n কীর্তন করা ও কৃষ্ণকে জানার পদ্ধতি - 14 August 2011 - হিন্দু ধর্ম ব্লগ - A Total Knowledge Of Hinduism, সনাতন ধর্ম Hinduism Site
Tuesday
24-12-2024
6:40 AM
Login form
Search
Calendar
Entries archive
Tag Board
300
Site friends
  • Create a free website
  • Online Desktop
  • Free Online Games
  • Video Tutorials
  • All HTML Tags
  • Browser Kits
  • Statistics

    Total online: 19
    Guests: 19
    Users: 0

    Hinduism Site

    হিন্দু ধর্ম ব্লগ

    Main » 2011 » August » 14 » কীর্তন করা ও কৃষ্ণকে জানার পদ্ধতি Added by: শকুন্তলা-দেবী
    2:20 PM
    কীর্তন করা ও কৃষ্ণকে জানার পদ্ধতি
    কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
    আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য

    হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
    হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে \

    এটি অপ্রাকৃত শব্দ-তরঙ্গ। এই শব্দ-তরঙ্গ আমাদের চিত্ত-দর্পণকে ধুলোমুক্ত করতে সাহায্য করে। বর্তমান মুহূর্তে আমরা

    চিত্তদর্পণে এতই ভৌতিক আবর্জনা পুঞ্জীভূত করেছি, যেমন (নিউইয়র্ক শহরে) অত্যন্ত যানবাহন যাতায়াতের জন্য সেকেণ্ড এভিনিউতে সব কিছুরই ওপর ধুলো ও ধোঁয়ার ঝুল। ভৌতিক কাজসমুহ নিপুণভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের নির্মল চিত্তদর্পনে প্রচুর ধুলো পুঞ্জীভূত হয়েছে। আর তার ফলে সব জিনিষই আমরা উপযুক্ত পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে অক্ষম। এই অপ্রাকৃত শব্দ-তরঙ্গ (হরেকৃষ্ণ মন্ত্র) এই ধুলো মুক্ত করে আমাদের যথার্থ স্বরূপ স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম করে। যেই আমরা উপলব্ধি করব ‘‘আমি দেহ নই; আমি চেতন আত্মা ও আমার লক্ষণ হচ্ছে চেতনা, ’’ তখন আমাদিগকে যথার্থ সুখ লাভে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সমর্থ হব। এই হরেকৃষ্ণ কীর্তনের দ্বারা আমাদের চেতনা শুদ্ধিও সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সকল পার্থিব দুঃখ অন্তর্হিত হবে। ভৌতিক জগতে সব সময় এক দাবানল জ্বলছে, আর প্রত্যেকেই তা নিভানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পারমার্থিক জীবনের শুদ্ধ চেতনায় আমরা অধিষ্ঠিত না হচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত জড়া-প্রকৃতির দুঃখ-কষ্টরূপ এই আগুন নির্বাপণের কোন সম্ভাবনাই নেই।

    এই মর্ত্যজগতে ভগবান কৃষ্ণের অবতরণ বা আবির্ভাবের একটা উদ্দেশ্য হল ধর্ম সংস্থাপন দ্বারা সকল জীবের ভৌতিক দুঃখ জ্বালা নির্বাপিত করা।

    যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
    অভ্যুত্থানধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ \
    পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম্ ।
    ধর্ম্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে\

    ‘‘হে ভারত সন্তান। যখন ও যেখানে ধর্মের পতন এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজে অবতরণ করি। সাধুদের পরিত্রাণ ও দু®কৃতি পরায়ণদের বিনাশের জন্য ও পুনরায় ধর্মসংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে আমি আবির্ভূত হই।’’ (গীতা ৪/৭-৮)

    এই শ্লোকে ‘ধর্ম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এই শব্দ ইংরেজিতে বিভিন্নভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। কখনো কখনো এই শব্দকে ‘বিশ্বাস’-রূপে অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু বৈদিক সাহিত্য অনুসারে ধর্ম কোন এক বিশ্বাস নয়। বিশ্বাস পরিবর্তিত হয়, কিন্তু ধর্ম পরিবর্তিত হয় না। জলের তরলতা পরিবর্তন করা যায় না। যদি তা পরিবর্তিত হয়Ñ যেমন, যদি তরল জল কঠিন পদার্থে পরিণত হয়Ñ তা প্রকৃতপক্ষে আর তার স্বরূপ নয়। তা নির্দিষ্ট কোন গুণগত শর্তে অবস্থান করছে। আমাদের ‘ধর্ম’ বা স্বরূপ এই যে আমরা পরমেশ্বরের অংশ, এবং এটি হচ্ছে আমাদের অবস্থা, আর এইজন্য আমাদের চেতনা বা ভাবনাকে পরমেশ্বরের সাথে সংযুক্ত করতে বা তাঁর অধীনে আনতে হবে।

