ধর্মের তত্ত্ব ধর্মতত্ত্ব। “তত্ত্ব” কথাটির অর্থ হচ্ছে, নির্ধারিত বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান। সুতরাং ধর্ম সম্বন্ধে যে বিশেষ জ্ঞান তাকেই ধর্মতত্ত্ব বলা হয়। ধর্ম কাকে বলে, ধর্মের স্বরূপ কী, ধর্ম পালনের উপকারিতা কী ইত্যাদী বিষয়ে সুশৃঙ্খল চিন্তা করা, আলোচনা করাই ধর্মতত্ত্বের কাজ।
১. ধর্মের সাধারণ লক্ষণ
ধারণাদ্ ধর্ম ইত্যাহুর্ধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ। যঃ স্যাদ্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নেতরঃ।।
অর্থাৎ ধারন ক্রিয়া ( ধৃ+মন্) থেকে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি। ধর্ম সৃষ্টিকে বিশেষভাবে ধারণ করে রয়েছে। সংক্ষেপে যা কিছু ধারণ শক্তিসম্পন্ন, তাই ধর্ম, এছাড়া অন্য কিছু ধর্ম নয়।
কোন বস্তুর গুনাবলিই তার ধর্ম। যেমন- উত্তাপ ও আলো অগ্নির ধর্ম। উত্তাপ ও আলো বিনষ্ট হলে অগ্নির অস্তিত্ব থাকে না। মানুষের নিজস্ব একটি ধর্ম রয়েছে- যা মানুষকে মানুষ নামে পরিচিতি দান করে আর সেটিই হল মনুষ্যত্ব। শাস্ত্রে হিংসা না করা, চুরি না করা. সংযমী হওয়া, শুচি থাকা এবং সত্যাশ্রয়ী হওয়া- এই পাঁচটিকে মনুষ্যত্বের তথা ধর্মের লক্ষন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ধর্ম ধার্মিককে রক্ষা করে। ধর্ম নষ্ট হলে ধর্মাশ্রয়ীরও বিনাশ হয়ে থাকে। সুতরাং কখনও ধর্ম নষ্ট করতে নেই। ২. ধর্মের সাধারণ লক্ষণ
বৈশিষিক দর্শনে বলা হয়েছে- ‘যতোহভ্যুদয়-নিঃশ্রেয়সিদ্ধি সঃ ধর্মঃ- যা থেকে অভ্যুদয় অর্থাৎ জাগতিক কল্যাণ এবং নিঃশেয়স্ বা মোক্ষ লাভ হয় সেটিই ধর্ম। তাহলে কথাটি দাঁড়াল যা থেকে মানুষ সাংসারিক উন্নতি –ধন, মান, যশ, প্রতিপত্তি ইত্যাদী লাভ করতে পারে আবার জীবনের পরম প্রাপ্তিরূপে মোক্ষ লাভও করতে পারে তাই ধর্ম।
৩. ধর্মের মূল
ধর্মের মূলে রয়েছেন ভগবান স্বয়ং। “ধর্মমূলো হি ভগবান, সর্ববেদময়ো হরিঃ।” ঈশ্বর আছেন তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি সর্বভূতের অন্তরাত্মা। সব কিছুই তাঁর থেকে উৎপন্ন হয়েছে। সুতরাং তিনিই ধর্মেরও মূল।
৪. ধর্মচর্চার বিভিন্নতা
হিন্দুধর্ম অধিকারী ভেদে ধর্মীয় স্তরের বিভিন্নতা অনুমোদন করে থাকে। কেউ নিরাকারে, কেউ সাকারে ঈশ্বরকে আরাধনা করতে পারেন। এ সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন-
অর্থাৎ যিনি ভজন করেন আমি তাঁকে সেভাবেই কৃপা করে থাকি। মনুষ্যগণ সর্বপ্রকারে আমার পথেরই অনুবর্তন করছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কন্ঠেও ধ্বনিত হয়েছে ‘যত মত তত পথ’।
হিন্দু ধর্মে বহু দেবদেবীর উপাসনা প্রচলিত থাকলেও এটি বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম নয়, হিন্দু ধর্ম একের মধ্যে বহুর সমাবেশ বা বহুর মধ্যে একের অভিব্যক্তি এই বিশেষ একশ্বরবাদে বিশ্বাসী।
৫. আপদ ধর্ম
