বিশ্ব কি ভুলে গেছে গোধরাতে হিন্দু পুরিয়ে মারার ঘটনা?
গুজরাট দাঙ্গার কথার নিশ্চয় সকলের মনে আছে। তথাকথিত সেকুলারিস্টরা এই দাঙ্গার কথাটাই যেখানে সেখানে প্রচার করে থাকে। ঘটনার সূত্রপাত যে গোধরা ট্রেন পোড়ানোর কাণ্ড থেকে সূত্রপাত সেটা তারা অনেকেই বলতে চান না বা স্বীকার করেন না। আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে ।
গুজরাটের দাঙ্গা শুরু হয়েছিল গোধরা স্টেশানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের করসেবকদের বহনকারী সাবরমতি এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ S6 এ ৫৮জন কে পুড়িয়ে মারার মধ্য দিয়ে। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীর সকাল ৭-৪৩ মিনিটে ট্রেন পোড়ানর ঘটনা থেকে সুত্রপাত ঘটে নিকৃস্টতম দাঙ্গার যাতে প্রান হারায় ৭৯৪ জন মুসলমান এবং ২৫৪জন হিন্দু, ২২৩ জন নিখোজ, এবং ২৫০০ জন আহত হন। গোধরা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসঃ-ভারতের গুজরাট রাজ্যের পাঁচমহল জেলার ছোট শহর। লোক সংখ্যা ১ লক্ষ ২১ হাজার(২০০১), হিন্দুদের কাছে পবিত্র স্থান।বেশ কিছু মন্দির আছে এখানে।জনসংখ্যার ১৩% ভাগ মুসলমান ।মুসুলমানরা দরিদ্র “ঘাচি”সম্প্রদায়ের। দেশ বিভাগের সময় তারা ছিল মুসলিম লীগের সমর্থক এবং পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে।উগ্র লড়াকু হিসেবে এদের খ্যাতি আছে। দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হিন্দুরা এখানে এসে বসতি গড়ে।হিন্দু সিন্ধী এবং মুসলিম ঘাঞ্চি দের মধ্যে বৈরিতা চলে আসছে সেই সময় থেকেই।সাম্প্রদায়িক দাংগা হয়েছে -১৯৪৭-৪৮ সালে,১৯৫৩-৫৫ সালে, ১৯৬৫ সালে,১৯৮০-৮১ সালে, ১৯৮৫ সালে। ১৯৮০ সালে দুই সম্প্রদায়ের কলা বিক্রেতার ঝগড়া থেকে দাঙ্গার সুত্রপাত ঘটে যাতে একই পরিবারের ৫জন হিন্দু সিন্ধীকে পুড়িয়ে মারা হয়। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীর সকালে সাবরমতি এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় ৪ ঘন্টা দেরী করে পৌছায় গোধরা স্টেশানে।বিশ্ব হিন্দু পরিষদের করসেবকেরা রাম জন্মভুমি/বাবরী মসজিদে তাদের সম্মেলন শেষে ঐ ট্রেনে ফিরছিলো।স্টেশানের হকারদের (যাদের অধিকাংশ মুসুলমান) বচসা হয় কর সেবকদের । এরপর শুরু হয় ট্রেনে ঢিল ছোড়া। এই সময় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে একজন মুসলমান তরুনিকে করসবকেরা ট্রেনের কোচে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করছে(পরবর্তীতে ভিত্তিহীন প্রমানিত), নির্দ্দিষ্ট ৫ মিনিট যাত্রা বিরতির পর ট্রেন যাত্রা শুরু করে। স্টেশান থেকে প্রায় ১ কিলো মিটার দূরে ফাদিয়া সিগন্যালের কাছে চেইন টেনে থামানো হয়।প্রায় ৫০০ জন মুসলিম এক যোগে হামলা চালায় ট্রেনে। তারপর করসেবকদের কোচএ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।মারা যায় ২৩ জন পুরুষ, ১৫জন মহিলা এবং ২০ জন ছেলেমেয়ে সর্বমোট ৫৮জন তীর্থযাত্রী। ২৫০ জন বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। তাদের একজনের দাবী প্রায় ৩,০০০ মুসলমান হামলা করেছিল ফাদিয়া সিগন্যাল এ।হামলাকারীরা ছিলো মুসলমানপুলিসের দাবী আনোয়ার কালান্দার নামের এক ছেলে মুসলমান তরুনীর অপহরনের ঘটনা শুনে চেন টেনে ট্রেন থামায়। দি ট্রাইবিউন লিখেছিল “ চেন টেনে ট্রেন থামানোর পর ইটপাটকেল নিক্ষেপকারী বিপুল সংখ্যক লোক, পেট্রোল, পেট্রোল বোমা এবং কেরসিন ঢেলে ট্রেনের কামরায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সরকারী তদন্তঃ- “ইউ, সি ব্যানার্জী” তদন্ত কমিশন রিপোর্ট দেয় অগ্নিসংযোগের কোন ঘটনা ঘটে নি। সম্ভবতঃ ট্রেনের কামরার রান্না করার স্টোভ থেকেই অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত।গুজরাট হাই কোর্ট কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে দেন।প্রত্যক্ষ দর্শীরা বলেন” পেট্রোলে ভেজান জ্বলন্ত কাপড় ছুড়ে মারা হয়। স্টোভের ১ লিটার মত কেরোসিন একটা কোচকে জ্বালিয়ে দিতে পারে না মন্তব্য করেন তদন্তকারী পুলিস কর্মকর্তা নোয়েল পারমার।। নানাবতি কমিশনঃ-প্রত্যক্ষদর্শী দের সাক্ষ্য সহ নানা তথ্য উপাত্ত নিয়ে তারা রিপোর্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সঠিক বলে রায় দেন। পরবর্তীতে “ঈন্ডিয়ান মোজাহেদিন” এবং ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা কারীরা গোধরা হত্যা কান্ডের বদলা নিতে বোমা হামলা এবং হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে দাবী করে
