Main » 2011»July»12 » জগতে আমরা কোথায় থেকে পাঠ ।। পরমাণু ও কাল ।।
Added by: Ratan
9:37 PM
জগতে আমরা কোথায় থেকে পাঠ ।। পরমাণু ও কাল ।।
সৃস্টিতে যে ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য অংশ এবং দেহরূপে যার কোন গঠন হয় না তাকে বলা হয়। পরমাণু। পরমাণু সর্বদা অদৃশ্য অস্তিত্ত্ব নিয়েও বিদ্যমান থাকে, এমনকি প্রলয়ের পরেও। পরমাণু হচ্ছে শাশ্বত কালের অতি ক্ষুদ্র সুক্ষ্ম রূপ। পরমাণু সমন্বিত শরীরের গতিবিধির মাপ অনুসারে কালের গণনা করা হয়। কাল হচ্ছে সর্বশক্তি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরির শক্তি, যিনয জড়জগতের অগোচর হলেও সমস্ত পদার্থের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রামাণিক কাল মাপা হয় সূর্যের গতি অনুসারে। একটি পরমাণুকে অতিক্রম করতে সূর্যের যেটুকু সময় লাগে তা হচ্ছে পারমাণবিক কাল। সমগ্র অস্তিত্বের প্রকাশকে আবৃত করে যে কাল তাকে বলা হয় পরম মহৎ কাল। স্থূল কালের গণনা এভাবে করা হয়-ৱ, যথা-দুইটি পরমাণুতে এক অণু, তিন অণুতে এক ত্রসরেণু, ৩ ত্রসরেণুতে ১ ত্রুটি, ১০০ ত্রুটিতে ১ বেধ, ৩ বেধে ১ লব, ৩ লবে ১ নিমেষ, ৩ নিমেষে ১ ক্ষণ, ৫ ক্ষণে ১ কাষ্ঠা (৮ সেকেণ্ড), ১৫ কাষ্ঠায় ১ লঘু (২ মিনিট), ১৫ লঘুতে ১ দণ্ড, ২ দণ্ডে ১ মুহূর্ত, ৬ দণ্ডে ১ প্রহর (৩ ঘন্টা), ৪ প্রহরে ১ দিন বা ১ রাত্রি, ১৫ দিবারাতে ১ পক্ষ, ২ পক্ষে ১ মাস, ২ মাসে ১ ঋতু, ৬ মাসে ১ অয়ন, ২ অয়নে ১ বছর। পৃথিবীতে ১ মাস হলে পিতৃলোকে ১ দিন বা ১২ ঘন্টা হয়। মর্ত্যলোকে ১ বছর হলে দেবলোকে ২৪ ঘন্টা হয়। মর্ত্যলোকে ৩৬০ বছর হলে স্বর্গের ১ বছর হয়। পৃথিবীর হিসাবে ৪,৩২,০০০ বছর কলিযুগের স্থিতিকাল। ৮,৬৪,০০০ বছর দ্বাপরযুগের স্থিতিকাল। ১২,৯৬,০০০ বছর ত্রেতাযুগের স্থিতিকাল। ১৭,২৮,০০০ বছর সত্যযুগের স্থিতিকাল। এভাবে এক চতুর্যুগের স্থিতিকাল হল ৪৩,২০,০০০ বছর। ৭১ চতুর্যুগে অর্থ্যাৎ ৩০,৬৭,২০,০০০ বছর হল এক মন্বন্তর বা একজন মনুর রাজত্বকাল। ১৪ মন্বন্তরে অর্থ্যাৎ ৪২৯,৪০,৮০,০০০ বছরে ব্রহ্মার ১২ ঘন্টা হয়। ব্রহ্মার দিবাভাগ অবসান হলে রাত্রি আসে, তা প্রলয় কাল। তখন ভূর্লোক, ভুবর্লোক এবং স্বর্গলোক প্রলয় হয়ে যায়। ব্রহ্মার রাত্রির অন্ধকারে লীন হয়ে যায়। শাশ্বত কালের প্রভাবে অসংখ্য জীব তখন প্রলয়ে বিলীন হয়ে যায়, সবকিছু নীরব হয়ে যায়। সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন জলমগ্ন হয়ে থাকে এবং অবিশ্রান্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। সংকর্ষণের মুখনিঃসৃত অগ্নির ফলে এই প্রলয় হয়। তখন ঊর্দ্ধে মহর্লোকের অধিবাসী ভৃগু আদি ঋষিগণ অগ্নির তাপে পীড়িত হয়ে জনলোকে গমন করেন। প্রত্যেক