্যোগ নিয়েও কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি সুরাইয়া আক্তার
সাথীর। ওই গ্রামের ইউপি সদস্য নীলরতন দাসসহ এলাকাবাসি জানান, বর্তমানে
গ্রাম্য ডাক্তার আলমগীর এমন নাটক করছে যেন কমলাকে চেনেই না। সবকিছু হারিয়ে
হতাশ সুরাইয়া আক্তার সাথী গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয়সহ প্রতারক স্বামীর
কঠোর বিচারের দাবিতে এলাকার সমাজপতিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। এব্যাপারে কথা
হয় খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের সাথে। তিনি জানান, বিষয়টি তাকে
কেউ এখনও জানায়নি। তবে অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কথা হয় থানার ওসি
ছয়রুদ্দি আহম্মেদের সাথে তিনি জানান, থানায় অভিযোগ দেয়ার সাথে সাথে তিনি
কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। এব্যাপারে খেদাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুজাহিদ
হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন এ বিষয়ে তাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগ
দেয়নি। এব্যাপারে কথা হয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির
প্রোগ্রাম অফিসার এ,বি,এম মহিদ হোসেনের সাথে তিনি জানান, তারা সংবাদ পেয়ে
ঘটনাস্থলে এসেছে এবং অসহায় সুরাইয়া আক্তার সাথীর নির্যাতনের কথা শুনে হতবাক
হয়ে গেছেন। কথা হয় স্বামী ডাক্তার আলমগীরের সাথে তিনি ঘটনার সত্যতা
স্বীকার করে বলেন, ভাই বোঝেনতো আমি ডাক্তারি করি তাই বিষয়টি পত্রিকায় লেখার
দরকার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তান
থাকায় তাকে ঘরে তুলতে অনেকটা সমস্যা হচ্ছে।
আলমগীরের তো অবশ্যই দোষ আছে। কিন্তু মেয়ের দোষটা ও একবারে কমনা। এসকল মেয়ে খুব সহজেই অন্যের প্রলোভনে ভুলে প্রতারনার শিকার হয়। এত সকল ঘটনা দেখার পরেও এদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়না। আশা করি এ সকল সহজ সরল মেয়েদের শুভ জ্ঞানবুদ্ধির উদয় হবে।