ধর্মতত্ত্বের প্রসংঙ্গেই আর যে বিষয়টি বিবেচ্য সেটি হল মাহভারতের শান্তিপর্বে বর্ণিত আপদধর্ম। সত্য সৎলোকের ধর্ম সনাতন ধর্ম সত্যকেই নমস্কার করে। সত্যই পরমগতি। কিন্তু এই শাস্ত্র বচন জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এ বিষয়ে একটি ছোট কাহিনী আছে- বনপথে পথিক যাচ্ছেন। পথটিতে ডাকাতের ভয় রয়েছে। হঠাৎ কয়েক জন ডাকাত পথিককে তাড়া করল। সে প্রাণভয়ে এক মুনির আশ্রমে প্রবেশ করে এককোণে লুকিয়ে রইল। ঘটনাটি মুনি দেখতে পেলেন। কিছুক্ষন পর ডাকাতের দল ঐ আশ্রমে প্রবেশ করে মুনিকে জিজ্ঞাসা করল, সেখানে কোন পথিক এসেছে কি না। মুনি যদি সত্য কথা বলেন, তাহলে পথিক ডাকাতদলের আক্রমনে মারা যেতে পারে। আর যদি মিথ্যা কথা বলেন, তাহলে মুনকি পাপভাগী হতে হবে। এমতাবস্থায় মুনি কিছু না বলে চুপ করে রইলেন। ডাকাতদল পথিককে খুঁজে বের করলে এবং তাকে হত্যা করে তার ধন রত্ন নিয় পালিয়ে গেল। পরিণামে মুনির ভাগ্যে দুর্ভোগ নেমে এল। নর হত্যার অপরাধে মুনিকে নরক ভোগ করতে হল। তিনি যদি মিথ্যা কথা বলতেন, তাহলে তাঁর কথা বিশ্বাস করে ডাকাতদল চলে যেত, পথিকের প্রাণ রক্ষা হত। কিন্তু তিনি তা করেন নি নিজের পাপের ভয়ে। একজন নিরপরাধ শরণাগত মানুষের প্রাণ রক্ষা করা উচিত ছিল এবং একেই বলে আপদ ধর্ম।
৬. ধর্মের সারকথা
কতকগুলো বিশ্বাস, কতকগুলো আচার ও কতকগুলো অনুষ্ঠান- এ তিনটি মানুষের ধর্ম।
বিশ্বাস ধর্মাশ্রয়ীকে বিশ্বাস করতে হবে যে, ধর্মের মূলে রয়েছেন ভগবান। তিনি সর্বশক্তিমান এবং অদ্বিতীয়। আচার ধর্ম আচরণের ক্ষেত্রে মানুষকে অবশ্যই দৈহিক ও মানুসিক শুচিতা ও পবিত্রতা রক্ষা করে চলতে হবে। কবে এ ক্ষেত্রে বাহ্যিক শুচিতার চেয়েও মনের শুচিতাকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠান দৈনন্দিন জীবনে পূজা-অর্চনা, সন্ধ্যা -আহ্নিক ইত্যাদী ধর্মীয় কর্মকে অনুষ্ঠান বলা যায়। ধর্মের বিশেষ লক্ষনে দেখা গেছে ধর্মের মধ্যে ইহজাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সুতরাং ধর্মনুরাগী ব্যক্তিকে পারমার্থিক কল্যানের কথা চিন্তার সাথে সাথে বাস্তব জীবনের মঙ্গলময় কর্মের কথা বিবেচান আনতে হবে। এ সম্পর্কে কৃষ্ণ দাস কবিরাজ প্রণীত চৈত্যচরিতামৃতে বলা হয়েছে-
“জীবে দয়া নামে রুচি বৈষ্ণব সেবন। ইহা হতে হৈতে ধর্ম আর নাহি সনাতন।।”
স্বামী বিবেকানন্দ জীবের মাঝে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করে ঈশ্বর জ্ঞানে জীব সেবার জন্য আহবান করেছেন-
“বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর। জীবে প্রেম করে যেই জন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।।”
দাদ আপনাকে ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য। আপনার আমার সবার জন্যই চেষ্টা করছি হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কিছু লিখতে। আমার খুবই ভাল লাগছে দাদা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা আমি অনেক কিছুই জানতাম না এখানে আসার পর অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারছি।