সূক্ত - বায়বিন্দ্রশ্চ সুন্বত আ যাতমুপ নিশকৃতম্। মক্ষ্বিথা ধিয়া নরা।।৬
অনুবাদ : ।।৬।। হে বায়ু ও ইন্দ্র! অভিষবকারী যজমানের অভিষুত সোমরসের নিকটে এস; হে বীরদ্বয়! এ কাজ ত্বরায় সম্পন্ন হবে।
- মিত্রং হুবে পূতদষং বরুণং চ ভিশাদসম্। ধিয়ং ঘ্ররতাচয়ং সান্ধতা।।৭
অনুবাদ : ।।৭।। পবিত্রবল মিত্র ও হিংসকশত্রুনাশক বরুণকে (৪) আমি আহ্বান করি; তাঁরা ঘৃতাহুতি প্রদান রূপ কর্ম সাধন করেন।
- কবী নো মিত্রাবরুণা তুবিজাতা উরুক্ষয়া। দক্ষং দধাতে অপসম্।।৯
অনুবাদ : ।।৯।। ইন্দ্র ও বরুণ মেধাসম্পন্ন, বহু লোকের হিতার্থে জাত ও বহু লোকের আশ্রয়ভূত; তাঁরা আমাদের বল ও কর্ম পোষণ করেন।
টীকাঃ-
১। বায়ুও আদিম আর্যগণের আরাধ্য দেব ছিলেন, সুতরাং সে জাতির ভিন্ন ভিন্ন
শাখার মধ্যে পূজনীয় ছিলেন। প্রাচীন ইরানীয়দের 'অবস্থা' নামক জেন্দ ভাষায়
লিখিত ধর্ম পুস্তকে 'বায়ু' দেবের উল্লেখ আছে। প্রথম সূক্তের প্রথম ঋকের
টীকার যাস্কের নিরুক্ত হতে যে অংশ উদ্ধৃত হয়েছে তাতে প্রাচীন হিন্দুদের
প্রধান দেবগণের মধ্যে বায়ুর নাম আছে।
২। সোমলতা পেষণ করলে দুগ্ধের ন্যায় শ্বেতবর্ণ এবং ঈষৎ অম্লরস নির্গত হয়,
তাই মাদক অবস্থায় পরিণত করে পূর্বকালে যজ্ঞে ব্যবহৃত হত। প্রাচীন আর্যদের
মধ্যে সোমরসের ব্যবহার ছিল, অতএব সে আর্য জাতির শাখা ইরানীদের মধ্যে সোমের
ব্যবহার ও উপাসনা ছিল। তারা সোমকে 'হওমা বলতেন ও যজ্ঞে এর অভিষব দিতেন।
বোধ হয় ইরাণীয় আর্যগণ সোমরস স্বাভাবিক অবস্থায় (unfermented) ব্যবহার
করতেন এবং হিন্দু আর্যগণ সোমরস মাদক অবস্থায় (fermented) পান করতে ভাল
বাসতেন এবং ঐ দুই আর্যজাতির বিবাদের এটি একটি কারণ।
৩। ভারতবর্ষে নদীর জল,
ভূমির উর্বরতা, ধান ও খাদ্য দ্রব্য, মানুষের সুখ ও জীবন; সমস্তই বৃষ্টির
উপর নির্ভর করে, অতএব বৃষ্টিদাতা আকাশদেব ইন্দ্রের গৌরব অধিক। তাঁর নাম
যাস্ক হতে উদ্ধৃত সূত্রে আছে,এবং তাঁর সন্বন্ধে যত সূক্ত আছে, অন্য কোন
দেব সন্বন্ধে তত নেই।
৪। মিত্র আর্যদিগের একজন উপাস্য দেবতা ছিলেন সুতরাং প্রাচীন হিন্দু ও
ইরানীয় উভয় শাখার মধ্যে তাঁর অর্চনা দেখা যায়। ইরানীয়দের মধ্যে 'মিথ্র'
আলোক বাঁ সূর্য বলে পূজিত হতেন, হিন্দুদের মধ্যে মিত্র আলোক বা দিবা বলে
পূজিত হতেন। বরুণ আর্যদের আরও পুরান দেবতা। আবরণকারী (বৃ ধাতু হতে) নৈশ
আকাশকেই আর্যগণ বরুণ বলে পূজা করতেন, এবং সে দেবকে গ্রীকগণ Uranos,
ইরানীয়গণ 'বরণ' নামে জানেন। "মৈত্রং বৈ অহরিতি শ্রূতেঃ ** শ্রয়তে চ বারুণী
রাত্রী।" - সায়ণ। আকাশ জলীয়, এ বিশ্বাস হতে অবশেষে বরুণ জলের দেব বলে
পরিগণিত হলেন।