n হিন্দু ধর্ম - 22 September 2011 - হিন্দু ধর্ম ব্লগ - A Total Knowledge Of Hinduism, সনাতন ধর্ম Hinduism Site
Tuesday
24-12-2024
6:52 AM
Login form
Search
Calendar
Entries archive
Tag Board
300
Site friends
  • Create a free website
  • Online Desktop
  • Free Online Games
  • Video Tutorials
  • All HTML Tags
  • Browser Kits
  • Statistics

    Total online: 18
    Guests: 18
    Users: 0

    Hinduism Site

    হিন্দু ধর্ম ব্লগ

    Main » 2011 » September » 22 » হিন্দু ধর্ম Added by: DharmaJuddha
    10:43 AM
    হিন্দু ধর্ম
    হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করে থাকেন এ ধর্ম দুর্বোধ্য ও অযৌক্তিক। এরূপ মনে করার কারণ এর বিশালত্ব, যা অনায়াসলভ্য নয়। কতগুলি বিশ্বজনীন মৌলিক সত্য রয়েছে এবং বিভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গীতে নিরূপিত সে সত্যের উপর হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। এ যেন বিশাল এক অশ্বত্থ বৃক্ষ! এর শাখা-প্রশাখা অসংখ্য। অনেকে এর কোনটি শাখা, কোনটি উপশাখা বুঝতে পারেন না। কাজেই যে কোন একটি শাখা বা উপশাখাকে ধরে হিন্দু ধর্মকে বুঝতে গিয়ে ভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। আবার এর যে কোন একটি শাখা বা প্রশাখা হিন্দু ধর্মের সার্বিক পরিচায়ক নয়। আমরা জানি যে শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য, বৈষ্ণব প্রভৃতি অনেক সম্প্রদায় রয়েছে হিন্দু ধর্মে । দ্বৈত, অদ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত কত মতবাদ; জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, যোগ-কত মার্গ! এগুলো ধর্মের সোপান। কাজেই কোন পথ অবলম্বন করা উচিত তা নির্ণয় করা একটু কঠিন বৈকি! কঠিন হলেও এর সমাধান আছে। বিশেষ বিবেচ্য যে, এর কোন একটিকে বাদ দিলে হিন্দু ধর্মের সার্বিক রূপ পাওয়া যাবে না।আসলে এসব ভিন্ন মতবাদ সকলই সমসূত্রে গাঁথা। এসূত্রটি হল বেদচতুষ্টয়। বেদ হিন্দুর মূল ধর্ম গ্রন্থ্ৎ এ ধর্মগ্রন্থে কি আছে, আর কি নেই সে বিষয়ে অবহিত হয়ে হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে ধারণা করা সমীচীন। বেদ অর্থে জ্ঞান। খ্রীষ্টের জন্বের বহু বছর পূর্ব থেকে এ বেদের সৃষ্টি। এর দুটি বিভাগ আছে। কর্মকান্ড ও জ্ঞান কান্ড। সংহিতা ও ব্রাহ্মণ জ্ঞানকান্ড। সংহিতা এবং ব্রাহ্মণে যাগযজ্ঞাগি ক্রিয়া ও মন্ত্রাদি আছে। আরণ্যক নামে আরও একটি অংশ আছে যাতে কর্ম ও জ্ঞান উভয়েরই কথা আছে। বেদের অন্তভাগে রয়েছে বেদান্ত- যা সমগ্র বেদের সার, একটি জ্ঞানের বিষয়। জ্ঞানকান্ডের অপর নাম উপনিষদ। গুরুর পাদপব্মে উপবিষ্ট হয়ে এ বিদ্যা আহরণ করতে হয়। সমগ্র বেদের শীর্ষস্থানীয় এ বিদ্যাকে ব্রহ্মবিদ্যা বলা হয়। যে সব মতবাদ বা ভাবাদর্শ বেদকে প্রমাণ বলে গ্রহন করে না বা উপনিষদে সংগৃহীত বেদের সারতত্ত্বগুলিকে গ্রহণ করে না সেসব মতবাদকে হিন্দধর্মের অঙ্গ বলা যায় না।উপনিষদসহ শ্রুতিকে বেদ বলা হয়। এটি কোন ব্যক্তিবিশেষের রচিত নয়।পরমার্থ তত্ত্ব ঋষিগণের উপলব্দ এবং গুরশিষ্যপরম্পরায় শ্রুত বলে এর নাম শ্রুতি। যুগ যুগ ধরে অতীন্দ্রীয় উপলব্দির দ্বারা এ জ্ঞান আহরণ করা হয়েছে। সত্যদ্রষ্টা ঋষিগণের এ অতীন্দ্রয়ি জ্ঞান বড় বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা নিশ্চয়ীভূত হয় না। দ্রষ্টার অনুভূতি অঙ্কশাস্ত্রের মত অভিন্ন না-ও হতে পারে। এতদসত্ত্বেও ঋষিগণের পুঞ্জীভূত অনুভূতির মধ্যে এ মৌলিক ভাবধারায় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে এঁদের তুরীয় দর্শনের সত্যতা প্রমাণিত। কাজেই বেদ স্বপ্রমাণ ও স্বপ্রকাশ। