Main » 2011»June»23 » কর্মযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও ছোট একটা গল্প
Added by: পদ্মফুল
11:10 PM
কর্মযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও ছোট একটা গল্প
কর্ম মানে কাজ। ইংরেজীতে একটা কথা আছে There is no sentence without verb, তাই দেখা যাচ্ছে যদি কাজ ছাড়া সামান্য একটি বাক্য না হয় তাহলে আমাদের জীবনে কাজের ভুমিকা বিশাল। আমরা প্রতিটি ক্ষণে কোন না কোন কাজ করে যাচ্ছি। হয়তোবা বসে আছি বা ঘুমিয়ে আছি তবুও কিন্তু মস্তিষ্ক বসে নেই, কাজ করেই চলছে। এখন আসি ধর্মের কথায়, ধর্ম বলছে জীব মাত্রেই তার কর্মের জন্য কর্মফল ভোগ করতে হবে। কিন্তু ধর্মে যেমন আছে সামন্য মিথ্যা বলার জন্য ও কি ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে এবং আমাদের চারপাশে এত্তসব সুযোগ সুবিধা আছে যে কোন খারাপ কাজ করতে হয়না এমনিতেই হয়ে যায় তাহলে শুধু মাত্র মিথ্যাই না, আরও কত সব খারাপ কাজ যে করছি এই শাস্তি শেষ হবে কবে? কাজ হচ্ছে শিকল এর মত, ভাল কাজ করবে তো সোনার শিকল এ বাধা পরবে আর খারাপ কাজ করলে লোহার শিকল এ। তাহলে কি এর শেষ নাই এই সব ই কি চক্রাকারে চলতে থাকবে?
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে দুই প্রকার ১. সকাম কর্ম ২. নিষ্কাম কর্ম সকাম কর্মঃ এই ধরনের কাজ হচ্ছে এখানে কর্তা কাজের ফলের প্রত্যাশায় কাজ করে। ফল ভাল বা খারাপ যাই হোক না কেন তার ফল কর্তাই ভোগ করবে। ফল অনুযায়ী স্বর্গ ভোগ এবং নরক ভোগ করে আবার পৃথিবীতে ফেরত আসতে হবে। এভাবে চুড়ান্ত মুক্তি সম্ভব না। নিষ্কাম কর্মঃ এটি উচ্চ পর্যায়ের কর্ম পদ্ধতি।এখানে কর্তা ভাবে সে কাজ করছে তার ঈশ্বরের ইচ্ছায়, কাজ ঈশ্বরের ফল ও ঈশ্বরের সে শুধু তার ঈশ্বরের ইচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছে এখানে তার কোন ভাল খারাপের প্রয়োজন নাই। যার কাজ সে বুঝবে। যেহেতু তার জীবনে কর্ত কোন কাজ নিজের বলে করেনাই তাই তার কর্মফল হবে কী? মৃত্যুর পর তার আত্মা পরমাত্মাতে বিলীন হয়ে যাবে। যা কিনা চুড়ান্ত লক্ষ্য প্রতিটি আত্মার। তবে শুনতে সহজ মনে হলেও এটা কিন্তু অতটা সহজ নয়, কারণ আমরা সংসারের কামনা বাসনাতে এতটা ডুবে গেছি যে সব কিছু নিজের বলে না ভাবলে শান্তি পাইনা। কেউ যদি ভাবে মানুষ খুন করলাম, এটা তো আমার ইচ্ছায় করি নাই ঈশ্বর চাইছেন তার করলাম, তাহলে সে বিশাল ভুল করবে কারণ ঈশ্বর মানুষকে কখনও খারাপ কাজ করতে বাধ্য করেন না। আর কেউ যদি কোন ভাল কাজের ফল ভোগ করতে চায় কিন্তু খারাপ কাজের ফল ঈশ্বরের ঘাড়ে চাপাবে তবে তার সম্পর্কে কি বলার আছে। এখানে গীতার একটা উদ্ধৃতি দেই, ভগবান বলছেন কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুণসমুদ্ভবঃ। মাহশনো মহাপাপ্মা বিদ্ধোনমিহ বৈরিণম্।। আবৃতং জ্ঞানমেতেন জ্ঞানিনো নিত্যবৈরিণা। কামরুপেণ কৌন্তেয় দুষ্পূরেণানেলেন চ।।-গীতা ৩।৩৭, ৩৯ ইহার ভাবার্থ এই যে, মানুষ কাম ক্রোধের বশীভুত হইয়াই এইরুপ পাপাচরণ করে। কামদ্বারা জ্ঞান আচ্ছাদিত হইলে মানুষ প্রকৃত পথ দেখিতে পায় না। এই কারণে ইন্দ্রিয়সংযম অভ্যাস করিয়া কাম, ক্রোধ প্রভৃতি রিপুসকলকে বিনাশ করতে হবে। অর্থাৎ দেখা যাইতেছে যে, মনুষ্য আপনার দোষেই পাপ আচরণ করে। পাপকর্ম যদি আমরা তাহার দ্বারা চালিত হয়েই করি, তবে তাহার জন্য আবার আমাদিগকে শাস্তিভোগ করিতে হয় কেন? ঈশ্বর এমন নিষ্ঠুর রাজা নহেন যে, তিনি আমাদিগের দ্বারা তাহার মনোমত একটা কার্য করাইয়া লইয়া পুনরায় তাহারই জন্য আমাদিগকে দন্ড দিবেন। তবে কোন্ কর্ম ঈশ্বর অনুমোদিত, আর কোন্ কর্ম অননুমোদিত, তাহা বুঝিতে গেলে আমাদিগের চিত্তশুদ্ধি আবশ্যক, ধর্ম বোধ থাকা আবশ্যক, তাহা হইলেই অনায়াসে বুঝিতে পারিব।