    ভৌতিক সংস্পর্শের জন্য পরম পূর্ণের (পরমেশ্বরের) অপ্রাকৃত সেবার প্রতি অপব্যবহার করা হচ্ছে। সেবা আমাদের স্বরূপের সাথে জড়িত। প্রত্যেকেই এক-একজন ভৃত্য, এবং কেউই প্রভু নয়। প্রত্যেকেই একে অন্যের সেবা করছে। রাষ্ট্রপতি হয়ত রাষ্ট্রের মুখ্য অধিকর্তা, তিনি রাষ্ট্রের সেবা করে চলেছেন, আর যখন তাঁকে কাজের দরকার নেই, রাষ্ট্র তখন তাঁকে পদ থেকে অপসারিত করেন। যখন কেউ মনে মনে নিজে ভাবে, ‘‘সকল দৃশ্য বস্তু ও আমিই একমাত্র প্রভু,’’ তখন তাকে বলা হয় মায়া। এইভাবে জড় চেতনায় বিভিন্ন উপাধির প্রভাবে আমাদের কাজের অপব্যবহার হচ্ছে। যখন আমরা এই সব উপাধি থেকে মুক্ত অর্থাৎ আমাদের চিত্তদর্পণ ধুলো মুক্ত হবে, তখন কৃষ্ণের নিত্যদাস-রূপে আমাদের যথার্থ স্বরূপকে আমরা দেখতে পারব।

    একজনের ভাবা উচিত নয় যে, ভৌতিক জগতে তার কাজ আর আধ্যাত্মিক পরিবেশে তার কাজ একই রকমের। আমরা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভাবতে পারি, ‘‘ও, মু্িক্তর পরও আমি একজন দাস হয়ে থাকব?’’ কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা আছে যে ভৌতিক জগতে দাস হওয়া খুব সুখের নয়, কিন্তু অপ্রাকৃত সেবা এর মতো নয়। আধ্যাত্মিক জগতে দাস আর প্রভুতে কোন পার্থক্য নেই। এখানে অবশ্য পার্থক্য আছে, কিন্তু পরম ধামে সব কিছুই এক। যেমন ভগবদ্গীতায় আমরা দেখতে পাই যে কৃষ্ণ রথের সারথিরূপে অর্জুনের দাসের পদ গ্রহণ করেছেন। স্বরূপতঃ অর্জুন হচ্ছে কৃষ্ণের দাস, কিন্তু ব্যবহার অনুযায়ী আমরা কখন ভগবানকে দাসেরও দাস হতে দেখি। তাই পারমার্থিক জগতে ভৌতিক মনোভাব পোষণে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। আমাদের যা কিছু ভৌতিক অভিজ্ঞতা আছে তা সবই পারমার্থিক জীবনের বিকৃত প্রতিফলন।

    জড় কলুষতার দরুন যখন আমাদের স্বরূপ বা ধর্মের অধঃপতন হয়, ভগবান স্বয়ং অবতাররূপে আসেন বা নিজের কোন বিশ্বস্ত দাসকে প্রেরণ করেন। প্রভু যিশুখ্রিষ্ট নিজেকে ‘‘ঈশ্বরের সন্তান’’ বলতেন, এবং তাই তিনি হচ্ছেন ভগবানের একজন প্রতিনিধি। সেরকম, মহম্মদও নিজেকে পরমেশ্বরের একজন দাস বলে পরিচয় দেন। এইভাবে যখন আমাদের ধর্মে কোন বিরোধের সৃষ্টি হয়, তখন পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং আসেন অথবা আমাদিগকে জীবের যথার্থ স্বরূপ সম্বন্ধে জানাতে তিনি তাঁর প্রতিনিধিকে প্রেরণ করেন।