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখার প্রবক্তাদের মধ্যে কিছু গৌন অনুসিদ্ধান্ত ও আনষঙ্গিক বিষয়ের ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে; কিন্ত্ত মৌলিক তত্ত্বে মতভেদ নেই। এ পার্থক্যগুলো দেখে সাধারণ মানুষ বিচলিত হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন থেকে যায়- আধ্যাত্বিক জীবনের উচ্চস্তরে আরোহন না করে এসব সূত্র তত্ত্বগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যার নিগুঢ়তা উপলব্ধি করা অসম্ভব নয় কি? এ বিড়ম্বনা মাত্র। কাজেই এসব বিষয়ের ভ্রান্ত ধারণা বর্জ্জনীয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচার-ব্যবহারে কিছু কুসংস্কার রয়েছে। বহু গ্রহীষ্ণু বিজাতীয় মতবাদ এ ধর্মকে গ্রাস করবার চেষ্টা করেছে।এসবকে উপেক্ষা করেও এই ঔপনিষদিক ধম্য মাথা উচুঁ করে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে আজও। এ নিবনাশী শক্তির মূলে রয়েছে এর সার্বভৌমত্ব। হিন্দু ধর্মের সারতত্ত্ব বেদান্তে। শ্রী মদ্ভগবদগীতা বেদান্তের সার। স্বামী বিবেকানন্দ গীতাকে বেদান্তের দৈবভাষ্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ ধর্মের মূল উৎসগুলিতে সাম্প্রদায়িক মতবাদের কোন স্থান নেই। এতে আছে কিছু দেবাতাত্বা মানুষের নৈব্যক্তিক পারমার্থিক অনুভূতি। সর্বস্তরের দর্শন, কবিতা ও সঙ্গীত একীভূত হয়েছে এ ধর্মে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অসংখ্য মনীষীগণ সর্বজনীন এ ধর্মতত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন গভীরভাবে। এ প্রসঙ্গে জার্মান দার্শনিক শোপেন হাওয়ারের উপলব্দি লক্ষ্যনীয়- " সারা পৃথিবীতে বেদান্তের ন্যায় এত উন্নত ও মঙ্গলদায়ী পাঠ্য কিছু নেই। জীবিত অবস্থায় আমি এ থেকে সান্তনা পেয়েছি, মৃত্যুকালে পাব প্রশান্তি। সুপন্ডিত ম্যক্সমূলারে উপলব্দি- " পৃথিবীতে যত দার্শনিক মতবাদ আছে তার মধ্যে বেদান্ত সর্বাপেক্ষা মহীয়ান এবং যত ধর্মমত আছে তার মধ্যে বেদান্ত সর্বাপেক্ষা শান্তিদায়ক। হিন্দু ধর্ম অবতারবাদে বিশ্বাসী। ধর্মের গ্লানি এবং অধর্মের আবির্ভাব হলে ধর্ম সংস্থাপনের জন্য ভগবান নরদেহে অবতীর্ণ হন। কিন্ত্ত কোন কোন দেশে ধর্মীয় মহাপুরুষকে ঈশ্বরের পুত্র এবং দূত হিসেবে মনে করা হয়। এবং তৎপ্রবর্তিত বাণীই চূড়ান্ত ধর্মীয় তত্ত্ব বলে মানা হয়। যারা এটি মানতে রাজী নয় তার অবিশ্বাসী বলে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। লক্ষ্যনীয়, এসব ধর্মে প্রশ্ন-মীমাংসার কোন স্থান নেই। হিন্দু ধর্মে অবতারও কিন্তু অনন্য নন। অধর্মের অভ্যূদয় যুগে যুগে হয় এব প্রতিকারের জন্য ভগবানকে বিভিন্ন রূপে অবতীর্ণ হতে হয়। সব যুগের সমস্যা একরূপ থাকে না। কাজেই সমাধানের বিধানও স্থান কাল-নির্বশেষে এক হতে পারে না। তাই হিন্দুশাস্ত্র মতে অবতার একাধিক। মানুষের মধ্যেও দেবত্ব বা ভগবৎ শক্তির অভিব্যক্তি লক্ষ্য করা যায়। যেসব মানুষের মধ্যে দেবত্বের বিশেষ বিকাশ ঘটে তাঁকে অমূর্ত ব্রহ্মের প্রতিভূ বলা হয়, এবং তিনিই অবতার। শাস্ত্রে এর উল্লেখ আছে। এসব লক্ষণযুক্ত হলে অপর ধর্মের প্রবর্তককে অবতার বলে স্বীকার করতে দ্বিধা করি না। হিন্দুধর্মাবলম্বীগণ এভাবে শ্রী রাম, শ্রী কৃষ্ণের মত বুদ্ধকেও অবতার বলে মানে। সেভাবে হিন্দুরা বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান না হয়েও বুদ্ধ ও খ্রীষ্টের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে কুণ্ঠা বোধ করে না। এভাবে হিন্দু ধর্মে উদারতাই পরিলক্ষিত হয়। স্বামী বিবেকানন্দ বলেন- "ধর্ম হচ্ছে মানুষের অন্তর্নহিত তত্ত্ব।" " ব্রহ্মৈব স্যাং ব্রহ্মাপ্যোতে" মানুষেল মধ্যে এ দেবত্বের বিকাশ দেখে স্থান-কাল-জাতি-নির্বশেষে হিন্দুরা শ্রদ্ধা জানায়। কেউ যদি একজন অবতার বা ভগবৎ প্রতিনিধির নির্দিষ্ট পথ অবলম্বন না করে অবতারের বাণী গ্রহন করে তাহলে সে ব্যক্তি ধর্ম থেকে পতিত হবে বা স্বর্গের দ্বার তার জন্য চিরতরে রুদ্ধ হবে, হিন্দুধর্ম তার স্বীকার করে না। ঈশ্বরানুভূতি বা ব্রহ্মজ্ঞান যদি ধর্মের লক্ষ্য হয়ে থাকে এবং ভগবৎ প্রেরিত নররূপী ভগবান নানা যুগে নানা পথের সন্ধান দেন, তাহলে এর যেকোন একটি নিষ্ঠার সাথে অবলম্বন করে চললে একই গন্তব্যস্থরে পৌঁছান যায়। শ্রী ভগবান গীতামুখে বলেছেন যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহ্ৎম। মম বর্ত্বানুবর্তন্তে মনষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ। (গীতা-৪/১১)

