n সিদ্ধিদাতা গণেশ - 7 August 2011 - হিন্দু ধর্ম ব্লগ - A Total Knowledge Of Hinduism, সনাতন ধর্ম Hinduism Site
Tuesday
05-11-2024
10:36 AM
Login form
Search
Calendar
Entries archive
Tag Board
300
Site friends
  • Create a free website
  • Online Desktop
  • Free Online Games
  • Video Tutorials
  • All HTML Tags
  • Browser Kits
  • Statistics

    Total online: 37
    Guests: 37
    Users: 0

    Hinduism Site

    হিন্দু ধর্ম ব্লগ

    Main » 2011 » August » 7 » সিদ্ধিদাতা গণেশ Added by: rajendra
    8:22 PM
    সিদ্ধিদাতা গণেশ
    বশোলী মিনিয়েচার, ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দ; জাতীয় জাদুঘর, নতুন দিল্লি, ভারত.[১]
    গণেশ (সংস্কৃত: गणेश: Gaṇeśa;
    ) হিন্দুধর্মের জনপ্রিয়তম ও সর্বাধিক পূজিত দেবতাদের অন্যতম।ভারতের সর্বত্র গণেশ-মূর্তি দেখা যায়।হিন্দুদের সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই তাঁর পূজা প্রচলিত। জৈন, বৌদ্ধধর্ম এমনকি ভারতের বাইরেও গণেশ আরাধনার ব্যাপক প্রচলন আছে।

    পুরাণে সর্বত্র গণেশ হর-পার্বতীর পুত্র। তাঁর রূপ বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে বিভিন্ন প্রকার; তবে সর্বত্রই তিনি গজমুণ্ড মনুষ্যাকার দেবতা। তাঁর বাহন মূষিক বা ইঁদুর; অথবা কোনও কোনও স্থলে সিংহ। গণেশকে সর্ববিঘ্নহন্তা মনে করা হয়।তিনি সাধারণভাবে প্রারম্ভের দেবতা, বিঘ্নের দেবতা (বিঘ্নেশ বা বিঘ্নেশ্বর), শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক, এবং মহাবল, মেধা ও বুদ্ধির দেবতা।পূজা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় গণেশের পূজা সর্বাগ্রে করা কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। লেখার সময় তাঁকে অক্ষরের পৃষ্ঠপোষকরূপে আবাহন করার রীতি আছে। একাধিক পৌরাণিক সূত্র থেকে তাঁর জন্ম, কীর্তিকলাপ ও মূর্তিতত্ত্বের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। গণেশের অন্যান্য নামগুলি হল গণপতি, বিনায়ক, মহাগণপতি, বিরিগণপতি, শক্তিগণপতি, বিদ্যাগণপতি, হরিদ্রাগণপতি, উচ্ছিষ্টগণপতি, লক্ষ্মীবিনায়ক, হেরম্ব, বক্রতুণ্ড, একদন্ত, মহোদর, গজানন, লম্বোদর, বিকটবিঘ্নরাজ। দুর্গা(অম্বিকা) এবং চামুণ্ডা, এই দুজনে গণেশকে পালন করেছিলেন বলে তিনি দ্বৈমাতুর নামেও অভিহিত।

    পৃথক দেবতা রূপে গণেশের উদ্ভব খ্রিষ্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্তযুগে। যদিও একাধিক বৈদিক ও প্রাক-বৈদিক উৎস থেকেও গণেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নবম শতাব্দীতে পাঁচ প্রধান স্মার্ত দেবতার অন্যতম রূপে গণ্য হন গণেশ। এই সময়কে গণেশকে সর্বোচ্চ দেবতা স্বীকার করে গাণপত্য (সংস্কৃত: गाणपत्य; আন্তর্জাতিক সংস্কৃত লিপ্যন্তরণ পদ্ধতি অনুসারে: gāṇapatya) সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। গণেশ সংক্রান্ত প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল গণেশ পুরাণ, মুদগল পুরাণ, ও গণপতি অথর্বশীর্ষ

    পুরাণ ও কাব্যে গণেশের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারত-এর লিপিকার রূপে কল্পিত হন। ভারতের সর্বত্রই তাঁর পূজা প্রচলিত। তবে মহারাষ্ট্র ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলে গণেশ পূজা জাতীয় উৎসব রূপে উদযাপিত হয়। পশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে বাংলা নববর্ষের দিন গণেশ পূজা প্রচলিত। এছাড়াও দুর্গোৎসবে সপরিবার দেবী দুর্গার সঙ্গে গণেশও পূজিত হন। গণেশের গায়ত্রী মন্ত্রটি হল – মহৎকায়া বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহি তন্নো দন্তী প্রচোদয়াৎ

    বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম

    'শ্রীময়ূরেশ্বর' রূপে দুই স্ত্রী বুদ্ধি ও সিদ্ধির সঙ্গে গণেশ, মোরগাঁও গণেশ মন্দির (স্থানীয় আস্থাবিনায়ক চত্বরের কেন্দ্রীয় মন্দির) 

    গণপতিবিঘ্নেশ্বর সহ গণেশের একাধিক নাম ও বিশেষণ রয়েছে। হিন্দুদের সম্মানজনক শ্রী (সংস্কৃত: श्री; śrī) অভিধাটি প্রায়শই তাঁর নামের পূর্বে সংযুক্ত হয়। গণেশ পূজার অন্যতম জনপ্রিয় পন্থা হল গণেশ সহস্রনাম স্তোত্রপাঠ। এই স্তোত্র গণেশের এক হাজার নামের সংকলন। সহস্রনামের প্রতিটি নাম গণেশের বিভিন্ন রূপের প্রতীক এবং ভিন্ন ভিন্ন অর্থবহ। গণেশ সহস্রনামের দুটি ভিন্ন পাঠ পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি গণেশ সম্পর্কিত শাস্ত্রগ্রন্থ গণেশ পুরাণ থেকে গৃহীত।

