দুর্গোৎসবের দুই দিন আগেও প্রতিমা ভাঙচুর ক্ষোভ ও আতঙ্ক
আর মাত্র একদিন পরেই শুরু হচ্ছে_ হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। কিন্তু প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে পূজাম-পে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা। গতকাল ভোর রাতেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে অভিযোগ করছেন ম-পগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা না থাকায় একের পর এক প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। তারা অবিলম্বে রাজধানীসহ দেশের সব প্রতিমা ও পূজাম-পের নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার গোপিনাথপুর গ্রামে সুধীর সরকারের সর্বজনীন পূজাম-পে এ প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা ম-পের ভেতরে রাখা দুর্গাপ্রতিমার মুখম-ল, লক্ষ্মী, কার্তিক, সরস্বতী ও রাজা হরিষচন্দ্রের প্রতিমার মাথা ও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ম-পের মধ্যেই ফেলে রাখে। রাজশাহীর তানোরে পৌরএলাকার সমাসপুর হরিমন্দিরে প্রতিমা তৈরির শেষদিকে গতকাল দিবাগত রাতে কে বা কারা ওই মন্দিরের ৬টি প্রতিমার মধ্যে দুর্গা ও গণেশের মূর্তি বাদে মোট ৪টি মূর্তি ভাঙচুর করে। দিনাজপুরের বিরলে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিরলের ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন দুর্গা মন্দিরের নির্মাণাধীন প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। ঝালকাঠি সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে একটি ম-পে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। মাগুরা সদর উপজেলার আঙ্গারদা গ্রামের গজেন্দ্রনাথের কালিতলা মন্দির ও তার পার্শ্ববর্তী আরেকটি মন্দিরে বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার কয়লাবাড়ি গ্রামের দুর্গামন্দিরে লক্ষ্মী ও দুর্গা প্রতিমার মাথা, দুর্গা প্রতিমার ৪টি ও অসুরের হাতসহ মাথা ও সর্প প্রতিমা ভেঙে ফেলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ বাণিজ্যিক এলাকায় মন্দিরে নির্মাণাধীন কয়েকটি প্রতিমার অংশ উচ্ছৃঙ্খল যুবকেরা ভাঙচুর করেছে। খুলনার আর্য ধর্মসভা মন্দিরে নির্মাণাধীন সাহেবের কবরখানা পূজা কমিটির ৩টি মূর্তির হাত ও মুখ রাতের অাঁধারে দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর করেছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সংবাদ'কে বলেন, দুর্গোৎসবের আর মাত্র একদিন বাকি। এখনো প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এটা সত্যিই অনেক দুঃখের। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এখন নতুন করে প্রতিমা তৈরি করাও সম্ভব না। পুলিশ প্রশাসনকে আরও কঠোরভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন এবং জনগণের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। ওইসব এলাকার জনগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপন করতে পারে সেই দিকটিও পুলিশ প্রশাসনকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল চন্দ্র ঘোষ বলেন, দুর্বৃত্তদের কোন দল হয় না। তারা কেবল দেশের অরাজকতাই তৈরি করতে পারে। অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এদিকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সিরাজগঞ্জ গোপীনাথপুর গ্রামে সুধীর সরকার সর্বজনীন পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আরও এক জামায়াত নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক রফিকুল্লাহ খন্দকার (৪৫) বেলকুচি উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
শুক্রবার রাতে পুলিশ তার বাড়ি থেকে আটক করে। এর আগে সকালে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ গোপীনাথপুর গ্রাম থেকে জামায়াত কর্মী সোহরাব আলীকে আটক করে।
এনায়েতপুর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. মাসুদ আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আটক জামায়াতের ২ নেতাকর্মীকে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঝালকাঠির গাভা রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন একটি পূজামণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে গতকাল সকালে পুলিশ ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঝালকাঠি থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, বৃহস্পতিবার ওই মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি ও রং করার কাজ সম্পন্ন হয়। গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা মণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করে চলে যায়। এ ব্যাপারে মণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।