Main » 2011»June»16 » শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ থেকে ধারাবাহিকভাবে পাঠ-মুখবন্ধ (৩)
Added by: Ratan
9:44 PM
শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ থেকে ধারাবাহিকভাবে পাঠ-মুখবন্ধ (৩)
হরেকৃষ্ণ। আমি এখানে শ্রীল প্রভুপাদ কর্তৃক অনুবাদ ও ভাষ্যকৃত ভগবদগীতা যথাযথ থেকে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপনের আশা রাখছি। প্রথমে মুখবন্ধ থেকে আলোচনা তুলে ধরব, তারপর একে একে সংস্কৃত শ্লোক, উচ্চারণ, শব্দার্থ, অনুবাদ শেষে প্রভুপাদ কর্তৃক তাৎপর্য তুলে ধরব। আশা করি যারা ব্যস্ততার কারণে গীতা অধ্যয়ণ করার সময় পায় না তারা সবাই উপকৃত হবেন। ইংরেজীতে শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ কপিটি চাইলে www.iyfbd.com এর ডাউনলোড মেনু থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। হরেকৃষ্ণ। ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়। শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ ।মুখবন্ধ। পার্ট-৩ ভগবদগীতার মর্মোপলব্ধি করতে হলে প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে অর্জুন কিভাবে তা গ্রহণ করেছিলেন। ভগবদগীতার দশম অধ্যয়ে (১০/১২-১৪) তা বর্ণনা করা হয়েছে-
”অর্জুন বললেন-তুমিই পরম পুরুষোত্তম ভগবান, পরম ধাম, পরম পবিত্র ও পরব্রহ্ম। তুমিই শাশ্বত, দিব্য, আদি পুরুষ, অজ ও বিভু। নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি সমস্ত মহান ঋষিরাই তোমার এই তত্ত্ব প্রতিপন্ন করে গেছেন, আর এখন তুমি নিজেও তা আমার কাছে ব্যক্ত করছ। হে শ্রীকৃষ্ণ, তুমি আমাকে যা বলেছ তা আমি সম্পূর্ণ সত্য বলে গ্রহণ করেছি। হে ভগবান! দেব অথবা দানব কেউই তোমার তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না।”
পরম পুরুষোত্তম ভগবানের কাছে ভগবদগীতা শোনার পর অর্জুন বুঝতে পেরেছিলেন যে, শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরং ব্রহ্ম অর্থ্যাৎ পরব্রহ্ম। প্রতিটি জীবই ব্রহ্ম, কিন্তু পরম জীব অথবা পরম পুরুষোত্তম ভগবান হচ্ছেন পরব্রহ্ম। পরং ধাম কথাটির অর্থ হচ্ছে তিনি সবকিছুর পরম আশ্রয় অথবা পরম ধাম। পবিত্রম্ মানে তিনি হচ্ছেন বিশুদ্ধ অর্থ্যাৎ জড় জগতের কোন রকম কলুষ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। পুরুষম্ কথাটির অর্থ হচ্ছে, তিনিই পরম ভোক্তা; শাশ্বতম্ অর্থ সনাতন; দিব্যম অর্থ অপ্রাকৃত; আদিদেবম্ অর্থ পরম পুরুষ ভগবান; অজম্ অর্থ জন্মরহিত এবং বিভুম্ শব্দটির অর্থ সর্বশ্রেষ্ঠ।
কেউ মনে করতে পারেন যে, অর্জুন যেহেতু শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু ছিলেন, তাই তিনি ভাবোচ্ছ্বসিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের গুণকীর্তন করেছেন। কিন্তু ভগবদগীতার পাঠকের মন থেকে সেই সন্দেহ দূর করার জন্য অর্জুন পরবর্তী শ্লোকে বলেছেন যে, নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাসাদি ভগবৎ-তত্ত্ববিদ্ মহাজনেরা সকলেই শ্রীকৃষ্ণকে পরম পুরুষোত্তম ভগবান বলে স্বীকার করেছেন। বৈদিক জ্ঞান যথাযথভাবে বিতরণকারী এই সমস্ত মহাপুরুষদের আচার্যেরা স্বীকার করেছেন। তাই অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বলেছেন যে, তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি কথাকেই তিনি সম্পূর্ণ নির্ভুল বলে গ্রহণ করেন। সর্বমেতদ ঋতং মন্যে- "তোমার প্রতিটি কথাই আমি পরম সত্য বলে গ্রহণ করি।” অর্জুন