    সবাহন গণেশ, কর্ণাটকের তালাকাডুর বৈদ্যেশ্বর মন্দিরের দেওয়ালচিত্র

    গণেশ নামটির উৎস সংস্কৃত গণ (गण; gaṇa, অর্থাৎ দল বা গোষ্ঠী) ও ইশ (ईश; īśa, অর্থাৎ প্রভু) শব্দদ্বয়। এই গণ প্রকৃতপক্ষে শিবের উপদেবতা অনুচরবৃন্দের নাম। সাধারণভাবে এই শব্দটির অর্থ সমূহ, দল বা সমষ্টি। এই কারণে কোনো কোনো ব্যাখ্যাকারী "গণের অধিপতি" কথাটির অর্থ করেন "সমূহের দেবতা" বা "সমষ্টির দেবতা"। গণেশ শব্দের অপর একটি প্রতিশব্দ গণপতি (সংস্কৃত: गणपति; gaṇapati)। গণপতি শব্দটি গণ অর্থাৎ দল এবং পতি অর্থাৎ প্রভু – এই দুই সংস্কৃত শব্দ দ্বারা গঠিত। প্রাচীন সংস্কৃত অভিধান অমরকোষ গ্রন্থে গণেশ নামের আটটি প্রতিশব্দের তালিকা প্রদত্ত হয়েছে: বিনায়ক, বিঘ্নরাজ (আক্ষরিক প্রতিশব্দে বিঘ্নেশ), দ্বৈমাতুর (দুই মাতার সন্তান) গণাধিপ (আক্ষরিক প্রতিশব্দে গণেশ বা গণপতি), একদন্ত (যার একটি দাঁত), হেরম্ব, লম্বোদর (বৃহৎ উদর বিশিষ্ট) ও গজানন (হস্তীমুণ্ডবিশিষ্ট)।

    পুরাণবৌদ্ধ তন্ত্রে গণেশকে বিনায়ক (সংস্কৃত: विनायक; vināyaka) নামে অভিহিত করা হয়েছে। অষ্টবিনায়ক নামে পরিচিত মহারাষ্ট্রের আটটি বিখ্যাত গণেশ মন্দিরেও গণেশ এই নামে পূজিত হন। বিঘ্নেশ (সংস্কৃত: विघ्नेश; vighneśa) ও বিঘ্নেশ্বর (সংস্কৃত: विघ्नेश्वर; vighneśvara) নামদুটি হিন্দু পুরাণে বর্ণিত গণেশের প্রাথমিক দায়িত্ব বিঘ্ন অপসারণকে নির্দেশ করে।

    তামিল ভাষায় গণেশকে সাধারণত পিল্লে বা পিল্লাইয়ার (ছোটো শিশু) নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এ. কে. নারায়ণ এই দুই শব্দের পার্থক্য নির্দেশ করে লিখেছেন, পিল্লে কথাটির অর্থ শিশু, কিন্তু পিল্লাইয়ার কথাটির অর্থ মহান শিশু। তিনি আরও লিখেছেন যে দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠীতে পাল্লু, পেল্লাপেল কথাগুলির মাধ্যমে গজদন্ত অথবা সাধারণভাবে হাতিকে নির্দেশ করা হয়। অনিতা রাইনা থাপান মনে করেন, পিল্লাইয়ার কথাটির মূল শব্দ পিল্লে কথাটির অর্থ সম্ভবত হস্তীশাবক; কারণ পালি ভাষায় পিল্লাকা শব্দের অর্থ হস্তীশিশু।

     বিবর্তন

    চিত্র:Ganesh.maharashtra.jpg
    মহারাষ্ট্রে গণেশ মহোৎসব

    কলকাতার দুর্গাপূজা মন্ডপে গণেশের প্রতিমা

    ‘গণপতি’র প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদে। দুটি ঋক মন্ত্রে ‘গণানাম গণপতিম হবামহে...’  ও ‘বিষু সীদা গণপতে...’ বাক্যবন্ধগুলি বৈদিক গণপতির একটি ধারণা দেয়। যদিও এই গণপতি ও বর্তমান কালে পূজ্য পৌরাণিক গণপতি এক নয়। তবে একথা অনেকেই স্বীকার করেন বেদোত্তর যুগে ঋগ্বেদের ‘গণপতি-ব্রহ্মণস্পতি’ থেকেই পৌরাণিক ‘গজবদন-গণেশ-বিঘ্নেশ্বর’-এর ধারণাটি বিবর্তিত হয়েছে।

    ঋগ্বৈদিক গণপতির অপর নাম ছিল 'বৃহস্পতি' বা 'বাচস্পতি'। তিনি জ্যোতির্ময় দেবতা। তাঁর গাত্রবর্ণ রক্তিমাভ-স্বর্ণালি। অঙ্কুশ বা কুঠার তাঁর অস্ত্র। তাঁর আশিষ ভিন্ন কোনও ধর্মীয় সিদ্ধি সম্ভব নয় বলে মনে করা হত। তিনি সর্বদা ‘গণ’ নামে একটি নৃত্যগীতকারী দলের সঙ্গে বিরাজমান ও দেবতাদের রক্ষকরূপে কল্পিত হতেন। 

    অন্যমতে, ভারতের আদিম অধিবাসীদের পূজিত হস্তিদেবতা ও লম্বোদর যক্ষের মিশ্রণে গণেশ কল্পনার উদ্ভব। অথবা এমনও হতে পারে গনেশ সম্পূর্ণ অনার্য দেবতা, পরে যাঁর আর্যীকরণ ঘটে। গণেশের বাহন ইঁদুর এই আদিম কোনও সংস্কারের প্রতীক। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যবর্তী কোনও সময়ের লেখা বৌধায়ণ ধর্মসূত্রে গণেশের উল্লেখ নেই। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে কালিদাস, খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ভারবি, খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে পঞ্চতন্ত্র বা ভরত নাট্যশাস্ত্রও গণেশের সাক্ষ্য দেয় না। গুপ্ত যুগের শেষভাগে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক থেকেই এঁর একক পূজা প্রচলিত হয়।

    'মানবগৃহ্যসূত্র' ও 'যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি'-তে শাল, কটঙ্কট, উষ্মিত, কুষ্মাণ্ড রাজপুত্র ও দেবযজন ইত্যাদিকেও বিনায়ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহাভারতে এঁরাই বিনায়ক। এঁদের কাজ বিঘ্ন উৎপাদন করা। এই সব বিনায়ক মিলে পরে বিঘ্নরাজ গণপতির রূপ নেয়। যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি অনুসারে একজন বিনায়ক অম্বিকার পুত্র। এখানেই গণেশকে প্রথমবার দুর্গার সন্তান বলে উল্লেখ করা হয়। বহু পুরাণে তাঁকে স্বয়ম্ভূ বলা হয়েছে। আবার স্কন্দের গণ বা পার্ষদদের অনেকে পশুপাখির মুখবিশিষ্ট। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের 'ভূমারা'তে এই ধরণের বহু গণের উল্লেখ পাওয়া যায়। গণেশ অর্থাৎ গণ-ঈশের হস্তিমুখের এও এক কারণ হতে পারে। আবার কোনও কোনও মতে যক্ষ ও নাগদেবতা মিলে গণেশ। হাতির মাথাযুক্ত যক্ষ পুরাণে বর্ণিত। এছাড়া যক্ষরাও লম্বোদর।

    'যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা'-য় বিনায়ক ও গণপতির পূজার বিবরণ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে রচিত ললিত মাধব-এও গণেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

     পৌরাণিক উপাখ্যান

    গণেশ পৌরাণিক হিন্দুধর্মে সর্বাগ্রে পূজ্য ও সেই কারণে অন্যতম প্রধান দেবতা। স্বাভাবিক কারণেই তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত নানা আখ্যান-উপাখ্যান বিভিন্ন পুরাণ ও মহাকাব্যে স্থান পেয়েছে। গণেশ সম্পর্কিত যে কাহিনিটি পুরাণ ও উপকথায় সর্বাধিক চর্চিত সেটি হল গণেশের ‘গজানন’ হবার কারণ। বলাই বাহুল্য, পুরাণের স্বাভাবিক চরিত্র অনুসারে এক একটি পুরাণে এই প্রসঙ্গে এক এক রকমের ভাষ্য পাওয়া যায়। এমনকি একই পুরাণে পরস্পর-বিরোধী দুটি মতও কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থান পেয়েছে। এছাড়াও গণেশের পিতৃমাতৃভক্তি ও বিবাহ সম্পর্কিত নানা কাহিনিও বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়।

    অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙ্কিত 'গণেশ-জননী'

    জন্মকথা

    • শিবপুরাণশিবপুরাণ-এ উল্লিখিত উপাখ্যান অনুসারে, পার্বতী একদিন নন্দীকে দ্বারী নিযুক্ত করে স্নান করতে যান। এমন সময় শিব সেখানে উপস্থিত হলে, তিনি নন্দীকে তিরষ্কার করে পার্বতীর স্নানাগারে প্রবেশ করেন। এতে পার্বতী অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হন। অবশেষে সখী জয়া ও বিজয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জল থেকে পাঁক তুলে একটি সুন্দর পুত্রের মূর্তি নির্মান করেন ও সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে নিজের বিশ্বস্ত অনুচর নিয়োগ করেন। এরপর একদিন এই কুমারকে দ্বারী নিয়োগ করে পার্বতী স্নানে গমন করলে শিব তথায় উপস্থিত হন। কুমার শিবকে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বসৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হন। নারদ ও দেবগণ তাঁকে শান্ত করেন। পার্বতী তাঁর পুত্রের পুনর্জীবন দাবি করেন ও ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন এই পুত্র সকলের পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের মুণ্ডটি তখন আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে প্রেরণ করেন এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্র রূপে স্বীকার করেন। দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও গণেশ নামে আখ্যাত হন। 
    • স্কন্দপুরাণস্কন্দপুরাণ-এ গণেশের জন্ম বিষয়ে একাধিক উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এই পুরাণের গণেশ খণ্ডে আছে, সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে প্রবেশ করে গণেশের মস্তক ছিন্ন করে। কিন্তু এতে শিশুটির মৃত্যু ঘটে না, বরং সে মুণ্ডহীন অবস্থাতেই ভূমিষ্ট হয়। জন্মের পরে, নারদ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গণেশ তাঁকে ঘটনাটি জানান। নারদ এরপর তাকে এর একটি বিহিত করতে বললে, সে নিজের তেজে গজাসুরের মস্তক ছিন্ন করে নিজের দেহে যুক্ত করে।
      স্কন্দপুরাণ
      -এর ব্রহ্মখণ্ডে আছে, পার্বতী নিজের গাত্রমল থেকে একটি সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ পুতুল নির্মান করে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর পার্বতী তাঁকে নিজের স্নানাগারের দ্বাররক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। শিব স্নানাগারে প্রবেশ করতে গেলে বালক-কুমার তাঁকে বাধা দেন। শিবের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয় ও শিব ত্রিশূলে তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন।  এরপর গজাসুরকে সামনে পেয়ে শিব তার মস্তক ছিন্ন করেন তার মস্তক কুমারের স্কন্ধে যুক্ত করেন।
      স্কন্দপুরাণ
      -এর অর্বুদ খণ্ডে বলা হয়েছে, পার্বতী গাত্রমল দিয়ে একটি মুণ্ডহীন পুতুল তৈরি করেন। তারপর স্কন্দকে বলেন, পুতুলটির মাথা তৈরির জন্য একতাল কাদা আনতে; এই পুতুল হবে তাঁর ভাই। স্কন্দ কাদা না পেয়ে একটি হাতির মাথা কেটে আনেন। পার্বতী আপত্তি করলেও দৈবযোগে এই মুণ্ডটিই পুতুলের স্কন্ধে যুক্ত হয়। এরপর শক্তিরূপিনী পার্বতী পুতুলটির জীবনদান করেন। গজমুণ্ডযুক্ত পুতুলের দেহে এক বিশেষ নায়কের ভাব ফুটে ওঠে। এই কারণে শিবের বরে ইনি ‘মহাবিনায়ক’ নামে পরিচিত হন। শিব বলেন, এই কুমার গণাধিপতি হবে ও সকল কাজের আগে এঁর পূজা না করলে কার্যসিদ্ধি হবে না। স্কন্দ এঁকে অস্ত্র কুঠার দান করেন, পার্বতী দেন মোদকপূর্ণ সুগন্ধযুক্ত ভোজনপাত্র। মোদকের গন্ধে ইঁদুর এঁর বাহন হয়।
    • বৃহদ্ধর্মপুরাণবৃহদ্ধর্মপুরাণ মতে, পার্বতী পুত্রলাভে ইচ্ছুক হলে শিব অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। অগত্যা পার্বতীর পীড়াপীড়িতে শিব পার্বতীর বস্ত্র টেনে সেটিকেই পুত্রজ্ঞানে চুম্বন করতে বলেন।  পার্বতী সেই বস্ত্রকে পুত্রের আকার দিয়ে কোলে নিতেই সেটি জীবিত হয়ে ওঠে। তখন শিব পুত্রকে কোলে নিয়ে বলেন, এই পুত্র স্বল্পায়ু। উত্তরদিকে মাথা করে শায়িত এই শিশুর মস্তকও তৎক্ষণাৎ ছিন্ন হয়ে যায়। পার্বতী শোকাকুল হন। এমন সময় দৈববাণী হয় যে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে আছে এমন কারোর মাথা এনে জুড়ে দিলে তবেই এই পুত্র বাঁচবে। পার্বতী তখন নন্দীকে মস্তকের সন্ধানে পাঠান। নন্দী ইন্দ্রের বাহন ঐরাবতের মাথা কেটে আনেন। দেবতারা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হন। এই মাথাটি জুড়ে শিব পুত্রকে জীবিত করেন। শিবের বরে, ইন্দ্র ঐরাবতকে সমুদ্রে ফেলে দিলে সে আবার মস্তক প্রাপ্ত হয়।
    শিব ও পার্বতী গণেশকে স্নান করাচ্ছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর কাংড়া চিত্রকলা
    • ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী কৃষ্ণকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পার্বতী অনুরূপ একটি পুত্রকামনা করেন। কৃষ্ণও তাঁকে ইচ্ছাপূরণের বর দেন। এরপর একদিন যখন শিব-পার্বতী স্বগৃহে ক্রীড়ারত ছিলেন, সেই সময় কৃষ্ণ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে ভিক্ষা চাইতে আসেন। পার্বতী তাঁকে ভিক্ষা দিতে গেলে শিবের বীর্য পতিত হয় ও কৃষ্ণ শিশুর বেশে পালঙ্কে আবির্ভূত হন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ অন্তর্হিত হন। পার্বতী তখন পালঙ্কে ‘শতচন্দ্রসমপ্রভম্’ এক শিশুকে শয্যায় দেখতে পেয়ে আনন্দিত হন। এরপর দেবতা ও ঋষিগণ কুমারকে দেখতে শিবের ভবনে আসেন। আসেন শনি দেবও। শনি নিজের কুদৃষ্টির কথা পার্বতীকে জানান। পার্বতী তবু তাঁকে পীড়াপীড়ি করলে তিনি কুমারকে দেখতে সম্মত হন। কিন্তু শনি সভয়ে বাঁ-চোখের কোণ দিয়ে কুমারকে দেখামাত্র তার মস্তক ছিন্ন হয়ে বৈকুণ্ঠে কৃষ্ণের দেহে গিয়ে মেশে। পার্বতী শোকে মুর্ছিত হয়ে পড়েন। তখন বিষ্ণু গরুড়ে আরোহণ করে পুষ্পভদ্রা নদীর তীরে এসে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে থাকা এক হাতিকে দেখেন। তার মস্তক ছিন্ন করলে হস্তিনী ও তার শাবকেরা কাঁদতে কাঁদতে বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন। তখন বিষ্ণু ঐ মুণ্ডটি থেকে দুটি মুণ্ড তৈরি করে একটি হাতির স্কন্ধে ও অপরটি গণেশের স্কন্ধে স্থাপন করে উভয়কেই জীবিত করেন।  শিবের অনুগ্রহে গণেশ সকল দেবতার অগ্রে পূজিত হবার অধিকার প্রাপ্ত হন। পার্বতী ও শিবের বরে গণেশ গণাধিপতি, বিঘ্নেশ্বর ও সর্বসিদ্ধিদাতা হন। এরপর কার্তিকেয়কে সেনাপতির পদে নিয়োগ করতে গিয়ে ইন্দ্রের হাত স্তম্ভিত হয়ে যায়। তিনি শিবকে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণেশকে আগে পূজা না করার জন্যই এমন হয়েছে।
      ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে
      উল্লিখিত আরেকটি মতে, মালী ও সুমালী নামে দুই শিবভক্ত সূর্যকে ত্রিশূল দ্বারা আঘাত করেন। এতে সূর্য অচৈতন্য হয়ে পড়লে বিশ্ব অন্ধকার হয়ে যায়। সূর্যের পিতা কশ্যপ শিবকে অভিশাপ দেন যে শিবের পুত্রে মাথাও খসে যাবে। এই জন্য গণেশ মুণ্ডহীন হন ও ইন্দ্রে ঐরাবতের মাথা এনে তাঁর মস্তকে জুড়ে দেওয়া হয়।
    • পদ্মপুরাণপদ্মপুরাণ মতে, হরপার্বতী ঐরাবতের বেশে বনে বিহার করছিলেন, তাঁদের সেই মিলনের ফলে গজমুণ্ড গণেশের জন্ম হয়।
    • লিঙ্গপুরাণলিঙ্গপুরাণ মতে, দেবগণ শিবের নিকট উপস্থিত হন ও ব্রহ্মা অসুরদের হাত থেকে নিরাপত্তা চান। শিব তখন নিজ দেহ থেকে গণেশের জন্ম দেন। 
    • বরাহপুরাণবরাহপুরাণ মতে, দেব ও ঋষিগণ রুদ্রের নিকটে বিঘ্নোপসারণকারী এক নতুন দেবতা চাইলে হাস্যময় শিবের সম্মুখস্থ আকাশে শিবের গণ-যুক্ত একটি কুমারের জন্ম হল। এই শিশুর রূপে দেবগণ, এমনকি স্বয়ং পার্বতী মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কিন্তু শিব ক্রুদ্ধ হলেন ও অভিশাপ দিলেন যে এই কুমারের গজমুখ, লম্বোদর ও নাগ উপবীত হবে। এই ক্রুদ্ধ হবার সময় শিবের পদনিঃসৃত ঘাম থেকে অসংখ্য গজমুখ বিনায়ক গণ জন্ম নিলেন। কুমার গণেশ হলেন এঁদের অধিপতি।  এখানে কুমার গণেশ ও গণেরা বিঘ্নকর ও গজাস্য বলে উল্লিখিত।
    রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত 'ঋদ্ধি সিদ্ধি' চিত্রে সস্ত্রীক গণেশ
    • দেবীপুরাণদেবীপুরাণ মতে, শিবের রাজসিক ভাব দেখা দিলে তাঁর দুই হাত ঘামতে থাকে এবং সেই ঘাম থেকে গজাননের জন্ম হয়।
    • মৎসপুরাণমৎস্যপুরাণ মতে, পার্বতী চূর্ণক বা বেসম দিয়ে নিজের গাত্রমার্জনা করছিলেন। সেই সময় এই চূর্ণক দিয়ে একটি গজানন মূর্তি নির্মান করে তা গঙ্গাজলে ফেলে দেন। পুতুলটি বিরাট হয়ে পৃথিবী পূর্ণ করতে উদ্যত হলে পার্বতী ও গঙ্গা একে পুত্র সম্বোধন করেন ও ব্রহ্মা একে গণাধিপতি করে দেন।
    • বামনপুরাণবামনপুরাণ মতে, পার্বতী স্নানের সময় নিজের গাত্রমল দিয়ে চতুর্ভূজ গজানন মূর্তি নির্মান করলে মহাদেব তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। বলেন, যেহেতু "ময়া নায়কেন বিনা জাতঃ পুত্রকঃ” (আমাকে ছাড়াই পুত্রের জন্ম হয়েছে) সেহেতু এ বিনায়ক নামে প্রসিদ্ধ হবে এবং বিঘ্ননাশকারী হবে।

