স্বর্গের দেবতাদের ক্ষমতাই শুধু বোঝা যায়। তারা মর্ত্যলোকে বা পৃথিবীতে আসেন না। যেমন- সূর্য, যম, বরুণ প্রভৃতি।
খ. অন্তরীক্ষের দেবতা অন্তরীক্ষের দেবতারা মর্ত্যে আসেন কিন্তু থাকেন না। যেমন- ইন্দ্র, বায়ু ইত্যাদী। ইন্দ্র বৃষ্টি ও শিশিরের দেবতা।
গ. মর্ত্যের দেবতা
মর্ত্যের বা পৃথিবীর দেবতারা আসেন, থাকেন এবং আমরা তাদের দেখতে পাই। যেমন- অগ্নি। অগ্নিকে আমরা দেখতে পাই। অগ্নি পৃথিবীতে অবস্থান করেন। অগ্নি দেব পৃথিবীতে অবস্থান করেন বলে অগ্নি প্রজ্বলিত করে সেই অগ্নিতে ঘৃত, পিঠা, পায়েস, মাংস প্রভৃতি ভাল ভাল জিনিস উৎসর্গ করে অগ্নির মাধ্যমে অন্য দেবতাদের আহবান জানানো হয়। অগ্নির মাধ্যমে আহুত আমাদের দেওয়া দ্রব্যাদি দেবতাদের কাছে পৌছে যায়। এই যে অগ্নি প্রজ্বলিত করে, বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করে দেবতাদের আহবান জানানো, শ্রদ্ধা জানানো, তাদের কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করা, একে বলে যজ্ঞভ বৈদিক যুগের উপাসনা ছিল এই যজ্ঞভিত্তিক। আমরা জানি বৈদিক দেবতাদের কোন বিগ্রহ বা মূর্তি ছিল না। তবে বৈদিক মন্ত্রে দেবতাদের রূপ ও ক্ষমতার বর্ণনা আছে। বেদে অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র, বিষ্ণু, বায়ু, সোম, বরুণ, রুদ্র, যম, প্রভৃতি দেব, ঊষা, বাক সরস্বতী প্রভৃতি দেবীর বর্ণনা পাওয়া যায়। নিম্নে সংক্ষেপে বৈদিক বেতা অগ্নি দেব এবং ঊষা দেবীর পরিচয় দেওয়া হল।
অগ্নি ঋগ্বেদে বর্ণিত প্রধান দেবতাদের মধ্যে অগ্নি অন্যতম। অগ্নিকে দেবতাদের মুখ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ অগ্নি মুখে দেবতাগণ ভোজন করেন। এর অর্থ হল, অগ্নির মাধ্যমে দেবতাদের কাছে দ্রব্যাদি উৎসর্গ করা হয়। অগ্নিকে অন্যান্য বৈদিক দেবতাদের দূত বলা হয়েছে। কারণ তিনি দেবতাদের কাছে যজ্ঞকারীর প্রদত্ত দ্রব্য পৌছে দেন। অগ্নিই যজ্ঞের অবলম্বন। অগ্নিকে যজ্ঞকারী পুরোহিত বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।
ঊষা
বেদে দেবদের চেয়ে দেবীদের সংখ্যা কম। এদের মধ্যে ঊষা প্রধান। সূর্যোদয়ের ঠিব পূর্ব মুহুর্তে আকাশে যে মনোমুগ্ধকর অরুণ বর্ণ দেখা যায়, তাকেই বলা হয় ঊষা।
উষা দেবী রাতের অন্ধকার দূর করেন। তিনি আলোকোজ্জল জগতের সন্ধান দেন। তার আগমনে জীভজগৎ কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে।
পৌরাণিক দেবদেবী
পুরানে যে সকল দেবতাদের কথা বলা হয়েছে, তারা পৌরাণিক দেবতা। পৌরাণিক যুগে দেব-দেবীর প্রতিমা বা বিগ্রহ নির্মান করে পূজো করার প্রথা প্রচলিত হয়। এ – যুগে পৌরাণিক দেব-দেবীর মধ্যে অনেকের রূপেরও পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক নতুন দেবদেবীরও আবির্ভাব ঘটেছে। মন্ত্রে যে ভাবে দেব-দেবীর বর্ণনা করা হয়েছে, সেভাবে তাদের মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। পৌরাণিক যুগে মন্দির নির্মান করে তাতে দেব-দেবীর প্রতিমা স্থাপন করে পূজা করার পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে। পত্র-পুষ্পের অঞ্জলী দিয়ে নৈবদ্য বা ভোগ দিয়ে বাজনা বাজিয়ে ঘটা করে পৌরাণিক দেবদেবীর পূজা করা হয়।
কোন কোন দেব-দেবীর পূজা প্রতিদিনই করা হয়। যেমন, শিব, লক্ষ্মী প্রভৃতী। আবার কোন কোন দেব-দেবীর পূজা বিশেষ তিথিতে করা হয়। যেমন- ব্রহ্মা, দূর্গা, কার্তিক, সরস্বতী প্রভৃতি। অবশ্য প্রতিদিন যে-সকল দেব-দেবীর পূজা করা হয়, বিশেষ বিশেষ তিথিতেও তাদের অনেকের পূজা করা হয়। যেমন- বিষ্ণ বা নারায়ণ, গণেশ, শিব সহ আরোও পাঁচ জন দেবতা।