    তাই ভুল করে ভাবা উচিত নয় যে ধর্ম হল এক তৈরি করা বিশ্বাস। এর প্রকৃত অর্থে ধর্মকে জীবাত্মা থেকে আদৌ বিচ্ছিন্ন করা যায় না। তাই যা চিনির মিষ্টতা, লবনের লবনাক্ততা বা পাথরের কঠিনতার মত এও জীবাত্মার নিত্য ধর্ম। কোন ক্ষেত্রেই একে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। জীবাত্মার ধর্ম হল সেবা করা এবং আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে প্রত্যেক জীবাত্মারই নিজেকে বা অন্যের সেবা করার প্রবণতা আছে। কিভাবে কৃষ্ণসেবা করা যায়, কিভাবে জড় কর্ম থেকে বিমুক্ত হওয়া যায়, কিভাবে কৃষ্ণভাবনায় অধিষ্ঠিত হওয়া যায় ও জড় উপাধি মুক্ত হওয়া যায়Ñ সবই বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃষ্ণ দ্বারা ভগবদ্গীতার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

    ‘পরিত্রাণায় সাধুণাম্’ দিয়ে আরম্ভ করা উল্লিখিত শ্লোকে ‘সাধু’ শব্দে একজন সৎ ব্যক্তি সাধক বা ধার্মিক ব্যক্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে। একজন ধার্মিক ব্যক্তি অতিশয় সহিষ্ণু, প্রত্যেকের প্রতি অতিশয় দয়ালু, সকল জীবের বন্ধু, কারোর প্রতি শত্র“ভাবাপন্ন নয়, আর সে সব সময় শান্ত। একজন সাধু ব্যক্তির ছাব্বিশটি মৌলিক গুণাবলী আছে, আর ভগবদ্গীতায় আমরা দেখতে পাই যে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নিæলিখিত বাণী দিয়েছেনÑ

    অপি চেৎসুদুরাচারো ভজতে মামনন্যভাক্ ।
    সাধুরেব স মন্তব্যঃ সম্যগ্ ব্যবসিতো হি সঃ \

    ‘‘এমন কি কেউ যদি জঘন্যতম পাপ কর্ম করে থাকে, কিন্তু সে যদি ভগবৎ সেবায় নিযুক্ত হয়, তাহলে সেও সাধু বলে বিবেচিত হবে, কারণ সে উপযুক্ত অবস্থায় অধিষ্ঠিত।’’ (গীতা ৯/৩০)

    জাগতিক স্তরে যা একজনের কাছে সদাচার অন্যের কাছে তাই অসদাচার, আর একজনের কাছে যা অসদাচার, অন্যের কাছে তাই সদাচার। হিন্দুদের ধারণা অনুসারে মদ্যপান অসদাচার অথচ পাশ্চাত্য দেশে মদ্যপান অসদাচার বলে বিবেচিত হয় না, বরং তা সাধারণ ব্যাপার। তাই সদাচার সময়, স্থান, পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল। যাই হোক সদাচার ও অসদাচার সকল সমাজেই আছে। এই শ্লোকে কৃষ্ণ দেখাচ্ছেন যে এমন কি কেউ যদি অসদাচারে নিযুক্ত থাকে, কিন্তু সেই সঙ্গে কৃষ্ণভাবনায় নিয়োজিত হয়, সে একজন সাধু বা ধার্মিক ব্যক্তি বলে বিবেচিত হবে। অন্যভাবে বলা যায়, বিগত সঙ্গের প্রভাবে একজনের অসৎ অভ্যাস থাকলেও সে যদি পূর্ণভাবে কৃষ্ণভাবনায় নিয়োজিত হয়, তবে এই অভ্যাসগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে না। যে ক্ষেত্রেই হোক, কেউ যদি কৃষ্ণভাবনাময় হয়, সে ধীরে ধীরে শুদ্ধ হয়ে একজন সাধু হবে। কৃষ্ণভক্তির সাধনায় যতই একজন উন্নতি করবে, তার অসৎ অভ্যাসগুলি হ্রাস প্রাপ্ত হবে, এবং সে সাধক জীবনের সাফল্য লাভ করবে।

