শ্রীশ্রী চন্ডীর আলোকে অসুরতত্ত্ব ------অধ্যক্ষ প্রফেসর রণজিৎ কুমার চক্রবর্তী - 8 August 2011 - হিন্দু ধর্ম ব্লগ - A Total Knowledge Of Hinduism, সনাতন ধর্ম
Hinduism Site
শ্রী শ্রী চন্ডীর মধ্যমচরিত্রের মহিষাসুর সৈন্যবধ শীর্ষক দ্বিতীয় অধ্যায়ে
অতি তাৎপর্যের সাথে তান্ত্রিক ঋষি বিশদভাবে অসুর পরিচয় দিয়েছেন। এখানে
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে, দেবীর পরিচয় যে ক্ষেত্রে আমরা আশা করি
সেক্ষেত্রে অসুর পরিচয়ের প্রয়োজন কি? শাস্ত্রে উল্লেখ আছে- দেবীর পূজা
করতে হলে দেবতা হতে হয়। দেবতার পর্যায়ে উন্নীত হয়েই দেবপূজায় অগ্রসর হওয়ার
বিধান আছে। 'দেবো ভূত্বা দেবং যজেৎ', আগে দেবতা হও, তারপর দেবতার পূজা কর।
দেবগুণ আহরণ করতে হলে অসুর পরিচয়ের প্রয়োজন আছে। অসুরের ত্রুটিগুলো ও
অসুর প্রবৃত্তির স্বরূপসমূহ জানা থাকলে নিজেকে বিচার করতে সুবিধা হয়। তাই
দেবতার গুণাবলী ব্যাখ্যার সাথে সাথে শাস্ত্রকার অসুরের তাত্ত্বিক পরিচয়ও
আমাদের জ্ঞাতার্থে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপিত করেছেন। অসুরত্ব পরিহার
করার জন্যেই অসুরকে জানা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু শ্রী শ্রী
চণ্ডীগ্রন্থের বর্ণনায় নয়, আমাদের মধ্যেও নানা আকার ও প্রকৃতির অসুর
সুস্পষ্ট অথবা গুপ্তভাবে বাস করছে। তাদের চিহ্নিত করা দরকার, আত্বসমালোচনা
আত্ব-উন্নয়নের প্রথম সোপান।
'গজবাজি সহস্রৌঘেরনেকৈঃ পরিবারিতঃ'। এখানে শাস্ত্র উল্লেখ করছেন, দেবীর
সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্ত্তত হয়েছিল এক বিশেষ অসুর। তার নাম 'পরিবারিত' অসুর।
এ অসুরের কিঞ্চিৎ পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন আছে। অসুরটা ভীষণ, এ কারণেই যে সে
শুধু তার পরিবার নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ভাসা ভাসা চিন্তা করলে এ অসুরকে
মোটামুটি নিরপরাধ ও শান্ত প্রকৃতির অসুর বলে মনে হবে। সে কারো ভালোর
মধ্যেও নেই, মন্দের মধ্যেও নেই। সে সাতেও থাকে না পাঁচেও থাকে না, শুধু
নিজেকে ও নিজের পরিবারকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মানুষের কোন উপকার সে করে না
আবার ক্ষতিও করে না। কিন্ত্ত এ ধরনের অসুর মারাত্বক সামাজিক অসুর। শ্রীশ্রী
চণ্ডীশাস্ত্র এ অসুরকে ভয়ঙ্কর বলে চিহ্নিত করেছেন। এ পৃথিবীতে এমন কোন
মানুষ নেই যে পরের জন্য কিছু করার ক্ষমতার অধিকারী নয়। কেবল নিজের উপকারে
সব শক্তি নিয়োগ করে যে ব্যক্তি এগিয়ে চলে তাকেও অসুর বলা হয়েছে। একটি
মানুষ শুধু তার পরিবারের জন্যে জন্মেনি। সমাজ ও বিশ্বমানবের উন্নয়ন লক্ষ্যে
