ঈশ্বর সকল কিছুর স্রষ্টা ও শক্তিমান। তাঁর জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। সব কিছুই তাঁর অধীন কিন্তু তিনি কোন কিছুরই অধীন নন। ঈশ্বরকে ঋষিগণ নানাভাবে উপলদ্ধি করার চেষ্টা করেছেন। কেউ ভাবেন তিনি ইন্দ্র, কেউ ভাবেন অগ্নি, কেউবা ভাবেন তিনি বরুণ প্রভৃতি দেবতাদের একজন। ঋষিগণ ধ্যান মগ্ন হয়ে উপলদ্ধি করলেন, তিনি বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু তার নাম কি ? তিনি কোথায় থাকেন ? একজন ঋষি উপলদ্ধি করলেন, তিনি এই জগতের স্রষ্টা। জোতির্ময় ও মহান। তিনি ব্রহ্ম।
বহ্ম-
ব্রহ্ম কথাটির অর্থ হচ্ছে সর্ববৃহৎ। তিনি নিত্য, শুদ্ধ, মুক্ত, সর্বজ্ঞ, জোতির্ময়, নিরাকার, সর্বব্যাপি ও সর্বশক্তিমান। তিনি জগত সৃষ্টি করেন, পালন করেন আবার তিনিই বিনাশ করেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করলেন- “ব্রহ্ম যদি সর্বব্যাপী হন তবে তিনি তো সবার মধ্যেই আছেন, তবে তাঁকে দেখতে পাই না কেন ? তখন ঋষিগণ উপলদ্ধি করলেন, ব্রহ্ম জীবের মধ্যে আছেন আত্মারূপে। আত্মা-
আত্মা নিত্য বস্তু। আত্মার জন্ম বা বিনাশ নেই। আত্মাকে স্পর্শ করা যায় না, দগ্ধ করা যায় না কোন রূপে আত্মা নষ্ট হয় না। আত্মা নিরাকার, আত্মাকে দেখা যায় না, উপলদ্ধি করতে হয়।
[color=green]ঈশ্বর-
অন্য একদল ব্রহ্মজ্ঞানী ভাবলেন, ব্রহ্ম বা আত্মাকে কি দেখা যাবে না। ধ্যান করতে করতে ঋষিগণ একসময় উপলদ্ধি করলেন ব্রহ্ম হল ঈশ্বর। যিনি সকলের উপর প্রভুত্ব করেন। ঈশ্বরকে পরমেশ্বরও বলা হল।
ভগবান-
আবার সমস্ত ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন ঈশ্বরের আয়ত্তে বলে ঈশ্বরকে ভগবানও বলা হয়। এভাবে ঋষিগণ এক ঈশ্বরকে ব্রহ্ম, আত্মা ও ভগবান রসময় ও আনন্দময়। তিনি সর্বত্রই বিরাজমান। তিনি সর্বশক্তিমান। তাঁর রূপের কোন শেষ নেই। ভক্তগণ যে রূপে ভগবানকে ডাকেন, তিনি সেরূপেই ভক্তকে দেখা দেন ও লীলা করেন। তাই তো বিশ্বকবি লিখেছেন-
“সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজও আপন সুর”
ভগবান সমস্ত জগৎ জুড়েই আছেন। তিনি ভক্তের ডাকে সাড়া দেন। ভক্তের কাছে ভগবান ও জগৎ দুই-সত্য।