কালী বা কালিকা হলেন এই উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি পুজিতা দেবী। তিনি শ্যামা বা আদ্যাশক্তি নামেও পরিচিতা। কালী মূলত শাক্তদের দ্বারা পূজিতা হন। তিনি তান্ত্রিক দশমহাবিদ্যার প্রথমা দেবী এবং শাক্ত বিশ্বাস অনুযায়ী বিশ্বসৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে মাতৃরূপে দেবী কালীর পূজা বিশেষভাবে লক্ষিত হয়ে থাকে।
পুরাণ
ও তন্ত্রে কালীর নানান রূপভেদ দেখা যায়। তবে সাধারণত তাঁর চতুর্ভূজা,
খড়্গ-নরমুণ্ডধারী, বরাভয়দায়িনী, মুণ্ডমালাবিভূষিতা, লোলজিহ্বা,
কৃষ্ণবর্ণ, মুক্তকেশী ও শিবের বক্ষোপরি দণ্ডায়মান মূর্তিটিই পূজিত হয়ে থাকে।
হিন্দুশাস্ত্রমতে, কালিকা বাংলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী।বাংলায় শাক্তধর্ম অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কালীরূপে শক্তির আরাধনাও ব্যাপক। সমগ্র বাংলায় অসংখ্য কালীমন্দির দেখতে পাওয়া যায়। এই সকল মন্দিরে আনন্দময়ী, করুণাময়ী, ভবতারিণী ইত্যাদি নামে কালীপ্রতিমা পূজিত হন। কালীর বিভিন্ন রূপভেদ রয়েছে। যথা – দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, চামুণ্ডা
ইত্যাদি। আশ্বিন মাসের অমাবস্যায় দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ
উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এছাড়াও মাঘ মাসে রটন্তী কালীপূজা ও
জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিনী কালীপূজাও বিশেষ জনপ্রিয়। অনেক গৃহে ও মন্দিরে
প্রতিষ্ঠিত কালীমূর্তিতে নিত্যপূজা হয়ে থাকে।
কালীসাধনায় যাঁরা সিদ্ধিলাভ করেছেন, তাঁরা বাঙালি হিন্দুসমাজে বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র। এঁদের মধ্যে রামকৃষ্ণ পরমহংসের নাম সর্বাগ্রগণ্য। অন্যান্য প্রসিদ্ধ কালীসাধকগণ হলেন রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, রাজা রামকৃষ্ণ প্রমুখ। এই সূত্রে বাংলা সাহিত্যেও কালীর উপস্থিতি অত্যন্ত উজ্জ্বল। কালী বা শ্যামাবিষয়ক পদ বাংলায় শ্যামাসংগীত নামে পরিচিত। উপরিউক্ত হিন্দু সাধকগণ তো বটেই, অনেক মুসলমান কবিও উৎকৃষ্ট শ্যামাসঙ্গীত রচনা করে এই ধারাকে পরিপুষ্ট করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ শ্যামাসংগীতকার; তাঁর অনেক কবিতাতেও সার্থকরূপে দেবী কালীর চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা কালীমন্দিরের প্রাচুর্য ও বাঙালি সমাজে কালীপূজার জনপ্রিয়তার কারণে ভারতের
অন্যান্য প্রান্তে দেবী কালী "কালী কলকাত্তাওয়ালি” (কলকাতানিবাসিনী কালী)
নামে পরিচিত। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রসিদ্ধ কালীমন্দিরগুলি
হল দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, আদ্যাপীঠ, ঠনঠনিয়া, ফিরিঙ্গি কালী প্রভৃতি। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে একাধিক সুবিদিত প্রাচীন কালীমন্দির রয়েছে। যথা – অম্বিকা-কালনার সিদ্ধেশ্বরী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ময়দাকালী, তমলুকের বর্গভীমা, উত্তর চব্বিশ পরগনার হালিশহরে রামপ্রসাদ-পূজিতা কালী প্রভৃতি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত রমনা কালীমন্দির অত্যন্ত প্রাচীন এক কালীমন্দির ছিল।
ব্যুৎপত্তি
‘কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ, যার অর্থ "কৃষ্ণ, ঘোর বর্ণ” (পাণিনি ৪।১।৪২)। মহাভারত অনুসারে, এটি দুর্গার একটি রূপ (মহাভারত, ৪।১৯৫)। আবার হরিবংশ গ্রন্থে কালী একটি দানবীর নাম (হরিবংশ, ১১৫৫২)।