    যে যেভাবে আমার শরণাপন্ন হয় আমি তাকে সেভাবেই অনুগ্রহ করি। এই মহাবাক্যে এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ তাৎপর্য উপলব্দি না করে হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে বিরূপ সমালোচনা করা অর্বাচীতনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যা-খুশি করলেই হিন্দুধর্ম- অপব্যাখ্যা অজ্ঞতার নামান্তর। প্রপদ্যন্তে- শব্দে বলা হয়েছে- আমাতে শরণাগত হও। এটি বুঝলে ভাব পরিস্কৃত হবে। ভগবদগীতায় এরূপ অনেক শব্দের অবতারণা রয়েছে। যেমন- মামুপেত্য ৮/১৫, ব্যাপাশ্রিত্য ৯/৩২ , মামাশ্রিত্য ৭/২৯। এসব শব্দ গভীল ভাববহ। নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধাসহ ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করলে জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম, যোগ- যে কোন মার্গ অবলম্বন করে ভগবৎ প্রাপ্তিই ঘটে। এমন কি অন্য ধর্মও যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান ও সকলের স্রষ্টা হন তাহলে একাধিক ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার্য নয়। অন্যদিকে প্রতিটি ধর্মের অনুসারিগণ যদি উপলব্দি করেন যে অন্যান্য ধর্মমতবাদিগণও সেই একই ঈশ্বরের উপাসনা করছেন তাহলে কোন সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হতে পারে না, বরং ধর্ম সম্বন্ধে ভেদবুদ্ধি দূরীভূত হয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের অবসান ঘটবে।

