Facebook এর একটি গ্রুপে বিপুল মোহন্ত দাদার লেখাটা পেলাম। শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না।
দেশে এইবার ১০০০ টি পূজামণ্ডপ বেশী হচ্ছে, খবরটা অনেক আগেই পড়েছিলাম; সকলেই এই খবরে উচ্ছ্বাসিত, আনন্দিত। শুধু আনন্দ হচ্ছিলনা আমার, আমি নরাধম দাস । প্রতিবারের মতো এইবারও পূজার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে, প্রতিমার গায়ে শেষ বারের মতো তুলি দেবার সময় এসেছে,সকল প্রতিমা তা পাবে কিনা আমার জানা নেই,তবে মাটির প্রতিমা যে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে তা আমি হলফ করে বলতে পারি । শেষ সময়ে প্রতিমা ভাঙচুর,মন্দিরে আগুন দেয়া,মন্দিরের সেবাইত-পুরহিতদের মারধর, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আর কি !
দেশের কোন প্রান্ত থেকে প্রতিমা ভাঙ্গার গল্প শুরু করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা, আচ্ছা উত্তর প্রান্ত থেকেই যাত্রা শুরু করিঃ দিনাজপুর, নীলফামারী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বরিশাল, সিলেট, এমন কি দুর্গম পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলিকদম সেখানেও বাদ যায়নাই। মনে করেছিলাম মাত্র কয়েকটা মণ্ডপ আর প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে, এখন দেখছি সমগ্র বাংলাদেশ, কোথায় বাদ আছে ? দেশে ১০০০ টি বেশী মণ্ডপ, আর ১০০০ মণ্ডপ ভাঙচুর, হিসাব তো বরাবর হতে হবে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বলে কথা, অসাম্প্রদায়িক হিন্দু সমাজ বলে কথা ।
এই ঘটনা আজ আমাদের গা সওয়া হয়ে পরেছে, এখন আর প্রতিমা ভাঙ্গা, মণ্ডপ পোড়ান আমাদের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, চোখের জল তো একদিন শুকিয়ে যায়......কতই আর জল ধরে এই ছোট্ট দুইটা চোখে, কতই বা জোর আছে এই তৃণভোজীর দুই দুর্বল বাহুতে, এর চাইতে ঢের ভালো মাটির প্রতিমা, এসো...... ভাঙ্গ, আগুন লাগাও মণ্ডপে, যা ইচ্ছা কর......
প্রতিটি ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন, ভাগ্য খুব বেশী প্রসন্ন হলে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে (বড়জোর ৭ দিন তাদের হাজতে রাখা হবে), এলাকাবাসী মানব বন্ধন করছে, রাজনৈতিক নেতারা নিন্দা জ্ঞাপন করছেন, বুদ্ধিজীবীরা দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রসার ঘটছে বলে বড়বড় কথা বলছেন। Really I am sick for all this nonsense. কুকুরেরও নাকি লজ্জা থাকে, কিন্তু আমাদের সেটুকুও নাই, আমরা এতেই সন্তুষ্ট। শিব একটা বেলপাতাতে সন্তুষ্ট হয়, এর আমদের সেই বেলপাতাটুকুও চাই না।
কোথাও কেউ কি শুনেছেন, ঈদের আগে কোন হিন্দু ঈদগাহ ভাঙছে ? মসজিদের দেয়ালে পানের পিক ফেলছে? আগুন দেয়া বা ভাঙচুর করা তো দুরের কথা, আমাদের মনে মসজিদের দেয়ালে পানের পিকটুকুও ফেলার ইচ্ছা কখনো করে না; আর বিনিময়ে আমাদের জন্য এই উপহার! সত্যি অনেক বড় এই উপহার ! অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। অনেক মানুষের নাকি অন্যদের আনন্দে হিংসা হয়, আমরা তাদের হিংসুক বলে থাকি, এখন আপনারাই ভেবে দেখুন কে এই হিংসুক, কে এই মহান মানব সম্প্রদায় ? শান্তির ধর্ম বললেই তো আর সব কিছু শান্তির হয় না। বাংলাদেশে সকল সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম নাকি সঠিক ভাবে পালন করছে, কোন অসাম্প্রদায়িকতা নেই এইখানে, তার নমুমা হচ্ছে এই, প্রতিবার পূজার আগে পূজা প্রস্তুতি।
এখন আমি নরাধম দাস যা বলি, কক্সবাজারের হিন্দুরা নাকি এইবারে দুর্গাপূজা পালন করবেনা, কেন? আপনি কি অনুভব করতে পারেন কতটা কষ্টে, কতটা নির্যাতনের ফলে বাঙালি হিন্দু সমাজ এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে, কেন তারা তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালনকে না করতে পারে ? একজন হিন্দু হিসাবে আপনার কি উচিত নয় এদের পাশে দাঁড়ানো ? আসুন আমরা সবাই এক হয়ে এই ধরণের ঘটনা গুলোকে প্রতিহত করি। কেন এই প্রতিমা ভাঙচুর, কেন এই মণ্ডপে আগুন দেয়া, কেন নিরীহ সেবাইত-পুরহিত নির্যাতন ? এর জন্য দরকার হলে আসুন আমরা সবাই মিলে পূজাকেও বর্জন করি,কক্সবাজারের হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় দায়িত্ব, তারা পূজা করবেনা, এর আপনি কি করে আনন্দ-উৎসব পালন করবেন? মায়ের পূজা আমরা সেদিনই করবো যেদিন মা আমাদের দেশে সম্পূর্ণ নিরাপদ হবেন......
আসুন, মানব বন্ধন নয়, এই ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি,সোচ্চার আন্দোলন; যেন এই ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে, আগামী বছর মা যেন নিরাপদে ধরাধামে আসতে পারেন আমাদের মাঝে।
আজকে বাংলাদেশে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নেই। সরকার তো মোল্লাদের পদলেহনকারী আর বিরোধী দল হিন্দুদের মনে করে গনিমতের মাল। অন্য কোন দেশে এই ঘটনা ঘটলে তোলপাড়ঁ পড়ে যেত। রাষ্টীয় পর্যায়ে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনোইতিক প্রতিষ্ঠাল অনেক অনেক বেশী প্রয়োজন। @সঞ্জিতদাঃ হিংসা যদি হতো শান্তি আনার একমাত্র অস্ত্র, তাহলে অবতাররা হতেন সবচেয়ে বড় হিংসুক।