সুপ্রভাত সবাইকে- কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভাল আর এই ভাল ও সুস্থ সুন্দর শরীরের জন্য আমাদের প্রয়োজন শরীরের উপর ছাপ ও বল প্র্যগ করে একে নিয়ন্ত্রনে রাখা। আর এই নিয়ন্ত্রনের নাম ব্যায়াম। প্রাচীনকাল থেকে এই উপমহাদেশে এই ব্যায়াম করে আসছেন আয ঋষি রা। একে নাম দিয়েছেন যোগ ব্যাম। আর এই ব্যাম প্রয়োগ করেছেন বেদ সহ বিভিন্ন শাস্ত্রে। ফলে এটা হয়ে উঠেছে আমাদের নিত্য আরাধনার অংগ।
আমার এই সিরিজের প্রথম পাঠে কিছুটা ভুল ছিল। সেজন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী।আমি একে একে ধীরে ধীরে শরীরচর্চা এবং যোগ ব্যায়ামের সকল পদ্ধতি বর্ণনা করব
প্রথমেই আলোচনা করবো প্রানায়াম নিয়ে
প্রানায়াম কি?
প্রাণায়াম
প্রাণায়াম (Pranayama):
যে প্রক্রিয়া দেহের প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে এবং জরা, ব্যাধি ও
অকালমৃত্যুর হাত থেকে দেহকে রা করে, তাই প্রাণায়াম (Pranayama)।
প্রাণায়ামের কাজ হলো বায়ুকে অর্থাৎ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রিত করে
দেহের প্রাণশক্তিকে বৃদ্ধি করা।
যোগ-শাস্ত্র অনুযায়ী বায়ুই দেহের প্রাণশক্তি এবং তা রস-রক্তকে প্রতিটি
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিচালিত করে। বায়ু প্রধানতঃ ‘প্রাণ’, ‘উদান’, ‘সমান’,
‘অপান’ ও ‘ব্যাণ’- এই পাঁচ ভাগে ভাগ হয়ে দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ত কাজ করে
যাচ্ছে। গলদেশে ‘উদান’, হৃদয়ে ‘প্রাণ’, নাভিদেশে ‘সমান’, গুহ্যদেশে ‘অপান’
এবং দেহের সর্বত্র ‘ব্যাণ’ কার্যরত।
এই পাঁচ প্রকার বায়ুর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ‘প্রাণ’
বায়ুর। শ্বাসগ্রহণ ও ত্যাগ, হৃদযন্ত্র পরিচালনা করা, খাদ্যবস্তুকে
পাকস্থলীতে পাঠানো, ধমনী-শিরা-উপশিরা দিয়ে রক্তরস আনা-নেয়া করা, ধমনী,
শিরা, উপশিরা, স্নায়ুজালকে কাজে প্রবৃত্ত ও সাহায্য করা প্রভৃতি অতি
প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিয়ত এই প্রাণবায়ু করে যাচ্ছে। কাজেই দেহে প্রাণবায়ুর
ভূমিকা প্রধান।
‘উদান’ বায়ুর কাজ হচ্ছে শব্দ করা। এই বায়ুর সূক্ষ্মাংশ বুদ্ধি ও
স্মৃতিশক্তিকে পুষ্ট করে। ‘উদান’ বায়ুর সাহায্যে আমরা হাসি, কাঁদি, গান
করি, শব্দ করি ইত্যাদি। ‘সমান’ বায়ু আমাদের জঠরাগ্নিকে উদ্দীপ্ত করে,
পাকস্থলী থেকে জরাজীর্ণ খাদ্যবস্তুকে গ্রহণী নাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর সার ও
অসার অংশে ভাগ করে অসার অংশকে মলনাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। ‘অপান’ বায়ুর কাজ
হচ্ছে প্রাণবায়ুকে সাহায্য করা এবং মেয়েদের রজঃনিঃসরণ, সন্তানধারণ ও সন্তান
প্রসবে সাহায্য করা ইত্যাদি। আর ‘ব্যাণ’ বায়ুর কাজ হচ্ছে প্রাণবায়ুকে রক্ত
পরিচালনায় সাহায্য করা, পেশী সঙ্কোচন ও প্রসারণে সাহায্য করা এবং দেহ থেকে
ঘাম বের করে দেয়া।
যোগ-শাস্ত্রে বলা হয়, এই পাঁচটি বায়ুর একটি কূপিত হলে দেহে রোগাক্রমণ ঘটে, আসে মৃত্যুর হাতছানি।
যোগ-শাস্ত্র মতে বায়ু গ্রহণকে ‘পূরক’, ধারণকে ‘কুম্ভক’ এবং ত্যাগকে
‘রেচক’ বলা হয়। এই তিন প্রকার কাজকে একসঙ্গে বলা যেতে পারে প্রাণায়াম।
অন্যদিকে প্রাণ ও অপান-বায়ুর পরস্পর সংযোগকেও প্রাণায়াম বলা হয়ে থাকে।
প্রাণায়াম প্রক্রিয়ায় শ্বাস গ্রহণ করতে সাধারণত যে সময় নেয়া হয়, শ্বাস
ত্যাগ করতে প্রায় তার দ্বিগুণ সময় নিতে হয়। এ বিষয়ে নানা জনের নানা মত।
অনেকে বলেন পূরক, কুম্ভক ও রেচকের অনুপাত ২ : ১ : ২ হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে
কুম্ভকের সময়কালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। তা হতে হবে আয়াসহীন ও
সুখকর। তবেই শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। অর্থাৎ পূরক, কুম্ভক, রেচক যত সময়
নিয়েই করা যাক না কেন, আয়াসহীন হওয়া চাই। শরীরের ক্ষতি তখনই হয়, যখন জোর
করে ফুসফুসের শক্তির বিচার না করে শ্বাস-ব্যায়াম করা হয়। তাই প্রাণায়াম
অভ্যাসের সময়কাল আপেক্ষিক এবং ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রাণায়াম
ততক্ষণ করা যেতে পারে, যতক্ষণ ফুসফুস ক্লান্ত না হয়। যখন দেখা যাবে, সে আর
অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে পারছে না, তখন তার প্রাণায়াম করা উচিৎ নয়।
বায়ুর প্রধান উপাদান চারটি। অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও কার্বন।
ফসফরাস, সালফার প্রভৃতি আরও কয়েকটি উপাদান আছে। সেগুলোও মূলত বায়ুরই
পরিণতি। শ্বাসের সঙ্গে আমরা যে পরিমাণ বায়ু দেহে গ্রহণ করি, তা ঠিকমত কাজে
লাগাতে বা দেহ উপাদানে পরিণত করতে পারলে আমাদের খাদ্য-সমস্যা অনেকটাই মিটে
যেতো। অনেক যোগী দিনের পর দিন কোন খাবার না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। অথচ
আমরা সাধারণ মানুষ একদিন না খেলেই আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে।
