রাজধানীতে ভণ্ড কল্কি অবতারের পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ
ঢাকার বিভিন্ন মঠ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে কল্কি অবতার ফাউন্ডেশনের একটি পোস্টার জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এ পোস্টারের বক্তব্য ও ছবিতে বোঝানো হয়েছে, রাহ গহর শাহী নামক ছবির এ ব্যক্তিটি পৃথিবীতে কল্কি অবতাররূপে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি দুরারোগ্যদের রোগমুক্তি ঘটান, তার শিষ্যদের তিনি চাঁদে তার ছবি দেখান। তিনি ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে বিকাল ৫টায় তার চরণ স্পর্শ করবেন।
এ পোস্টার দেখে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ হিন্দু সমাজ নেতারা কল্কি অবতারকে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির নেতারা বলেছেন, কল্কি অবতার পরিচয়দানকারী কথিত অবতার একজন ভণ্ড ও প্রতারক। কারণ শ্রীমদ্ভাগবত, কল্কিপুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ প্রভৃতি পবিত্র ধর্মগ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে আছে, কলিকালের মেয়াদ হবে ৪ লাখ ৩২ হাজার বছর। এ কলিকালের শেষেরদিকে সম্বলপুর গ্রামে বিষ্ণুযশার পুত্র হিসেবে কল্কি অবতার জন্মলাভ করবেন। হিন্দু নেতারা প্রশ্ন তোলেন, কলিকালের এ পর্যন্ত ৫ হাজার ১১২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখনই কল্কি অবতারের আবির্ভাব হয় কীভাবে?
আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানে হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিরা বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বলে সে পোস্টারে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সভাপতি বীরেশ চন্দ্র সাহা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, নারী এনজিও ব্যক্তিত্ব আশালতা বৈদ্য, বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক বাসুদেব ধরসহ প্রায় দুজন বিশিষ্ট হিন্দু ব্যক্তিত্বের নাম ছাপানো হয়েছে। কিন্তু এ নেতারা দাবি করেছেন, কল্কি অবতার ফাউন্ডেশনের পক্ষে ফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুষ্ঠানের বিষয়ে অবহিত করলেও তাদের সম্মতি ছাড়াই পোস্টারে নাম ছাপানো হয়েছে। গত রোববার হিন্দু সমাজের নেতারা কল্কি অবতার সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা করেও কল্কি অবতার ফাউন্ডেশনের কোনও ঠিকানা পাননি। পোস্টারে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও যারা ফোন ধরেছেন তারা তাদের ঠিকানা জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছেন। অগত্যা তারা পোস্টারে ছাপানো ই-মেইলে তাদের লিখিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে পোস্টারে ছাপানো মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে একজন নারী তার নাম পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, কৌশলগত কারণে তিনি তার নাম পরিচয় এবং কল্কি অবতার ফাউন্ডেশনের ঠিকানা জানাবেন না। অনেক জেরার পর হিন্দিভাষীদের উচ্চারণে বাংলায় তিনি বলেন ‘গুরুজী থাকেন লন্দনে (লন্ডনে)’। তাদের অফিস ‘গোলছানে’ (গুলশানে) এবং তার নাম ‘বিউতি রানি দাছ (বিউটি রানি দাস)। তিনি বাংলাদেশি না ভারতীয় জানতে চাইলে বলেন, তার বাড়ি ঢাকার ওয়ারীতে। তাহলে হিন্দীভাষীদের মতো বাংলা বলছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘হামার বিহা হয়াছে দিলিস্নমে’। এ বিউটি আরও জানান, তাদের গুরুজী ঢাকায় আসার কর্মসূচি বাতিল করেছেন। কেন করেছেন জানতে চাইলে বলেন, গুরুজীকা ছারীর করহেছে’। তিনি তো অবতার, দুরারোগ্য ব্যক্তির রোগমুক্তি করান। তিনি অসুস্থ হলেন কেন? এর কোনও সদুত্তর না দিয়েই তিনি ফোন ছেড়ে দেন।
ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, কথিত কল্কি অবতার রাহ গহর শাহী সুফি বাবা গহর আলী সাহের পঞ্চম প্রজন্ম। তিনি ১৯৪১ সালের ২৫ নভেম্বর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন।