বাঙালি হিন্দু বিবাহ বলতে বোঝায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বসবাসকারী বাঙালি হিন্দুদের নিজস্ব বিবাহ-সংক্রান্ত প্রথা ও রীতিনীতি। উচ্চবর্ণীয় হিন্দু সমাজের বিবাহে প্রধানত দুইটি আচারগত বিভাগ লক্ষিত হয়। যথা, বৈদিক ও লৌকিক। লৌকিক আচারগুলি স্ত্রী আচার নামে পরিচিত। বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অবশ্য পালনীয় প্রথাগুলি হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম, সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ, ধৃতিহোম ও চতুর্থী হোম। বৈদিক আচারগুলির সঙ্গে লৌকিক আচারগুলির কোনো সম্পর্ক নেই। লৌকিক আচারগুলি অঞ্চল, বর্ণ বা উপবর্ণভেদে এক এক প্রকার হয়। নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যে লৌকিক আচার তো বটেই বিবাহের মৌলিক আচারগুলির ক্ষেত্রেও সম্প্রদায়ভেদে পার্থক্য লক্ষিত হয়। অতীতে বাঙালি হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহের ব্যাপক প্রচলন ছিল। বর্তমানে বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ। বর্তমান কালে পরিণত বয়সেই বিবাহ প্রথা প্রচলিত। তবে বিবাহে পণপ্রথা এখনও বহুল প্রচলিত।
১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালি হিন্দু সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ আইনসিদ্ধ হয়। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। হিন্দু এই দুই প্রথা আজও সমাজের বৃহত্তর অংশে প্রচলিত নয়। নাগরিক সমাজে অসবর্ণ বিবাহও বর্তমানে প্রচলিত হয়েছে। বিবাহ অনুষ্ঠান
বাঙালি ব্রাহ্মণ সমাজে পাঁচটি শাখা রয়েছে — রাঢ়ী, বারেন্দ্র, বৈদিক, সপ্তশতী ও মধ্যশ্রেণী। বাঙালি কায়স্থ সমাজে রয়েছে চারটি শাখা — উত্তর রাঢ়ী, দক্ষিণ রাঢ়ী, বারেন্দ্র ও বঙ্গজ। এই সকল বর্ণ এবং তাদের শাখা ও উপশাখাগুলির মধ্যে বিবাহ প্রথায় দুটি বিভাগ দেখা যায় — বৈদিক ও লৌকিক। লৌকিক প্রথাগুলি মেয়েলি আচার। এই কারণে এগুলি ‘স্ত্রী আচার’ নামে পরিচিত। বৈদিক আচারে সাম, যজুঃ ও ঋক্ বেদত্রয়ের অনুসরণকারী ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহ প্রথায় আবার সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। হিন্দু বিবাহের বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অপরিহার্য হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম (লাজ বা খই দিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান), সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ (কন্যার পাণি অর্থাৎ হস্ত গ্রহণ), ধৃতিহোম (ধারণ করার অর্থাৎ কন্যাকে ধরে রাখার যজ্ঞ) ও চতুর্থী হোম।এছাড়া পালিত হয় অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন, ধ্রুব নক্ষত্র দর্শন, শিলারোহণ ইত্যাদি কয়েকটি বৈদিক প্রথাও। বৈদিক প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় প্রথা ও বিবাহের মূল অঙ্গ।
বাঙালি হিন্দু বিবাহের লৌকিক আচার বহুবিধ। এই প্রথাগুলি বর্ণ, শাখা, উপশাখা এবং অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়। এগুলির সঙ্গে বৈদিক প্রথাগুলির কোনো যোগ নেই। পাটিপত্র
পাটিপত্র বাঙালি হিন্দু বিবাহের প্রথম আচার। এই আচার লগ্নপত্র বা মঙ্গলাচরণ নামেও পরিচিত। ঘটকের মাধ্যমে সম্বন্ধ করে বিবাহ স্থির হলে নগদ বা গহনাপত্রে যৌতুক ও অন্যান্য দেনাপাওনা চূড়ান্তভাবে স্থির করার জন্য যে অনুষ্ঠান হয়, তাকেই পাটিপত্র বলে। এই আচারের মাধ্যমেই বিবাহের অন্যান্য আচারের সূচনা ঘটে।
পানখিল