‘কাল’, যার অর্থ ‘নির্ধারিত সময়’, তা প্রসঙ্গক্রমে ‘মৃত্যু’ অর্থেও
ব্যবহৃত হয়। এর সমোচ্চারিত শব্দ ‘কালো’র সঙ্গে এর কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক
নেই। কিন্তু লৌকিক ব্যুৎপত্তির দৌলতে এরা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে গেছে। মহাভারত-এ এক দেবীর উল্লেখ আছে যিনি হত যোদ্ধা ও পশুদের আত্মাকে বহন করেন। তাঁর নাম কালরাত্রি বা কালী। সংস্কৃত
সাহিত্যের বিশিষ্ট গবেষক টমাস কবার্নের মতে, এই শব্দটি নাম হিসাবে ব্যবহার
করা হতে পারে আবার ‘কৃষ্ণবর্ণা’ বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
রূপভেদ
তন্ত্র ও পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের কথা পাওয়া যায়। তোড়ল তন্ত্র মতে কালী অষ্টধা বা অষ্টবিধ। যথা – দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালী, শ্মশানকালী ও শ্রীকালী। মহাকাল সংহিতা অনুসারে আবার কালী নববিধা। এই তালিকা থেকেই পাওয়া যায় কালকালী, কামকলাকালী, ধনদাকালী ও চণ্ডিকাকালীর নাম।
অষ্টধা কালী
দক্ষিণাকালী
- মূল নিবন্ধ: দক্ষিণাকালী
দক্ষিণাকালীর কালীর সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ মূর্তি। ইনি প্রচলিত ভাষায়
শ্যামাকালী নামে আখ্যাতা। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী,
চতুর্ভূজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তাঁর বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও
খড়্গ; দক্ষিণকরযুলে বর ও অভয় মুদ্রা। তাঁর গাত্রবর্ণ মহামেঘের ন্যায়;
তিনি দিগম্বরী। তাঁর গলায় মুণ্ডমালার হার; কর্ণে দুই ভয়ানক শবরূপী
কর্ণাবতংস; কটিদেশে নরহস্তের কটিবাস। তাঁর দন্ত ভয়ানক; তাঁর স্তনযুগল
উন্নত; তিনি ত্রিনয়নী এবং মহাদেব শিবের বুকে দণ্ডায়মান। তাঁর দক্ষিণপদ
শিবের বক্ষে স্থাপিত। তিনি মহাভীমা, হাস্যযুক্তা ও মুহুর্মুহু
রক্তপানকারিনী।
তাত্ত্বিকের তাঁর নামের যে ব্যাখ্যা দেন তা নিম্নরূপ: দক্ষিণদিকের অধিপতি যম
যে কালীর ভয়ে পলায়ন করেন, তাঁর নাম দক্ষিণাকালী। তাঁর পূজা করলে
ত্রিবর্ণা তো বটেই সর্বোপরি সর্বশ্রেষ্ঠ ফলও দক্ষিণাস্বরূপ পাওয়া যায়।
সিদ্ধকালী
সিদ্ধকালী কালীর একটি অখ্যাত রূপ। গৃহস্থের বাড়িতে সিদ্ধকালীর পূজা হয় না; তিনি মূলত সিদ্ধ সাধকদের ধ্যান আরাধ্যা। কালীতন্ত্র-এ তাঁকে দ্বিভূজা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। অন্যত্র তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী।
তাঁর মূর্তিটি নিম্নরূপ: দক্ষিণহস্তে ধৃত খড়্গের আঘাতে চন্দ্রমণ্ডল থেকে
নিঃসৃত অমৃত রসে প্লাবিত হয়ে বামহস্তে ধৃত একটি কপালপাত্রে সেই অমৃত ধারণ
করে পরমানন্দে পানরতা। তিনি সালংকারা। তাঁর বামপদ শিবের বুকে ও বামপদ শিবের
উরুদ্বয়ের মধ্যস্থলে সংস্থাপিত।
গুহ্যকালী
গুহ্যকালী বা আকালী, দক্ষিণ কলকাতার একটি কালীপূজা মণ্ডপে, ২০০৮
গুহ্যকালী বা আকালীর রূপ গৃহস্থের নিকট অপ্রকাশ্য। তিনি সাধকদের আরাধ্য।
তাঁর রূপকল্প ভয়ংকর: গুহ্যকালীর গাত্রবর্ণ গাঢ় মেঘের ন্যায়; তিনি
লোলজিহ্বা ও দ্বিভূজা; গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা; কটিতে ক্ষুদ্র
কৃষ্ণবস্ত্র; স্কন্ধে নাগযজ্ঞোপবীত; মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র; কর্ণে
