কোথায়
কখন, কিভাবে দুর্গা পুজার সূচনা হয় তা সঠিক ভবে বলা মুশকিল। প্রাচীন কাল
থেকেই প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পাঞ্জাবের হরপ্পা ও সিন্ধুর মহেঞ্জোদারোতে
দেবীর পূজা হতো। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং দেবীর পূজা করেছেন। ইতিহাস থেকে যতটুকু
জানা যায় তৎকালীন শ্রীহট্ট(বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট) এর রাজা গনেশ পঞ্চদশ
শতকে প্রথম মূর্তিতে দূর্গা পূজা করেন। ষোড়শ শতকে রাজশাহী অঞ্চলের রাজা
কংশনারায়ন দুর্গা পূজা করেন। অষ্টাদশ শতকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র দুর্গা
পূজা করেন।
পূর্বে রাজা, জমিদার, মহাজন তথা বিত্তবানরা
আতীয়স্বজন সমন্বয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ধুমধাম করে প্রতিযোগিতার মনোভাব
নিয়ে দুর্গাপূজা করতেন। সাধারন মানুষকে তাদের প্রতিযোগিতা দেখেই সন্তুষ্ট
থাকতে হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে রাজা নেই, জমিদার ও নেই। কিন্তু শ্রী
শ্রী মা দুর্গার পূজা প্রতি বৎসরই হয়। এখন মা এর পূজা সর্বজনীন রূপ লাভ
করেছে। এখন ধনী-গরিব-গোত্র-বর্ণ সবাই একসাথে প্রার্থনা করে মায়ের চরনে।
-দুর্গা পূজার প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছে শিল্পীরা
হিন্দু
সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হতে আরো প্রায়
দু মাস বাকি থাকলেও শুরু হয়ে গেছে প্রতিমা তৈরির কাজ । পূজা মণ্ডপগুলোতে
এখন প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত মণ্ডপ তৈরির কাজে। শান্তি, সংহতি, সম্প্রিতি
এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে সারা দুনিয়ার মংগল কামনায় শারদ মাসে দেবী
দুর্গা লোকালয়ে আসেন।
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রুপেন সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ
দেবী
দুর্গা (সংস্কৃত: दुर्गा, বুৎপত্তিগত অর্থ: যিনি দুর্গ অর্থাৎ সঙ্কট হতে
ত্রাণ করেন; পুরাণ অনুযায়ী: যিনি দুর্গ নামক অসুর বিনাশ করেছেন) পরমা
প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ। দুর্গা সাধারণত দশভূজা, দশপ্রহরণধারিনী ও
সিংহবাহিনী। হিন্দু পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতী,
কার্তিক ও গণেশের জননী, এবং কালীর অন্যরূপ। পুরাণ অনুসারে তিনি তিনবার
মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন।
দুর্গার আরাধনা বাংলা, অসম এবং
বিহারের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রচলিত। ভারতের অন্যত্র দুর্গাপূজা নবরাত্র উৎসব
রূপে উদযাপিত হয়। সম্ভবত খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায়
দুর্গোৎসব প্রবর্তিত হয়। বাংলায় দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পূজিতা হলেও
তাঁর কাত্যায়নী মূর্তিরই পূজা হয়। মহিষমর্দিনীর প্রতিমা বর্তমানে
তামিলনাড়ুতে প্রচলিত।
দুর্গা মূলত শক্তি দেবী। বৈদিক
সাহিত্যে দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে দুর্গার বিশেষ আলোচনা ও পূজাবিধি
তন্ত্র ও পুরাণেই প্রচলিত। যেসকল পুরাণ ও উপপুরাণে দুর্গা সংক্রান্ত
আলোচনা রয়েছে সেগুলি হল: মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ,
কালিকাপুরাণ ও দেবী-ভাগবত। তিনি জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী,
বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী প্রভৃতি নামেও পূজিতা হন। বছরে দুইবার
দুর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে – আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র
মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপূজা। কাঠামো পূজো দিয়ে শুরু দুর্গা পূজা
রথযাত্রার
দিনই কাঠামো পুজোর মাধ্যমে কার্যত সূচনা হয়ে গিয়েছে দুর্গোত্সবের. বেশির
ভাগ বাড়িতেই পুজোর কাঠামো পুজো হয়ে গিয়েছে ওই দিন