তার কর্তব্য রয়েছে। যে ব্যক্তি এ কর্তব্য সচেতনভাবে এড়িয়ে চলে তাকে
তন্ত্রশাস্ত্র 'পরিবারিত' অসুর রূপে চিহ্নিত করেছেন। পরিবারকে ঘিরেই তার
কর্ম-চিন্তা ও চেতনা। সে মহাসুর। তন্ত্রের এ ব্যাখ্যা প্রণিধানযোগ্য ও
অসুর পরিচয়ে সহায়ক। এখানে মারাত্বক স্বার্থপর লোককেই অসুররূপে আখ্যায়িত
করা হয়েছে।
মহাতন্ত্র শ্রীশ্রী চন্ডীতে ধূম্রলোচন অসুরের কথা বলা আছে। সে দেবশক্তি
বিরোধী দুর্জয় এক অশুভ শক্তি। ধুম্র= ধোঁয়া, লোচন=চোখ। যার চোখে কেবল
ধোঁয়া সেই ধূম্রলোচন। এ পৃথিবীতে ধুম্রলোচন অসুরের সংখ্যাই বেশি।
শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে জীবনের প্রথম থেকেই আমরা এ অসুরকে জয় করার জন্য
সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তবুও অসংখ্য কোটি মানুষ এ অসুরকে জয় করতে পারে না।
অন্তরের দৃষ্টি যদি অবিদ্যার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে তবে তার পক্ষে
সত্য-দর্শন সম্ভব হয় না। এ অসুরের সামনে এত অহংকার, ঔদ্ধত্য, অবিনয় ও
অপ্রেমের ধুম্রজাল যে সে লঘুগুরু, মাতা-পিতা, পবিত্রতা, সৌন্দর্য- এ সব
কিছুই বোঝে না, দেখে না, ধারও ধারে না। অজ্ঞানের ধুম্রাচ্ছন্নতার জন্যে
ধুম্রলোচনএদবীকে চিনে নি, ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের সাধনা করতে হবে সংকীর্ণ
চিন্তা ও অমৈত্রী ভাবনা থেকে মুক্ত হওয়ার। কূটকৌশল ও অজ্ঞানের ধোঁয়ায়
আচ্ছন্নদৃষ্টি মানুষ ধূম্রলোচন- অসুর। এ অসুর পৃথিবীর জন্য ভয়ঙ্কর
ক্ষতিকারক।
'পঞ্চাশদ্ভিশ্চ নিযুতৈরসিলোমা মহাসুরঃ'।
পূততন্ত্র এ পর্যায়ে দেবীর সাথে যুদ্ধপরায়ণ অসিলোমা অসুরের পরিচয় দিচ্ছেন।
এ জগৎটাই একটা বিশাল রণক্ষেত্র। এখানে সংখ্যাহীন অসিলোমা অসুর প্রতিনিয়ত
দেবীশক্তির বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল। এ অসুরের প্রত্যেকটি লোম এক-একটি অসি বা
খড়গ। অসিলোমার কাজই হচ্ছে ভিড়ের মধ্যে তীব্রবেগে হেঁটে যাওয়া বা দৌড়ানো।
তার ধারালো লোমের আঘাতে দেবতা ও মানুষ অশেষ কষ্ট পেয়ে থাকে। এ সমাজেও
কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যাদের চলনে-বলনে, কাজে কর্মে মানুষ সবসময়ই আঘাত পেয়ে
থাকে। যেদিকেই যায়, যেখানেই যায় সে এলাপাথাড়ি ভাবে মানুষের মনে কষ্ট দেয়,
অপ্রেমের সৃষ্টি করে। সে জন-সমাবেশে গেলে অগণিত মানুষেল মনোপীড়ার সৃষ্টি
করে, ঘরে অশান্তির কারণ হয়, সমাজে আতঙ্কের জন্ব দেয় এবং যে কোন অনুষ্ঠানে
অবাঞ্চিত কাজের হোতা হয়। তার কথায় অসি, দৃষ্টিতে অসি। অর্থাৎ তাকে ঘিরে
আছৈ এক ধারালো অপ্রেম। আমরা যারা এ ধরনের মানুষ শ্রীশ্রী চণ্ডীর মধ্যম
চরিত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিয়াল্লিশতম শ্লোকে তাদের অসিলোমাসুর বলা