দেহ-বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের দেহের শতকরা বাষট্টি ভাগ অক্সিজেন দ্বারা
গঠিত। শ্বাসের সঙ্গে আমরা যে বায়ু গ্রহণ করি এবং এতে যে শতকরা একুশ ভাগ
অক্সিজেন থাকে, তার মাত্র চার ভাগ আমরা দেহের কাজে লাগাতে পারি। বাকি প্রায়
সতের ভাগ আবার নিঃশ্বাসের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এই অভাব আমাদেরকে
খাদ্যবস্তু দ্বারা পূরণ করতে হয়।
আমরা যদি এমন কিছু প্রক্রিয়া অভ্যাস করতে পারি, যার দ্বারা প্রচুর
পরিমাণে বায়ু শরীরের ভেতরে নিতে পারি এবং তা দেহোপযোগী উপাদানে পরিণত করতে
পারি তবে দেহের খাদ্য বা পুষ্টি-সমস্যা অনেকটা মিটে যায়। আবার যদি গভীরভাবে
রেচক করতে পারি অর্থাৎ নিঃশ্বাস ছাড়তে পারি, তবে দেহের অপ্রয়োজনীয়
কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয়ে যেতে পারে এবং দেহও বিষমুক্ত হয়। কেবল
প্রাণায়াম দ্বারাই এই কাজগুলো যথাযথ করা যেতে পারে। তাই প্রাণায়ামকে উত্তম
শ্বাস-ব্যায়াম বলা হয়। এতে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা ও সহনশীলতা
বৃদ্ধি পায়। সুতরাং প্রাণায়াম অভ্যাস দীর্ঘ ও কর্মক্ষম জীবন লাভের একটি
উৎকৃষ্ট উপায়।
আমাদের শরীরটা একট দেহ-কারখানা। এখানে যেসব যন্ত্র আছে যেমন হৃদযন্ত্র,
স্নায়ু, গ্রন্থি, ধমনী, শিরা, উপশিরা প্রভৃতি, সেগুলো সঠিকভাবে কাজ করলেই
কেবল সুস্বাস্থ্য লাভ সম্ভব। স্বাস্থ্য রক্ষায় স্নায়ুজালের বিরাট ভূমিকা।
শ্বাস-প্রশ্বাস, পরিপাক, রক্ত-রস সঞ্চালন প্রভৃতি কাজ স্নায়ুজালের দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার নালীহীন গ্রন্থিগুলোর ভূমিকাও দেহে কোন অংশে কম নয়।
এইসব গ্রন্থিনিঃসৃত রস দেহকে রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে,
দেহযন্ত্রগুলোকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখে এবং শক্তি যোগায়। এই গ্রন্থিগুলো যদি
প্রয়োজনমতো রস নিঃসরণ না করে, তবে অন্যান্য দেহযন্ত্রের মতো স্নায়ুতন্ত্রও
দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তা একদিন অকেজো হয়ে যায়। তাই নালীহীন গ্রন্থির
সক্রিয়তার উপর স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা নির্ভর করে।
অন্যদিকে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ বায়ু ও রক্ত সংবহন ছাড়া নালীহীন গ্রন্থি
ও স্নায়ুমণ্ডলী সতেজ ও সক্রিয় থাকতে পারে না। শ্বাসযন্ত্র যদি ঠিকমতো কাজ
না করে, আবশ্যকীয় অক্সিজেন ফুসফুসে যেতে পারে না এবং দেহের
কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ইউরিয়া প্রভৃতি বিষও বের হয়ে যেতে পারে না।
শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকযন্ত্র কর্মক্ষম না থাকলে দেহে এইসব বিষ জমতে শুরু
করে। ফলে এক এক করে দেহযন্ত্রগুলো বিকল হয়ে আসতে থাকে। রক্তবাহী
শিরা-উপশিরা এই বিষ ফুসফুসে টেনে আনে এবং নিঃশ্বাসের সঙ্গে তা বের হয়ে যায়।
তেমনি মূত্রাশয় ও মলনাড়ী দেহের বিষ ও অসার পদার্থ বের করে দেয়।
মূত্রাশয় ও মলনাড়ী তলপেটে এবং ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড আমাদের বুকে অবস্থিত।
এর মাঝে রয়েছে শক্ত পেশীর দেয়াল ‘ডায়াফ্রাম’। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে
সঙ্গে এই ডায়াফ্রামের যে উত্থান-পতন হয় এবং তলপেটের পেশীসমূহের যে সঙ্কোচন ও
প্রসারণ হয়, তা দ্বারা প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র প্রভৃতিতে
মৃদু কম্পন ও ঘর্ষণ লাগে। এতে করে এইসব যন্ত্রগুলোর ভালো ব্যায়াম হয়। অতএব,
দেখা যাচ্ছে যে প্রাণায়াম শ্বাসযন্ত্র থেকে শুরু করে দেহের প্রধান প্রধান
যন্ত্রগুলো সবল ও সক্রিয় রাখে। এছাড়া আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এতো অনিয়ম
যে ফুসফুস ঠিকমতো সবখানি উঠানামা করে না। সাধারণভাবে আমরা যখন দম নেই ও
ছাড়ি তখন ফুসফুস অক্সিজেন গ্রহণের দ্বারা ২/৩ অংশ প্রসারিত হয়। ফলে
ফুসফুসের ঠিক প্রয়োজনমতো ব্যায়াম হয় না। এতে ফুসফুস আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে
আসতে থাকে। শ্বাসগ্রহণের সময় রোগ-জীবাণু ঐ দুর্বল ফুসফুসে গিয়ে বাসা
বাঁধার সুযোগ পায়। ফলে দেহে নানা দূরারোগ্য রোগ দেখা দেয়। প্রণায়াম
অভ্যাসের দ্বারা ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের খুব ভালো ব্যায়াম হয় এবং আমরা
ফুসফুসকে সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করতে পারি। ফলে শ্বাসযন্ত্র সবল ও সুস্থ
থাকে আর তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
একজন সুস্থ মানুষের সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি মিনিটে ১৭/১৮ বার।
প্রাণায়াম অভ্যাসের মাধ্যমে এই সাধারণ গতিবিধিকে ইচ্ছামতো কমিয়ে আনতে পারা
যায়। এতে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম পায়। এবং আমরা আমাদের চঞ্চল মনকে শান্ত
করে নিজের কাছে বশীভূত করতে পারি।