শবদেহরূপী অলংকার; হাস্যযুক্তা, চতুর্দিকে নাগফণা দ্বারা বেষ্টিতা ও
নাগাসনে উপবিষ্টা; বামকঙ্কণে তক্ষক সর্পরাজ ও দক্ষিণকঙ্কণে অনন্ত নাগরাজ;
বামে বৎসরূপী শিব; তিনি নবরত্নভূষিতা; নারদাদিঋষিগণ শিবমোহিনী গুহ্যকালীর
সেবা করেন; তিনি অট্টহাস্যকারিণী, মহাভীমা ও সাধকের অভিষ্ট ফলপ্রদায়িনী।
গুহ্যকালী নিয়মিত শবমাংস ভক্ষণে অভ্যস্তা।
মুর্শিদাবাদ-বীরভূম সীমান্তবর্তী আকালীপুর গ্রামে মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত গুহ্যকালীর মন্দিরের কথা জানা যায়। মহাকাল সংহিতা মতে, নববিধা কালীর মধ্যে গুহ্যকালীই সর্বপ্রধানা। তাঁর মন্ত্র বহু – প্রায় আঠারো প্রকারের।
মহাকালী
তন্ত্রসার গ্রন্থমতে, মহাকালী পঞ্চবক্ত্রা ও পঞ্চদশনয়না। তবে শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে
তাঁকে আদ্যাশক্তি, দশবক্ত্রা, দশভূজা, দশপাদা ও ত্রিংশল্লোচনা রূপে কল্পনা
করা হয়েছে। তাঁর দশ হাতে রয়েছে যথাক্রমে
খড়্গ,চক্র,গদা,ধনুক,বাণ,পরিঘ,শূল,ভূসুণ্ডি,নরমুণ্ড ও শঙ্খ। ইনিও ভৈরবী;
তবে গুহ্যকালীর সঙ্গে এঁর পার্থক্য রয়েছে। ইনি সাধনপর্বে ভক্তকে উৎকট ভীতি
প্রদর্শন করলেও অন্তে তাঁকে রূপ, সৌভাগ্য, কান্তি ও শ্রী প্রদান করেন।
মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর প্রথম চরিত্র শ্রী শ্রী মহাকালীর ধ্যানমন্ত্র এইরূপ
ওঁ খড়্গং চক্রগদেষুচাপপরিঘান শূলং ভুসূণ্ডিং শিরঃ| শঙ্খং সন্দধতীং
করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্ || নীলাশ্মদ্যুতিমাস্যপাদদশকাং সেবে
মহাকালিকাম্ | যামস্তৌচ্ছয়িতে হরৌ কমলজো হন্তুং মধুং কৈটভম্ ||
ভদ্রকালী
-
ভদ্রকালী নামের ভদ্র শব্দের অর্থ কল্যাণ এবং কাল শব্দের অর্থ শেষ সময়।
যিনি মরণকালে জীবের মঙ্গলবিধান করেন, তিনিই ভদ্রকালী। ভদ্রকালী নামটি অবশ্য
শাস্ত্রে দুর্গা ও সরস্বতী দেবীর অপর নাম রূপেও ব্যবহৃত হয়েছে। কালিকাপুরাণ
মতে, ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসীপুষ্পের ন্যায়, মাথায় জটাজুট, ললাটে
অর্ধচন্দ্র ও গলদেশে কণ্ঠহার। তন্ত্রমতে অবশ্য তিনি মসীর ন্যায়
কৃষ্ণবর্ণা, কোটরাক্ষী, সর্বদা ক্ষুধিতা, মুক্তকেশী; তিনি জগৎকে গ্রাস
করছেন; তাঁর হাতে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও পাশযুগ্ম।
গ্রামবাংলায় অনেক স্থলে ভদ্রকালীর বিগ্রহ নিষ্ঠাসহকারে পূজিত হয়। এই
দেবীরও একাধিক মন্ত্র রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ চতুর্দশাক্ষর মন্ত্রটি হল –
‘হৌঁ কালি মহাকালী কিলি কিলি ফট স্বাহা’।
চামুণ্ডাকালী
চামুণ্ডা কালী, দক্ষিণ কলকাতার আলিপুর-চেতলা অঞ্চলের আলিপুর সাধারণ সমিতির মণ্ডপে, ২০০৮।
- মূল নিবন্ধ: চামুণ্ডা
চামুণ্ডাকালী বা চামুণ্ডা ভক্ত ও সাধকদের কাছে কালীর একটি প্রসিদ্ধ রূপ। দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুর বধের নিমিত্ত দেবী দুর্গার
ভ্রুকুটিকুটিল ললাট থেকে উৎপন্ন হন। তাঁর গাত্রবর্ণ নীল পদ্মের ন্যায়,
হস্তে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস; পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম; অস্তিচর্মসার শরীর ও
বিকট দাঁত। দুর্গাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপূজার সময় দেবী চামুণ্ডার পূজা হয়। পূজক অশুভ শত্রুবিনাশের জন্য শক্তি প্রার্থনা করে তাঁর পূজা করেন। অগ্নিপুরাণ-এ
আট প্রকার চামুণ্ডার কথা বলা হয়েছে। তাঁর মন্ত্রও অনেক। বৃহন্নন্দীকেশ্বর