হয়েছে। তত্ত্বগত মন্ত্রার্থ অনুধ্যান করে আমরা যদি তন্ত্রগ্রন্থাদি পাঠ করি
তবে অসুরের পরিচয় বিভিন্নভাবে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হবে এবং আমরা আসুরিক
তমোগুণ পরিহার করার প্রয়াস চালাতে পারবো। শ্রীশ্রী চণ্ডী রক্তবীজ অসুরের
পরিচয়ও আমাদের অনুধাবনের লক্ষ্যে উপস্থাপিত করেছেন। রক্তবীজ ভীষণ অসুর।
মহামায়া জগজ্জননীর সাথে রক্তবীজ নিরাপোষ সংগ্রাম করেছিল প্রচন্ড উদ্যমে।
তার রক্তেই অশুভ শক্তির বীজ। তাই তার নাম রক্তবীজ। রক্তবীজকে নিহত করার
সাথে সাথে তার রক্তবিন্দুগুলো থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অসুর জন্ব নিত। কয়েক দল
অসুরকে হত্যা করা হলে তাদের প্রতিটি রক্তবিন্দু থেকে আবার নতুন অসুরের
আবির্ভাব ঘটতো। এ পরিস্থিতি সত্যিই মারাত্বক। আমাদের মনের
কামনা-বাসনাগুলোই মূলতঃ রক্তবীজ অসুর। একটা কামনাকে দাবিয়ে দিলে আবার
অসংখ্য কামনা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এরা রক্তবীজ। এদের উচ্ছেদ করা অতি কঠিন
কাজ। অশুভ শক্তি রক্তবীজের মতোই দ্রুত নিজের সমর্থক সংখ্যা ও পরিধি
পরিমণ্ডল বাড়িয়ে নেয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, দেবী যখন দেখলেন, রক্তবীজের রক্ত
রণক্ষেত্রের যেখানেই ছড়িয়ে পড়ছে সেখান থেকেই গণনাতীত অসুর জন্ব নিচ্ছে,
তখন তিনি নিজের লোলজিহবা আদিগন্ত বিস্তৃত করার পর সব রক্তবিন্দু গ্রাস করে
অসুরকে নির্মূল করেছিলেন। এ রক্তবীজ অসুর প্রায় প্রতিটি মানুষের রক্তে
রক্তে, সমাজের স্তরে স্তরে নানা আকারে-প্রকারে বিরাজিত। অতন্ত্র, অকুন্ঠ
প্রতিজ্ঞ প্রয়াসের মাধ্যমেই হীনকামনারূপী রক্তবীজকে নিহত করা সম্ভব। তন্ত্র
শাস্ত্রের প্রাণ স্বরূপ শ্রীশ্রী চণ্ডী বর্ণিত রক্তবীজতত্ত্ব হৃদয়গ্রাহী;
সমাজমঙ্গলকল্পে এর পরাবীক্ষণ ও অনুধাবনের প্রয়োজন রয়েছে। অর্বুদ
অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত অসুরেরা খুব দূরের কোন বস্ত্ত নয়- এরা খুবই নিকটে;
এরা আমাদের সাথে বিপজ্জনক নৈকট্যে বাস করে। নিরন্তর সাধনা ও প্রচেষ্টা ছাড়া
এদরে হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা একেবারে অসম্ভব। অসুরকে চিহ্নিত করতে
পারলেই অসুরকে নিহত করা যায়। অসুর নিহত করা মানে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা
নয়, বরঞ্চ অসুরত্বকে বিনষ্ট করে দিয়ে একটি মানুষের জীবনে দেবত্বের
প্রতিষ্ঠাই এ প্রক্রিয়ার লক্ষ্য।
মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধরতা প্রতিমা তৈরি করে আমরা দুর্গাপূজা করে থাকি।