প্রাণায়াম অভ্যাস করতে যে চারটি বস্তুর আয়ত্ত একান্ত প্রয়োজন তা হলো-
(১) উপযুক্ত স্থান, (২) বিহিত কাল, (৩) পরিমিত আহার এবং (৪) নাড়ীশুদ্ধি।
এই নাড়ীশুদ্ধি বা নাড়ী শোধন প্রাণায়াম কোন প্রাণায়ামের অন্তর্ভূক্ত না হলেও
যে কোন প্রাণায়াম অভ্যাসের আগে তা অভ্যাস করা বিশেষ প্রয়োজন। নাড়ী শোধন
প্রাণায়াম বা অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম অভ্যাসের ফলে প্রাণায়াম অভ্যাসকারী
খুব সহজেই যে কোন প্রাণায়াম অভ্যাসের পদ্ধতি সহজেই আয়ত্ত করতে পারবে।
প্রাণায়াম অভ্যাসকারীদের যতদূর সম্ভব কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত-
১) সকালে বা সন্ধ্যায় নির্মল বায়ুতে প্রাণায়াম অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়। যেখানে
বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে সকালে সুর্যোদয়ের পূর্বে প্রাণায়াম
অভ্যাস করা উত্তম।
২) প্রাতঃক্রিয়াদির পূর্বে, স্নানের পরে অথবা কোন শ্রমসাধ্য কাজের বা
ব্যায়ামের ঠিক পরে প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিৎ নয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে
তবেই তা করা যেতে পারে।
৩) ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় প্রাণায়াম করা আবশ্যক নয়। এরূপ ক্ষেত্রে কফ্-প্রবণ
ব্যক্তির রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত প্রাণায়াম করা নিষেধ। তবে, রোদ উঠলে
করা যেতে পারে।
৪) ভরপেটে আসন, মুদ্রা, প্রাণায়াম কোনটাই করা উচিৎ নয়।
৫) শীর্ষাসনের পরে যেমন আর কোন আসন করা ঠিক নয়, তেমনি প্রাণায়ামের পর তখনকার মতো আর কোন ব্যায়াম করা উচিৎ নয়।
৬) প্রাণায়াম আট-নয় বছর বয়স থেকে আজীবন করা যেতে পারে। তবে অধিক বয়সে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
৭) তাড়াহুড়ো করে, চিন্তাযুক্ত মন নিয়ে প্রাণায়াম, আসন, মুদ্রা কোনটাই করা
ঠিক নয়। মন শান্ত, ধীর ও চিন্তাশূন্য রাখার চেষ্টা করতে হবে। আসন ও মুদ্রার
মতো প্রাণায়াম অভ্যাসের সময়ও একাগ্রতা থাকা আবশ্যক।
প্রাণায়াম চার প্রকার- (১) সহজ প্রাণায়াম, (২) লঘু প্রাণায়াম, (৩) বৈদিক
প্রাণায়াম ও (৪) রাজযোগ প্রাণায়াম। কোন গৃহীর পক্ষে এই চার ধরনের
প্রাণায়াম আয়ত্ত করা সহজসাধ্য নয়। সদগুরু বা প্রাণায়াম সিদ্ধ যোগীর সাহায্য
ব্যতীত কেবল বই পড়ে কোন শিক্ষার্থীর পক্ষে বৈদিক ও রাজযোগ প্রাণায়াম
অভ্যাস করা উচিত নয়। এতে বিপদের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। রাজযোগ প্রাণায়াম
সাধারণতঃ গৃহীদের পক্ষে নিষিদ্ধ। কেবল যোগী ও সাধকই এই প্রাণায়াম অভ্যাসের
অধিকারী। প্রথমোক্ত দু’ধরনের অর্থাৎ সহজ ও লঘু প্রাণায়ামই কেবল গৃহীরা দিনে
দুইবার সকাল ও সন্ধ্যায় অভ্যাস করতে পারে।
লঘু প্রাণায়াম
লঘু প্রাণায়াম (Laghu Pranayama):
নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে সহজ প্রাণায়ামে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর লঘু
প্রাণায়াম অভ্যাস করা যেতে পারে। লঘু প্রাণায়ামে (Laghu Pranayama) দম নেয়া
বা পূরক (Puraka), দম আটকে বায়ু ধারণ করে রাখা বা কুম্ভক (Kumbhaka) এবং
দম ছাড়া বা রেচক (Rechaka) প্রক্রিয়া যথানিয়মে অনুসরণ করতে হয়।
এর মধ্যে কুম্ভক (Kumbhaka) বা দম আটকে রাখার সময় ও প্রক্রিয়া যথাযথ না
হলে পূরকান্ত-কুম্ভকে রক্তে ক্ষতিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে
এবং রেচকান্ত-কুম্ভকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ঘাটতির কারণে শরীরে সৃষ্ট তীব্র
স্নায়ুচাপে সহনশীলতার পর্যায় ছাড়িয়ে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে বলে সদগুরুর
তত্ত্বাবধান ছাড়া কুম্ভক প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিত নয়। যোগশাস্ত্রীদের
মতে ‘হঠযোগ-প্রদীপিকা’ (Hatha Yoga Pradipika) গ্রন্থে উল্লেখিত লঘু
প্রাণায়াম আট ধরনের। যথা- ১.০ সূর্যভেদ (Surya Bhedan), ২.০ উজ্জায়ী
(Ujjayi), ৩.০ সীৎকারী (Sitkari), ৪.০ শীতলী (Shitali), ৫.০ ভ্রামরী
(Bhramari), ৬.০ ভস্তিকা (Bhastrika), ৭.০ মূর্চ্ছা (Moorcha) ও ৮.০
প্লাবনী (Plavini)।
এক্ষেত্রে একান্তই উল্লেখিত প্রাণায়ামের অভ্যাস করতে হলে কুম্ভক প্রক্রিয়া
বাদ দিয়ে শুধু পূরক ও রেচক ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথম পাঁচটি প্রাণায়াম
সতর্কতার সাথে অভ্যাস করা যেতে পারে। সাধারণ অভ্যাসকারীদের জন্য শেষোক্ত
তিনটি প্রাণায়াম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
(০১) সূর্যভেদ প্রাণায়াম (Surya Bhedan Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে
বাম নাসাপুট বন্ধ করুন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দক্ষিণ নাসাপুটের উপর আলতোভাবে
রাখুন। এবার পিঙ্গলা নাড়ী অর্থাৎ দক্ষিণ নাসাপুট দিয়ে ধীরে ধীরে দমভোর
শ্বাসগ্রহণ বা পুরক করুন। পুরকান্তে অর্থাৎ শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে আকর্ষিত
