কৃষ্ণ পক্ষ বা পিতৃপক্ষ ও মাতৃপক্ষ বা দেবীপক্ষ ( দেবী পক্ষের আগমনী) - 9 September 2011 - হিন্দু ধর্ম ব্লগ - A Total Knowledge Of Hinduism, সনাতন ধর্ম
Hinduism Site
Main » 2011»September»9 » কৃষ্ণ পক্ষ বা পিতৃপক্ষ ও মাতৃপক্ষ বা দেবীপক্ষ ( দেবী পক্ষের আগমনী)
Added by: rajendra
9:52 AM
কৃষ্ণ পক্ষ বা পিতৃপক্ষ ও মাতৃপক্ষ বা দেবীপক্ষ ( দেবী পক্ষের আগমনী)
বৎসর কে বারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি ভাগকে এক একটি মাস
বলা হয়। প্রতি মাসে ২টি পক্ষ, একটি কৃষ্ণ পক্ষ অপরটি শুক্লপক্ষ। প্রতিপদ
তিথি হইতে অমাবস্যাকে বলা হয় কৃষ্ণ পক্ষ, আবার প্রতি পদ হইতে পূর্ণীমাকে
বলা হয় শুক্ল পক্ষ। বৎসরে ২৪টি পক্ষ আছে, তন্মধ্যে ২টি পক্ষ বিশেষ
তাৎপর্য্যপূর্ণ। প্রথমটি পিতৃপক্ষ ও দ্বিতীয়টি দেবীপক্ষ। আশ্বিনের কৃষ্ণ
পক্ষের তিথীকে বলা হয় মহালয়া। এই কৃষ্ণ পক্ষকে বলা হয় অপরপক্ষ কিংবা
পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পার্বন শ্রাদ্ধ ও তর্পন
করা হয়। যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে এ সময় পিতৃ পুরুষেরা আসেন। তাদেরকে তৃপ্ত
করার জন্য তিল, জল, দান করা হয়। এবং তাহাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য
উল্কাদান করা হয়। এই অমাবস্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবীপূজায়
প্রবৃত্ত হতে হয়। তাই দেবীপূজার পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ, মহালয়া হচ্ছে
পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবী পক্ষের শুরুর পূর্ব দিন পিতৃপক্ষে আত্নসংযম
করে দেবী পক্ষে শক্তি সাধনায় প্রবেশ করতে হয়। দেবী শক্তির আদিশক্তি তিনি
সর্বভূতে বিরাজিত। তিনি মঙ্গল দায়িনী করুনাময়ী। সাধক সাধনা করে দেবীর বর
লাভের জন্য দেবীর মহান আলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ করেন বলেই এ দিনঠিকে বলা হয়
মহালয়া। মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে দেবী বন্দনা শুরু হয়। কোন কোন অঞ্চলে
দেবীর আরাধনা প্রতিপদ থেকে শুরু হয়। আমাদের এতদ্দেশে ষষ্ঠ তিথি থেকে দেবী
বন্দনা শুরু হয়। দুই মতেই দেবী পূজার রীতি প্রচলিত আছে। আগেকার দিনে বিশেষ
করে জমিদাররা তাদের নিজ বাড়ীতে শারদীয় দূর্গোৎসব বেশ ধুম-ধামের সাথে করতেন।
গান-বাজনা, আলোক সজ্জা আতশ বাজি দান সামগ্রী ভূরি ভোজের প্রচুর ব্যবস্থা
থাকত কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব অহমিক দাম্ভিকতা ঐশ্বর্যের ব্যাপার
গুলী তাদের মনের ভিতর কাজ করত, প্রধান্য পেত গৃহ কর্তার মতাদর্শ কালের
গর্ভে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তির পরপরই শুরু হয় গণতান্ত্রিক কায়দায়
সার্বজনীন দুর্গোৎসব যেহেতু এই পূজা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ তাই সার্বজনীন
বিষয়টাকে মাথায় রেখে আর্বিভূত হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংঘ। দূর্গার
কাঠামোকে সামাজিক ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দেবীর দশ হাত বলতে আমরা
দশ জনকে বুঝি। দশ বলতে আমরা দেশের মানুষকে বুঝি। জনশক্তি যার পক্ষে তিনিই
দেশের পালন কর্তা হতে পারেন। দেবীর বহন সিংহ রাজগুণের প্রতীক, অসুর তমগুণের
প্রতীক। সত্বগুণের সাতে রজগুণের মিশ্রন ঘটলেই তমগুণ মিশ্রিত অসুর শক্তি
অর্থাৎ শুত্রুকে জয় করা যায়। শুধু জনশক্তি একত্রিত হলে চলবেনা। জ্ঞানের
প্রয়োজন আছে। ব্রাক্ষণ শক্তির প্রতীক বিদ্যারূপে স্বরস্বতি মায়ের সাথে
আছেন। তার বাহন সাদা হাঁস, হাতে বীণা। আবার শুধূ জ্ঞান থাকলেই চলবেনা,
জাতীকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে অর্থের প্রয়োজন আছে। তাই অর্থের প্রতীক লক্ষ্মী
তার বাহন পেঁচা, হাতে ধনের ভান্ডার। জ্ঞান আরাধনা না থাকলে সকল কাজ জয়
করা যায়না। তাই বল বীর্যের প্রয়োজন। বলবীর্যের অধীকারী ক্ষান্ত শক্তির
প্রতীক কার্তিক দেবীর পাশে উপস্থিত আছেন। কার্তিক এর বাহন ময়ূর সৌন্দয্যের
প্রতীক। হিংসার প্রতীক সর্পজ্ঞান অর্থ বলবীর্যের সমন্বয় সাধনের পরও আর
একটি শক্তির বেশী প্রয়োজন সেটা হল গণশক্তির ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক গণেশ।
গণেশের মাথাটি হাতির। তার বাহন ইদুর, ছোট এবং বড়র সংমিশ্রণ এখানেই। গণেশই
জাতির সমস্যা সমধান করতে পারেন। এই আদর্শের পূজা যুগে যুগে হয়ে আসছে। পরেও
হবে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সমাজের প্রতিটি মানুষের এই
দুর্গাকাঠামোর আদর্শ গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য্য। শক্তিতে শক্তিমান হতে
আমরাও চাই একটু ভক্তি। ভক্তি মিশ্রিত শক্তিতে অকল্যাণ আসতে পারেনা।