     অন্যান্য উপাখ্যান

    • ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, পরশুরাম একুশবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করে কৈলাসে শিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে, দ্বাররক্ষক গণেশ তাঁকে বাধা দেন। ফলে উভয়ের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হয়। পরশুরাম কুঠারের আঘাতে গণেশের একটি দাঁত সমূলে উৎপাটিত করেন।
    • শিবপুরাণশিবপুরাণ অনুসারে, গণেশ ও কার্তিকেয় বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। তখন স্থির হয়, উভয়ের মধ্যে যে আগে বিশ্বপরিক্রমা করে আসতে পারবে তার বিবাহ আগে হবে। কার্তিকেয় ময়ূরে আরোহণ করে বিশ্বপরিক্রমায় বের হন; কিন্তু গণেশ শিব ও পার্বতীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে বলেন, শাস্ত্রমতে তিনি শতবার বিশ্বপরিক্রমা করলেন। এরপর বিশ্বরূপের দুই কন্যা সিদ্ধি ও বুদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিবাহ হয়। সিদ্ধির পুত্র হয় লক্ষ্য ও বুদ্ধির পুত্র লাভ। কার্তিক নারদের কাছ থেকে বিবাহের সংবাদ পেয়ে ফিরে আসেন ও মনের দুঃখে ক্রৌঞ্চ পর্বতে গিয়ে বাস করতে থাকেন। অন্য একটি মতে, তুলসী নামে এক নারী গণেশকে বিবাহ করতে চাইলে ব্রহ্মচর্যব্রতী গণেশ অসম্মত হন। তিনি তুলসীর চিত্ত বৈকল্যের জন্য তাকে শাপ দেন দানবপত্নী হওয়ার। তুলসীও তাকে শাপ দেন। ফলে পুষ্টি নামে এক নারীকে গণেশ বিবাহ করতে বাধ্য হন।
    • তন্ত্র – তন্ত্রমতে লক্ষ্মীসরস্বতী গণেশের স্ত্রী। এছাড়াও তীব্রা, জ্বালিনী, নন্দা, সুভোগদা, কামরূপিনী, উগ্রা, তেজোবতী, সত্যা ও বিঘ্ননাশিনী নামে তাঁর নয়জন শক্তির কথাও জানা যায়।
    • মহাভারতমহাভারত মতে, কৌরব ও পাণ্ডবদের মৃত্যু হলে ব্যাস ধ্যানে বসেন। মহাভারতের সমস্ত ঘটনা তাঁর মনের মধ্যে ফুটে ওঠে। তখন এই সুবিশাল গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করার জন্য উপযুক্ত লিপিকারের খোঁজে তিনি ব্রহ্মার নিকট যান। ব্রহ্মা তাঁকে গণেশের কাছে যেতে বলেন। গণেশ মহাভারত লিখতে সম্মত হন বটে, কিন্তু শর্তারোপ করেন, লিখতে লিখতে তাঁর কলম থামতে দেওয়া চলবে না। ব্যাসও পাল্টা শর্তারোপ করেন, কোনও শ্লোকের অর্থ না বুঝে তিনি লিখতে পারবেন না।  এইজন্য ব্যাস মহাভারতে ৮৮০০ কূটশ্লোক অন্তর্ভূক্ত করেন, যেন এই শ্লোকগুলির অর্থ অনুধাবন করতে গণেশের বেশকিছুটা সময় লাগে ও সেই অবসরে তিনি আরও কতকগুলি শ্লোক রচনা করে ফেলেন।

     গণেশ চতুর্থী

    ভাদ্রমাঘমাসের শুক্লাচতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন। গণেশ চতুর্থী সংক্রান্ত একটি কিংবদন্তী হিন্দুসমাজে প্রচলিত, একবার গণেশ চতুর্থীতে প্রতি বাড়িতে মোদক ভক্ষণ করে ভরা পেটে ইঁদুরে চেপে ফিরছিলেন গণেশ। পথে ইঁদুরের সামনে একটি সাপ এসে পড়লে সে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। এতে গণেশ পড়ে যান ও তাঁর পেট ফেটে সব মোদক রাস্তায় পড়ে যায়। গণেশ উঠে সেগুলি কুড়িয়ে পেটের মধ্যে পুরে পেটের ফাটা জায়গাটি ওই সাপ দিয়ে বেঁধে দেন। আকাশ থেকে চন্দ্র তা দেখে হেসে ফেলেন। তাই গণেশ শাপ দেন যে চতুর্থীর দিন চাঁদ কেউ দেখবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গণেশ অত্যন্ত মোদকপ্রিয় দেবতা। অন্যমতে, এই দিনে শিব গণেশকে লুকিয়ে কার্তিকেয়কে একটি ফল দিয়েছিলেন। চন্দ্র তা দেখে হেসে ফেলেন বলে শিব চন্দ্রকে অভিশাপ দেন।


     অবতার

    গাণপত্য সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগ্রন্থ তথা গণেশ বিষয়ক দুই উপপুরাণ গণেশ পুরাণমুদ্গল পুরাণ-এ পৃথক পৃথকভাবে গণেশের যথাক্রমে চার ও আটটি অবতারের কথা বলা হয়েছে।