ট্রেনে হামলার ঘটনা পুর্ব পরিকল্পিত ।ট্রেন পোড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত জাবির বেহেরার স্বীকারক্তি অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয় মৌলানা হুসেন ওমারজীকে।বেহেরা স্বীকারোক্তি দেয় যে “ ঘটনার আগের দিন রাত এগারোটায় মৌলানা উমরজী গেস্ট হাউস “ আমান”এ মিটিং করেন। গেস্ট হাউজের মালিক “রাজ্জাক কুরকুরে” ঐদিন পার্শবর্তী পেট্রোল পাম্প থেকে ১৪০ লিটার পেট্রোল সংগ্রহ করেন তারা। পেট্রোল পাম্পের মালিক “প্যাটেল “ ভ্রাতৃদ্বয় পেট্রোল কেনার ব্যাপার নিশ্চিত করেন। সেলিম পানওয়ালা স্টেশানে গিয়ে খবর নিয়ে জানেন যে সবরমতি এক্সপ্রেস প্রায় ৪ ঘন্টা দেরী করে আসছে। তারা সেই অনুযায়ী পরিকল্পনার সময় নির্ধারন করেন। ফাদিয়া সিগ্ন্যাল এলাকা মুসুলমান অধ্যুষিত।আমান গেস্টহাউজ সিগন্যাল ফাদিয়ার কাছেই। ওখানেই জমা রাখা হয়েছিলো প্রতিটি ২০ লিটারের জারিক্যান” এ ভরা পেট্রোল।বেহেরা সহ মোট ৬ জন ট্রেনের সংযোগ স্থল কেটে ট্রেন এ জারী ক্যান সহ ঢুকে পড়েন। তারপর জারীক্যান ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজা খুলে লাফিয়ে পড়েন তারা। সকাল বেলা এত বেশী লোকের স্টেশানে উপস্থিত থাকা পুর্ব পরিকল্পনারই ইঙ্গিত দেয়। হামলা কারীরা জানতো ঐ ট্রেনে করসেবকরা ফিরছে এবং তারা নির্দ্দিষ্ট কামরাতেই আক্রমন চালায়।
হাইকোর্টের রায়ঃ- ট্রেন পোড়ানো মামলার রায় বের হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারী।৩১ জন দোষী সাব্যস্ত হন। এদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় এবং ২০জনকে, যাবজ্জীবন কারাদন্ডএর শ্বাস্তি দেওয়া হয়। মউলানা উমরজ়ী ছাড়া পান , হাজী বিল্লাহ এবং রাজ্জাক কুরকুর দোষী সাব্যস্ত হন।
মুসলমানরাই আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে হিন্দু করসেবকদের একথা সেকুলার মিডিয়া চেপে যায়। রেল মন্ত্রী লালু প্রসাধ একটি রাজনৈতিক তদন্ত কমিশন বসিয়ে ষরযন্ত্র তত্ত্বকে নাকচ করে ঘটনাটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে চাপিয়ে দেয়। মুসলিম ভোট ব্যাংক ও দেশের তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতার ঝাণ্ডা উত্তোলন করতে গিয়ে এ কাণ্ডটি করে লালু-কংগ্রেসের গং। ভারতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরী কয়া অনেকেরই প্রয়োজন ছিল । মুসলিম সম্প্রদায়ের কায়েমী গোষ্ঠীর জন্য এই প্রয়োজনটা ছিল আরো বেশী ।ঘটনাটার কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অপরিসীম । এক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সংহতি তৈরী ছাড়াও হিন্দু নেতৃত্বকে অর্বাচীন প্রমাণ করতে তাঁরা ভালভাবেই সফল হয়েছেন । আদালতি প্রমাণ হিন্দুবাদীদের আত্মতৃপ্তি হয়ত তৈরী করেছে ; কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষতিটা তাঁরা সহজে পূরণ করতে পারবেন না । আমি জানি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভারতিয় জনতা পার্টির কিছু মুসলিম ভোটব্যাংক ছিল তাঁরা কি সেটা পূণরুদ্ধার করতে পারবেন?
সবরমতি এক্সপ্রেসের বদ্ধ কামরায় জীবন্ত পুরে নিহত সেইসব নিঃপাপ পূণ্যার্থী নারী ও শিশুদের আত্মার সদগতি হোক আর মানবরূপী খুনীদের বিচার হোক।সত্যেরই জয় হবে।সত্যমেভ জয়তে।
অভিমুন্য দাদা আপনার শেয়ার করা লেখাগুলো বেশ বিষয়ভিত্তিক হয়। পড়ে অনেক কিছু জানতে পারি। এই ঘটনাটি পড়ে মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল, শুধুমাত্র হিন্দু বা মুসলিম তার জন্য না। মূল কথা মানুষ অন্য মানুষকে কিভাবে হত্যা করে। মানবিকতা নামে যে ব্যাপারটা আছে তা মনে হয় আমরা হারিয়ে ফেলছি।
বাবরি মস্জিদ এর মুল ঘটনাটা আমাদের সাথে শেয়ার করবেন আশা করি। ধন্যবাদ আপনাকে।