ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ্ বেদ সংহিতার পর বৈদিক সাহিত্যের ধারায় ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ এসেছে। বেদে ব্রহ্ম শব্দের এক মন্ত্র বা স্তোত্র। যে গ্রন্থে ব্রহ্ম বা মন্ত্র সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে তার নাম ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ প্রধানত গদ্যময় হলেও মন্ত্র বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বহু পদ্য পাওয়া যায়।
ব্রাহ্মণ তিন অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ হল ব্রাহ্মন। দ্বিতীয় অংশের নাম আরণ্যক। অন্তিম ভাগের নাম বেদান্ত বা উপনিষদ।
ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মন বেদ এর কর্মকাণ্ডের অন্তর্গত। এত যজ্ঞাদির বিবিধ ক্রিয়াকাণ্ড লিপিবদ্ধ আছে। ব্রাহ্মন ছয়টি লক্ষন দ্বারা পরিচিত। যথা-বিধি, অর্থবাদ, নিন্দা, প্রশংসা, পুরাকল্প ও পুরাকৃতি।
বিধি :বিশেষ বিশেষ কর্ম অনুষ্ঠানের জন্য যে নির্দেশ রয়েছে তাই বিধি। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, অনাবৃষ্টির কালে বৃষ্টি নামানোর জন্য যে যজ্ঞাদী করা হয় তা বিধিবাক্য।
অর্থবাদ :বেদ মন্ত্রের অর্থ প্রসঙ্গে বিবিধ কাণ্ড সম্পর্কে যে সকল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তাকে অর্থবাদ বলে। অর্থবাদ ব্রাহ্মনের একটি বড় অংশে জুড়ে রয়েছে। এতে মন্ত্র ও যজ্ঞকে কেন্দ্র করে ব্যাকরণগত আলোচনাও রয়েছে।
নিন্দা :বিরোদী মতের সমালোচনা খণ্ডন ও ত্যাগ করাকে নিন্দা বলে। এখানে বিভিন্ন বিরোধী মতের দোষ দেখান হয়েছে। কোন মন্ত্রের সঠিক অর্থ কি তা নিয়ে পুরোহিতদের মতভেদ ছিল। এক জনের উক্তি অন্য জনের দ্বারা খণ্ডিত হত।
প্রশংসা :প্রশংসা বলতে স্তুতি এবং যার স্তুতি করা হয়, সেই ক্রিয়ার অনুমোদন বোঝায়। যে সকল বাক্যে যজ্ঞের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঞ্ছিত ফল লাভ হয় বলে কথিত, সে সকল প্রবচনকে প্রসংশা বলা হয়েছে। পুরাকল্প :অতি প্রাচীনকালে যে সকল যজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছিল সেগুলোকে “পুরাকল্প” বলা হয়েছে। মানুষ যজ্ঞ অনুষ্ঠান আরম্ভ করার বহু পূর্ব হতে দেবতাগণ যজ্ঞ অনুষ্ঠান আরম্ভ করেন। এ যজ্ঞের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্রহ্মান্ডের শান্তি।
পরকৃতি :পরের কৃতি বা কাজকে পরকৃতি বলা হয়। অভিজ্ঞ পুরোহিত, সফল যজ্ঞ করার জন্য বিখ্যাত রাজাদের কীর্তি প্রভৃতি পরকৃতি বলে পরিচিত।
প্রতিটি বেদের সাথে ব্রাহ্মন, আরণ্যক ও উপনিষদ যুক্ত আছে। ঐতরেয়, তাণ্ডা, শতপথ, গোপথ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ব্রাহ্মন।
আরণ্যক
ব্রাহ্মনের দ্বিতীয় অংশের নাম “আরণ্যক”। এই আরণ্যক নামকরণের হেতু হল অরণ্যে এর মনন, পঠন, প্রচার ও প্রসার। এ অংশে মুখ্যত জ্ঞানকাণ্ড ও কর্মকান্ডের সন্ধিস্থল। আত্মবিদ্যা, ব্রহ্মতত্ত্ব, সৃষ্টির রহস্য আরণ্যক ও উপনিষদ বিষয়বস্তু। অরণ্যে বসে বৈদিক ঋষিগণ উপাসনার দিক নির্দেশনা দিতেন। ব্রহ্মজিজ্ঞাসু শিষ্যকে শিক্ষা দিতেন অধ্যাত্ম বিদ্যা। এজন্য কেউ কেউ আরণ্যককে উপাসনা কাণ্ড বলে। ছান্দোগ্য, বৃহাদারণ্যক প্রভৃতি আরণ্যকের দৃষ্টান্ত।
উপনিষদ
ব্রাহ্মনের অন্তিম ভাগ হচ্ছে বেদান্ত বা উপনিষদ। এর প্রধান আলোচ্য বিষয় ব্রহ্মতত্ত্ব। ব্রহ্ম বা ঈশ্বর অর্থাৎ স্রষ্টার অসীম ক্ষমতা মহিমা এবং সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সম্পর্কের বিষয়ে যে জ্ঞান তাঁকে ব্রহ্মতত্ত্ব বলে। উপনিষদে এই ব্রহ্মতত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে। ঈশ, কঠ, কেন প্রশ্ন শ্বেতাশ্বতর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য উপনিষদ।
ধারাবাহিক লেখাগুলো অনেক ভালো লাগে। ধীরে ধীরে আলোচনা হয়, জ্ঘানগুলো হজম করা যায়। আপনার এই সিরিজ টা জটিলা হচ্ছে। দারুন লাগছে। আগের কিছু লেখা আমি মিস করেছি। সময় করে পড়তে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।