দ্বারকা - সমুদ্রের নিচে শ্রীকৃষ্ণের লীলা স্থানের সন্ধান লাভ - 18 July 2011 - হিন্দু ধর্ম ব্লগ - A Total Knowledge Of Hinduism, সনাতন ধর্ম
Hinduism Site
Main » 2011»July»18 » দ্বারকা - সমুদ্রের নিচে শ্রীকৃষ্ণের লীলা স্থানের সন্ধান লাভ
Added by: rajendra
12:52 PM
দ্বারকা - সমুদ্রের নিচে শ্রীকৃষ্ণের লীলা স্থানের সন্ধান লাভ
দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা র রাজা ছিলেন। বর্তমান ভারতের গুজরাট প্রদেশে জামনগর জেলার গোমতি নদীর তীরে দ্বারকা নগরী অবস্তিত এবং এখানে প্রায় ৮০০ বছর আগে নির্মিত ৫৭ মিটার উঁচু কৃষ্ণ মন্দির আছে। এটাই সমস্থ সন্যাসীদের কাছে দ্বারকা বলে স্বীকৃত ( আর্য ও আর্য ১৯৯৪)। অন্যদিকে মহাভারতে বলা হয়েছে যে শ্রীকৃষ্ণ কতৃক প্রতিষ্টিত দ্বারকা সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিল। এই মহাকাব্যের পরিশিষ্ট অংশ হরিবংশে বলা হয়েছে -এই সমৃদ্ধ নগরী ভারতের পশ্চিম উপকুলে যেখানে গোমতী এসে সাগরে মিলেছে সেখানে অবস্থিত। ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভারত বিচিত্রার পঞ্চদশ বর্ষ মার্চ ১৯৯৮ ফাল্গুন চৈত্র ১৩৯৪, পৃষ্টা ২৪-২৮ এ গোয়াস্থ ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট অব অসেনোগ্রাফি এর মেরিন আরকিওলজি সেন্টারের প্রজেক্ট ডাইরেক্ট্রর ডঃ এস আর রাও বলেছেন- জলনিমগ্ন সবারকা নগরী খুঁজে পাওয়া গেছে। এই প্রবন্ধে তিনি সুমুদ্রে ডুবে যাওয়া জাহাজ আবিষ্কারের সময় খুঁজে পাওয়া পানির নিচে অবস্থিত হিন্দু মন্দির সহ একটা নগরী আবিষ্কারের এক অত্যাশ্চর্য বর্ণনা দেন। রুপকথার গল্প থেকে তিনি তুলে আনেন দ্বারকা কে মানুষের চোখের সামনে। এই স্থানেই পাওয়া গেছে ২১০ টি জাহাজের ভগ্নাবশেষ যা প্রমান করে এখানে এক সময় অবস্থিত ছিল এক বিশাল সমুদ্র বন্দর যা আবার মানুষের চোখের সামনে ঊঠে আসছে। ভারতীয় সমুদ্র উপকুলে অনেক প্রাচীন বন্দর ডুবে গেছে তার মাঝে দ্বারকা অন্যতম ।
Dwarka
মানচিত্রে দ্বারকা যদিও পুরানো দ্বারকা র উপর ই নতুন দ্বারকা অবস্থিত তবুও এর প্রকৃত পরিচয় ১৯৭৯-৮০ সালের আগে পাওয়া যায়নি।এ সময় দ্বারকাধীষ মন্দিরের সমানের মাটি খুড়ে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকের তিনটি মন্দিরের ধবংসাবশেষ পাওয়া যায়-এবং ডুবন্ত নগরী টির বাস্তু ধবংস আবিষ্কার করা হয়। এর মাঝে খ্রীষ্ট পূর্ব নবম শতকে নির্মিত বিষ্ণু মন্দির সব চেয়ে পুরোনো। এখানে বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও দেবাদিদেবের মূর্তি আছে। প্রথমদিকে মাটির স্থরে একটা লাল মাটির বস্তু পাওয়া গেছে। এটি প্রভাসক্ষেত্রের এবং বয়স ১৫শ খ্রিষ্টপূর্বের ( কার্বন ১৪ প্রণালী তে বয়স পাওয়া গেছে)। প্রভাস হচ্ছে আরেকটি মহাভারতীয় তীর্থ যেটি সৌরাষ্ট্রের দক্ষিনে অবস্থিত। আরকিওলজিষ্ট হিসে বোরালা বলেছেন মহাভারতের যুদ্ধ খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ শতকে হবার প্রমান ও পাওয়া গেছে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে সমুদ্রের তীরে বসতি ছিল বলে প্রমান পাওয়ার পর ডুবন্ত দ্বারকার খোজার সম্ভাবনা অনেক খানি বেড়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা কচ্ছ উপকুলে মাটি পরীক্ষা করে জানিয়েছেন ১০০০০ বছর আগে এই কচ্ছ উপসাগরীয় অঞ্চল ৬০ মিটার নিচু ছিল। হরি বংশে (বিষ্ণু পর্ব- ৫৭-১০৩) একে সমুদ্রের ভেতরে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান বেট দ্বারকার ৩২ কিমি দুরে খুঁজতে শুরু করেন।
