হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলো নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করছি আজকে শুরু করব বেদ সহিংতা নিয়ে।
বেদ সংহিতা বেদ হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ। বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান। বেদ ঈশ্বরের বাণী। প্রাচীনকালে ঋষিরা বেদ দর্শন বা উপলদ্ধি করেছিলেন। ঋষিদের দ্বারা পবিত্র জ্ঞান প্রকাশিত হয়েছিল। ঋষিগণ শিষ্যদের মুখে মুখে বেদ শিক্ষা দিতেন। বেদ প্রথমে অবিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে মহামুনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসকে বেদ চার ভাগে বিভক্ত করেন। যথা- ঋগ, সাম, যজুঃ, অথর্ব। তাঁর প্রিয় চার শিষ্য যথাক্রমে পৈল, জৈমিনি, বৈশম্পয়ন ও সুমন্ত এ কাজে সহায়তা করেন। চার বেদের একেকটি ভাগকে সংহিতা বলে। যেমন ঋগ্-সংহিতা, সামবেদ সংহিতা ইত্যাদী। ঋগ্ বেদ সংহিতা- ঋগ্বেদে রয়েছে স্তুতি ও প্রার্থনামূলক মন্ত্র। এগুলো পদ্যে রচিত। এখানে ১০৪৭২ টি মন্ত্র রয়েছে। আবার কতগুলো মন্ত্র নিয়ে একটি বড় আকারের কবিতা বানানো হয়েছে। এর একটি কবিতাকে বলা হয়েছে সূক্ত। যে সকল ঋষি ঋগ্বেদ দর্শন করেছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ঋষি গৃৎসমদ, বিশ্বামিত্র, বামদেব ইত্যাদী। উক্ত ঋষিগন যে সকল দেবতার স্তুতি করেছেন বা যে সকল দেবতার প্রসংঙ্গে ঋগ রচনা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- অগ্নি, ইন্দ্র, বিষ্ণু, ঊষা ইত্যাদি।
সামবেদ সহিংতা- সাম মানে গান। যে মন্ত্র গান করা যায়, তাকেই সাম বলে। যজ্ঞ করার সময় কোন কোন ঋগ আবৃত্তি না করে সুর করে গাওয়া হত। এই গেয় ঋগ্সমূহকে বলা হয় সামবেদ। আর সামর সংকলনই সামবেদ সংহিতা।
যজুর্বেদ সংহিতা-
‘যজুঃ’ বলতে যজ্ঞের মন্ত্র বোঝায়। তার জ্ঞানকে বলা হয় যজুর্বেদ। আর এ জ্ঞানের সংকলন হল যজর্বেদ সংহিতা। ঋগ্বেদ ও সামবেদ পদ্যে রচিত। কিন্তু যজুর্বেদ গদ্য ও পদ্য উভয় রীতির মন্ত্র পাওয়া যায়। যজ্ঞানুষ্ঠানের নিয়ম পদ্বতি যজুর্বেদ সংকলিত। যজুর্বেদে ৭টি কান্ড এবং ২১৮৪টি মন্ত্র রয়েছে।
অর্থববেদ সংহিতা-
অর্থব বেদ সংহিতার বিভিন্ন বিষয়ক মন্ত্র সংকলিত হয়েছে। চিকিৎসা বা ভেষজ বিদ্যা, মাংঙ্গলিক ক্রিয়াকাণ্ড, শত্রবধের উপায় প্রভূতি অর্থবেদের বিষয়বস্তু। এ বেদে ২০টি কান্ড ৭৩১ টি সুক্ত এবং প্রায় ৬০০০ মন্ত্র রয়েছে। বেদ দুটি ভাগে বিভক্তঃ কর্মকাণ্ড জ্ঞানকাণ্ড
কর্মকাণ্ডঃ ইন্দ্র, অগ্নি, বরূণ প্রভূতি দেবতাদের প্রীতীর জন্য যাগ-যজ্ঞাদী কর্মের অনুষ্ঠান কিভাবে সম্পাদান করতে হবে কর্মকাণ্ডে রয়েছে তার নির্দেশ ও পদ্ধতি। এর মূল উদ্দেশ্য কর্মের মধ্য দিয়ে সর্বশক্তিমান পরম ব্রহ্মের দিকে ধাবিত হওয়া। যাগ-যজ্ঞাদী দৈনন্দিন জীবনের চলার পথের সাথী। বৈদিক ঋষিগণ দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ভূতযজ্ঞ। ব্রহ্মযজ্ঞ- বেদ অধ্যয়ন, নৃযজ্ঞ- অতিথী সেবা, দৈবযজ্ঞ-হোমকর্ম, পিতৃযজ্ঞ-পিতামাতার সেবা (তর্পণ) ও ভূতযজ্ঞ-বিশ্বের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। এই পঞ্চ মহাযজ্ঞ অবশ্য করণীয়।
জ্ঞানকাণ্ডঃ
কেন এবং কার উদ্দেশ্য স্তুতি, প্রার্থনা ও যজ্ঞাদী করা হয়। এ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান এবং উত্তর দানের প্রচেষ্টা জ্ঞানকাণ্ডের অন্তর্গত। ঋষিরা সাধনার দ্বারা জানলেন, সকল কিছুর একজন স্রষ্টা আছেন। এই মূল বা পরম সত্তাকে তাঁরা বললেন ব্রহ্ম। ব্রহ্মের উপলদ্ধি যে একমাত্র সাধনা এবং চরম প্রাপ্তির পথ, জ্ঞানকাণ্ডে তা বলা হয়েছে। ব্রহ্মবিদ্যা, আত্মতত্ত্ব সৃষ্টির রহস্য প্রভূতি জ্ঞানকাণ্ডের বিষয়বস্তু।