ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার দেড়’শ বছরের পুরাতন গোরক্ষনাথ মন্দির জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এখনও আকর্ষনীয়। মন্দির এলাকায় অবস্থিত বৈচিত্রময় প্রস্তর নির্মিত আশ্চর্য কূপ ও তার পানি মহা পবিত্র জিনিস হিসাবে তাদের কাছে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর এ পবিত্র কূপের পানিতে স্নান করে নিজেরা পুত-পবিত্র হওয়ার জন্য হাজার হাজার নরনারীর আগমন ঘটে। রানীশংকৈল উপজেলার ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান নেকমরদ হতে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ‘গোরকই’ নামক স্থানে গোরক্ষনাথ মন্দির । এখানে গোরক্ষনাথ মন্দির ছাড়াও আছে নাথ আশ্রম। গোরক্ষনাথ মন্দির স্থানীয়ভাবে গোরকই মন্দির নামেও পরিচিত। উক্ত আশ্রম ও মন্দির রানীশংকৈল উপজেলার গোরকই নামক স্থানে একটি মৃত নদীর তীরে অবস্থিত । এর চত্বরে আছে ৫টি মন্দির রয়েছে। এ ছাড়াও আছে ৩টি শিবমন্দির ও ১টি কালি মন্দির। নাথ মন্দিরটি চত্বরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। মন্দিরের পিছনে একটি বৈচিত্রময় কূপ রয়েছে। পাথর দিয়ে তৈরী একটি ছোট চৌবাচ্চার মাঝে নীচু স্থানে ঐ কূপটি অবস্থিত। কূপটি বড় বড় কালো পাথরের খন্ড দ্বারা নির্মিত। এ কূপের একেবারে নীচু অংশটুকু পর্যন্ত পাথর দিয়ে বাঁধানো । এই কুপের মাঝখানে আছে একটি ছিদ্র। প্রতি বছরের ১৮ ফাল্গুন এ কূপের পানিতে স্নান উপলক্ষ্যে শীবযাত্রী মেলা বসে। উত্তারাঞ্চলের হাজার হাজার হিন্দু নরনারী শাপ-মোচনের জন্য এই কূপের পানি দিয়ে স্নানের উদ্দেশ্যে এখানে আসে। কূপের পূর্ব দিকে একটি দরজা ও পশ্চিম দিকে অপর একটি দরজা রয়ছে। ওই দরজা দিয়ে আগতরা কুপের পানি নিয়ে স্নান করে থাকে। পুরষদের পাশাপাশি মহিলারাও শাপ-মোচনের জন্য এ কূপের পানিতে স্নান করে থাকে। হাজার নরনারী স্নানের পরও এ কূপের পানি এক ইঞ্চিও না কমাটাই কূপের বৈশিষ্ট্য । মন্দিরের উত্তরে আছে একটি পান্থশালা। পান্থশালার দরজায় একটি ফলক বা শিলালিপি ছিল। এছাড়াও এ মন্দিরে গ্রানাইট পাথর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। এই ফলকটি বর্তমানে দিনাজপুর যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। কথিত আছে, গোরক্ষনাথ ছিলেন নাথ পন্থীদের ধর্মীয় নেতা খীননাথের শিষ্য। নবম-দশম শতাব্দির মধ্যে ভাগে গোরক্ষনাথের আভির্ভাব ঘটে। তিনি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে মন্দির স্থাপন করেন। অলৌকিক ওই কূপটি সেই সময়ে নির্মিত বলে প্রবীনদের ধারনা। আবার অনেকের মতে, গোরক্ষনাথ কোন ব্যক্তির নাম নয়, এটি একটি উপাধি মাত্র। গোরক্ষনাথ অথবা উপাধি চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এই মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ গোরকই মন্দির অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে মন্দিরের কূপে স্নানের উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। সরকারি ভাবে প্রদত্ত অর্থে মন্দির ও পান্থশালায় চুনকাম করা হয়। ওই মন্দিরের সভাপতি পশিন চন্দ্র ও সাধারন সম্পাদক রবিন চন্দ্র জানান, গোরকই মন্দিরে প্রতিবছর শিবপূজা ও দূর্গা পূজা হয়। কিন্তু সরকারি ভাবে উলে¬খ্যযোগ্য পরিমান অনুদান না পাওয়ায় এ মন্দিরটি সংস্কার করা যাচ্ছে না। প্রতিবছর স্থানীয়দের চাঁদায় মন্দিরে চুনকাম করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, ইতিহাস প্রসিদ্ধ গোরকই মন্দির সংস্কারে সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।