শুম্ভ ও নিশুম্ভ হলেন দুইজন হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র। শাক্ত ধর্মগ্রন্থ দেবীমাহাত্ম্যম্ অনুযায়ী, এঁরা হলেন অসুর ভ্রাতৃদ্বয়। দেবী দুর্গার সঙ্গে এঁদের যুদ্ধ হয়েছিল; এবং যুদ্ধের শেষে এঁরা দেবীর হস্তেই পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন। জন স্ট্র্যাটন হাউলে ও ডোনা মেরি উলফের মতে, শুম্ভ ও নিশুম্ভ হলেন ঔদ্ধত্য ও অহংকারের প্রতীক, যাঁরা দেবীর বিনয় ও প্রজ্ঞার নিকট পরাস্ত হন
দেবীমাহাত্ম্যম্
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায় থেকে শুম্ভ ও নিশুম্ভের কাহিনির সূচনা। এই দুই ভাই ত্রিলোক অধিকার করার বাসনায় কঠোর তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।তাঁরা পুষ্কর নামে এক পবিত্র ক্ষেত্রে গিয়ে এক হাজার বছর তপস্যা করেন। তাঁদের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তাঁদের বর দেন যে দেব, দানব কিংবা মানুষ, কেউই তাঁদের পরাস্ত করতে পারবে না। এরপর দুই ভাই স্বর্গ জয় করে দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেন। দেবতারা দুর্গার শরণাপন্ন হলেন দুর্গা তাঁদের সহায়তা করতে সম্মত হন।
এদিকে শুম্ভের অনুচর চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুর পথে দেবীকে দেখতে পান। দেবীর রূপে মোহিত হয়ে তাঁরা শুম্ভের নিকট গিয়ে দেবীর আগমনের বার্তা দেন। শুম্ভ বানর সুগ্রীবকে দেবীর নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু দেবী তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। অসুর ভ্রাতৃদ্বয় স্থির করেন, দেবী স্বেচ্ছায় তাঁদের নিকট আসতে না চাইলে, তাঁরা দেবীকে হরণ করে আনবেন। তাঁরা ধূম্রলোচন নামক অসুরের অধীনে ষাট হাজার সেনা প্রেরণ করেন দেবীকে হরণ করার জন্য। কিন্তু দেবী ও তাঁর বাহন সিংহ সমগ্র বাহিনীকে ধ্বংস করেদেন। এরপর চণ্ড ও মুণ্ডকে প্রেরণ করা হলে, দেবী তাঁদেরও হত্যা করেন।
মৃত্যু
এরপর শুম্ভ ও নিশুম্ভকেই দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসতে হয়। ব্রহ্মার বরে অসুর ভ্রাতৃদ্বয় দেব, দানব ও মানুষের হাতে অপরাজেয় হলেও, দেবীর বিরুদ্ধে তাঁরা সুরক্ষিত ছিলেন না। প্রথমেই দেবীর সিংহকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিশুম্ভের মৃত্যু ঘটে। নিশুম্ভের মৃত্যুর পর, তাঁর মৃতদেহ থেকে এক শক্তিশালী দানবের উত্থান ঘটে। কিন্তু দেবী সেই দানবটিকেও শিরোশ্ছেদ করে হত্যা করতে সমর্থ হন। ভাইয়ের মৃত্যুতে ক্রুদ্ধ হয়ে শুম্ভ দেবীকে আক্রমণ করেন। কিন্তু তিনি নিজেই দেবীর ত্রিশূলে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। শুম্ভ ও নিশুম্ভের মৃত্যুর পরে ত্রিজগৎ আবার স্বাভাবিক হয়।