[size=13]পানখিল বাঙালি হিন্দু বিবাহের দ্বিতীয় আচার। এটি পাটিপত্রের ঠিক পরেই পালিত হয়। পানখিলের অর্থ পান পাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে খিল দেওয়া বা খড়কে বেঁধানো। এই আচারটি প্রথমে বরের বাড়িতে এবং পরে কনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পানখিল আচারে বাড়ির মেয়েরা এবং প্রতিবেশিনীরা ‘বিয়ের গান’ গেয়ে থাকেন। এই গানের বিষয়বস্তু হল রাম ও সীতার বিবাহ।
[color=red][size=13]দধি মঙ্গল:বিবাহের দিন বর ও কন্যার উপবাস। তবে উপবাস নির্জলা নয়। জল মিষ্টি খাওয়ার বিধান আছে। তাই সারাদিনের জন্য সূর্য্যোদয়ের আগে বর ও কন্যাকে চিড়ে ও দৈ খাওয়ানো হয়।
গায়ে হলুদ:সংস্কৃত ভাষায় এই রীতিকে বলা হয় গাত্রহরিদ্রা। হিন্দু ধর্মে কয়েকটি জিনিসকে শুভ বলা হয়। যেমন শঙ্খধ্বনি, হলুদ ইত্যাদি। প্রথমে বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে হলুদ মাখানো হয়। পরে সেই হলুদ কন্যার বাড়ী পাঠানো হয়। কন্যাকে সেই হলুদ মাখানো হয়।
শঙ্খ কঙ্কন:কন্যাকে শাখা পরানো হয়।
এরপর বিকালে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়
[size=13]বর বরণ:বর বিবাহ করতে এলে তাকে স্বাগত জানান কন্যাপক্ষ। সাধাবনত: কন্যার মা তার জামাতাকে একটি থালায় প্রদীপ, ধান দুর্ব্ব ও অন্যান্য কিছু বরণ সামগ্রী নিয়ে বরণ করেন। এরপর বরকে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় ও দুধ এবং মিষ্টি খাওয়ানো হয় ।
সাত পাক:বিবাহের মন্ডপে প্রথমে বরকে আনা হয়। এরপর কন্যাকে পিঁড়িতে বসিয়ে আনা হয়। সাধারণত: কন্যার জামাইবাবুরা পিঁড়ি ধরে থাকেন। কন্যা পান পাতা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রাখেন। কন্যাকে পিঁড়িতে করে বরের চারপাশে সাতপাক ঘোরানো হয়।[/size][/color]
শুভদৃষ্টি:বিবাহের মন্ডপে জনসমক্ষে বর ও কন্যা একে অপরের দিকে চেয়ে দেখন।
মালা বদল:কন্যা ও বর মালাবদল করেন। এই রীতির অর্থ হচ্ছে দুজন একে অন্যকে জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নিলেন। মুসলমান মতে একই ভাবে কন্যাকে বলতে হয় "কবুল"। আবার ঠিক এই রকমই খৃষ্টান মতে চার্চের ফাদারের সামনে বর ও কন্যা বিবাহে সন্মতি জানান।
সম্প্রদান:কন্যার পিতা কন্যাকে জামাতার হাতে সম্প্রদান করেন বেদমন্ত্রে। বরও জানান যে তিনি কন্যার ভরন পোষনের দ্বায়িত্ব নিলেন। বিবাহের মন্ত্র হল যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম।
অঞ্জলি:কন্যা ও বর খৈ অগ্নাহুতি দেন। প্রচলিত বাংলায় একে বলে খৈ পোড়া। বৈদিক যুগে মানুষ নানা ধরনের শক্তির উপাসনা করতেন। অগ্নিও তাদের মধ্যে অন্যতম।
[size=13]সিঁদুর দান:বিবাহের শেষ রীতি হল বর কন্যার কপালে সিঁদুর লেপন করেন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পরেন।[
ধন্যবাদ দিদি কে মন্তব্য করার জন্য খুবই ভাল লাগল সিঁদুর পরার রীতি টা কোথা থেকে এসেছে আমি ঠিক জানি না, তবে নেট ঘেটে যা পেলাম তা দেখার জন্য অনুরোধ করছি এই লিংকে- [url=http://http://joubonjatra.com/forums/entry.php/1291-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%93%E0 %A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-% E0%A7%A7?s=123cc77197bb4cf2d627d23f67a387d6&bt=13664#comment13664[/url] ঐ সাইটের লেখাটার সত্যতা কতটুকু আমি বলতে পারবনা। আমাকে ক্ষমা করবেন দয়া করে। সিঁদুর পরার রীতি টা কোথা থেকে এসেছে আমি আমি চেষ্টা করব আসল তথ্যটি উপাস্থাপন করতে
