হিন্দুধর্মে দেব-দেবীদের মাঝে দেবী স্বরস্বতী এক সুউচ্চ আসনে অধিষ্টিত হয়ে আছেন সেই বৈদিক যুগ থেকে।বেদ-হিন্দুদের প্রাচীন তম ধর্মগ্রন্থে দেবী স্বরস্বতীর কথা উল্লেখ আছে। ঋগবেদে স্বরস্বতীর নাম পাওয়া যায় নদী হিসেবে।
বস্তুত প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের তিনটি প্রধান নদী হল-স্বরস্বতী, গন্গা ও
যমুনা। এই তিন নদীর মাঝে গন্গা এখনো বহমান ভারত ও বাংলাদেশের মাঝে গন্গা ও
পদ্মা নাম নিয়ে।
স্বরস্বতীকে {सरस्वती} বলা হয় বিদ্যা ও সংগীতের দেবী।
স্বরস্বতীকে বেদের মাতা হিসেবে ও স্বিকৃতী দেয়া হয়েছে বেদে।
ভাষাগত দিক বিচার করলে স্বরস্বতী নামটি এসেছে 'স্বরস' অর্থাথ
বহমান[flowing] এবং ওয়াতি বা রমনী[woman] থেকে।যার অর্থ দাঁড়ায় বহমান রমনী
বা নদী যার গতিময়তা নদীর মতো এবং সৌন্দর্য রমনীর মতো।দেবী বৌধ্বধর্মে ভগবান
বুধ্বের জ্ঞানপ্রদায়ীনি রুপে ও পুজিত হন।বার্মায় দেবী
বুধ্বরার্থী[Thurathadi ] বা থিপিটাকা[Tipitaka /θùja̰ðədì ] নামে ,
চিনাদের মাঝে বিয়ানচাইতান[Biàncáitiān/(辯才天),] নামে, বর্মিজ দের মাঝে
সুরসোয়াধি[Surasawadee /(สุรัสวดี)] নামে এবং জাপানী দের মাঝে
বেনজেইতেন[Benzaiten (弁才天/弁財天)] নামে পরিচিতা।
বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর ও দক্ষিনাংশে দেবী দুর্গার কন্যা হিসেবে দেবীকে সবাই পুজা করে আসছে বহু বছর ধরে।
প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে স্বর্গে তিন দেবী যমুনা,গন্গা ও স্বরস্বতী
নিজেদের মাঝে বিবাদের জড়িয়ে পড়েন এবং নিজেরা নিজেদের অভিশাপ দেন যে সবাইকেই
পৃথিবীর বুকে বহমান নদী হিসেবে প্রবাহিত হতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়
পরে সবাই ফিরে আসবেন স্বর্গের বুকে।আর এভাবেই দেবী স্বরস্বতীর কথা জানা যায়
ঋগবেদ থেকে।
বেদে বলা হয়েছে- দেবী হলেন বিদ্যা, জ্ঞান , সংগীত এবং সৃষ্টিশীলতার
দেবী।সংখ্যা পুরান এ বলা হয়েছে দেবী স্বরস্বতী হলেন দেবতা শিবের কণ্যা এবং
দেবতা গনেশের ভগ্নি।পদ্মপুরান এর উত্তর কান্ডে রয়েছে-
সকলকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে অগ্নি-সুর্য ও চন্দ্র যাদের থেকে উৎপত্তি
হয়েছে কূর্ম অবতার ও অনন্ত শেষ এবং গেরুদা যারা থাকবেন এক অনন্ত পরিবেশে যা
ধারণ করবে সকল বেদ কে এবং যা পরিচিত হবে স্মৃতি শাস্ত্র হিসেবে যার
বুৎপত্তি দেবী স্বরস্বতীতে- [পদ্মপুরান - উত্তর কান্ড-২৫৬.২৩।
বেদান্ত মতে দেবী স্বরস্বতী হলেন সকল শক্তির উৎস এবং সকল মঙ্গলের ধারক ও
