হিন্দু ধর্মে যে সকল দেব দেবী আমাদের পরিচিত তাদের মাঝে "দেবী কালী"
অন্যতম।সংস্কৃতে "কালিকা" এবং বাংলায় "কালী" নামে পরিচিতা দেবীর মুর্তি
কালো। "কালী" নামের অর্থ কালো। আবার কালো শব্দ টা এসেছে কাল বা সময় থেকে।
তাই দেবী কালী কাল বা সময়ের দেবী- পরিবর্তনের দেবী।
পুরাতন সংস্কৃত গ্রন্থ শব্দকল্পদ্রুম মতে "কালী" নামটা এসেছে এই ভাবে-
कालः शिवः । तस्य पत्नीति - काली: কালী
এখানে আরো বলা হয়েছে ভগবান শিবের আরেকনাম কালা-আর তাঁর স্ত্রির নাম কালী।
আরেকটি নাম আছে "কালরত্রি" {কালো রাত}যার থেকে বিবর্তনের ফলে এসেছে "কালিকা" বা "কালী"।
"দেবী কালী"র নাম পাওয়া যায় বহু ধর্মগ্রন্থে- যার মাঝে "অর্থব বেদ" অন্যতম।
তবে প্রথম "কালী" নামটি উচ্চারিত হয় অর্থব বেদের "কথাগ্রহসুত্রে" ।এর পর "মুন্ডকউপনিষদে" কালী নামটা উচ্চারিত হয়েছে বারবার।
এরপর মহাভারতে ভিষ্মপর্বে দেবী কালীর পুজার কথা পাওয়া যায় পান্ডবদের বিজয় লাভের আকাংখায়।
মা কালীর অনেক রকম পুজার মাঝে তন্ত্রবিদ্যায় বা তন্ত্র বিদ্যার
শাখাপ্রশাখায় কালীর পুজা করা বাধ্যতা মুলক-কারণ মা কালীর পুজা করার
মাধ্যমেই তান্ত্রিকরা মন্ত্রশক্তির অধিকারী হতে পারেন বলে বিভিন্ন
ধর্মগ্রন্থে কথিত আছে।
পুরাণ মতে দেবী কালী হলেন মা মহামায়ার কালীকা শক্তি।দেবী মহামায়া অসুর দের
অত্যাচারে অতিষ্ট দেব ও মানবকুলের কান্না আর আহাজারি সহ্য করতে না পেরে
ক্রোধে ফেটে পড়েন। অত্যন্ত ক্রোধে র ফলে তাঁর শরীর থেকে জ্যোতি বের হতে
থাকে এবং তিনি কালো রুপ ধারণ করেন।
এবং অসুর নিধনে খড়গ হাতে নেমে পড়েন মহা যুদ্দ্বে।যত তিনি হত্যা করতে থাকেন
ততই তাঁর ক্রোধ বাড়তে থাকে।তখন তিনি মহাকালী রুপে খড়গ দিয়ে অসুরের মাথা
কাটতে কাটতে নিজের শরীরে পরিধান করতে থাকেন।এভাবে অসুর নিধন করতে করতে মা
পাগলীনি প্রায় হয়ে উঠলে
দেবতারা চিন্তিত হয়ে মহাদেবের কাছে আসেন কালী দেবীকে থামানোর উপায় খুঁজতে।
দেবতা শিব বহু ছলনা করেও দেবীকে থামাতে না পেরে পথের ধারে উঁচু গাছের রুপ
নিয়ে পড়ে থাকেন।আর যেই দেবী সেই গাছের উপর পা রাখেন সাথে সাথে দেবাদিদেব
মহাদেব নিজ রুপে আর্ভিভুত হন।আর দেবী নিজের স্বামীকে পায়ের নিচে দেখে
জিহবায় কামড় দেন।এবং থেমে যায় তাঁর যুদ্ধ।তারপর থেকে দেবী কালীকে
রুদ্রমুর্তিতে দেবতা শিবের বুকের উপর পা দেয়া অবস্থায় পুজা করা হয়ে আসছে।
আসলে দেবী কালী র যে মুর্তিতে পুজা করা হয় সেটা অনেকটা রুপক অর্থে।দেবীর