আরও বলেছেন যে, ভগবানের ব্যক্তিত্ব উপলব্ধি করা খুবই দুষ্কর এবং দেবতারাও তাঁর প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারেন না। এর অর্থ হচ্ছে যে, মানুষের চেয়ে উচ্চস্তরে অধিষ্ঠিত যে দেবতা, তাঁরাও ভগবানের স্বরূপ উপলব্ধি করতে অক্ষম। তাই সাধারণ মানুষ ভক্ত না হলে কিভাবে তাঁকে উপলব্ধি করবে? ভগবদ্গীতাকে তাই ভক্তির মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। শ্রীকৃষ্ণকে কখনই আমাদের সমকক্ষ বলে মনে করা উচিত নয়। শ্রীকৃষ্ণকে একজন সাধারণ ব্যক্তি বলে মনে করা উচিত নয়, এমন কি তাঁকে একজন মহাপুরুষ বলেও মনে করা উচিত নয়। ভগবদগীতার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে হলে শ্রীকৃষ্ণকে পরম পুরুষোত্তম ভগবান বলে স্বীকার করে নিতেই হবে। সুতরাং ভগবদ্গীতার বিবৃতি অনুসারে কিংবা অর্জুনের অভিব্যক্তি অনুসরণে যিনি ভগবদ্গীতা বুঝতে চেষ্ঠা করছেন, তাঁকে শ্রীকৃষ্ণ যে পরম পুরুষোত্তম ভগবান, তা অন্তত তত্ত্বগতভাবে মেনে নিতে হবে এবং সেই রকম বিনম্র মনোভাব নিয়ে ভগবদ্গীতা উপলব্ধি করা সম্ভব। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভগবদ্গীতা না পড়লে, তা বুঝতে পারা খুবই কঠিন, কারণ এই শাস্ত্রটি চিরকালই বিপুল রহস্যাবৃত। (চলবে)।
পোষ্ট গুলো অনেক ভালো লাগছে। বিশেষ করে গীতা নিয়ে একটা সিরিজ পোষ্ট এর দরকারীতা অনেকদিন ধরেই অনুভব করছিলাম। আচ্ছা আমি জানার জন্য কিছু জিজ্ঞেস করছি, মানে আমার এই ব্যাপার গুলো নিয়ে confusion আছে আর যেহেতু আপনি ইস্কন এর মতানুযায়ী লিখছেন তাই আপনাকেই প্রশ্ন করছি- ১. দেবতারাও তাঁর প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে পারেন না। এর অর্থ হচ্ছে যে, মানুষের চেয়ে উচ্চস্তরে অধিষ্ঠিত যে দেবতা, তাঁরাও ভগবানের স্বরূপ উপলব্ধি করতে অক্ষম দেবতারা কি ঈশ্বরের বিভিন্র রুপ না? মূলত ঈশ্বর তো একজনই। তাহলে দেবতারা কেন আবার ঈশ্বরের স্বরুপ জানতে চাইবেন। বা জানতে পারবেন না? ২. ভগবদ্গীতাকে তাই ভক্তির মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। ভক্তি প্রয়োজন আছে এবঙ তা ছাড়া সাধনা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় তবু শুধুই কি ভক্তি? জ্ঞান দ্বারা কি সম্ভব না? কারণ গীতাতে জ্ঞানের উপরে একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় ই আছে। ৩. ইস্কন মতানুযায়ী বেদ এর মূল্যায়ন কতটুকু?
আশা করি প্রশ্নগুলোকে অন্যভাবে নিবেন না। আমি ইসকন মত সম্বন্ধে খুব বেশী জানিনা তাই জানার জন্যই আপনাকে প্রশ্ন করছি।
আপনার এবং আপনার সিরিজ পোষ্টের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি। ধন্যবাদ
১। হ্যাঁ , দেবতারাও ইশ্বরের বিভিন্ন প্রকাশ। শুধু দেবতারা কেন মানুষসহ সমস্ত জীবই ভগবানের অংশ বা অংশাংশ। ভগবান পূর্ণ এবং জীব অংশ। অংশের কাজ হল পূর্ণের সেবা করা।দেবতারা ভগবানের প্রকৃত স্বরূপ না জানার কারণ হল-তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে ইন্দ্রিয় তৃপ্তির সুযোগ পায়। ইন্দ্রিয়ভোগের সুযোগ যার যত বেশি, সে ততটাই ভগবানের স্মরণ থেকে দূরে থাকে। এরকম আপনারা ভাগবতম্ পড়লে পাবেন, দ্বাপরযুগে বৃন্দিবন লীলায় দেবরাজ ইন্দ্রও ভগবানকে বুঝতে না পেরে কৃষ্ণ ও বৃন্দাবনবাসীদের উপর ক্ষেপে গিয়ে তাদের কষ্ট দেয়ার প্রয়াসী হয়েছিলেন। পরে বুঝতে পেরে ভগবানের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। একইভাবে ব্রহ্মাও ভুল করেছিলেন। একারণে ভগবানকে সঠিকভাবে উপলিব্ধ করার মানসে দেবতারাও ভগবানের কাছে মানব জন্ম পাবার আকাঙ্ক্ষা করেন।