বায়ু জালন্ধরবন্ধ, উড্ডীয়ানবন্ধ ও মূলবন্ধ এই তিনটি মুদ্রা দ্বারা ধারণ করে
নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী ১০/১৫ সেকেন্ড দম আটক বা কুম্ভক করুন- যে পর্যন্ত না
পায়ের নখ হতে মাথার চুল পর্যন্ত দেহস্থ সমস্ত নাড়ী’র বায়ু রোধ হয়।
এরপর বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা দক্ষিণ নাসাপুট বন্ধ করে অনামিকা ও কনিষ্ঠা
আঙুল আলগা করে ইড়া নাড়ী দ্বারা অর্থাৎ বাম নাসাপুট দিয়ে ধীরে ধীরে
শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন। শ্বাস ছাড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে- পূরকে যত সময়
লেগেছে রেচক অভ্যাসকালে যেন তার চেয়ে সময় বেশি না লাগে। অর্থাৎ পূরক,
কুম্ভক ও রেচকের সময়ানুপাত হবে ২ ঃ ১ ঃ ২। তাড়াহুড়ো করে রেচক অভ্যাস করা
যাবে না।
এইভাবে নিজ নিজ সামর্থমতো ৪ থেকে ৬ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় চিন্তা করতে হবে- আমার যত রোগ-ব্যাধি ও দুর্বলতা সব
দূর হয়ে যাচ্ছে এবং আমার শরীর এক অসীম প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে স্নায়ুর দুর্বলতা দূর হয়ে দেহ সবল হয়ে উঠে। ফুসফুস,
পাকস্থলী ও যকৃত সুস্থ সবল হয়ে ওঠে, এরা সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।
ক্ষুধামন্দা রোধ করে, কৃমি নাশ করে। দেহের মেদ হ্রাস এবং নাসাতন্ত্রের
যাবতীয় রোগ নিরাময় করে শ্লেষ্মাদোষ নাশ করে।
(০২) উজ্জায়ী প্রাণায়াম (Ujjayi Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার মুখ বন্ধ রেখে গলা
বা ভোকাল কর্ড হতে সশব্দে উভয় নাক দিয়ে বুক ভরে শ্বাসগ্রহণ বা পূরক করুন।
শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে চিবুক কণ্ঠকূপে রেখে জালন্ধরবন্ধ অবস্থায় বস্তিপ্রদেশের
স্নায়ুগুলোকে আকর্ষণ করে নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড
পর্যন্ত বায়ুধারণ বা কুম্ভক করুন। এবার স্নায়ুর আকর্ষণ শিথিল করে এবং
বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ডান নাসাপুট বন্ধ করে বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে
শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন।
এভাবে উভয় নাক দিয়ে ৬ থেকে ১২ বার প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় চিন্তা করতে হবে- আমার স্খলনদোষ দূর হয়ে যাচ্ছে এবং
আমি উর্ধ্বরেতা হয়ে উঠছি। আর মেয়েরা চিন্তা করবে- আমার রতিগ্রন্থির রসাদির
অনিচ্ছাকৃত ক্ষরণ এবং প্রদরাদি রোগ আরোগ্য হচ্ছে এবং আমি কামজয়ী হয়ে উঠছি।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুসের ভালো কাজ হয়, সর্দি-কাশি নিরাময় হয় এবং
ইনফুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, টাইফয়েড প্রভৃতি কফরোগ ও হাঁপানি সেরে
যায়। স্ত্রী পুরুষের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং জরা রোধ হয়। উচ্চরক্তচাপ
রোগের ক্ষেত্রে এই প্রাণায়ামে আশ্চর্য সুফল পাওয়া যায়।
(০৩) সীৎকারী প্রাণায়াম (Sitkari Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে বসে মুখ ও ঠোঁট সরু করে পরস্পর সংলগ্ন
করুন এবং জিহ্বার অগ্রভাগ সরু হয়ে থাকা মুখ ও ঠোঁটের সাথে স্থাপন করুন।
এবার মুখ দিয়ে একটানা সি সি সি শব্দ করতে করতে বেশ জোরের সঙ্গে ধীরে ধীরে
মুখ দিয়েই বুক ভরে পূরক বা শ্বাস নিতে থাকুন। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে ৫/১০
সেকেন্ড বায়ু ধারণ বা কুম্ভক করে অতঃপর উভয় নাক দিয়ে শ্বাস ত্যাগ বা রেচক
করুন। এভাবে নিজ সামর্থ অনুযায়ী চার থেকে ছয় মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস
করুন।
চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় চিন্তা করতে হবে- আমার আলস্য নিদ্রা ও তমোভাব দূর হয়ে যাচ্ছে এবং আমার দেহমন দিব্য-শক্তির অধিকারী হয়ে উঠছে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে আলস্য, নিদ্রা, জড়তা ও শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়ে দেহ
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও বলশালী হয়। যোগশাস্ত্রীদের মতে এই প্রাণায়াম অভ্যাসে
দেহ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত হওয়ায় পুরুষেরা কামদেবের মতো রূপবান এবং মেয়েরা
অসামান্যা রূপবতী হন।
(০৪) শীতলী প্রাণায়াম (Shitali Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার মুখ ও ঠোঁট
পাখির ঠোঁটের মতো সরু করে জিহ্বাগ্র মুখের একটু বাইরে নিয়ে আসুন এবং মুখ
দিয়ে বেশ জোরে ও ধীরে ধীরে দমভোর পূরক বা শ্বাসগ্রহণ করুন। পূরক বা
শ্বাসগ্রহণ শেষে আকর্ষিত বায়ু জালন্ধরবন্ধ, উড্ডীয়ানবন্ধ ও মূলবন্ধ এই
তিনটি মুদ্রা দ্বারা ধারণ করে নিজ সামর্থানুযায়ী ১০/১৫ সেকেন্ড কুম্ভক
করুন, যে পর্যন্ত না পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত দেহস্থ নাড়ীগুলোর