    সত্য বিশ্বজনীন এবং তার সন্ধানও চিরন্তন। মুনি-ঋষিদের অনুভূত সিদ্ধান্তের উপর হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠিত। এখানে কোন একনায়কত্মের স্থান নেই। নানা পথে বিভিন্ন ধারায় এ সত্যকে জানবার চেষ্টা করেছেন তাঁরা যুগে যুগে। এ ধর্মের বৈশিষ্ট্য কোন একটি ছাঁচে বাঁধা-ধরা নিয়মে নয়। কোন ঈশ্বর প্রেরিত ব্যক্তি বা ধর্মপ্রবক্তার বাণীও নয়। এগুলো শ্বাশত। তাই একে সনাতন ধর্ম বলে। এ ধর্মমতে ধর্ম জিজ্ঞাসা ও সশ্রদ্ধ প্রশ্ন আধ্যাত্মিক মার্গে প্রবেশের প্রথম সোপান। তদ্বিদ্ধি আংশকা নেই বরং এ ধর্ম আত্মজ্ঞানলাভেচ্ছু ব্যক্তিকে তার সংশয় দূর করবার জন্যে নির্দেশ দিচ্ছে- " সংশয়াত্মক ব্যক্তি ইহলোক পরলোক কোন বিষয়ে সফলকাম হয় না। তার বিনাশ অনিবার্য- (গীতা ৪/৩৪)

    অতএব দেখা যাচ্ছে হিন্দুধর্মে অন্ধবিশ্বাসের কোন স্থান নেই। কিন্ত্ত যারা জলে না নেমে সাঁতার শিখতে চায় তাদের কোন কালেই সাঁতার শেখা হয় না। যাঁরা ধর্মের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করেছেন, অথচ পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তাদের প্রশ্নের মীমাংসা প্রয়োজন। সেজন্যে উপযুক্ত শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করা দরকার। এঁদের আমরা আচার্য বা গুরু বলতে পারি। শাস্ত্রে আছে- যে পর্বত আরোহন করে ফিরছে তার কাছে পূরোবর্তী পথের সন্ধান আস্থা সহকারে জেনে নেওয়া প্রয়োজন্‍ (ছা উপ) সেরূপ ধর্মপথের উচ্চশিখরে উপনীত হতে হলে আচার্যের কথায় আস্থা না রাখলে চির জীবনই ব্যতিরেকে জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। যদি ব্যবহারিক জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে এ অবস্থা হয় তাহলে অতীন্দ্রয়ি জ্ঞানলাভের জন্যে পরিপ্রশ্নের সাথে প্রণিপাতের প্রয়োজন হলে তা কিছু অবৈজ্ঞানিক হবে না। শাস্ত্র আরও বলেছেন- শুষ্ক তর্কে দ্বারা তুরীয় জ্ঞান লাভ হয় না। (নায়মাত্মা প্রবচেনন লভ্য-মুন্ডক উপনিষদ ৩/২/৩)। যাঁকে প্রত্যক্ষ করবার জন্যে ধর্মের প্রয়াস তিনি "অবাঙমনসোগোচরম্‍)- বাক্য ও মনের অতীত; সর্বভূতের অন্তরে লুকিয়ে আছেন, সহজে প্রকাশিত হন না। সদ্‍গুরুই এ ব্যাপারে পথপ্রদর্শক। এ গুরু এখন কৌলিক বা পুরোহিত সম্প্রদায়ভুক্ত হয়ে বংশগত হয়ে পড়েছে। কিন্ত্ত উপনিষদ্‍ বা গীতা কোন বংশগত গুরুর দাবী স্বীকার করছেন না। (গীতা ৪/৩৪) অর্থাঃ যে গুরু ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছেন। যার আত্মদর্শন হয়নি তিনি কেমন করে মন ও বুদ্ধির অতীত বিদ্যা প্রদান করতে সক্ষম হবেন? (গীতা ৩/৪২)

