আজ ১৫ অক্টোবর। আজ জগন্নাথ হল ট্রাজেডি দিবস। একে একে পেরিয়ে গেছে ২৬টি বছর।
১৯৮৫ সালের এই দিনে রাত নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের টিভি রুমের ছাদ ধসে ৩৯ জন নিহত হন।
নিহতের মধ্যে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ১৫ জন কর্মচারী ও অতিথি ছিলেন। তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনটিকে শোকের দিন হিসাবে পালন করে আসছে।
প্রতিবছর অক্টোবর এলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে জগন্নাথ হল ট্রাজেডির স্মৃতি ভেসে ওঠে। আজ শনিবার ১৫ অক্টোবর সেই ট্রাজেডির ২৬ বছর।
১৯৮৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশ টেলিভিশনে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক `শুকতারা` দেখছিলেন কয়েক শ` শিক্ষার্থী। হঠাৎ করেই ধসে পড়ে টিভি রুমের দুর্বল ছাদ। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৩৮ জন। পরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯-এ।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অজয় কুমার দাস বলেন, ‘জগন্নাথ হলের ধসে পড়া ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯২১ সালে। ১৯৮৫ সালে ভেঙে পড়ার আগেই এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ হলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সংখ্যালঘু ছাত্রদের হল। তাই এ হলে সব সময়ই শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ ছিল।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আর তা মোকাবেলার জন্য স্বাধীনতার পর তড়িঘড়ি করে কারিগরী দিক পর্যালোচনা না করেই সেই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এরই পরিণতি সেই দুর্ঘটনা।’
দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ, জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। যার যার ধর্মানুযায়ী প্রার্থনা করা।
ঢাবির সাবেক ছাত্রদের বিভিন্ন লেখা ও ব্লগ থেকে জানা যায়, ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাত পৌনে নয়টায় দুর্গাপূজার ছুটিতে পরদিন বাড়ি যাবে এমন ৩৯ ছাত্র, দর্শনার্থী এবং কর্মচারীকে এখানে প্রাণ হারাতে হয়। সেই সঙ্গে আহত হয় আরও প্রায় ৩০০ জন।
তারা সে সময় জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘শুকতারা’ দেখছিলেন। নিজেদেরই এক সতীর্থ মনন অধিকারীর অভিনয় দেখার জন্য অডিটরিয়ামটি কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
কিন্তু হঠাৎ ভয়ংকর নারকীয় অবস্থা। মুহূর্তে টিভি রুমটি এক ধ্বংস স্তুপ। বৃষ্টির পানিতে ৬৪ বছরের পুরনো চুন-সুড়কির ছাদ ভেঙ্গে গেছে। ইট, লোহা ও কাঠের গরাদসহ চুন-সুড়কির স্তূপে চাপা পড়ে মেধাবী প্রাণ।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এই সংবাদ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
দ্রুত উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন অন্যান্য হলের ছাত্র-ছাত্রীরা। হলের তখনকার প্রাধ্যক্ষ ও পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ললিত মোহন নাথ চট্টগ্রামে থাকলেও পরদিন ছুটে আসেন।
শুধু তাই নয়, তৎকালীন স্বৈরশাসক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ কেনিয়ার নাইরোবিতে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে থাকলেও তড়িঘড়ি ছুটে আসেন দেশে।
তিনি সে সময় পাঁচ তলা ‘অক্টোবর স্মৃতি ভবন’ নির্মাণের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। যে ভবন আজো দাঁড়িয়ে আছে সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে।
ঢাবির একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো হলগুলোর মধ্যে মুহসিন, সূর্য সেন, ফজলুল হক ও কার্জন হলে বিরাজ করছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আবিদ আহসান খান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ হলের ভবনগুলোর দুরবস্থা কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। সেইসঙ্গে রুটিনমাফিক যথোপযুক্ত সংস্কার হওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না, আর কখনও কোনও দুর্ঘটনায় এমন দেশসেরা মেধাবীদের প্রাণহানি ঘটুক। এটি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া।’
জগন্নাথ হলের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সঞ্জীব রায় বলেন, ‘আমরা এই হলের ছাত্ররা সেই ঘটনার কথা শুনে শিউরে উঠি। আমরা দেশের কোথাও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্ত্ িদেথতে চাই না।’
দিবসটি পালনে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ব্যথিত চিত্তে স্মরণ করছে। আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না । এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা দেশের সেরা মেধাবীদের যেন আর এমন ঘটনায় পড়তে না হয় সেজন্য আমরা ঝুঁকিপুর্ণ হল সংস্কারে কাজ করছি।