    • গণেশ পুরাণগণেশ পুরাণ-এ উল্লিখিত গণেশের চার অবতার সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগে অবতীর্ণ হন। এঁরা হলেন –
      • মহোৎকট বিনায়ক – ইনি দশভূজ ও রক্তবর্ণ। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় এঁর বাহন হয় হাতি নয় সিংহ। ইনি সত্য যুগে কশ্যপ ও অদিতির সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেই কারণে কাশ্যপেয় নামে পরিচিত হন। [৪৫] এই অবতারে তিনি নরান্তক ও দেবান্তক নামে দুই অসুরভ্রাতা ও ধূম্রাক্ষ নামে এক দৈত্যকে বধ করেন।
      • ময়ূরেশ্বর – ইনি ষড়ভূজ ও শ্বেতবর্ণ। বাহন ময়ূর। ত্রেতা যুগে শিব ও পার্বতীর পুত্ররূপে এঁর জন্ম। এই অবতারে তিনি সিন্ধু নামে এক দৈত্যকে বধ করেন। অবতারকাল সমাপ্ত হলে ময়ূরটি তিনি তাঁর ভ্রাতা কার্তিকেয়কে দান করেন।
      • গজানন – ইনি চতুর্ভুজ ও রক্তবর্ণ। বাহন ইঁদুর। ইনি দ্বাপর যুগে শিব ও পার্বতীর পুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সিন্দুর নামে এক দৈত্যকে তিনি এই অবতারে বধ করেন। এই অবতারেই রাজা বরেণ্যর নিকট তিনি গণেশ গীতা প্রকাশ করেন।
      • ধূম্রকেতু – দ্বিভূজ অথবা চতুর্ভূজ ও ধূম্রবর্ণ। বাহন নীল ঘোড়া। ইনি কলি যুগের শেষে অবতীর্ণ হবেন ও অনেক দৈত্য বধ করবেন। এই অবতার বিষ্ণুর শেষ অবতার কল্কির অনুসরণে কল্পিত।
    • মুদ্গল পুরাণমুদ্গল পুরাণ-এ গণেশের আটজন অবতারের বর্ণনা পাওয়া যায়। এঁরা হলেন –
      • বক্রতুণ্ড – প্রথম অবতার। এঁকে ব্রহ্মের অংশ ও পরম বলে মনে করা হয়। ইনি সিংহবাহন। এই অবতারের উদ্দেশ্য মাৎসর্যাসুর (অর্থাৎ ঈর্ষা) বধ।
      • একদন্ত – ইনি প্রত্যেক ব্যক্তিগত আত্মা ও পরমব্রহ্মের প্রতীক। ইনি মুষিকবাহন। এই অবতারের উদ্দেশ্য মদাসুর (অর্থাৎ, অহং) বধ।
      • মহোদর – ইনি বক্রতুণ্ড ও একদন্তের সম্মিলিত রূপ। ব্রহ্মের প্রজ্ঞার প্রতীক। মোহাসুর (অর্থাৎ সংশয়) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য। ইনিও মুষিকবাহন।
      • গজবক্ত্র বা গজানন – মহোদরের অন্যরূপ। লোভাসুর (অর্থাৎ লোভ) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য।
      • লম্বোদর – ব্রহ্মের শক্তির প্রতীক। ইনি মুষিকবাহন। ক্রোধাসুর (অর্থাৎ রাগ) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য।
      • বিকট – সূর্যের প্রতীক। জ্যোতির্ময় ব্রহ্মের প্রকাশ। কামাসুর (অর্থাৎ কামনাবাসনা) বধ এই অবতারের উদ্দেশ্য। ইনি ময়ূরবাহন।
      • বিঘ্নরাজ – বিষ্ণুর প্রতীক। ব্রহ্মের অস্তিত্বের প্রকাশ। মমাসুর (অর্থাৎ অহংকার) বধের উদ্দেশ্যে এই অবতার।
      • ধূম্রবর্ণ – শিবের প্রতীক। ব্রহ্মের বিনাশ শক্তির প্রকাশ। ইনি অশ্ববাহন। অভিমানাসুর (অর্থাৎ গরিমা) বধের উদ্দেশ্যে এই অবতার।

    রূপ ও রূপভেদ

    ১৮১০ সালে অঙ্কিত নুরপুর ঘরানার গণেশ চিত্র, চণ্ডীগড় মিউজিয়ামে রক্ষিত

    ভারতীয় শিল্প ও চিত্রকলায় গণেশ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় মূর্তিকল্প। গণেশের নানা রূপের বর্ণনা যেমন পুরাণ ও ইতিহাসে পাওয়া গেছে, তেমনি তাঁর বিচিত্র ও বহুমুখী মূর্তিও ভারতীয় উপমহাদেশে, এমনকি উপমহাদেশের বাইরেও নানা স্থান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। তাঁর মূর্তিগুলি বিচিত্র ভাবে রঞ্জিত। কোথাও তিনি দণ্ডায়মান, কোথাও নৃত্যরত, কোথাও তিনি অসুরবধকারী বীর যুবা, কোথাও বা শিশুপুত্র বেশে মাতাপিতার ক্রোড়ে ক্রীড়ারত, আবার কোথাও নিছক পূজাভিলাষী হয়ে উপবিষ্ট। জানা যায়, গণেশের মূর্তি প্রথম নির্মিত হয়েছিল শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের গণেশের মূর্তি নির্মিত হতে শুরু করে। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকেই গণেশ এক লোকপূজ্য দেবতার আসন লাভ করেন ও তাঁর বহু মূর্তি নির্মিত হতে শুরু করে।

    শক্তিসহ মহাগণপতি, উনিশ শতকীয় কন্নড় চিত্রকলা

    রূপ

    ভারতীয় শিল্পকলায় প্রথম থেকেই গণেশ গজানন, একদন্ত ও লম্বোদর। গণেশের ধ্যান, প্রার্থনা ও প্রণাম মন্ত্রেও তাঁর এই রূপেরই কদর বেশি। যেমন –

    "খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং প্রস্যন্দন্মদ্গন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্।
    দন্তাঘাতবিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দূরশোভাকরং বন্দে শৈলসুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।” (গণেশধ্যানম্)

    অর্থাৎ, "যিনি খর্বাকৃতি, স্থূলশরীর, লম্বোদর, গজেন্দ্রবদন অথচ সুন্দর; বদন হইতে নিঃসৃত মদগন্ধে প্রলুব্ধ ভ্রমরসমূহের দ্বারা যাঁহার গণ্ডস্থল ব্যাকুলিত; যিনি দন্তাঘাতে শত্রুর দেহ বিদারিত করিয়া তাহার দন্ত দ্বারা নিজ দেহে সিন্দূরের শোভা ধারণ করিয়াছেন; সেই পার্বতীপুত্র সিদ্ধিদাতা ও কামদাতা গণপতিকে বন্দনা করি।”
    গণেশের প্রণামমন্ত্রেও দেখা যায় –

    একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং।
    বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।। (গণেশপ্রণামঃ)

    অর্থাৎ, "যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।”
    গণেশের প্রার্থনা মন্ত্রটি ততোধিক সুলিখিত –

    দেবেন্দ্রমৌলিমন্দারমকরন্দকণারুণাঃ।
    বিঘ্নং হরন্তু হেরম্বচরণাম্বুজরেণবঃ।। (গণেশপ্রার্থনা)

    অর্থাৎ, "দেবরাজ ইন্দ্রের মস্তকে বিরাজিত মন্দারপুষ্পের পরাগসমূহের দ্বারা রক্তিম হেরম্বের পাদপদ্মের রেণুসমূহ আমার বিঘ্নহরণ করুক।” 