এই বেট দ্বারকাতে ই পাওয়া গেছে হরপ্পা যুগের পুতির মালা, হাড়ি পাতিল এবং পলা আকৃতির বিরাট দালানের খন্ডাংশ। এগুলো অনেক প্রাচীন বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। এছাড়া শামুক ঝিনুক এর তৈরি দেয়াল, সিন্ধু সভ্যতার শঙ্খের সিল মোহর সহ আরো অনেক আরটিফেক্ট এ ভর্তি এই স্থান। পানির ৬.৪১ মিটার নিচে একটি দুর্গ পাওয়া গেছে,যেটা চুনাপাথরের অর্ধ বৃত্তাকার ব্লক দিয়ে তৈরী। এটি সমুদ্র নারায়ন মন্দির থেকে ৬০০ মিটার সমুদ্র গভীরে অবস্থিত। এখানে তিন ছিদ্র বিশিষ্ট ত্রিফলা নোঙর উদ্ধার করা হয়েছে- যা ক্ষয় রোধক দেয়াল হিসেবে ব্যাবহৃত হত সাথে সাথে শত্রুর আক্রমন থেকে ও বাচাত । ডুবে যাওয়ার কারনঃ বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষরীক্ষানিরীক্ষার পর এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে- ১০০০০ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ট বর্তমান থেকে ৬০ মিতার নিচু ছিল।অতএব ৩৫০০ বছর আগে সমুদ্র ৯ মিটার নিচু ছিল। দ্বারকা ডুবে যাওয়ার কারন সমুদ্র পৃষ্টের ঊচ্চতা বৃদ্ধি। এভাবে সমুদ্র উপকুল ধবংস হতে খুব একটা দেখা যায়না- শুধু মাত্র কার এস সিটি বাহরাইনের এক বন্দর এই সময় এই ডুবে যায়। দুই স্থানের বয়সকাল প্রায় একই বলে নিরধারন করেছেন বিজ্ঞানী রা।
বেট দ্বারকায় যে তৈজসপত্র পাওয়া গেছে তা থেকে বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন যে এ স্থানে অনেক পুরোনো এক সভ্যতা ছিল যা মহাভারতে বর্ণীত শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর সাথে মিলে যায়। মহাভারতে আছে- শ্রীকৃষ্ণের বয়স যখন ১২৫ তখন যদু বংশ ধবংস হয় সামান্য এক কারনে। এটা দেখে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম বনবাসী হবার সংকল্প করেন এবং অর্জুন কে সংবাদ পাঠান। বনে শ্রীকৃষ্ণ বসে থাকা অবস্থায় জরা নামে এক ব্যাধ হরিন মনে করে কৃষ্ণ কে বান মারেন। শ্রীকৃষ্ণ সেখানেই দেহ ত্যাগ করেন। অর্জুন এই সংবাদ পেয়ে দ্বারকায় এসে শ্রীকৃষ্ণের দেহ সৎকার করেন। এর পর পরই দ্বারকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়। যে নগরী শ্রীকৃষ্ণ নিজের হাতে শাসন করেছিলেন সে নগরী শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর পরই সমুদ্রের মাঝে বিলীন হয়।
অনেক সুন্দর একটা পোষ্ট দিয়েছেন দাদা। অনেক ভালো লাগলো, এটা উইকিতে পড়েছিলাম , কিন্তু আপনি আর ও তথ্যসমৃদ্ধ করে গুছিয়ে লিখেছেন। অনেক ভালো হয়েছে। ফেবুতে শেয়ার দিচ্ছি।
১০০০০ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ট বর্তমান থেকে ৬০ মিতার নিচু ছিল।অতএব ৩৫০০ বছর আগে সমুদ্র ৯ মিটার নিচু ছিল। দ্বারকা ডুবে যাওয়ার কারন সমুদ্র পৃষ্টের ঊচ্চতা বৃদ্ধি। এভাবে যুক্তি সঙ্গত। দ্বারকা সহ অনেক প্রাচীন সভ্যতাই হয়তো এভাবে বিলিন হয়ে গেছে। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছিলো। "অর্জুন এই সংবাদ পেয়ে দ্বারকায় এসে শ্রীকৃষ্ণের দেহ সৎকার করেন। এর পর পরই দ্বারকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়।" বক্তব্য টাতে মনে হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যর পর পরই দ্বারকা সমুদ্র গর্ভে চলে যায়! তাছাড়া দেখা যাচ্ছে তাঁর জীবীত অবস্থাতেই যদু বংশ ধবংস হলো। তিনি ত ধর্ম সংস্থাপন করতে এসেছিলেন অথচ নিজের বংশটাই টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। তাহলে কি তাঁর উদ্দেশ্য সফল হলো?
তিনি কিভাবে নিজের বংশ টিকিয়ে রাখবেন? অভিশাপ এর ব্যাপারে উনি সব জানতেন- এ ও জানতেন যে কে অভিশাপ দিয়ে তাঁর বংশ ধবংস করে দেবেন। এটা ছিল ধ্রুব সত্য। উনি কোন ভাবেই প্রাকৃতিক ধ্রুব সত্যের প্রতি হাত দেননি। তিনি চাইলেই বেঁচে থাকতে পারতেন চিরকাল। কিন্তু সৃষ্টির নিয়ম নিজে ই তৈরি করেছেন বলে তা তিনি ভংগ করেন নি।