পুরাণে বর্ণিত চামুণ্ডা দেবীর ধ্যানমন্ত্রটি এইরূপ - নীলোৎপলদলশ্যামা
চতুর্বাহুসমন্বিতা । খট্বাঙ্গ চন্দ্রহাসঞ্চ বিভ্রতী দক্ষিণে করে ।। বামে
চর্ম্ম চ পাশঞ্চ ঊর্দ্ধাধোভাগতঃ পুনঃ । দধতী মুণ্ডমালাঞ্চ
ব্যাঘ্রচর্মধরাম্বরা ।। কৃশোদরী দীর্ঘদংষ্ট্রা অতিদীর্ঘাতিভীষণা ।
লোলজিহ্বা নিমগ্নারক্তনয়নারাবভীষণা ।। কবন্ধবাহনাসীনা বিস্তারা শ্রবণাননা ।
এষা কালী সমাখ্যাতা চামুণ্ডা ইতি কথ্যতে ।।
শ্মশানকালী
শ্মশানকালী শ্মশানের
অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি কাজলের পর্বতের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা, রক্তনেত্রা ও
অতিশুষ্কদেহা; তাঁর একহাতে মদ্যপাত্র অন্য হাতে চর্বনরত মৃতদেহ। শবসাধকগণ
কালীর এই মূর্তির আরাধনা করেন। তবে রামকৃষ্ণ পরমহংসের মতে এই দেবীর ছবি গৃহে রাখাও গৃহস্থের পক্ষে অকল্যাণকর।
শ্রীকালী
গুণ ও কর্ম অনুসারে শ্রীকালী কালীর আরেক রূপ। অনেকের মতে এই রূপে তিনি
দারুক নামক অসুর নাশ করেন। ইনি মহাদেবের শরীরে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে
কৃষ্ণবর্ণা হয়েছেন। শিবের ন্যায় ইনিও ত্রিশূলধারিনী ও সর্পযুক্তা।
কালীপূজা
গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়। এছাড়াও বিশেষ
বিশেষ তিথিতেও কালীপূজার বিধান আছে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে
দীপান্বিতা কালীপূজা, মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে রটন্তী কালীপূজা এবং
জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে ফলহারিনী কালীপূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও শনি ও মঙ্গলবারে, অন্যান্য অমাবস্যায় বা বিশেষ কোনো কামনাপূরণের
উদ্দেশ্যেও কালীর পূজা করা হয়। দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই
উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭
খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধি গ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়
অষ্টাদশ শতকে তাঁর সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে
বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও বহু অর্থব্যয় করে কালীপূজার আয়োজন
করতেন।
চিত্রমালা
-
কালীঘাটের কালীর প্রতিমূর্তি; দেবী লোলজিহ্বা, চতুর্ভূজা ও নকুলেশ্বর
নামের শিবের উপরে স্থিত। মূল মূর্তির জিভটি আরও দীর্ঘ ও স্বর্ণনির্মিত।
দক্ষিণ কলকাতার বেহালার একটি কালীপূজা মণ্ডপ, ২০০৮।
-
আদি কালী, কালীর দ্বিভূজা মূর্তি। গলায় মুণ্ডমালা অনুপস্থিত, দুই হাতে
বর ও অভয়। শিবের উপর দণ্ডায়মান। দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অঞ্চলের
পিয়ারিমোহন রায় রোডস্থ ২৪ পল্লি চেতলা সর্বসাধারণের কালীপূজা কমিটির
মণ্ডপে, ২০০৮।
-
একটি কালীপূজা মণ্ডপ, বেহালা, দক্ষিণ কলকাতা। চিনের তাং শিয়াং
প্যাগোডার আদলে নির্মিত। কিন্তু সম্পূর্ণ বাংলা মণ্ডপসজ্জা পদ্ধতিতে
সজ্জিত।
-
দুর্গাকালী, দুর্গা ও কালীর যৌথ রূপ। দেবীর অর্ধাংশে দুর্গা ও অর্ধাংশে
কালী। দুর্গার অংশটি পঞ্চভূজা ও কালীর অংশটি দ্বিভূজা। সিংহপৃষ্ঠে আরোহণ
করে মহিষাসুরবধরত। পাশে শিব দণ্ডায়মান। দক্ষিণ কলকাতার চেতলার একটি
কালীপূজা মণ্ডপ, ২০০৮।
-
হাজার হাত কালী। দেবী সিংহবাহনা ও নাগশোভিতা। এক পা পদ্মে, অপর পা
সিংহপৃষ্ঠে। দুই হাতে ত্রিশূল ও খড়্গ। পশ্চাতে ৯৯৮টি ছোট হাত। পাশে শিব
উপবিষ্ট। দক্ষিণ কলকাতার চেতলার একটি পূজামণ্ডপ, ২০০৮।
|