    হিন্দুধর্মে বিভিন্ন শাখা-উপশাখার এবং মার্গের কথা বলা হয়েছে, অভিজ্ঞ কর্ণধারের সহায়তা নিয়ে এ সকল পথে চললে পথ হারাবার ভয় নেই।

    গুরুবাদ এ ধর্মে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্ত্ত এর অর্থ এ নয় যে, যে কোন ব্যক্তি গুরু হতে পারবেন। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে অধিকারীভেদ। যে ব্যক্তি আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী নয় সে ব্যক্তি গুরু হতে পারে না। এ অধিকার সম্বন্ধে সাবধান বাণী যথেষ্ট উচ্চারিত। শ্রী রামকৃষ্ণ তাই উল্লেখ করেছেন- গুরু এক সচিদানন্দ। তিনিই শিক্ষা দিবেন। ... লোক শিক্ষা দেওয়া বড় কঠিন। যদিও তিনি সাক্ষাৎকার হন আর আদেশ দেন তাহলে হতে পারে।

    মানুষ সমগুণ ও সমতুল্য অবস্থায় ভূমিষ্ট হয় না। প্রত্যেকের দেহের মধ্যে যেমন শরীর অপেক্ষা আত্মার প্রাধান্য তেমনি জন্বগত অবস্থাতে মানষে মানুষে হিন্দু ধর্মের অধিকারবাদ একটা মৌলিক নীতি। এ নীতি বিস্তৃত হলে কোন তত্ত্মই উপলব্দ হবে না, বরং বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হবে। সকল মানুষের জন্বগত বিচারবুদ্ধি, প্রবৃত্তি এবং আধ্যাত্মিক তত্ত্ম ধারণ করবার ক্ষমতা এক নয়। তাই সকল রোগ এবং রোগীর জন্য সমান ব্যবস্থাপত্র নেই হিন্দু ধর্মে।