মনুর জীবনের অন্তেও খণ্ড প্রলয় হয়। তারপর পরবর্তী মনুর আবির্ভাব হয়। তাদের বংশধরগণ সহ। ব্রহ্মার দিবাভাগের অন্তকালে ভগবান নারায়ণ এই বিশ্বকে নিজের মধ্যে সংহারপূর্বক অনন্ত শয্যায় শয়ন করেন। তখন ব্রহ্মাও তার মধ্যে প্রবেশপূর্বক নিদ্রিত হয়ে থাকেন। এটি নিত্যনৈমিত্তিক প্রলয়রূপে কথিত। ব্রহ্মার আয়ুস্কাল শেষ হলে মহত্তত্ত্ব, অহংকার এবং পঞ্চতন্মাত্র প্রলয় হয়ে যায়। এই কাল প্রাকৃতিক প্রলয় নামে অভিহিত। তখন সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড লয় প্রাপ্ত হতে থাকে। মহাবিষ্ণুর শরীরের লোমকূপ থেকে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড বীজ প্রকাশিত হয়। সেই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডরাশি ক্রমশ বৃহৎ আকার ধারণ করে। সমগ্র সৃষ্টির বিস্তার হয়। সমগ্র সৃষ্টির স্থিতিকাল মহাবিষ্ণুর একটি শ্বাসমাত্র। একটি শ্বাসত্যাগের সময় থেকে শ্বাসগ্রহণ পর্যন্ত সৃষ্টির অনন্ত মহাবিশ্ব প্রকাশিত থাকে। তার পর শ্বাস গহণ করার ফলে সমস্ত সৃষ্টি মহাবিষ্ণুর শরীরে প্রবিষ্ট হয়। সেই পরিমিত সময়টুকু হচ্ছে ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল। তাকে বলে মহাপ্রলয়। ব্রহ্মার প্রতি দিনান্তে যে প্রলয় হয় তা ব্রহ্মাণ্ডের আংশিক প্রলয়। আবার দিনের মধ্যে কোন কোন মন্বন্তরে ব্রহ্মাণ্ডে কোন কোন গ্রহলোকের প্রলয় হয়ে থাকে। সমগ্র বিশ্ব পরমাণু থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল ব্রহ্মাণ্ড পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার সত্তার অভিব্যক্তি। শাশ্বত কাল রূপে সমস্ত কিছুই পরমেশ্বর ভগবানের নিয়ন্ত্রণাধীন । শাশ্বত কাল হচ্ছে জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুণের পারস্পরিক ক্রিয়ার আদি উৎস। কাল আমাদের ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপের সাধারণ মাপকাঠি। যার মাধ্যমে আমরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে মাপি। প্রকৃত বিচারে কালের আদি নেই বা অন্ত নেই। জড় জগৎ সৃষ্টি হয়েছে, ধ্বংস হবে। পূর্বে অস্তিত্ব ছিল এবং ভবিষ্যতে যথাসময়ে সৃষ্টি পালন ও ধ্বংস হবে। কালের এই সুসংবদ্ধ কার্যকলাপ নিত্য। জড়জগতের প্রকাশ ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু তা মিথ্যা নয়।
অনেক সুন্দর লাগলো। খুব সাবলীল ভাষায় লিখেছেন আসলে এই সব সংখ্যা মাথায় রাখা খুব কষ্টের লাগে। তবে একটা জিনিস ভেবে ভালো লাগে যে, একমাত্র সনাতন ধর্মের সৃষ্টির সময়কালের সাথে বিজ্ঞানীদের পৃথিবী সৃষ্টির সময়কালের সাথে অনেক মিলা আছে। পাশাপাশি মহাকাশে যে সময়ের হিসাব তা ও অনেক মিল । ধন্যবাদ আপনাকে।