    এই সম্বন্ধে একটি চোরের কাহিনী আছে, সে তীর্থ করতে এক পবিত্র নগরে যায়, এবং পথে সে ও অন্যান্য তীর্থযাত্রীরা রাত্রি যাপনের জন্য এক পান্থনিবাসে অপেক্ষা করে। চুরির কাজে অভ্যস্ত হওয়ায় চোরটি অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের মালপত্তর চুরির জন্য মতলব করতে শুরু করল, কিন্তু সে ভাবল, ‘‘আমি তীর্থ করতে বেরিয়েছি, তাই এই সব মালপত্তর চুরি করা আমার শোভা পায় না। না, আমি চুরি করব না।’’ তথাপি অভ্যাসবশতঃ মালপত্তরে হাত না দিয়ে সে পারল না। তাই সে একজনের ব্যাগ তুলে নিয়ে অন্য একজনের জায়গায় রাখল, এবং তারপর আর একজনের ব্যাগ তুলে নিয়ে অন্য এক জায়গায় রাখল। বিভিন্ন ব্যাগ বিভিন্ন জায়গায় রেখে সে সারা রাত কাটাল, কিন্তু তার বিবেকে এতই বাধল যে সে তাদের থেকে কিছুই চুরি করল না। ভোরবেলায় অন্যান্য তীর্থযাত্রীরা জেগে উঠে চারি দিকে তাদের ব্যাগ খুঁজে পেল না। মহা সোরগোল শুরু হল এবং অবশেষে তারা একের পর এক বিভিন্ন স্থানে ব্যাগগুলো খুঁজতে শুরু করল। যখন তারা সবগুলো ব্যাগ পেয়ে গেল, চোর ব্যাখ্যা করে বলল, ‘‘ভদ্র মহোদয়গণ, পেশায় আমি একজন চোর। চোর হওয়ায় রাত্রে চুরি করতে আমি অভ্যস্ত, আপনাদের ব্যাগ থেকে কিছু জিনিস চুরি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভাবলাম যে যেহেতু আমি এই পবিত্র স্থানে যাচ্ছি, তাই চুরি করা সম্ভব নয়। তাই আমি মালপত্তরগুলো আবার গুছিয়ে রেখেছি, কিন্তু দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন।’’ এই হচ্ছে অসৎ অভ্যাসের বৈশিষ্ট্য। সে আর চুরি করতে চায় না, কিন্তু যেহেতু সে অভ্যস্ত, তাই কখন কখন সে চুরি করে। এই জন্য কৃষ্ণ বলছেন যে, অসৎ অভ্যাস থেকে বিরত হতে যে সঙ্কল্পবদ্ধ হয়েছে এবং কৃষ্ণভাবনায় উন্নতি করছে, সে সাধু বলে গণ্য হবে, এমনকি পুরানো অভ্যাস বা হঠাৎ সে যদি তার দোষের অধীনও হয়। পরের শ্লোকে আমরা দেখতে পাই যে শ্রীকৃষ্ণ বলছেনÑ

    ক্ষিপ্রং ভবতি ধর্মাত্মা শশ্বচ্ছান্তিং নিগচ্ছতি।
    কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্ত প্রণশ্যতি \

    ‘‘সে শীঘ্র ধর্মাত্মা হয়ে চির শান্তি লাভ করে। হে কুন্তিপুত্র, স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে বল যে আমার ভক্তের কখনই বিনাশ নেই।’’ (গীতা ৯/৩১)

    কৃষ্ণভাবনায় আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য, এখানে কৃষ্ণ দ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে অতি শীঘ্র সে সাধুতে পরিণত হবে। একজন বৈদ্যুতিক পাখার প্লাগটি টেনে বের করতে পারে, তবু, পাখাটি চলতে থাকে এমন কি বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্তে¡ও, কিন্তু সকলেই জানে যে পাখা শীঘ্রই থেমে যাবে। একবার আমরা কৃষ্ণের চরণপদ্মে আশ্রয় গ্রহণ করলে, সুইচ বন্ধ করার মত আমাদের কর্মী জীবনের কাজের পরিসমাপ্তি করতে পারি, এই সব কাজের পুনরাবর্তন ঘটলেও, বুঝতে হবে শীঘ্রই তা হ্রাস প্রাপ্ত হবে। এ কথা সত্যি যে কৃষ্ণভক্তি সাধনায় রত হলে ভাল মানুষ হওয়ার জন্য স্বতন্ত্র চেষ্টা করার দরকার হয় না। সৎগুণাবলী সকল আপনা থেকেই আসবে। শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত আছে যে কৃষ্ণভক্তি লাভের সঙ্গে সঙ্গে সে সমস্ত সদ্গুণাবলীর অধিকারী হয়। অপরপক্ষে যার ভগবদ্ভক্তি নেই অথচ সে বহু গুণ-সম্পন্ন, তার সব গুণাবলীই অর্থহীন, কারণ অবাঞ্ছিত কাজে সে কোনভাবেই বাধাপ্রাপ্ত হবে না। যার কৃষ্ণভক্তি নেই সে নিশ্চয় এই জড় জগতে দুষ্কর্ম করবে।

    জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত¡তঃ।
    ত্যক্তা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন \

    ‘‘হে অর্জুন, আমার আবির্ভাব ও কার্যাবলীর দিব্য প্রকৃতি সম্বন্ধে সচেতন হয়ে যে দেহত্যাগ করে সে মর্ত্যলোকে আর জন্মগ্রহণ করে না, কিন্তু আমার শাশ্বত ধাম লাভ করে।’’ (গীতা ৪/৯)

    কৃষ্ণের আবির্ভাবের উদ্দেশ্যে এখানে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যখন কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি আবির্ভূত হন, তখন অনেক লীলা প্রদর্শন করেন। অবশ্য অনেক দার্শনিক আছেন যারা বিশ্বাস করেন না যে ভগবান অবতার হয়ে আসেন। তারা বলে, ‘‘ভগবান এই পচা দুর্গন্ধময় জগতে আসবেন কেন?’’ কিন্তু ভগবদ্গীতা থেকে আমরা অন্যভাবে তথ্য পাই। আমাদের সব সময় মনে রাখা উচিত যে আমরা ভগবদ্গীতা পড়ি ধর্মশাস্ত্র হিসাবে, আর ভগবদ্গীতায় যা কিছু শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় তা পড়ার কোন যুক্তি নেই। গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন যে এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি অবতার হয়ে এসেছেন, আর তার উদ্দেশ্যেও সাথে কিছু কার্যাবলীও দৃষ্টান্তস্বরূপ আছে। আমরা দেখি যে অর্জুনের রথচালকরূপে কৃষ্ণ সক্রিয় এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কত বিষয়ে কৃষ্ণ জড়িত। ঠিক যেমন কোন যুদ্ধে এক ব্যক্তি বা জাতির অপর এক ব্যক্তি বা জাতির পক্ষ গ্রহণ করে, পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করে, ভগবান কৃষ্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করে অর্জুনের পক্ষ গ্রহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণ কারুও পক্ষপাতী নন্, কিন্তু বাহ্যতঃ তাঁকে পক্ষপাতী মনে হয়। যাই হোক এই পক্ষপাতিত্বকে সাধারণ অর্থে গ্রহণ করা উচিত নয়।

    এই শ্লোকে কৃষ্ণ আরও উল্লেখ করেছেন যে, মর্ত্যজগতে তাঁর অবতার দিব্য। ‘দিব্যম্’ শব্দের অর্থ অপ্রাকৃত। তাঁর কার্যাবলী কোনভাবেই সাধারণ নয়। এমন কি আজও ভারতে আগষ্ট মাসের শেষের দিকে জনসাধারণ কৃষ্ণের জন্মদিন স¤প্রদায় নির্বিশেষে উদ্যাপন করতে অভ্যস্ত, যেমন পাশ্চাত্য জগতে খ্রিস্ট-জন্মোৎসবের দিনে যিশুখ্রিস্টেও জন্মদিন পালন করা হয়। কৃষ্ণের জন্মদিনকে জন্মাষ্টমী বলে, আর এই শ্লোকে কৃষ্ণ ‘আমার জন্ম’ উল্লেখ করতে গিয়ে ‘জন্ম’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। কারণ তাঁর জন্ম আছে, তাঁর লীলা আছে। কৃষ্ণের জন্ম ও তাঁর কার্যাবলী দিব্য বা অপ্রাকৃত, অর্থাৎ সাধারণ জন্ম ও কার্যাবলীর মতো নয়। কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে কিভাবে কৃষ্ণের কার্যাবলী অপ্রাকৃত? তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তিনি অর্জুনের সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন, বসুদেব নামে তাঁর পিতা আছেন আর তাঁর মা দেবকী এবং তাঁর পরিবারÑএকে অপ্রাকৃত বা দিব্য মনে করার কি আছে? কৃষ্ণ বলছেন, এবং যো বেত্তি তত্ত¡তঃ আমাদের অবশ্যই তাঁর জন্ম ও কর্ম যথার্থভাবে জানতে হবে। কৃষ্ণের জন্ম ও কর্ম যথার্থভাবে জানার ফল হল ঃ ‘ত্যক্তা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুনÑ এই ভৌতিক দেহ ত্যাগ করে, সে আর জন্ম গ্রহণ করবে না। কিন্তু সে সরাসরি কৃষ্ণের কাছে ফিরে যাবে। সে শাশ্বত চিন্ময় জগতে গিয়ে তার সচ্চিদানন্দ স্বরূপ লাভ করে। কেবলমাত্র কৃষ্ণের জন্ম ও কর্মের অপ্রাকৃত বৈশিষ্ট্যের যথার্থ জ্ঞান দ্বারা সবই লাভ হয়।