বায়ু রোধ হয়। এরপর উভয় নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন। এভাবে
নিজ নিজ সামর্থমতো ৫/৬ মিনিট ধরে প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় সীৎকারী প্রাণায়ামের মতোই চিন্তা করতে হবে- আমার
আলস্য নিদ্রা ও তমোভাব দূর হয়ে যাচ্ছে এবং আমার দেহমন দিব্য-শক্তির অধিকারী
হয়ে উঠছে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাস রক্ত শুদ্ধ হয় এবং দারুণভাবে প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
পিত্তরোগীদের জন্য, যাদের হাতে পায়ে গায়ে জ্বালা বোধ হয় তাদের জন্য এই
প্রাণায়াম বিশেষ উপকারী। চর্মরোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং উচ্চরক্তচাপ
রোগীদের জন্য আশ্চর্য সুফল আনে, তবে তাদের জন্য কুম্ভক বাদ দিয়ে শুধু পূরক ও
রেচক অভ্যাস বাঞ্ছনীয়।
নিষেধ:
ঠাণ্ডা আবহাওয়া কিংবা শীতকালে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত এই প্রাণায়াম অভ্যাস
করা নিষেধ। কফপ্রধান ব্যক্তিদের জন্যেও প্রাণায়ামটি করা উচিত নয়।
(০৫) ভ্রামরী প্রাণায়াম (Bhramari Pranayama):
পদ্ধতি:
বজ্রাসন বা সুখাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার দু’হাতের বৃদ্ধাঙুল বা তর্র্জনি
দিয়ে দু’কানের ছিদ্র হালকাভাবে বন্ধ করে নিন। এখন দুই নাক দিয়ে দম ভরে পূরক
বা শ্বাস গ্রহণ করুন। পুরক শেষে আকর্ষিত বায়ু ধারণ করে ৮/১০ সেকেন্ড
কুম্ভক করুন।
এরপর ধীরে ধীরে ভ্রমরের ডাকের মতো শব্দ করতে করতে দুই নাক দিয়ে রেচক বা
শ্বাস ত্যাগ করুন। আবার পূরক বা স্বাভাবিক দম নিয়ে ৮/১০ সেকেন্ড কুম্ভক করে
ধীরে ধীরে পুনরায় ভ্রমরের ডাকের মতো শব্দ করতে করতে শ্বাসত্যাগ বা রেচক
করুন। রেচকের সময় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ড যখন
কাঁপবে তখন স্বরযন্ত্রের কম্পন যেন আমাদের কানের পর্দা বা টিমপ্যানিক
মেমব্রেন-এ অনুভূত হয়।
এইভাবে পূরক, কুম্ভক ও রেচক অভ্যাস করলে একবার ভ্রামরী অভ্যাস করা হয়।
প্রতি দফায় পাঁচবার পূরক, কুম্ভক ও রেচক করে এই প্রাণায়াম চার দফায় অভ্যাস
করুন। প্রতি দফা অভ্যাসের পর ১৫ সেকেন্ড করে শবাসন অভ্যাস করতে হবে।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে শ্রবণেন্দ্রিয় সতেজ থাকে, গলার স্বর মিষ্ট
হয় এবং গলায় শ্লেষ্মা জমতে পারে না। যারা কানে কম শোনে, এই প্রাণায়াম
অভ্যাসে শ্রবণেন্দ্রিয়ের উন্নতি হয় এবং স্বাভাবিক শ্রবণক্ষমতা ফিরে আসে।
(০৬) ভস্তিকা প্রাণায়াম (Bhastrika Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার ডানহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাক চেপে ধরে
বাঁ নাক দিয়ে সজোরে থেমে থেমে কপালভাতি প্রাণায়ামের অনুরূপ দ্রুত রেচক বা
শ্বাস ত্যাগ করে উদর বায়ুশূন্য করুন এবং পেট ও তলপেট আকুঞ্চিত করে
মেরুদণ্ডের সাথে লাগানোর চেষ্টা করুন। পেটের পেশীতে যেন হঠাৎ টান না পড়ে।
রেচকান্তে ডান নাক থেকে বুড়ো আঙুল আলগা করে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে
বাঁ নাক চেপে ধরে আকুঞ্চন শিথিল করে ডান নাক দিয়ে বুক ভরে দ্রুত দম নিয়ে
পূরক করুন। পুরকান্তে চিবুক কণ্ঠকূপে স্থাপন করে আকর্ষিত বায়ু জালন্ধরবন্ধ
করে নিজ সাধ্যানুযায়ী কুম্ভক করুন। এরপর আবার বাঁ নাক মুক্ত করে বুড়ো আঙুল
দিয়ে ডান নাক চেপে বাঁ নাক দিয়ে সজোরে দ্রুত রেচক বা শ্বাসত্যাগ করুন।
এভাবে ২/৩ বার প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
(০৭) মূর্চ্ছা প্রাণায়াম (Moorcha Pranayama):
(০৮) প্লাবনী প্রাণায়াম (Plavini Pranayama): ভ্রমণ প্রাণায়াম
ভ্রমণ-প্রাণায়াম (Bhramana-Pranayama):
কুম্ভক ছাড়া পূরক ও রেচকসহ যে প্রাণায়াম অভ্যাস করতে হয় তাকেই সহজ
প্রাণায়াম (Sahaja Pranayama) বলে। তাই কুম্ভকের ব্যবহার নেই বলে
ভ্রমণ-প্রাণায়াম এই সহজ-প্রাণায়ামেরই অন্তর্ভূক্ত।
পদ্ধতি:
মেরুদণ্ড সরল ও টানটান রেখে সোজা হয়ে সমান তালে হাঁটুন। হাঁটার সময় প্রতি ৪
(চার) পদক্ষেপের সাথে সাথে মনে মনে ১, ২, ৩, ৪ গুনতে হবে এবং একই সাথে উভয়
নাক দিয়ে পুরক বা শ্বাস গ্রহণ করুন। পুরক বা শ্বাসগ্রহণ শেষ হওয়া মাত্রই
আবার ৪ (চার) পদক্ষেপের সঙ্গে আগের মতো মনে মনে ১, ২, ৩, ৪ গুনার সাথে সাথে
উভয় নাক দিয়ে রেচক বা শ্বাস ত্যাগ করুন। ৩/৪ সপ্তাহ এভাবে অভ্যাসের পর
এবার ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে পুরক বা শ্বাস নিতে হবে, কিন্তু রেচক বা
শ্বাস ছাড়ার সময় ১, ২, ৩, করে ৬ পর্যন্ত গুনতে হবে এবং সময় নিতে হবে। আবার
কিছুদিন অভ্যাসের পর এভাবে ৬ পর্যন্ত গুনে শ্বাস নিতে হবে এবং শ্বাস ছাড়তে
হবে ৮ পর্যন্ত গুনে। এভাবে আরো কিছুদিন অভ্যাসের পর ৮ পদক্ষেপ পর্যন্ত
পুরক বা শ্বাস নেয়া এবং ১২ পদক্ষেপ পর্যন্ত রেচক বা শ্বাস ছাড়ার অভ্যাস
রপ্ত হয়ে গেলে সাধ্যে কুলালে একইভাবে ১২ পদক্ষেপ পর্যন্ত পুরক বা শ্বাস
গ্রহণ এবং ১৮ পদক্ষেপ পর্যন্ত রেচক বা শ্বাস ছাড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
এরপর আর মাত্রা বাড়াবার দরকার হয় না। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ অভ্যাসের
মাধ্যমে এভাবে হাঁটাকে ভ্রমণ-প্রাণায়াম বলে। এই ভ্রমণ-প্রাণায়াম নিজ নিজ
সামর্থানুযায়ী ১০/১৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টাও করা যেতে পারে। কিংবা অভ্যাসের
সময়কাল আরো বাড়ালেও কোন ক্ষতি হয় না।
ক্ষতি তখনই হবে যদি প্রাণায়ামটি অভ্যাসের সময় হাঁপ ধরে যায়। কেননা
প্রাণায়াম অভ্যাস সব সময়ই আয়াসহীন হওয়া চাই। হাঁপ ধরে গেলে স্বাভাবিক
নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস রেখে বিশ্রাম নিতে হবে। প্রাণায়ামটি অভ্যাসের সময় যদি
বাঁ বুকে একটু চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হয়, বুঝতে হবে, ফুসফুসের ক্ষমতা
অনুযায়ী মাত্রা বেশি হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ওইদিন ওইখানেই অভ্যাস বন্ধ
রাখতে হবে। একদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে এক মাত্রা কমিয়ে পুনরায় শুরু করতে
হবে।
এ প্রাণায়াম প্রাতে ও সন্ধ্যায় খোলা বা মুক্ত স্থানে, মাঠে বা ধূলাবিহীন রাস্তায় নির্মল বায়ুতে অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়।
উপকারিতা:
এই ভ্রমণ-প্রাণায়াম সবার পক্ষে বিশেষ উপকারী। বয়স্ক বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের
জন্য তা মৃতসঞ্জীবনীর কাজ করে থাকে। তবে তার মাত্রা স্বাস্থ্যানুযায়ী হতে
হবে। অন্যান্য প্রাণায়ামে যত রকমের উপকার রয়েছে তার প্রায় সবই এই
ভ্রমণ-প্রাণায়ামে রয়েছে। নিয়মিত ও নিয়মানুযায়ী প্রাণায়ামটি অভ্যাস রাখলে
যক্ষ্মা, হাঁপানি, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি রোগ কখনোই হতে পারে না এবং ফুসফুস ও
হৃদযন্ত্রাদি অধিক কর্মক্ষম থাকে। রক্ত অধিকতর পরিশোধিত হয়।
অন্য ব্যায়াম না করেও কেবল ভ্রমণ-প্রাণায়াম অভ্যাস রাখলে দেহ চমৎকার
রোগমুক্ত থাকে। যে কোন রোগ থেকে আরোগ্যের পরপরই এই প্রাণায়াম অভ্যাস করলে
রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার সহজ হয়। সহজ প্রাণায়াম
সহজ প্রাণায়াম (Sahaja Pranayama):
কুম্ভক ছাড়া পূরক ও রেচকসহ যে প্রাণায়াম অভ্যাস করতে হয় তাকেই সহজ
প্রাণায়াম (Sahaja Pranayama) বলে। সহজ প্রাণায়াম অভ্যাসে একটু ভুলত্রুটি
হলেও কোন প্রকার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে না। তাই বালক, বৃদ্ধ এমন কি
দুর্বল রোগীরা পর্যন্ত নির্দ্বিধায় এই প্রাণায়াম অভ্যাস করতে পারে। সহজ
প্রাণায়াম অনেক ধরনের হয়ে থাকে। এ ধরনের কয়েকটি সহজ প্রাণায়ামের অভ্যাসবিধি
দেয়া হলো-
সহজ প্রাণায়াম।০১।
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার উভয় নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণ
বা পুরক করুন। পুরকান্তে অর্থাৎ শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে
কিন্তু গভীরভাবে শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন। এইভাবে নিজ নিজ সামর্থমতো ২ থেকে
৫ মিনিট ধরে নাক দিয়ে বায়ু গ্রহণ বা পুরক করুন এবং মুখ দিয়ে ত্যাগ বা রেচক
অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃত সুস্থ সবল হয়ে ওঠে, এরা সহজে
রোগাক্রান্ত হয় না। প্রাণায়ামটি অভ্যাসে রাখলে খোস, পাঁচড়া, ফোঁড়া
প্রভৃতি রোগ হতে পারে না, আর এ সব রোগ থাকলেও অল্পদিনেই তা ভালো হয়ে যায়।
সহজ প্রাণায়াম।০২|
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন সহজ আসনে মেরুদণ্ড সরল ও সোজা রেখে বসুন। এবার চিবুক
উর্ধ্বে তুলে উভয় নাক দিয়ে সশব্দে বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ বা পুরক করুন।
শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে চিবুক কণ্ঠকূপে রাখুন এবং উভয় নাক দিয়ে সশব্দে শ্বাস
ত্যাগ বা রেচক করুন। এখন আবার চিবুক উঁচু করুন এবং একইভাবে শ্বাস গ্রহণ করে
চিবুক কণ্ঠকূপে রেখে শ্বাস ত্যাগ করুন। এভাবে সহজভাবে নিজ নিজ সামর্থ
অনুযায়ী দুই থেকে চার মিনিট বা যতটুক পারুন অভ্যাস করুন।
প্রাণায়ামটি ভালোভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে শ্বাসগ্রহণ বা পুরকের সময়ের চেয়ে শ্বাসত্যাগ বা রেচকের সময় একটু বেশি নেবে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুসের ভালো কাজ হয়, সর্দি-কাশি নিরাময় হয় এবং
ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ সহজে হতে পারে
না, প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
সহজ প্রাণায়াম।০৩|
পদ্ধতি:
পদ্মাসন, বজ্রাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে বসুন। এবার উভয় নাক দিয়ে বুক ভরে
শ্বাস গ্রহণ বা পুরক করুন। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে মুখ ও ঠোঁট পাখির চঞ্চু বা
ঠোঁটের মতো ছোট করে সজোরে এবং থেমে থেমে শ্বাস ত্যাগ বা রেচক করুন।