বরাহপুরাণ, কালিকাপুরাণ ও দেবী ভাগবত মহিষাসুর সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাখ্যা
প্রদানের মাধ্যমে এ ভীতিকর অসুরকে চিহ্নিত করেছেন। রম্ভাসুর ও করম্ভাসুর
সহোদর। রম্ভাসুর মহিষাসুরের পিতা, করম্ভ পিতৃব্য। তারা তপস্বী।
করম্ভাসুরের তপস্যা ইন্দ্ররে মনে ভীতির সৃষ্টি করে এবং নদীজলে দণ্ডায়মান
অবস্থায় তপস্যারত করম্ভাসুরকে কুম্ভররূপধারী ইন্দ্রদেব ধ্বংস করে দেন।
রম্ভাসুর ভাতৃহত্যার সংবাদে ব্যথিত হয় এবং কঠোর তপস্যা আরম্ভ করে। প্রশ্ন
হয়, ইন্দ্র একজন তপস্বীকে হত্যা করে কি হীনম্মন্যতার পরিচয় দেন নি। উত্তরঃ
অসুর যখন তপস্যা করে তখন তা দেবশক্তির ভীতির কারণ হওয়া স্বাভাবিক। অসুর
শক্তি স্বীয় সাধানয় অসুর শক্তিকেই বৃদ্ধি করে। তাতে শুভশক্তি ম্লান হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে। তাই দেখা গেছে, অসুরেরা তপস্যা শুরু করলে দেবতারা
তপস্যাকালীন সময়েই অনেক অসুরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং এতে তাঁরা দূরদৃষ্টির
পরিচয় দিয়েছেন। অসুরের তপস্যা আসুরিক শক্তি সঞ্চয়েরই তপস্যা- দেবতাদের
ক্ষতিসাধন করে স্বর্গীয় পরিমণ্ডল কলুষিত করার সাধনা। কেউ যদি সমাজের বা
রাষ্ট্রের ক্ষতি করার লক্ষ্যে কোন ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র তৈরি করে এবং
মারাত্বক জিনিস তৈরির জন্য, শক্তি অর্জনের জন্য গভীর অভিনিবেশ গবেষণা বা
তপস্যা আরম্ভ করে তখন শুভ দেবশক্তি এ তপস্যাকারীকে ধ্বংস করে দিলে তা
অনৈতিক হবে না। কারণ তপস্যা সবসময়ই ফলবতী। শুভশক্তি অর্জনের জন্য তপস্যা
করলে যেমন ফললাভ করা যায় ঠিক তেমনি অশুভ শক্তি লাভের তপস্যাও বন্ধ্যা হয়
না। সাধনা (শুভ বা অশুভ) সবসময়ই সৃজনশীল বা উৎপাদনকারী। রম্ভাসুর ও
মহিষাসুরের সাধনাও কঠোর। এ সাধনা এমন এক শক্তি অর্জনের জন্য যা অহংকার ও
দুর্বিনয়ের সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। তত্ত্বও মহিষাসুর অহংকারের
প্রতীক। ভীষণ অহঙ্কারকে ধ্বংস করে দিয়েই বিজয়া উদযাপনের অধিকার অর্জন করা
যায়।
'জিত্বা চ সকলান্ৎ দেবানিন্দ্রোহ্ৎ ভূদহিষাসুরঃ' সকল দেবতাকে পরাজিত ও
স্বর্গ থেকে বহিস্কৃত করে মহিষাসুর ইন্দ্রত্ব গ্রহণ করে ও স্বর্গের রাজা
হয়। দেবশক্তিকে পরাজিত করে অসুরশক্তি সার্বিক কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। এমন
অবস্থা হলে তা সমস্ত পৃথিবীর জন্যেই অমঙ্গলকর। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে
দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে এমনিতর অবস্থা হয়েছিল। তখন অসুর ইন্দ্রত্ব গ্রহণ
করেছে এবং বিবেকের বাণী নিরবে নিভৃত্বে কেঁদেছে। অবশ্য আসুরিক দুর্দমতা ছিল