    কারণ ব্যতীত কোন কার্য হয় না এবং কার্য করলে সেই কার্যই অপর কার্যের কারণ । এটি বৈজ্ঞানিক সত্য। একে হেতুবাদ বা কার্যকারণবাদ বলা হয়। কাজ করলে তার ফল অনিবার্য। বৃহদারণ্যকে উপনিষদে(৪/৪/৫) ফলভোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জন্বমৃতু¨রূপ সংসার চক্র থেকে মুক্তি হবে না বলে বলা হয়েছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। দেহধারী জীব এক মুহুর্তও কর্মহীন হয়ে থাকতে পারে না। প্রতিটি কাজই যে সৎকাজ হবে তা বলা চলে না। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে যে কত ক্ষুদ্র প্রাণীবধ হচ্ছে তা আমরা জানি না।অজ্ঞানবশতঃ অনেক অন্যায় কাজেও অবতারণা ঘটেছে। তাই শুভাশভ মিশ্রিত কর্ম ব্যক্তি জীবনে হয়ে থাকে। শুভ কর্মে স্বর্গলাভ করে পুনর্জন্ব থেকে সাময়িক অবতারণা ঘটেছে। তাই শুভাশুভ মিশ্রিত কর্ম ব্যক্তি জীবনে হয়ে থাকে। শুভ কর্মে স্বর্গলাভ করে পুনর্জন্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি পেলেও মুক্তিলাভ হয় না। সুকৃতির ফল কালক্রমে শেষ হয়ে যায় ভোগের দ্বারা। তাই আবার জন্বগ্রহন করতে হবে। এ ধারাবাহিক জন্ব ও জন্বান্তর কৃতকর্মের ফলের বোঝা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই যাতে কর্ম বন্ধনের কারণ না হয়ে মুক্তির সোপান হয় সেভাবে সনাতন হিন্দুধর্মের অনুসারীরা চেষ্টা করেন। কামনাশূন্য হয়ে ফলাকাঙ্খা না করে কর্ম করিলে তা মুক্তির কারণ হয়। গীতায় আছে-

    যুক্তঃ কর্মফলং ত্যক্তা শান্তিমাপ্নোতি নৈষ্ঠিকীম্‍

    অযুক্তঃ কামকারেণ ফলে সক্তোনিবধ্যতে।।

    ঈশ্বরের নিমিত্ত কর্ম করছি, ফললাভের জন্য নয়- এরূপে কর্মফলত্যাগপূর্বক নিষ্কাম কর্মযোগী জ্ঞাননিষ্ঠার ফলস্বরূপ চিরশান্তির অধিকারী হন; কিন্ত্ত সকাম কর্মী কর্মফলে আসক্তিবশে সংসারে আবদ্ধ হন।

    আরও দেখেন-দেহ আমি নই। দেহের মধ্যে লুক্কায়িত আত্মাই প্রকৃত আমি। নিজে পরমাত্মার অংশবিশেষ। অজ্ঞানতার জন্য তা ভুলে থাকেন। এ অজ্ঞানতাকে দূর করবার জন্য আধ্যাত্মিক অনুভূতির দিকে ধাবিত হন হিন্দু সাধক।এ আধ্যাত্মিক জগতের শীর্ষদেশে আরোহন করা একমাত্র সম্ভব কঠোর পরিশ্রম এবং তপস্যায়। অধিকারীভেদে অনেক বিকল্প পথের কথা উল্লেখ রয়েছে হিন্দুধর্মে। তাই কোন বিশিষ্ট পথ রুচিসম্মত না হলে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। এজন্যে কোন বিশিষ্ট মন্দিরে বা উপাসনালয়ে উপস্থিত হতে হবেই- তা হিন্দু ধর্ম বলে না। আসলে ত্যাগই অমৃতত্ত্ম লাভের প্রকৃষ্ট উপায়, ভোগ নয়। ত্যাগনৈকে অমৃতত্ত্মমানশুঃ(না ১২/১৪)

    হিন্দুধর্ম মতে ধর্ম একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। দল বেঁধে হাটে-বাজারে , উৎসব মেলায় যাওয়া যায়, কিন্ত্ত অব্যক্ত অচিন্ত¨ ও নির্বশে পরমেশ্বরসত্তাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন অতীন্দ্রয়ি অনুভূতি। কঠোর সাধনায় আত্মিক উন্নতি ছাড়া এ ভূমিতে প্রবেশ করা যায় না। সর্বভূতে সমদর্শন ও সর্বভূতের কল্যাণ সাধনই হিন্দুধর্মের বিশেষ লক্ষ্য। ভগবান সৃষ্টির প্রতি অনুতে বিরাজমান। প্রত্যেক জীবের অন্তরে আত্মার উপলব্ধি করতে না পারলে সৃষ্টিকর্তাকে দেখা যায় না। (ঈশ-উপ-৫-৬, গীতা ৪/৩৫)