গায়ের রং কালো-কালি বা কালো হল শক্তির রং-সময়ের রং-দেবী শক্তির আঁধার
বুঝাতেই দেবী কালো-দেবী কোন বস্ত্র পরিধান করেন না কারণ শক্তিকে কোন কিছু
দিয়ে ঢেকে রাখা যায়না-দেবী র চারটি হাত চারটি যুগ বা চারটি বিভাগ {
ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ} কে নির্দেশ করে।
দেবীর এক হাতে খড়গ-যার মানে তিনি খড়গ বা খন্ডন করতে পারেন- এক হাতে কাটা
মুন্ড যার মানে তিনি আমাদের খারাপ কাজের যে কোন রকম শাস্তি দিতে পারেন-উনার
উপরের ডান হাত আর্শিবাদ ভংগীতে আছে অর্থাত মা তাঁর সন্তান দের অভয়
দিচ্ছেন-আর নিচের হাতে কমন্ডুল যার মানে মা ধারন করছেন সকল প্রকার মায়া।
মায়ের তিনটি চোখ- তৃতীয় নয়ন দিয়ে মা আগুন ছিটিয়ে ধ্বংস করেন খারাপ কে-অশুভ কে।
মায়ের জি্হবা লাল আর তা বের করা। অনেকেই মনে করেন মা অসুর বা খারাপের রক্ত
পান করেন-কিন্তু না তা সত্য নয়-মায়ের দাঁত সাদা-মা রক্ত পান করলে তার ও লাল
থাকতো-এখানে লাল জিহবা তমোগুনের প্রতীক-আর সাদা দাঁত স্বত্ত গুনের
প্রতীক-মানে মা স্বত্ত্ব গুন দিয়ে তমোগুন কে চেপে রেখেছেন- আমাদের বলেছেন
যেন আমরা ভাল গুন দিয়ে খারাপ কে জয় করতে পারি।
মায়ের এক পা দেবতা শিবের উপর রাখা কারণ মা দেবতা শিবের হ্লাদিনি শক্তি বা
হাস্যময়ী শক্তি- কালী ছাড়া কালা{শিবের} অচল-এটা ই বুঝাতে চেয়েছেন।
দেবী কালী কালে কালে বহুরুপে পুজিত হয়ে আসছেন-যাদের মাঝে আছে
-দক্ষিনা কালী
-ভদ্রা কালী
-কপালীনি
-ভৈরবী
-মাতন্গী
-মহাকালী প্রভৃতি।
যুগেযুগে বহু মনীষী মা কালীর আরাধনা করে সিদ্ধ হয়েছেন যাদের মাঝে শ্রী
রামকৃষ্ণ-বামাক্ষেপা-অতুলপ্রসাদ-রামপ্রসাদ অন্যতম- এখনো রামপ্রসাদি আর
বামাক্ষেপার রচিত গান শুনতে শুনতে মায়ের অমোঘ টানে হারিয়ে যার মন।
আমার খুব ভাল লাগছে কারন এ রকম একটা ওয়েব সাইট এ অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরে।কারন আমি এ খানে জয়েন্ট না করলে এতো কিছু জানতাম না। তাই সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাছি রাজু দাদা কে।আরও ভাল ভাল তথ্য জানতে পারব বলে আশা করছি।নমস্কার
খুবই অবিভূত হলাম মা কালি সম্পর্কে শাস্ত্রীয় সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য। তন্ত্রে মায়ের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য আছে.... আশা করি ভবিষ্যতে আরো অনেক তথ্য দিবেন । তাতে মানুষ কালি সম্পর্কে যে কুচ্ছিত ধারনা করে তা দূর হবে।