সিঁদুরের ইতিহাস অতি প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু ধর্মমতে এটি স্বামীর দীর্ঘজীবন বয়ে আনে বলে বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করেন। এর রঙ লাল, কারণ এটি শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক। হিন্দু বিবাহের সময়ে একজন নারীর প্রথম কপালে সিঁদুর দিয়ে চিহ্ন আঁকা হয়।
আমি দুখিঃত লিংকটি ঠিক ভাবে না দিতে পারার জন্য। ঐখান থেকে লেখাটা কপি করে এনে নিচে দিয়ে দিলাম।
Quote
আপনারা যারা ভিঞ্চি কোড বইটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন বা সিম্বলীজম সম্পর্কে ধারনা আছে, তাদের কাছে প্যাগান ধর্ম পরিচিত হবার কথা। এই সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে বলবেন, পরের ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। প্রাচীন প্যাগান ধর্মে বিভিন্ন প্রতীক ব্যাবহার করা হত। কয়েকটি উদাহরন দিচ্ছি। আমরা দেখি হিন্দু বিবাহিতা নারীরা সিঁদুর ব্যাবহার করে। এই সিঁদুর কিন্তু খুব স্পষ্ট অর্থ বহন করে। সিঁদুর হচ্ছে যোনীর প্রতীক। লক্ষ্য করুন, হিন্দু মেয়েরা মাথার চুলে সিঁথি করে মাঝ বরাবর, যেটা বিবাহ পূর্বে সাদা থাকে, বিয়ের পরে সিঁদুরে লাল হয়ে যায়। সিঁদুর হচ্ছে রক্তাক্ত যোনীর প্রতীক। রক্তাক্ত যোনী নির্দেশ করে এই নারীটি আর ভার্জিন নেই, এই নারীর যোনী রক্তাক্ত হয়ে গেছে, সুতরাং পুরুষদের এই নারীর যোনী থেকে দূরে থাকতে বলা হচ্ছে সিদুরের চিহ্ন দ্বারা । আবার ধরেন হিন্দু ধর্মে শিবলিঙ্গের পূঁজা করা হয়। এই পূঁজা আসলে উর্বরতার প্রতীক, পৃথিবীতে মানব সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতীক, একই সাথে শক্তি এবং সক্ষমতার প্রতীক। এ্যান্থ্রপোলজী সম্পর্কে কারও যদি কিছু ধারনা থাকে তাহলে তারা ব্যাপারটি খুব ভালোভাবে বুঝবেন।
দুখিঃত কোটেশন করে দিতে চেয়েছিলাম ছোট হয়ে গেল তাই পুনরায় দিলাম ক্ষমার চোখে দেখলে পরবর্তী পোস্ট করার শক্তি পাব দাদারা।
আপনারা যারা ভিঞ্চি কোড বইটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন বা সিম্বলীজম সম্পর্কে ধারনা আছে, তাদের কাছে প্যাগান ধর্ম পরিচিত হবার কথা। এই সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে বলবেন, পরের ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। প্রাচীন প্যাগান ধর্মে বিভিন্ন প্রতীক ব্যাবহার করা হত। কয়েকটি উদাহরন দিচ্ছি। আমরা দেখি হিন্দু বিবাহিতা নারীরা সিঁদুর ব্যাবহার করে। এই সিঁদুর কিন্তু খুব স্পষ্ট অর্থ বহন করে। সিঁদুর হচ্ছে যোনীর প্রতীক। লক্ষ্য করুন, হিন্দু মেয়েরা মাথার চুলে সিঁথি করে মাঝ বরাবর, যেটা বিবাহ পূর্বে সাদা থাকে, বিয়ের পরে সিঁদুরে লাল হয়ে যায়। সিঁদুর হচ্ছে রক্তাক্ত যোনীর প্রতীক। রক্তাক্ত যোনী নির্দেশ করে এই নারীটি আর ভার্জিন নেই, এই নারীর যোনী রক্তাক্ত হয়ে গেছে, সুতরাং পুরুষদের এই নারীর যোনী থেকে দূরে থাকতে বলা হচ্ছে সিদুরের চিহ্ন দ্বারা । আবার ধরেন হিন্দু ধর্মে শিবলিঙ্গের পূঁজা করা হয়। এই পূঁজা আসলে উর্বরতার প্রতীক, পৃথিবীতে মানব সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতীক, একই সাথে শক্তি এবং সক্ষমতার প্রতীক। এ্যান্থ্রপোলজী সম্পর্কে কারও যদি কিছু ধারনা থাকে তাহলে তারা ব্যাপারটি খুব ভালোভাবে বুঝবেন।
oh osadharon ekta lekha share korchen dada. apnar ekhane prothom poster jonno sagotom. evabe active thakben asa kori. erokom lekha regular chai. r onno site theke lekha dile just oi lekhatar ekta link diye diben niche. ete lekhoker proti somman tuku ontoto dekhano hobe. r site e kaj korte kuno prblm hole rajendra dada ase unake bolben. ami kisudin por theke abar active hobo asa kori. hare krishna