পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের প্রধান সড়কটি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে খুব বেশি বড় নয়। দুই পাশে শাঁখা-সিঁদুর ও পূজার উপকরণের দোকান। এ বছর এই একটি সড়কেই ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তাই মাস খানেক আগে থেকেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে এখানে। গত মঙ্গলবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আগামী রোববার সকালে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। এখন সারা দেশে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিমূলক কাজ। মন্দিরগুলোতে প্রতিমার গায়ে পড়ছে রঙের প্রলেপ। শাঁখারীবাজারে ঢুকতেই কমলা রঙের দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ ফটক। প্রতিদ্বন্দ্বী সংঘ দুর্গাপূজা উদ্যাপনে তাদের ৪০ বছর পূতি উপলক্ষে তৈরি করেছে ফটকটি। ইতিমধ্যে পগোজ স্কুলের পাশে তাদের অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ। এখন চলছে আলোকসজ্জার পর্ব। গতকাল বৃহস্পতিবার শাঁখারীবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান সড়কটিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে মণ্ডপ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিমার সাজসজ্জার শাড়ি, অলংকার, অস্ত্র, মালা ও পূজার উপকরণ বিকিকিনিতে ব্যস্ত দোকানিরা। কালীমন্দিরের পাশে একটি কক্ষে শিল্পী হরিপদ পাল ও তাঁর সহযোগীদের প্রতিমায় রঙের প্রলেপ দিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। এবার চারটি প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি। সবগুলোরই রং দেওয়া আর অলংকার পরানো বাকি। তিনি বললেন, ‘উপকরণের দাম বেড়েছে। প্রতিমা তৈরির উপযোগী মাটিও ঢাকায় পাওয়া যায় না। ফলে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাজ করতে পারছি না।’ ‘সংঘমিত্র পূজা কমিটি’ ৩০ বছর ধরে শাঁখারীবাজারে দুর্গাপূজা করে আসছে। সংঘের সভাপতি দীপক কুমার নাথ জানালেন, এ বছর শাঁখারিদের জীবনকথা ও এখানে স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরোচিত হামলার বিষয়টি মন্দিরে তুলে ধরবে সংঘমিত্র। থাকবে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। জাঁকজমক আয়োজনে পুরো এলাকা উৎসবমুখর হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শাঁখারীবাজার ছাড়াও পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, পান্নিটোলা, ঝুলনবাড়ী, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় মণ্ডপ নির্মাণের কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও এখানে প্রতিমা তৈরি করছেন সুকুমার পাল। এবার মোট পাঁচটি প্রতিমা করছেন তিনি। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমার সাজসজ্জার কাজ আগামীকাল শনিবারের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি জানালেন। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী জানান, রাজধানীতে এবার ১৯৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। সারা দেশে প্রায় ২৮ হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও পুরান ঢাকা ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মহাখালী, মিরপুর প্রভৃতি স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির সূত্র জানায়, আগামী ২ অক্টোবর সকালে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। ৩, ৪ ও ৫ অক্টোবর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হবে।