    সাধারণত একজন দেহত্যাগ করলে তাকে আর একটি দেহ গ্রহণ করতে হয়। জীবাত্মার কর্ম অনুসারেÑ আত্মার এই দেহান্তর Ñঅর্থাৎ জীবাত্মার এক দেহ থেকে অন্য এক দেহে পোশাক পরিবর্তনের জন্য জীবসমূহের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমরা মনে করতে পারি যে এই ভৌতিক দেহই আমাদের প্রকৃত দেহ, কিন্তু এই দেহটি একটি পোশাকের মত। আসলে, আমাদের একটি যথার্থ চিন্ময় শরীর রয়েছে। জীবের চিন্ময় শরীরের তুলনায় এই জড় শরীরটি হচ্ছে বাহ্যিক। যখন এই জড় শরীরটি পুরানো ও জীর্ণ হয়, বা দুর্ঘটনায় এই দেহটি অকর্মণ্য হয়ে পড়ে, তখন আমরা একটি ময়লা জীর্ণ পোশাকের মত এটিকে পাশে সরিয়ে রেখে আর এক ভৌতিক দেহ গ্রহণ করি।

    বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
    নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি।
    তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-
    ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী \ (গীতা ২/২২)

    ‘‘এক ব্যক্তি পুরানো পোশাক ছেড়ে যেমন নতুন পোশাক পরে, অনুরূপভাবে আত্মাও তেমন পুরানো ও অকর্মণ্য দেহ ছেড়ে নতুন জড় দেহ গ্রহণ করে।’’

    প্রথমে দেহ একটি কড়াইশুঁটির আকার লাভ করে। তারপর বড় হয়ে তা একটি বাচ্চায় পরিণত হয়, তারপর তা একটি শিশু, একটি বালক, একটি যুবক, একটি পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি এবং পরিশেষে তা একটি বৃদ্ধ ব্যক্তিতে পরিণত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত তা যখন অকর্মণ্য হয়ে পড়ে, জীবাত্মা তখন অন্য একটি দেহ ধারণ করে। তাই দেহ সব সময়েই পরিবর্তিত হচ্ছে, আর মৃত্যু হচ্ছে শুধু বর্তমান দেহের অন্তিম পরিবর্তন।

    দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা।
    তথা দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি \

    ‘‘যখন দেহধারী আত্মা বর্তমান দেহে ক্রমান্বয়ে বাল্যকাল, যৌবন ও জরা অতিক্রম করে, অনুরূপভাবে মৃত্যুতে আত্মা আর এক দেহে অবস্থান করে। পরিবর্তনের জন্য আত্মজ্ঞানী কখনও মোহপ্রাপ্ত হন না।’’ (গীতা ২/১৩)