সবসময়ই ক্ষণস্থায়ী এবং পরিশেষে দেবশক্তির নব অভ্যূত্থান ঘটেছিল। মহিষাসুর
পার্থিব কামনার ও স্বার্থসঞ্চয়ের পরিচায়ক। মহিষাসুর ঘৃণ্য নিম্নমুখী বস্তু
সঞ্চয়ের প্রাবল্য। তার মাতৃজ্ঞান নেই। মাতৃশক্তিকে সে ভোগের সামগ্রীরূপে
গ্রহণ করেছে। মহাশক্তি মা দুর্গাকে কামনার বস্তুরূপে পাওয়ার অশ্লীল লালসা
তার মধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি। মহীম্ৎ ঈষ্যতে ইতি= মহিষ। পার্থিব (মহীগত)
কামনায় যে অসুর অন্ধ; ভগবতীকে যে ভোগবতী রূপে দেখে এবং দুর্দম দম্ভে সে
হিতাহিতজ্ঞান রহিত সে-ই মহিষাসুর। সূর্য, অগ্নি, পবনদেব ও বরুণদেব সহ
প্রভূত দেবশক্তি মহিষাসুর করায়ত্ত করেছিল। বরুণ জলদেবতা। পবণ বায়ুর দেবতা।
সৌরশক্তি, অগ্নিশক্তি, বায়ুশক্তি ও জলশক্তি সহ সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তি
মহিষাসুর নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। পৃথিবীর বহু মানুষ এমন আরো অনেক আনবিক ও
দানবিক শক্তি অধিকারে এনেছে, শক্তিমদে স্ফীত হয়েছে। মহিষাসুর আহৃতশক্তির
অপপ্রয়োগের মাধ্যমে নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছিল; আর পৃথিবী যদি বর্তমানে
অর্জিত বিপুল শক্তিকে সংযত করে সুখাতে দেব-ভাবনায় প্রবাহিত না করে তবে এ
পৃথিবীও সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তির ওপর আধিপত্য সত্ত্বেও মহিষাসুরের মত ধ্বংস
হয়ে যাবে- একথা প্রতি মুহুর্তে আমাদের মনে রাখতে হবে।
আজকে মানবিক সমাজ পরিমণ্ডলে বসে গভীর চিন্তা করবার প্রয়োজতীয়তা দেখা
দিয়েছে। আমরা কি বাঁচবো, না ধ্বংস হয়ে যাবো? আমরা অসুরত্ব বিনাশ করবো না
নিজের প্রভাববলয় প্রসারিত করার জন্য নব-নব অসুরের সৃষ্টি করবো?
পৃথিবীব্যাপী চিন্তাবিদ ও জননায়কদের এ ব্যাপারে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রসারিত
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নতুন পৃথিবী নির্মাণের পথে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজের ও
ব্যক্তিজীবনের সর্বত্র আসুরিক শক্তির পরিচয় আবিস্কার করে নিয়ে কর্তব্য
স্থির করতে হবে। আমরা বাঁচবো, মরবোনা। মাটির ধূলায় স্বর্গ নামিয়ে আনার
স্বপ্নকে সার্থক করে তোলার কাজে মাটির মানুষগুলোকে মাতৃকৃপায় দীপ্ত
পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবেব। প্রেম ও মানবতা হবে আমাদের পাথেয় এবং
সংকীর্ণতাহীন সঠিক ঐক্যানুভবের অনুশীলন হবে আমাদের পথ-নির্দেশক।
দাদা অনেক সুন্দর একটা পোষ্ট দিয়েছেন, অসুর যে শুধুমাত্র কোন পৌরাণীক চরিত্র না এটা যে আমাদের মনের মাঝের negetive একটা শক্তি তা খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছেন