ব্রক্ষ্ম পুরান পাঠে আমরা জানতে পারি মানুষ সৃষ্টি অভিপ্রায়ে সৃষ্টিকর্তা ব্রক্ষ্মা, ধর্ম, রুদ্র, মনু, সনক, ভৃগু প্রমূখ কয়েক জন মানস পুতের সৃষ্টি করেন। তার দক্ষিন অঙ্গুষ্ট থেকে উৎপত্তি হয়েছিল প্রজাপতি দক্ষের। দক্ষের কনিষ্টা কণ্যারূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেবী সতী যিনি পতিরূপে গ্রহণ করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবকে। মহাদেবের প্রতি প্রজাপতি দক্ষ ছিলেন অত্যন্ত বিরূপ। এক সময়ে ভৃগু ঋষি এবং অদম্য প্রজাপতি কর্তৃক অনুষ্ঠিত মহাযজ্ঞ একমাত্র দেবাদিদেব শিব ও ব্রক্ষ্মা ছাড়া প্রজাপতি দক্ষের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন। প্রজাপতি দক্ষ রাজা শিবের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে অভিসম্পাত করেছিলেন। অন্যান্য দেবতার মতো শিব দেবতার মতো যজ্ঞভাগের অধিকারী হবেন না। পরবর্তীতে প্রজাপতি দক্ষ রাজা হয়ে আনন্দ ও গর্বে বৃহস্পতি নামক একটি বৃহৎ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। এই মহাযজ্ঞে ত্রিজগতের সকলেই আমন্ত্রীত কিন্তু কন্যা সতী ও জামাতা শিবকে ছাড়া।
লোকমুখে পিতার মহাযজ্ঞের সংবাদ সতী মনে মনে ব্যাথিত হলেন। তারপরও সতী স্বামীর কাছে অনুমতি ভিক্ষা করলেন পিত্রালয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু অনুমতি দিতে শিব অস্বীকার করায় সতীক্রুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে তার শক্তি প্রদর্শনের জন্য ধারণ করলেন ভয়ঙ্করী কালীমূর্তি। কিন্তু মহাদেবের মনে ভাব উৎপাদনে সতী হয়েছিলেন ব্যর্থ তখন যিনি দশ দিকে দশমূর্তিতে আর্বিভূত হয়ে অবরূদ্ধ করলেন স্বামীর গতি পথ। ভগবতির এই দশটি বিশেষ রূপকে দশ মহাবিদ্যা নামে পরিচিত। এই দশটি রূপ হচ্ছে কালী, তারা, সুরশী, ভুবনস্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধুমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা।
শ্রী শ্রী চন্ডী পাঠে আমরা অবগত হই যে দেবী দুর্গার পূজার প্রথম প্রচলন হয়েছিল বসন্ত ঋতুতে রাজা সুরত ও বৈশ্য সমাধি কর্তৃক। বসন্ত কালে পূজা অনুষ্ঠান হওয়ার কারনে এই পূজা অভিহিত হয় বাসমীত পূজা নামে। রাজ্যচ্যুত সুরত এবং সংসার তাড়িত বৈশ্য যখন মহামুনি মেধসের কাছে দুঃখ দুর্দশার বিবরণ দিয়ে প্রতিকারের উপায় আজ্ঞা করলেন। তখন মুনিবর তাদের উপদেশ দিলেন দেবী মহামায়ার আরাধনা করার জন্য। রাজা সুরত ও বৈশ্য প্রশ্ন করেছিলেন কে এই মহামায়া ? উত্তরে মহর্ষি বলেছিলেন তিনি নিত্য আদি জননী এই মহামায়াই নিখিল ব্রক্ষ্মান্ডের সৃজয়িত্রী আবার তিনিই জগত পালিতা। শ্রী শ্রী চন্ডী পাঠে আমরা আরও জানত পারি যে, কালান্তরে অত্যাচারী অসুরদের রাজা মহিষাসুর নিধনের জন্য আর্বিভূতা হয়েছিলেন দেবী দূর্গা। ক্রুদ্ধ দেবতাদের দেহনিসৃত পর্বত প্রমান তেজপুঞ্জ থেকে আর্বিভূতা হয়েছিলেন অগ্নিবর্ণা মহাতেজস্বিনী এবং পরমরূপবতী মহাদেবী । আনন্দকূল দেবতারা দেবীকে সুসজ্জিত করেছিলেন বিভিন্ন অলঙ্কার ও আপন অস্রের দ্বারা। সেই সব অস্রের সাহায্যে দেবী দূর্গা বধ করেছিলেন ত্রিলোক ত্রাস ও মহা বলশালী মহিষাসুর অসুরকে। ��সর্ব ধর্ম্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ��
চন্ডীতে বলা হয়েছে সেই পরমেস্বরীর স্মরণ নিলে তাকে আরাধনা করলে ভোগ, স্বর্গ, মুক্তি, প্রভৃতি সকল অভীষ্ট লাভ করা যায়। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বর্তমান সামাজিক পটভূমিকায় বৈজ্ঞানিক উন্নতির যুগেও বর্তমানে নাস্তিকতার যুগে দূর্গা পূজার প্রাসঙ্গিকতা কতখানি এবং কে এই অসুর ? উত্তরে বলা যায় এই নাস্তিকতার যুগে মানুষের জীবন তরী যখন কর্ণধার বিহীন অবস্থায় অকুল সমূদ্রে দিশাহীন ভাবে ভেসে চলেছে তখন মানুষের মধ্যে ধর্মীয় অনুরাগ জাগ্রত করার জন্য এবং মানব জীবন তরীকে সবুজ কূলে উপনিত করার জন্য মাতৃ আরাধনার প্রয়োজন অনস্বিকার্য্য।
এ যুগেও আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ করে চলেছি অসুর কূলে মহাতান্ডব যারা শক্তির অহঙ্কারে মত্ত হয়ে সমগ্র পৃথিবীকে পদানত করতে চাইছে তাদের সঙ্গে পুরুষ বর্ণিত অসুরদের পার্থক্য কোথায়? ধনগর্ব যাদের সীমাহীন যাদের ভোগ লিপ্সা প্রবল, জৈব প্রযুক্তির ক্রীতদাস মানুষ রূপদারী তারাই অসুর । যারা অসত্য ও অন্যায় করেছে জীবন ধারনের সারথী যার ক্রোধ, হিংসা ও অসুয়া শক্তির দ্বারা পদে পদে হচ্ছে তাড়িত তারা তো অসুর নামে কুখ্যাত হওয়ারই যোগ্য। পরিশেষে সেই অসুর শক্তি থেকে মুক্তিলাভের জন্য আমরা সমবেত স্বরে প্রার্থনা করি
যা দেবী সর্বভূতেসু শক্তি রূপেন সংস্থিতা নমসত্মস্যৈ নমসত্মস্যৈ নমো নমঃ