এখানে ভগবান অর্জুনকে বলেছেন যে, এই যোগ ভগবদগীতা প্রথমে তিনি সূর্যদেবকে বলেন, সূর্যদেব তা বলেন মনুকে, মনু ইক্ষ্বাকুকে এবং এভাবে গুরু-পরম্পরাক্রমে গুরুদেব থেকে শিষ্যতে এই জ্ঞান ধারাবাহিকভাবে প্রবাহিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এক সময় এই পরম্পরা ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা এই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তাই ভগবান কুরুক্ষেত্রের রনাঙ্গনে নিজে এসে আবার এই জ্ঞান অর্জুনের মাধ্যমে দান করলেন। তিনি অর্জুনকে বললেন, “তুমি আমার ভক্ত ও সখা, তাই রহস্যাবৃত এই পরম জ্ঞান আমি তোমাকে দান করছি।” এই কথার তাৎপংর্য হচ্ছে যে, ভগবদগীতার জ্ঞান কেবল ভগবানের ভক্তই আহরণ করতে পারে। অধ্যাত্মবাদীদের সাধারনত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যথা- জ্ঞানী, যোগী ও ভক্ত, অথবা নির্বিশেষবাদী, ধ্যানী ও ভক্ত। এখানে ভগবান স্পষ্টভাবে অর্জুনকে বলেছেন যে, পূর্বের পরম্পরা নষ্ট হয়ে যাবার ফলে তিনি তাঁকে দিয়ে পুনরায় সেই পুরাতন যোগের প্রচার করলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে, অর্জুন এই জ্ঞানকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করে তার প্রচার করবেন। আর এই কাজের জন্য তিনি অর্জুনকেই কেবল মনোনীত করলেন, কারণ অর্জুন ছিলেন তাঁর ভক্ত, তাঁর অন্তরঙ্গ সখা ও তাঁর প্রিয় শিষ্য। তাই ভগবানের ভক্ত না হলে অর্থ্যাৎ ভক্তি এবং ভালবাসার মাধ্যমে তাঁর অন্তরঙ্গ সান্নিধ্যে না এলে ভগবানের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারা সম্ভব নয়। তাই অর্জুনের গুণে গুণান্বিত মানুষেরাই কেবল ভগবদগীতাকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে। ভক্তির মাধ্যমে ভক্তের সঙ্গে ভগবানের যে প্রেম-মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠে, তারই আলোকে ভগবানের স্বরূপ উপলব্ধি করা সম্ভব হয়। এই সম্পর্কের ব্যাখ্যা করতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়, তবে সংক্ষেপে বলা যায় যে, ভক্ত ভগবানের সঙ্গে নিম্নলিখিত পাঁচটি সম্পর্কের যে কোন একটির দ্বারা যুক্ত থাকেন-
১) নিস্ক্রিয়ভাবে ভক্ত হতে পারেন (শান্ত) ২) সক্রিয়ভাবে ভক্ত হতে পারেন (দাস্য) ৩) বন্ধুভাবে ভক্ত হতে পারেন (সখ্য) ৪) অভিবাবক রূপে ভক্ত হতে পারেন (বাৎসল্য) ৫) দাম্পত্য প্রেমিকরূপে ভক্ত হতে পারেন (মাধুর্য)
অর্জুনের সঙ্গে ভগবানের সম্পর্কের রূপ ছিল সখ্য। অবশ্য শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে অর্জুনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তার সঙ্গে পার্থিব জগতের বন্ধুত্বের বিস্তর তফাৎ। এই সম্পর্ক হচ্ছে অপ্রাকৃত এবং জড় অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এর বিচার করা কখনই সম্ভব নয়। যে কোন লোকের পক্ষে এই বন্ধুত্বের আস্বাদন লাভ করা সম্ভব নয়, তবুও প্রত্যেকেই কোন কোনভাবে ভগবানের সঙ্গে যুক্ত এবং এই সম্পর্কের প্রকাশ হয় ভক্তিযোগের পূর্ণতার মাধ্যমে। তবে আমাদের বর্তমান অবস্থায়, আমরা কেবল ভগবানকেই ভুলে যাইনি, সেই সঙ্গে ভুলে গেছি তাঁর সঙ্গে আমাদের চিরন্তন সম্পর্কের কথা। লক্ষ কোটি জীবের মধ্যে প্রতিটি জীবেরই ভগবানের সঙ্গে কোন না কোন রকমের শাশ্বত সম্পর্ক রয়েছে, এবং সেই সম্পর্ক হচ্ছে জীবের স্বরূপ। ভক্তিযোগের মাধ্যমে এই স্বরূপের প্রকাশ হয় এবং তাকে বলা হয় জীবের ‘স্বরূপসিদ্ধি’। অর্জুন ছিলেন ভগবানের ভক্ত এবং তাঁর সাথে ভগবানের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। (চলবে)
অনেক সুন্দর ও সাবলীল লেখা হচ্ছে। চালিয়ে যান। আচ্চা আমি একটা জিনিষ ঠিক sure না । গীতার অনেক শ্লোক নাকি বন্টন করে স্বর্গে ও অন্যান্য জায়গায় দেওয়া হয়েছে। এর ব্যাপারটা একটু বলবেন?