বেদের সংহিতা, বাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ সঠিক ও শুদ্ধভাবে পাঠের সহায়ক গ্রন্থকে বেদাঙ্গ বলে। বেদের শব্দবোধ, অর্থবোধ, কাজের সাথে মন্ত্রের সম্বন্ধ, পাঠের রীতি প্রভৃতি ব্যাপরে এ সকল গ্রন্থ অপরিহার্য বলে এদের নাম বেদাঙ্গ। বেদাঙ্গ ছয়টি-শিক্ষা, কল্প নিরুক্ত, ব্যাকরণ, ছন্দ ও জোত্যিষ। এক একটি অঙ্গ দ্বারা এক কাজ সাধিত হয় বলে বেদাঙ্গকে বেদের অঙ্গ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
শিক্ষা
ছয় বেদাঙ্গের মধ্যে শিক্ষাকে প্রথম স্থান দেওয়া হয়েছ। বেদের বর্ণ, স্বর, মাত্রা ইত্যাদীর যথাযথ উচ্চারণ ও প্রয়োগবিধি লিপিবদ্ধ যাতে আছে তাকে শিক্ষা বলে। আধুনিক অর্থে ‘শিক্ষা’ কে ধ্বনির উচ্চারণতত্ত্ব বলা যেতে পারে। প্রত্যেক বেদের পৃথক পৃথক ‘শিক্ষা’ আছে বেদমন্ত্রের সঠিক উচ্চারণের নিয়মাবলী যে আলোচিত তাই শিক্ষা। বেদ মন্ত্রগুলো যাতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তার জন্য ‘শিক্ষা’ একান্ত প্রয়োজন।
নিরুক্ত
ছয় বেদাঙ্গের মধ্যে নিরুক্ত নামক বেদাঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই গ্রন্থ যাস্ক নামক ঋষি কর্তৃক রচিত। বৈদিক মন্ত্রের অর্থ বুঝার জন্য যে শাস্ত্র সৃষ্টি হয়েছে তাকে নিরুক্ত বলে। নিরুক্তকে বৈদিক অভিধান বলা যেতে পারে। নিরুক্ত তিনটি কান্ডে বিভক্ত : যথাক্রমে নৈঘন্টুক কাণ্ড, নৈগম কাণ্ড ও দৈবত কাণ্ড।
ব্যাকরণ
বেদের মন্ত্র সঠিকভাবে উচ্চারণের জন্য ব্যাকরণ নামক বেদাঙ্গের প্রয়োজন। প্রকৃতি, প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস, শব্দরূপ, ধাতুরূপ প্রভৃতির জ্ঞান না থাকলে কখনও বেদের মন্ত্র আয়ত্ত করা যাবে না। পদের গঠন, বিশুদ্ধতা ও প্রয়োগ পদ্ধতি জানা না থাকলে বেদ অনুধাবন করা যাবে না। এ কারণেই ব্যাকরণ বেদপাঠের আরকটি নিত্য সহায়ক গ্রন্থ।
ছন্দ
ছয় বেদাঙ্গের অন্যতম ছন্দ। বেদে ছন্দবন্ধ মন্ত্র রয়েছে। অর্থাৎ অধিকাংশ বেদমন্ত্র পদ্যে ও রচিত। যজ্ঞ এ সকল ছন্দবদ্ধ মন্ত্র উচ্চারিত হত। অক্ষর গণনা করে ছন্দ নির্ণয় করতে হয়। বেদের ছন্দ সাতটি, যথা- গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পঙক্তি, ক্রিষ্টুপ্ ও জগতী। এই সকল ছন্দ সমূহের জ্ঞান বেদাঙ্গের অন্তগর্ত।