অর্থাৎ অল্প বায়ু ত্যাগ করে একটু থামুন, আবার অল্প বায়ু ত্যাগ করুন। এভাবে
শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে দুই থেকে তিন মিনিট বা ৬/৭ বার প্রাণায়ামটি অভ্যাস
করুন।
উপকারিতা:
যোগশাস্ত্রীদের মতে এই সহজ প্রাণায়ামে অভ্যাসে বিভিন্ন রকমের কাশি, সর্দি,
ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, প্লুরিসি, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড,
ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি বিশ রকমের কফরোগ নিরাময় হয়। শ্বাসনালী সতেজ ও সুস্থ
থাকে, মুখের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং মুখের যাবতীয় ব্যাধি এমনকি মুখের
পক্ষাঘাত জাতীয় রোগ পর্যন্ত নিরাময় হয়।
সহজ প্রাণায়াম।০৪|
পদ্ধতি:
পদ্মাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে বসুন। এবার অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে
উভয় নাক দিয়ে সাধ্যমতো বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ বা পুরক করুন। শ্বাসগ্রহণ শেষে
মুখের পেশী ও স্নায়ুর উপর জোর দিয়ে হাঁ করে মুখ দিয়ে সজোরে শ্বাস ত্যাগ বা
রেচক করুন। এভাবে নিজ নিজ সামর্থমতো ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস
করুন।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাস কণ্ঠস্বরে মাধুর্য্যতা বাড়ায়। বিশেষ করে সঙ্গীত
শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা বজায় রাখতে এবং কণ্ঠের কম্পন আয়ত্ত করতে
সাহায্য করে।
সহজ প্রাণায়াম।০৫|
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার রেচক প্রক্রিয়ায় বা
শ্বাস ত্যাগ করতে করতে পেট বা উদর বায়ুশূন্য করুন। শ্বাসত্যাগ শেষ হলে এখন
উদর ও তলপেট বা নাভিপ্রদেশ সাধ্যমতো মেরুদণ্ডের সাথে লাগাতে আকুঞ্চন করতে
করতে উভয় নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণ বা পুরক করতে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে
আকুঞ্চনের সময় যেন উদরের পেশীতে টান না পড়ে। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে ধীরে ধীরে
শ্বাসত্যাগ বা রেচকের সঙ্গে সঙ্গে উদর ও নাভিপ্রদেশের আকুঞ্চন শিথিল করে
দিন। এভাবে প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে যাবতীয় অজীর্ণতা দূর
করে এবং উদর ও নাভিপ্রদেশের স্নায়ু ও পেশীগুলোকে সতেজ ও সবল করে অপ্রয়োজনীয়
চর্বি জমতে দেয় না। প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয়, অগ্ন্যাশয়, যৌনগ্রন্থি
প্রভৃতি সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। হাঁপানী রোগীদের জন্যেও তা বিশেষ উপকারী।
সহজ প্রাণায়াম।০৬|
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার দমভরে পুরক বা শ্বাস
নিতে থাকুন এবং একইসাথে তলপেট বা নাভিপ্রদেশ আকুঞ্চন করে ভেতরের দিকে টেনে
নিন। শ্বাস নেয়া শেষ হলে নাক বন্ধ করে মুখে ফু দিয়ে রেচক বা শ্বাসত্যাগ
করুন এবং নাভিপ্রদেশ শিথিল করে দিন। এভাবে ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি
অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম অভ্যাসে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং যাবতীয় পেটের পীড়া নিরাময়
করে। পেট ও তলপেটের মাংসপেশী দৃঢ করে এবং এ অঞ্চলের স্নায়ুজাল সক্রিয় রাখে।
প্লীহা, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, মূত্রাশয় ও যৌনগ্রন্থি সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। এ
প্রাণায়াম দেহের কুপিত বায়ু সহজে বের করে দেয। রাত্রে যাদের ভালো ঘুম হয়
না, নাক-মুখ দিয়ে গরম হাওয়া বের হয়, তাদের জন্য এই প্রাণায়ামটি অত্যন্ত
উপকারী।
সহজ প্রাণায়াম।০৭|
পদ্ধতি:
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁ হাত বাঁ বুকের উপর এবং ডান হাত ডান বুকের উপর রাখুন।
কনুই দুটোকে পেছনদিকে যথাসাধ্য ভেঙে রাখুন। এখন উভয় নাক দিয়ে ধীরে ধীরে ও
গভীরভাবে পুরক বা শ্বাস নিতে থাকুন। যতক্ষণ শ্বাস নেয়া অব্যাহত থাকবে
ততক্ষণ বুক ও হাতের পেশী ও স্নায়ু সটান থাকবে। এবার ধীরে ধীরে রেচক বা
শ্বাসত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে ওগুলো শিথিল করে দিন। এভাবে ২ থেকে ৪ মিনিট
প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুস ও শ্বাসক্রিয়া সতেজ ও সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে
বুকের গড়ন সুঠাম ও সুন্দর করে। বয়েস অনুযায়ী যাদের বুক সরু বা অপরিণত,
তাদের জন্য প্রাণায়ামটি খুবই উপকারী।
সহজ প্রাণায়াম।০৮|
পদ্ধতি:
পা দুটো জোড়া করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এখন হাত দুটো কাঁধ বরাবর সামনে উপরে
তুলুন। এবার রেচক বা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কিছুটা নত হয়ে দু’হাত দিয়ে দু’
হাঁটু স্পর্শ করুন। প্রক্রিয়াটা এমনভাবে হবে যেন শ্বাসত্যাগও শেষ হবে আর
হাতও হাঁটু স্পর্শ করবে। এখন পুরক বা শ্বাস নিতে নিতে সোজা হয়ে দাঁড়ান যেন