এত বড় কথা সহজে নিজেই বুঝিনা তাই ছোট একটা গল্প বলার ইচ্ছা সংবরণ করেত পারছিনা। এটা থেকেই সকাম আর নিষ্কাম কর্ম বুঝা যাবে। অনেক দিন আগে এক ব্রাক্ষ্মন এর ইচ্ছা হল বাড়ির বাইরে একটা সুন্দর বাগান করার, ইচ্ছে মত অনেক কষ্ট করে কিছুদিনের মধ্যেই সে একটা সুন্দর বাগান করল, সময় মত বিভিন্ন ফুলের সুবাসে আর সৌর্ন্দয্যে তার বাগান ভরে উঠল, পথে যেতে অনেক মানুষ তার বাগানের প্রশংসা করত এতে ব্রাক্ষ্মন খুব ই আনন্দিত হত। একদিন ব্রাক্ষ্মন পূজা দিচ্ছিল, সেই সময় হঠাৎ কোথা থেকে যেন এক গরু এসে তার সাধের বাগানের অনেক গাছ খেয়ে ফেলল আর অনেক গাছ নষ্ট করল। ব্রাক্ষ্মন তা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে একটা লাঠি নিয়ে গরুটিকে বেদম প্রহার করতে লাগল । একপর্যায়ে গরুটি মরেই গেল, এতে সে একটু বিচলিত হয়ে গেল সে গোহত্যা করেছে, এতো মহাপাপ। সে এখন কি করবে? যাইহোক সে গরুটিকে বাগানের এক কোনায় ফেলে বাড়িতে উঠানে গিয়ে বসল। তখন সে চিন্তা করতে লাগল এই মহাপাপের থেকে মুক্তির পথ কি? চিন্তা করতে করতে একটা উপায় ও পেয়ে গেল, কিছুক্ষণ পর পাপ এল তার কাছে পাপঃ ওহে ব্রাক্ষ্মন, তুমি গোহত্যা করেছ, অনেক বড় পাপ করেছ, এখন আমি তোমার মাঝে প্রবেশ করব। ব্রাক্ষ্মনঃ দেখ তুমি তোমার কাজ করবে সেটা ঠিক আছে কিন্তু তুমি আমার কাছে কেন এসেছ, আমি কি কিছু করতে পারি, সবই তো ঈশ্বর করান তিনি যা করিয়েছেন আমি তাহাই পালন করি, আমার কি দোষ? তুমি বড়ং ঈশ্বরের কাছে যাও তাকেই ধর। পাপ দেখল কথা খারাপ বলেনাই, যুক্তি আছে, সে ঈশ্বরের কাছে গেল ঈশ্বরঃ তুমি আমার কাছে কেন? পাপ তাকে ব্রাক্ষ্মনের সব কথা খুলে বলল, ঈশ্বর তাকে বললেন আচ্ছা, তুমি দাড়াও আমি দেখি কি করা যায়। কিছুক্ষণ পর ব্রাক্ষ্মনের বাড়ির সামনে এক পথিক আসল এবং তার বাগানের প্রশংসা করতে শুরু করল। তাতে ব্রাক্ষ্মন অনেক আনন্দিত হল, পথিক কে সব ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল পথিকঃ বাহ এই ফূলতো খুবই সুন্দর, এটা কে করেছে? ব্রাক্ষ্মনঃ আমি করেছি, এটা অনেক দুর থেকে আনতে হয়েছে। পথিকঃ বাহ এই গাছ গুলোতে অনেক সুন্দর, এগুলো তো অনেক যত্ন করতে হয় এতসব কে করে? ব্রাক্ষ্মনঃ আমি ই করেছি, সারাদিন তো পূজা আর এই বাগান নিয়েই থাকি। সব দেখে পথিক সেই গরুর সামনে গেল, এবং অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল এখানে মরা গরু কেন, প্রহারের দাগ দেখা যায় এটা কে করেছে? ব্রাক্ষ্মন তখন নিশ্চুপ পথিকঃ সব ভাল কাজ আপনি করেছেন আর খারাপ গুলো শুধু ঈশ্বর তাইনা? ব্রাক্ষ্মন তার ভুল বুঝতে পারল এবং পাপ এসে তাকে ধরল। এতেই বুঝা যায় নিষ্কাম কর্ম কতটা উচ্চ পর্যায়ের এবং তা হঠাৎ করে একদিনেই সম্ভব না, তবে এটাই উৎকৃষ্ট পথ। ধন্যবাদ সবাইকে, আমার লেখাটা পড়ার জন্য, যদিও আর ও কিছুদিন আগে এই লেখাটা প্রকাশ করার কথা ছিল, কিন্তু আমার উপর দিয়ে ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, মৌসুমী বৃষ্টি সব যাওয়ার জন্য একটু দেরী হয়ে গেল। তাই ক্ষমা চাইছি। আর আমি আশা করব, সবাই শুধু ভাল বা খারাপ না বলে কোথাও ভুল হলে বা কোন জিনিস না বুঝলে উল্লেখ করতে কারণ আমরা ধীরে ধীরে ধর্মের গভীরে প্রবেশ করছি, যদি আমার গোড়া শক্ত না হয় তবে সামনে এগুনো কষ্ট হয়ে যাবে। আবার ও ধন্যবাদ