২. হ্যাঁ, ভগবদগীতাকে অবশ্যই ভক্তির মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। তা না হলে গীতার জ্ঞান পুথিগতই থাকবে। এ জ্ঞান এতই রহস্যময় যে যতবারই ভক্তিভরে পরবেন ততবারই নিত্যনতুন আশ্চর্য বিষয় আপনার সামনে উঠে আসবে । ভক্তি যত দৃঢ় হবে ততই পরিস্কার হবে সৃষ্টির রহস্য,ভগবানের মহিমা । এ ব্যাপারে এ পি জে আবুল কালাম, মহাত্মা গান্ধী, শঙ্করাচার্য, আইনস্টাইন প্রমূখ ব্যাক্তিদের অনেক অনুভূতি উল্লেখিত আছে তাদের জীবনীতে। ভগবান জ্ঞানযোগের পরে ভক্তিযোগ এর কথা আলোচনা করেছেন। জ্ঞান ভক্তি বিবর্জিত হলে তাতে অহংকার জন্মে এবং তার পতন নিশ্চিত। ভগবান গীতায় (১১/৫৪) বলেছেন- >a¢-ya TvNaNYaYaa XaKYa AhMaev&ivDaae JauRNa ) jaTau& d]íu& c TatveNa Pa[veíu& c ParNTaPa )) 54 )) “হে অর্জুন! হে পরন্তপ! অনন্য ভক্তির দ্বারাই কিন্তু এই প্রকার আমাকে তত্ত্বত জানতে, প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।” শঙ্করাচার্য, যিনি ছিলেন শিবের অবতার, তিনি দেখিয়েছেন যে, জ্ঞান দ্বারা ভগবান লাভ হয় না। আপনারা জাকির নায়েকের নাম হয়ত শুনেছেন তিনি বৈদিক শাস্ত্রে জ্ঞাণ অর্জন করেও ভক্ত না হওয়ার কারণে আসুরিক স্বভাব পেয়েছেন। তার প্রমাণ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হতে শুরু হয়েছে। তাই ভক্তি বিকল্প নাই বুঝতেই পারছেন।
৩. ইসকন কোন মত/ মতবাদ নয়। এটি কৃষ্ণভাবনামৃত অনুশীলনকারীদের একটা সংগঠন। এটি ভক্তদের গঠিত একটি সংগঠন হলেও এখানে কারও ব্যক্তি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করা হয় না, প্রচার করা হয় ভগবানের বাণী এবং তা কোন রকম বিকৃতি ছাড়াই। আর মত বা মতবাদ হল মানুষের তৈরি ধারণা মাত্র। ইসকন বৈদিক কৃষ্টি-কালচারের আলোকে মানুষসহ সবজীবকে তাঁদের প্রকৃত কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়। যাতে সবাই প্রকৃত আলয় ভগবদ্ধামে ভগবানের কাছে ফিরে যেতে পারে এবং অন্যকেও তা শিখাতে পারে। ইসকনের মন্দিরগুলো শুধু উপাসনালয় বা আরাধনার স্থানই নয় এগুলো আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বটে। এ প্রসঙ্গে একবার প্রভূপাদকে এক আমেরিকান সাংবাদিক জিজ্ঞসা করেছিলেন যে আপনি এত অল্প সময়ে সারা পৃথিবীতে সনাতন ধর্ম প্রচারে এতটা সফল হলেন কি করে ? প্রভূপাদ বলেন “এর প্রধান কারন হল আমি আমার গুরুদেবের নির্দেশে শাস্ত্র নির্দেশিত ভগবানের বাণীকে তিল পরিমানও বিকৃত না করে সাধারন জনগনের বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করেছি।”
আর বেদ হল আদি ধর্মগ্রন্থ। কলিযুগের মানুষের বোধগম্যের বাইরে এ বেদ জ্ঞান। তবে আপনি যদি অধ্যয়ণ করে সঠিক উপলিব্ধ করতে চান তবে বৈদিক শাস্ত্রের পুরো ১০০ কোটি শ্লোক না পড়লে বেদের মাথামুণ্ড কিছুই খুঁজে পাবেন না, বরং বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন। এজন্য চৈতন্য মহাপ্রভু এ যুগে বেদপাঠ নিষিদ্ধ করেছেন। গীতা এবং ভাগবতম্ বেদের সারাতিসার বা বেদরূপ আম্র বৃক্ষের সুপক্ক ফল এই গীতা / ভাগবতম্ ।
প্রিয় পাঠক বুঝতেই পারছেন ইসকন কোন মত/ মতবাদ নয় । তাই ভেদাভেদ ভুলে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণীকে সার্থক করে তুলতে আগ্রহী হউন এবং প্রচার করুন অভ্রান্ত বেদবাণীকে প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে মহল্লায় ।