    গণেশের প্রথম দিকের মূর্তিগুলিতে দেখা যায়, গণেশ তাঁর ভগ্ন দাঁতটি স্বহস্তে ধরে আছেন। গণেশ লম্বোদর গুপ্তযুগ থেকেই। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ মতে, তাঁর উদরে সমগ্র জগৎসংসারের অবস্থান বলেই তিনি লম্বোদর।  গণেশের হস্তসংখ্যা ও অস্ত্র নিয়ে নানা মতদ্বৈধ দেখা যায়। সচরাচর গণেশের চতুর্ভূজ মূর্তি অধিক পূজিত হলেও স্থানবিশেষে দ্বিভূজ থেকে ষড়ভূজ গণেশও দেখা যায়। গণেশের হাতে সাধারণভাবে পাশ-অঙ্কুশ, বরাভয় ও মোদকই দেখা যায়। তবে বাঙালি বিশ্বাসে গণেশ বিষ্ণুর মতো শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী। এই প্রসঙ্গে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এ কথিত পার্বতীর কৃষ্ণরূপী পুত্রলাভের উপাখ্যানটি স্মর্তব্য। গণেশের বাহন মুষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর ধর্মের অবতার; মহাবল ও পূজাসিদ্ধির অনুকূল। অন্যমতে, সংস্কৃত মুষিক শব্দটি ‘মুশ’ ধাতু থেকে উৎপন্ন, যার অর্থ চুরি করা। মনে করা হয়, গণেশের পদতলে ইঁদুর, গণেশ কর্তৃক বিঘ্নবিজয়ের প্রতীকমাত্র। বৃহদ্ধর্ম পুরাণব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে পৃথিবী গণেশকে মুষিক বাহন দিয়েছিলেন।

     রূপভেদ

    নৃত্যরত বৌদ্ধগণেশ, পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মধ্য তিব্বতে অঙ্কিত

    ভারতে ও ভারতের বাইরে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও বিভিন্ন শাস্ত্রে গণেশের এই সাধারণ রূপের বহু রূপভেদও দৃষ্ট হয়। এই সকল রূপভেদের মূর্তি অনুসারে ধ্যান ও পূজাবিধি ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, গুপ্তযুগে প্রাপ্ত কয়েকটি গণেশমূর্তি অষ্টভূজ থেকে দশভূজ। আবার তন্ত্রগ্রন্থ তন্ত্রসার, কাশ্মীরে, নেপালে ও আফগানিস্তানে কোনও কোনও ক্ষেত্রে গণেশের বাহন সিংহ। এদিকে প্রসন্ন গণেশ সাধারণ রূপেই বিরাজমান। কিন্তু প্রাণতোষিনী তন্ত্র-এ উল্লিখিত চৌরগণেশ সাধনার ফল চুরি করেন। বিঘ্নগণেশ বিঘ্ন ঘটান। লক্ষ্মীগনেশ লক্ষ্মীকে আলিঙ্গন করে থাকেন।

    • মহাগণপতি – মহাগণপতি গণেশের একটি তান্ত্রিক রূপ। এঁর সঙ্গে শক্তি বিরাজমান এবং পরস্পর পরস্পরের উপস্থ স্পর্শ করে আছেন। এই মূর্তি শক্তিগণপতি বা বিরিগণপতির মতো আদিরসাশ্রিত।
    • হেরম্ব-গণপতি – হেরম্ব-গণপতি তন্ত্রসার-এ উল্লেখিত। তিনি পঞ্চানন। মধ্যের মাথাটি আকাশের দিকে ঊর্ধ্বমুখ। হাতে বর, অভয় , মোদক, নিজদন্ত, টাঙ্গি, মুণ্ডমালা, মুদগর, অঙ্কুশ ও ত্রিশূল। হেরম্ব শব্দের অর্থ দীন পালক। বাহন সিংহ। যদিও নেপালে হেরম্ব-গণপতির বাহন ইঁদুরই।
    • নৃত্যগণেশ – নৃত্যগণেশ আটহাতে নৃত্যরত। তাঁর হাতে অস্ত্র নেই। তিনি নাচের মুদ্রা দেখাচ্ছেন।
    • বিনায়ক গণেশ – বিনায়ক গণেশের উল্লেখ আছে অগ্নিপুরাণ গ্রন্থে। এই গণেশের পাঁচটি বিশিষ্ট রূপ – চিন্তামণি বিনায়ক, কপর্দী বিনায়ক, আশা বিনায়ক, গজবিনায়ক ও সিদ্ধিবিনায়ক। যদিও যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি অনুসারে বিনায়ক একজনই, এবং তিনি অম্বিকাপুত্র।
    • বৌদ্ধ গণেশ – বৌদ্ধ গণেশের উল্লেখ মেলে বৌদ্ধ সাধনমালা-তে। তিনি দ্বাদশভূজ। তাঁর একটি হাতে রক্তপূর্ণ কপাল, আরেক হাতে শুষ্ক মাংসপূর্ণ কপাল।
    কর্ণাটকে প্রাপ্ত দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীর উপবিষ্ট গণেশমূর্তি, হৈসল শাসনকালে নির্মিত

    খ্রিস্টপূর্ব প্রথম থেকে খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের মধ্যে মির্মিত শ্রীলঙ্কার মিহিনটালে প্রাপ্ত শিলাফলকে গুড়ি মারা গজমুণ্ড ও রদবিশিষ্ট মূর্তিটিকে গণেশের প্রাচীনতম শিল্পরূপ বলে মনে করা হয়। উত্তর প্রদেশের ফররুখবাদ জেলায় প্রাপ্ত আনুমানিক চতুর্থ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত দ্বিভূজ একটি গণেশ শিলামূর্তিতে দেখা যায় দেবতার বাম হস্তে মোদকভাণ্ড ও তিনি শুঁড় দিয়ে মোদক ভক্ষণ করছেন। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে নির্মিত মধ্যপ্রদেশের উদয়গিরি গুহাগাত্রে, ভূমারা ও উত্তরপ্রদেশের ভিতরগাঁও মন্দিরে প্রাপ্ত পোড়ামাটির ফলকে মোদকভক্ষণরত গণেশ মূর্তি দেখা যায়। এর মধ্যে উদয়গিরির মূর্তিটি উর্ধ্বলিঙ্গ বলে মনে করা হয়। এই মূর্তিগুলি তিনপ্রকার – উপবিষ্ট, নৃত্যরত ও দণ্ডায়মান। এর মধ্যে উপবিষ্ট মূর্তির সংখ্যাই সর্বাধিক। নৃত্যরত মূর্তিতে দেখা যায় গণেশ বাহনের উপর নাচছেন। এখানে তিনি গজমুণ্ড, ত্রিনয়ন, খর্বাকার, লম্বোদর, চতুর্ভূজ বা ষড়ভূজ বা অষ্টভূজ বা দশভূজ। দ্বিভূজ মূর্তি সংখ্যায় কম। বৌদ্ধ ও জৈনরাও গণেশের এই মূর্তি পূজা করতেন বলে জানা যায়।

