'মহাশক্তি, মহামায়া ও দুর্গতিনাশিনী' দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে 'নেমে' আসার আহ্বানের ক্ষণ মহালয়া মঙ্গলবার।
এ দিন দেবীকে আহ্বানের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে বাঙ্গালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দুর্গার বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে মূল পূজা। ৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবার রাজধানীর ১৯৩টিসহ সারাদেশে প্রায় ২৭ হাজার পূজা মণ্ডপে পূজা হবে।
মঙ্গলবার ভোর থেকেই রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ সারাদেশে শুরু হবে মহালয়ার আচার-অনুষ্ঠান।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রাম রতন চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রথমে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজা করা হয়। এছাড়া সারাদিন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে মহালয়া।"
চণ্ডিপাঠের পাশাপাশি ভক্তরা ঢাক-কাসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বান জানানো হবে। সন্ধ্যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হবে সঙ্গীতানুষ্ঠান।
মহালয়া
রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী স্থিরাত্মানন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মূলত মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। মঙ্গলবার ভোর থেকে মহালয়ার মাধ্যমে এ উৎসবের শুরু হবে।
তিনি বলেন, পুরাণ মতে, মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবী পক্ষের। এর আগের পক্ষ হলো পিতৃপক্ষ। এই পক্ষে ভক্তরা তাদের পূর্বপূরুষের আত্মার প্রীতির জন্য অন্ন-জল নিবেদন করে থাকেন। শাস্ত্রে একে বলা হয় তর্পণ।
সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় অর্থ্যাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়ানী মুনির কন্যা রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে।
মহালয়ায় শ্রাদ্ধ
হিন্দু পুরাণ মতে, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যরে মাঝামাঝি স্থানে।
পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনি সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন।
এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকে। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন তারা।