মহাশক্তি শ্রীদুর্গা দেহ দুর্গের মূল শক্তি। মানুষের দেহ একটি দুর্গ
বিশেষ। পঞ্চভূতে নির্মিত যথা-ক্ষিতি, অপ,তেজ,মরুদ, ব্যোম। দেহের মূলশক্তি
প্রাণশক্তিকে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ , মাৎসর্য-এ ষড়রিপু আক্রমন করে।
দুর্গা দেহদুর্গের মহাশক্তি। সাধক সাধনাকালে সেই শক্তিকে জাগ্রত
করেন। সেই শক্তি যখন জাগ্রত হয় তখন দেহস্থিত রিপুসমূহ তাকে পরাজিত করে
বশীভূত করার জন্য উদ্যোগি হয়। সে সময় দেবশক্তি ও রিপু তথা আসুরিক শক্তির
মধ্যে বাঁধে সংঘর্ষ। সেই অন্তর জগতের সংঘর্ষের একটি প্রতীকি রুপ শ্রী শ্রী
চন্ডির মাধ্যমে রুপায়িত হয়েছে।
আধ্যাত্মিক
ভাবনা দুর্গা কাঠামোতে অন্তর্নিহিত। দুর্গার দশহাত দশদিক রক্ষা করার
প্রতীক, দশপ্রহরণ এক এক দেবতার সাধনলব্দ বিভূতি। দেবী
ত্রিভঙ্গা-ত্রিগুণাত্মিকাশক্তির প্রতীক অর্থাৎ সত্ব;রজঃ তমগুণের প্রতীক।
দেবী ত্রিনয়নী-একটি নয়ন চন্দ্রস্বরুপ, একটি সূর্যস্বরুপ এবং তৃতীয়টি
অগ্নিস্বরুপ। তাঁর ত্রিনয়নের ইঙ্গিতেই নিয়ন্ত্রিত হয় ত্রিকাল। দেবী
সিংহবাহনা-তামসিক পশুশক্তির অধিপতি পশুরাজ সিংহ। মহিষাসুর-দেহস্থ প্রবল
রিপুর প্রতীক। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য এর ঘনীভূত মূর্তি
মহিষাসুর। শিব-সর্বপুরি অধিষ্ঠিত শিব মঙ্গল ও স্থিরত্বের প্রতীক। দেবীর
ডানপার্শ্বে উপরে লক্ষ্মী-ধনশক্তি বা বৈশ্যশক্তির, গণেশ-ধনশক্তির বা
শূদ্রশক্তির, সরস্বতী-জ্ঞানশক্তি বা ব্রহ্মণ্যশক্তির, কার্তিক
ক্ষত্রিয়শক্তির প্রতীক। শক্তিসমূহ অনুভূতির বিষয় অনুভূতির আকার নেই। আকার
দেয়া হয়েছে মানুষের বোঝার সুবিধার জন্য। সকল শক্তিই ব্রহ্মশক্তি। সাধকের
হিতার্থে ব্রহ্মের নানান রূপ কল্পনা ।
ষোলোয়ানা বাঙালিয়ানা
বাঙ্গালীদের
সকল আবেগের সমষ্টি দুর্গা পূজা। তার সংস্কৃতি, ভালোবাসা, একত্র থাকার যে
উষ্ণতা, উৎসবের যে আনন্দ সবই আছে এতে। প্যান্ডেল তৈরীতে একে অপরের সাথে
প্রতিযোগিতা করে তারা অনেক আনন্দ পান।
-প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে কুমোরটুলিতে
এই উৎসব মহাকাব্য রামায়ন অনুসারে শুরু হয়েছে সেই সময় থেকে যখন রাম
তাঁর স্ত্রী সিতাকে অপহরণকারী রাবণের কাছ থেকে উদ্ধারের জন্য যুদ্ধে যাওয়ার
আগে অভিবাদন জানান দুর্গা দেবীকে। যেহেতু সময়ের বাইরে দেবীর পুজা করা
হয়েছিল, রামের করা দুর্গা পুজাকে ‘অকালবোধন’ বলা হয় (সময়ের আগে প্রার্থনা)।
রামের উদাহরণ অনুসারে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে দুর্গা পূজা এখন
উদযাপিত হয় ৫ দিন (দুর্গা পূজা)- ১০ দিন ধরে (নবরাত্রি- যেখানে ৯ শক্তির
পূজা হয়) ।
দুর্গা পূজার পেছনের মূল গল্প একই থাকলেও,
দুর্গা পূজাতে (বা পূজো যেমন বাংলায় বলা হয়) বাঙ্গালীদের একটু
স্বাতন্ত্র্য বা ব্যক্তিগত ছোঁয়া আছে । বিশ্বাস করা হয় যে দূর্গা বাংলার
মেয়ে আর উৎসবের এই ৫ দিনে সে তার বাপের বাড়িতে ৪ সন্তান (গনেশ, লক্ষ্মী,
সরস্বতী ও কার্তিক) আর কাছের দুই জন বন্ধু সহ বেড়াতে আসেন। তার স্বামী শিব
সাধারণত: এমন সময়ে তাঁর সাথে আসেন না। তিনি স্বর্গে থেকে যান, আর তার
স্ত্রী ও সন্তানদের পৃথিবীতে এসে বাঙ্গালী আত্মীয়দের কাছ থেকে সব আদর গ্রহণ
করতে দেন।
দুর্গা পূজার পেছনের মূল গল্প একই থাকলেও, দুর্গা পূজাতে (বা পূজো যেমন বাংলায় বলা হয়) বাঙ্গালীদের একটু স্বাতন্ত্র্য বা ব্যক্তিগত ছোঁয়া আছে । বিশ্বাস করা হয় যে দূর্গা বাংলার মেয়ে আর উৎসবের এই ৫ দিনে সে তার বাপের বাড়িতে ৪ সন্তান (গনেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক) আর কাছের দুই জন বন্ধু সহ বেড়াতে আসেন। তার স্বামী শিব সাধারণত: এমন সময়ে তাঁর সাথে আসেন না। তিনি স্বর্গে থেকে যান, আর তার স্ত্রী ও সন্তানদের পৃথিবীতে এসে বাঙ্গালী আত্মীয়দের কাছ থেকে সব আদর গ্রহণ করতে দেন।
দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আর মাঝের হলুদ টাইপ গুলো পড়তে সমস্যা হয় দয়া করে যদি কালার চেঞ্জ করে দিতেন।