    প্রথম দিকের গণেশ মূর্তিগুলি দ্বিভূজ ও উপবিষ্ট। হাতে কুঠার ও মোদক। দেবতা গজানন, একদন্ত ও লম্বোদর। কয়েকটি মূর্তিতে চতুর্ভূজ গণেশও দেখা যায়। বৃহৎসংহিতা গ্রন্থ অনুসারে, গণেশ দ্বিভূজ এবং এখানেও তাঁর হাতে মূলক। এই মূলক হাতির খাদ্য বলে উল্লিখিত হয়েছে। অমরকোষ গ্রন্থে গণেশ একদন্ত। অংশুমৎভেদাগম, কালিকাগমবিষ্ণুধর্মোত্তর প্রভৃতি গ্রন্থে গণেশ চতুর্ভূজ এবং তাঁর হাতে নিজ দন্ত, কপিত্থ মোদক, পাশ-অঙ্কুশ, নাগ, অক্ষসূত্র, পদ্ম ইত্যাদি দেখা যায়। এই সকল গ্রন্থের উত্তরকালের সংস্করণগুলিতে দেখা যায় গণেশের বাহন মুষিক ও স্ত্রী ভারতী (সরস্বতী), শ্রী (লক্ষ্মী), বিঘ্নেশ্বরী, বুদ্ধি ও কুবুদ্ধি। এছাড়াও এই গ্রন্থগুলিতে গণেশের অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্যও দৃষ্ট হয়। যেমন – তিনি ত্রিনয়ন, ব্যাঘ্রচর্মপরিহিত ও নাগযজ্ঞোপবীতধারী। তাঁর মূর্তি আভঙ্গ বা সমভঙ্গ।

    কর্ণাটকের মাইসোরের মিউজিয়ামে রক্ষিত ভাগবত পুথির অলংকরণে গণেশ

    বিগ্রহ রূপেও গণেশের নানা মূর্তি প্রচলিত ছিল। এই সব মূর্তি সবই গুপ্তোত্তর যুগে নির্মিত হয়নি। গুপ্তযুগের প্রথম দিকে মথুরাতে প্রাপ্ত বেলেমাটির গণপতি ও ভিতরগাঁও-এর ইষ্টকনির্মিত মন্দিরে প্রাপ্ত পোড়ামাটির গণপতির মূর্তিটি গণেশ মূর্তির বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যবহন করছে। উল্লেখ্য মথুরায় গণেশমূর্তিতে ইঁদুরের উপস্থিতি দেখা যায় না এবং ভিতরগাঁওতেও ঠিক দেবতার আকারে গণেশ চিত্রিত হননি, সেখানে তিনি উড্ডীয়মান। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ভূমারা শিবমন্দিরে প্রাপ্ত গণেশ মূর্তি গণেশ-বিবর্তনের শেষ নিদর্শন। প্রথম যুগের মূর্তিগুলি নগ্ন ও দণ্ডায়মান। এগুলিকে দেখে দেবতা বলে বোধ হয় না। এছাড়া গুপ্তযুগের প্রথম ভাগে ভিলসা উদয়গিরির চন্দ্রগুপ্ত গুহায় গণেশের যে উৎকীর্ণ চিত্রটি পাওয়া যায়, সেটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই মূর্তি অনুসারে গণেশ পর্যঙ্ক আসনে উপবিষ্ট, বাম হাতে তাঁর মোদকভাণ্ড ও ইঁদুর অনুপস্থিত। উপবিষ্ট গণেশ মূর্তি প্রথম ও শেষ গুপ্তযুগে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। আরেক ধরণের গণেশ মূর্তির সন্ধান মেলে ওড়িশায়। তিনি নৃত্যগণেশ, অষ্টভূজ, সামনের ডানহাত গজহস্ত, নৃত্যের আবর্ত দেহে সুস্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

    পরবর্তীকালে তান্ত্রিকতা ও শক্তিপূজার সঙ্গে গণেশ ধারণা বিশেষ ভাবে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন তান্ত্রিক গণেশ মূর্তিতে শক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেতে থাকে। যেমন – শক্তিগণেশ, লক্ষ্মীগণেশ (লক্ষ্মীগণেশের লক্ষ্মী ঐশ্বর্যের দেবী নন), উচ্ছিষ্টগণেশ ইত্যাদি। দাক্ষিণাত্যে উচ্ছিষ্টগণেশের কয়েকটি মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলি বামাচারে পূজিত। জব্বলপুরের কাছে গজমুণ্ডবিশিষ্ট একটি দেবীমূর্তিও পাওয়া গেছে। সম্ভবত ইনি তন্ত্রোল্লিখিত গণেশ-পত্নী গণেশানী।

     বহির্ভারতে গণেশ

    ভারতের বাইরেও বিভিন্ন দেশে গণেশের মূর্তি পাওয়া যায়। আনামে প্রাপ্ত মূর্তি দ্বিভূজ ও মোদকভক্ষণরত। হাতে মোদকভাণ্ড ছাড়াও কুঠার, অক্ষমালা, মূলদন্তক, অঙ্কুশ, পাশ, দণ্ড, শূল, সর্প, ধনু ও শরও দেখা যায়। জাভা দ্বীপের বাড়া নামক স্থানে আবিষ্কৃত খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে নির্মিত একটি মূর্তি নরকপালযুক্ত আসনে উপবিষ্ট ও মাথার জটায় নরকপালধারী। জাভাতে গণেশ চতুর্ভীজ। এই মূর্তিতে তন্ত্রের প্রভাব সুস্পষ্ট। ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলের অন্যত্রও গণেশের উপবিষ্ট মূর্তি পাওয়া গেছে। তবে খিচিঙে আবিষ্কৃত মূর্তিটি সবচেয়ে সুন্দর। মধ্যযুগের প্রথমদিকে নির্মিত এই মূর্তিটি চতুর্ভূজ, আভঙ্গ দেহ, কটাক্ষে চতুর ইশারা, নাগযজ্ঞোপবীতধারী, বাহন ইঁদুর। চারহাতের তিনটিতে অক্ষসূত্র, বিষাণ, মোদকভাণ্ড; চতুর্থ হাতটি অস্পষ্ট।

    Views: 1502 | Added by: rajendra | Tags: গণেশ, ganapati, siddhidata, ganesha | Rating: 0.0/0
    Total comments: 4
    0  
    1 শকুন্তলা-দেবী   (07-08-2011 8:36 PM) [Entry]
    ভাল লাগলো

    0  
    2 rajendra   (07-08-2011 9:43 PM) [Entry]
    biggrin biggrin biggrin biggrin

    0  
    3 Hinduism   (08-08-2011 2:10 PM) [Entry]
    ছোট্ট কথায় অসাধারণ। বিশাল পোষ্ট

    0  
    4 rajendra   (08-08-2011 7:03 PM) [Entry]
    সব আপনাদের আশীর্বাদ দাদা biggrin biggrin

    Only registered users can add comments.
    [ Registration | Login ]