"হে জীব, সব ত্যাগ করে ভগবানকে লাভ করবার চেষ্টা কর। সাধুই হোক, সংসারী হোক, মন থেকে সব আসক্তি ত্যাগ করতে হয়। পারিবারিক,স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, অহংকার, দুর্বলতা, আসক্তি, প্রভৃতি ত্যাগ করা অপরিহার্য--------- এটাই গীতার মর্মবানী।
সনাতন হিন্দুধর্মের মূল শাস্ত্রগ্রন্থ বেদ, যার দু'টি ভাগ----কর্মকাণ্ড এবং জ্ঞানকাণ্ড। কর্মকাণ্ডে মন্ত্র উচ্চারণ, যাগ-যজ্ঞ, পূজা-পার্বন ইত্যাদি----ইহলৌকিক প্রক্রিয়ায় ক্ষণস্থায়ী পারলৌকিক সুখলাভের উপায় বর্ণিত আছে। আর জ্ঞানকাণ্ডে ধ্যান-ধারণা, স্তব-স্তত্র, তপস্যার দ্বারা শুদ্ধচিত্তে নিত্যানন্দে ব্রহ্মজ্ঞান সম্বন্ধে বিধি-বিধান আলোচিত হয়েছে। ব্রহ্মকাণ্ডের সারাংশ বেদান্ত বা উপনিষদ।
উপনিষদ বা বেদান্তের দার্শনিক চিন্তার মর্মার্থ বেদব্যাস রচিত উত্তর-মীমাংসা দর্শনে সূত্রাকারে গ্রথিত, যা বেদান্তদর্শন বা ব্রহ্মসূত্র নামে পরিচিত।
শ্রীমদ্ভগবদ গীতাকে উপনিষদের সারভাগ বলা যায়। কুরুক্ষেত্রের যুধের প্রাক্কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বানীই শ্রীমদ্ভগবদ গীতা (এতে সাতশত স্লোক আছে বলে এটির আরেকনাম সপ্তসতী। কিন্তু শ্রী শ্রী চন্ডীও সপ্তসতী বলে বহুল পরিচিত বলে গীতাকে সাধারণত সপ্তসতী বলা হয় না।) আত্মত্বত্ত, কর্মবাদ, ব্রহ্মজ্ঞান, জন্মান্তরবাদ প্রভৃতি হিন্দুদর্মের সকল মূল দর্শন-ই ফুটে উঠেছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী তথা শ্রীমদ্ভগবদ গীতায়।
উপনিষদ,ব্রহ্মসূত্র এবং শ্রীমদভগবদ গীতা----বেদের জ্ঞানকাণ্ড বিশ্লেষন ও আলোচনাকারী এই তিনটি শাস্ত্রকে সমন্বয়ে প্রস্থানত্রয় বলে।