বাহক।দেবী মহাত্ম্যে দেবী স্বরস্বতীকে মনে করা হয় মহাকালি,মহালক্ষী ও
মহাস্বরস্বতীর এক ত্রিরুপ যার আটটি হাত এবং যিনি মহামন্গলময়।দেবীমহাত্ম্যের
দৈনশ্লোকে বলা হয়েছে-
তিনি ধারণ করেন শংখ,ত্রিশুল,কোচ,তীর,ধনুক,বল্লম ও শুল এবং জ্বলতে
থাকেন জোত্যিময় প্রভার মতো বাসন্তী আকাশে-জন্ম হয়েছে তাঁর মহাদেবীর দেহ
থেকে যার স্থান ত্রিশব্দে হে মহাস্বরস্বতী আমি তোমাকে হোম দিই শুম্ভ ও
নিশুম্ভ নামক দৈত্যকে হ্ত্যা করার মানসে।
দেবী স্বরস্বতীর প্রতিমায় দেখা যায় দেবী পরিধান করেন শ্বেতশুভ্র কাপড়-যার
অর্থ দেবী সত্য ও সুন্দরের প্রতীক।দেবীর চার হাত।দেবীর এক হাতে বীণা -বীণা
হলা একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র যেটা সংগীত সৃষ্টির কাজে ব্যবহৃত হয়।দেবীর এই
বাদ্যযন্ত্র সংগীতের প্রতি দেবীর মহিমা প্রকাশ করে।দেবীর আরেক হাতে পুস্তক
বা বই।দেবীর চারটি হাত মানুষের চারটি গুন এর প্রকাশ যা মানুযকে ধারণ করতে
হয়- মন, জ্ঞান,প্রজ্ঞা ও আমিত্ব।কেউ কেউ মনে করেন দেবীর চার হাত চার বেদ ও
চারটি যুগের প্রকাশ।
দেবী বসে আছেন এক হাসের পিঠে-অর্থাৎ দেবীর বাহন হাঁস। এখানে হাঁস একটি রুপক
মাত্র। হাঁস একটি গৃহপালিত পাখিবিশেষ যা সাধারণত বাসগৃহের জলাধার গুলোতে
থাকে। হাঁস যতই পানিতে সাঁতার কাটুক পানি থেকে উঠে এলে হাঁসের শরীরে পানির
কোন লেশমাত্র থাকেনা।দেবীর বাহন হাঁস আমাদের এই সংসারের পাপ পংকিলতার মাঝে
থেকে ও জ্ঞানী হতে শিক্ষা দিতেই হাঁস কে বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
হাঁসের আরো একটা গুন হল দুধ আর পানির মিশ্রণ হাঁসকে খেতে দিলে হাঁস ওখান
থেকে শুধু দুধটাকেই আলাদা করে খেতে পারে।এই উপমা থেকে দেবী শিক্ষা দেন যেন
ভাল ও মন্দের মাঝ থেকে আমরা ভাল ও সুন্দর কে আমরা বেছে নিতে পারি।
চিনে দেবী স্বরস্বতীর প্রতিমা
বার্মা সংস্কৃতিতে দেবী স্বরস্বতী বই হাতে পাখিকে বাহন করেন
উত্তর ভারতের ব্রজেশ্বরী মন্দিরের দেবী মহাস্বরস্বতী
প্রতিবছর মাঘমাসের পন্চমী তিথিতে দেবী স্বরস্বতীর পুজা অনুষ্টিত হয়।বাংলার
ঘরে ঘরে বিদ্যার্থীরা দেবীকে পুজা করেন বিদ্যা ও জ্ঞান লাভের আশায়।আশা করি
দেবীর কৃপায় বাংলার ঘরে ঘরে বিচরণ করবে শুভ্র ও সুন্দর জ্ঞান- সুখ ও
শান্তিতে ভরে উঠবে প্রতিটি মানুষ।
আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন
[বি.দ্র. বানান বা অন্য কোন ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে]
|