শ্বাস নেয়াও শেষ হয় এবং সেই সঙ্গে দেহটাও সোজা হয়। এভাবে ২ থেকে ৫ মিনিট
প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
প্রাণায়ামটি অভ্যাসে বিশেষ করে ফুসফুসের বায়ুধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং যক্ষ্মারোগ প্রতিরোধ করে।
সহজ প্রাণায়াম।০৯|
পদ্ধতি:
পা দুটো জোড়া রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো পাঁজরের দু’পাশে লম্বা
করে রাখুন। এখন ধীরে ধীরে ও গভীরভাবে পুরক বা শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো
উপরদিকে তুলুন এবং মাথার পেছনদিকে নিয়ে লম্বা করে মাটিতে রাখুন।
প্রক্রিয়াটি এমনভাবে হবে যেন শ্বাস নেয়াও শেষ হবে আর হাত দুটোও মাথার পেছনে
মাটিতে লাগবে। এরপর রেচক বা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত দুটো পূর্বাবস্থায়
পাঁজরের দু’পাশে মাটিতে রাখুন যেন শ্বাসত্যাগও শেষ হয় এবং হাত দুটোও
পূর্বাবস্থায় মাটিতে আসে। এভাবে ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
এবার হাত দুটোকে বিশ্রাম দিয়ে পা দুটো দিয়ে অভ্যাস করুন। প্রথমে পুরক বা
শ্বাস নিতে নিতে ডান পায়ের হাঁটু না ভেঙে সোজা অবস্থায় রেখে যতদুর সম্ভব
উপরে তুলুন। এরপর রেচক বা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা’টিকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে
আসুন। এখন বাঁ পা দিয়েও একইভাবে অভ্যাস করুন। এভাবে পা বদল করে করে করে ২
থেকে ৪ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
তারপর দু’ পা একসঙ্গে করে একই ভাবে প্রাণায়ামটি ২/৩ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুসের বায়ুধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হাত, পা ও
তলপেটের পেশী দৃঢ় ও সবল করে এবং এসব অঞ্চলের স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে।
সর্দি কাশি নিরাময় করতেও এ প্রাণায়াম উপকারী।
সহজ প্রাণায়াম।১০|
পদ্ধতি:
শবাসনে শুয়ে দেহটাকে শিথিল করে দিন। হাত দুটো পরস্পর অঙ্গুলিবদ্ধ করে নাভির
উপর রাখুন। এবার উভয় নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দমভরে পুরক বা শ্বাস গ্রহণ করুন।
শ্বাসগ্রহণ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে রেচক বা শ্বাসত্যাগ করুন। পুরক
বা শ্বাসগ্রহণকালে চিন্তা করতে হবে- বায়ুস্থ প্রাণশক্তি আমার দেহের মধ্যে
প্রবেশ করে নাভিদেশে অবস্থিত সূর্যগ্রন্থি বা প্যাংক্রিয়াস গ্ল্যান্ডে জমা
হচ্ছে এবং শ্বাস ত্যাগ বা রেচককালে মনে করতে হবে- সূর্যগ্রন্থিতে সঞ্চিত
প্রাণ-শক্তি দেহের প্রতিটা রন্ধ্র, গ্রন্থি, স্নায়ু ও শিরা-উপশিরায়
পরিব্যাপ্ত হয়ে গোটা দেহকে প্রাণবন্ত করে চলেছে এবং দেহে সঞ্চিত দূষিত
পদার্থ ও রোগ জীবাণু বিষ বায়ুর সঙ্গে বের হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে প্রাণায়ামটি নিজ সামর্থমতো ৫ থেকে ১০ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
নিয়মিত এ প্রাণায়ামের অভ্যাস নীরোগ দেহ এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি-চিন্তাশক্তি
সম্পন্ন বলিষ্ঠ মন গঠনে বিশেষভাবে সহায়তা করে। দেহ ও মনকে প্রশান্তিময় করে
তোলে। কপালভাতি kapalbhati
কপালভাতি (Kapalbhati): কপালভাতিকে কেউ কেউ সহজ প্রাণায়ামও বলে থাকেন।
পদ্ধতি: পদ্মাসনে চোখ বন্ধ রেখে সোজা হয়ে বসুন। এবার উভয় নাক দিয়ে কর্মকারদের হাপরের মতো দ্রুত শ্বাস নেয়া ছাড়ার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রকে সশব্দে দ্রুত বায়ুপূর্ণ এবং পরক্ষণেই বায়ুশূন্য করতে থাকুন। এক্ষেত্রে দম নেয়ার চাইতে দম ছাড়া হবে বেশি পরিমাণে এবং খুব জোরের সঙ্গে। দম নেয়া ও ছাড়ার সময় মেরুদণ্ড, বুক ও কাঁধ যতটা সম্ভব স্থির থাকবে এবং তলপেট হাপরের মতোই ভিতরে বাইরে দ্রুত আসা-যাওয়া করবে। নতুন শিক্ষার্থীরা সামর্থ্য অনুযায়ী প্রথম প্রথম মিনিটে ১৫/২০ বার দম ছাড়া ও নেয়ার মাত্রা রাখতে পারেন। কিছুদিন অভ্যাসের পর সামর্থ্য বাড়ার সাথে সাথে এই হার মিনিটে ৫০/৬০ বার থেকে ১২০ বার পর্যন্ত অভ্যাস করতে পারেন।
উপকারিতা: কপালভাতি অভ্যাসে কপালে সর্দি জমতে পারে না এবং কফ্ দোষ বিনষ্ট হয়। এতে সাইনাস হবার সম্ভাবনা থাকে না এবং সাইনাস থাকলে তা দ্রুত সেরে যায়। এছাড়াও হৃদযন্ত্র সবল হয়, পেটের মেদ কমায় এবং কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
বাতসার(Batasara):
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার ঠোঁট দুটো কাকের ঠোঁটের মতো ছুঁচালো করে
ধীরে ধীরে দম নিতে নিতে বায়ু পান দ্বারা উদর পূর্ণ করুন। এবং পরক্ষণেই মুখ
দিয়ে বায়ু ত্যাগ করুন। এভাবে ধৌতিটি ৮/১০ বার অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
বাতসার অভ্যাস শরীরকে নির্মল করে। যোগশাস্ত্রীদের মতে বাতসার সর্বপ্রকার
রোগ দূর করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে.
|