    সকলের মধ্যে নিজেকে অনুভব করতে না পারলে সম্পূর্ণভঅবে অপরের জন্য ব্যথিত হওয়া যায় না। (গীতা ৬/৩২)। এ ধর্ম কেবল ব্যক্তিগত হিতের কথা বলে না। বিশ্ব জগতের মঙ্গলের কথা গভীরভাবে বলে। তাহলেও কি এ ধর্মকে স্বার্থপরতার ধর্ম বলা যায়? সত্য অনুভব না করে সমালোচনা করলে সমালোচিত হওয়ারই সম্ভাবনা। তাই আধ্যাত্মিক জীবনের চরম শিখরে উন্নীত হয়েও যোগীকে লোকসংগ্রহ কর্মে (গীতা ৩/২০) ও সর্বভূতহিতে রত(গীতা ৫/২৫) থাকতে উপদেশ দিচ্ছেন শাস্ত্র।

    সনাতন হিন্দুধর্ম চিরন্তন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে এটি অবিনাশী। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও এটি শক্ত ও দৃঢ়মূল। এ ধর্মের অন্ত©নিহিত উদারতা ধর্ম-বর্ণ -নির্বশেষে সকলকে আপন করে নিয়েছে। এর নমনীয়তা, সংস্কার প্রবণতা সহজাত। এজন্য এটি কালে কালে কত গৌণ আচার বা বিচার গ্রহন বা বর্জন করেছে। এত সংঘাত, এত পরিবর্তন সত্ত্মেও এর অস্তিত্ম বিলুপ্ত হয়নি। কারণ এর সর্বজনীন, শাশ্বত সত্ত্মাকে সংস্কার করবার প্রয়োজন হয় না। লক্ষ্যনীয় রামানুজ ও চৈতন্য প্রবর্তিত ধর্মে জাতবিচার নেই এবং বৈষ্ণব ধর্মও হিন্দু ধর্মের এক শাখা এবং বেদান্তদর্শনের উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাখাও এরূপ। স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু ধর্মের এক শাখা এবং বেদান্তদর্শনের উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখাও এরূপ। স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দুধর্মের আত্মদর্শন ও সর্বত্র ব্রহ্মদর্শনের দুটি ধারাকে একত্রিত করে বলেছেন- আত্ননো মোক্ষর্থং জগদ্ধিতায় চ। অর্থাৎ নিজের হৃদয়ে আত্মানুভূতি হলে সাধকের কামনা বাসনার শৃঙ্খল ছিন্ন হয়। তাকে জীবমুক্তি দান করে। তথাপি তার পূর্ণ ব্রহ্মজ্ঞান হয়নি।ব্রহ্ম যেমন তার মধ্যে আছেন, তেমনি সৃষ্টির সকল জীবের মধ্যে তিনি আছেন (কট ২/২/১০-১২)। - " যার হেথায় আছে- তার সেথায় আছে"।

    উপনিষদে বিদ্যা এবং অবিদ্যার উল্লেখ রয়েছে। একে পরা এবং অপরা বিদ্যা বলে। সংসারে উভয়েরই প্রয়োজন। মানুষের জীবন বিভিন্ন স্তরে প্রবাহমান-ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বাণপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। এ সকল অবস্থার মধ্যদিয়ে মানুষের উত্তরণ ত্যাগে। এটিই তার অমৃত্ব লাভের উপায়।(দ্ব বিদ্যে বেদিতব্যে... পরা চৈবাপরা চ। মুন্ডক, উপ ১/১/৪)।


    সূত্র ঃ ণগেন হরিখটকা ব্লগ
    Views: 991 | Added by: DharmaJuddha | Rating: 5.0/1
    Total comments: 1
    0  
    1 rajendra   (22-09-2011 11:52 AM) [Entry]
    চমত্তকার একটা লেখা

    আমাদের সাথে শেয়ার করার জবত জন্য

    Only registered users can add comments.
    [ Registration | Login ]