    যদিও দেহ পরিবর্তিত হচ্ছে, দেহী একই থাকে। যদিও বালক পূর্ণ বয়স্ক মানুষে পরিণত হয়, দেহাভ্যন্তরস্থ জীবের পরিবর্তন হয় না। এমন নয় যে বালকরূপী আত্মা চলে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান স্বীকার করে যে, প্রতি মুহূর্তে জড় দেহ পরিবর্তিত হচ্ছে। ঠিক যেমন জীবাত্মারা এর দ্বারা হতবুদ্ধি হয় না, একজন দিব্যজ্ঞানী পুরুষও মৃত্যুও সময় দেহের পরিণতিতে মোহ প্রাপ্ত হয় না। যে জিনিস যা তাকে যে ব্যক্তি বুঝতে পারে না সে বিলাপ করে। জড়বদ্ধ অবস্থায় আমরা সব সময় শুধু দেহ পরিবর্তন করছি; সেটিই হচ্ছে আমাদের রোগ। এ নয় যে আমরা সব সময় মানব দেহে পরিবর্তিত হচ্ছি। আমাদের কর্ম অনুসারে পশুর দেহ বা দেবতার দেহে পরিবর্তিত হতে পারি। পদ্ম পুরাণ অনুসারে ৮৪,০০,০০০ রকমের প্রজাতি আছে। মৃত্যুও পর আমরা যে কোন একটি প্রজাতি হয়ে জন্ম নিতে পারি। কিন্তু কৃষ্ণ প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন যে তাঁর জন্ম কর্ম যথার্থভাবে যে জানে সে এই পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্ত। কিভাবে একজন কৃষ্ণের জন্ম-কর্ম যথার্থভাবে বুঝতে পারে? তা ভগবদ্গীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

    ভক্ত্যা মামভিজানাতি যাবান্ যশ্চাস্মি তত্ত¡তঃ।
    ততো মাং তত্ত¡তো জ্ঞাত্বা বিশতে তদনন্তরম্ \

    ‘‘শুধুমাত্র ভগবদ্ভক্তির দ্বারা একজন পরমেশ্বর ভগবানকে যথার্থভাবে জানতে পারে। আর যখন সেই রকম ভক্তি দ্বারা সে পরম প্রভু সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করে, তখনই সে ভববানের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে।’’ (গীতা ১৮/৫৫)

    এখানে আবার ‘তত্ত¡তঃ’ শব্দটি ‘যথার্থভাবে’, এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একজন কৃষ্ণতত্ত¡ বুঝতে পারে ভক্ত হয়ে। যে ভক্ত নয়, যে কৃষ্ণভক্তি লাভের চেষ্টা করে না, সে বুঝতে পারে না। চতুর্থ অধ্যায়ের প্রারম্ভে কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন (গীতা ৪/৩) যে তিনি আদি যোগশাস্ত্র তাকে ব্যাখ্যা করছেন কারণ অর্জুন হচ্ছে ‘‘আমার ভক্ত আর বন্ধু।’’ আর যে শুধু পাণ্ডিত্যপূর্ণভাবে ভগবদ্গীতা অধ্যয়ন করে, কৃষ্ণতত্ত¡-বিজ্ঞান তার কাছে রহস্যাবৃত হয়ে থাকে। ভগবদ্গীতা এমন এক বই নয়, যা ঠিক এক পুস্তকালয় থেকে কিনে, আর শুধু পাণ্ডিত্য দ্বারা তা বোঝা যাবে। অর্জুন একজন বিরাট পণ্ডিত ছিল না অথবা একজন বৈদান্তিক, একজন তত্ত¡বাদী, একজন ব্রাহ্মণ বা একজন সন্ন্যাসীও ছিল না; সে ছিল একজন গৃহস্থ ও ক্ষত্রিয়। কিন্তু তবু কৃষ্ণ তাকে ভগবদ্গীতার গ্রহণকারী হিসাবে এবং গুরু-শিষ্য পরম্পরার প্রথম অধিকারিরূপে নির্বাচিত করালেন। কেন? ‘‘কারণ তুমি আমার ভক্ত।’’ ভগবদ্গীতায় ঠিক যা বলা হয়েছে আর কৃষ্ণ ঠিক যা, তা বোঝার এই হচ্ছে যোগ্যতা Ñ তাকে অবশ্যই কৃষ্ণভক্ত হতে হবে। আর এই কৃষ্ণভাবনা কি ? তা হচ্ছে আমাদের চিত্ত দর্পণে যে ধুলো আছে, তা Ñ

    হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
    হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে \

    এই মহামন্ত্র কীর্তন দ্বারা চিত্তদর্পণে সঞ্চিত ধুলোরাশি পরিস্কার করার পদ্ধতি। এই মন্ত্র কীর্তন করে আর ভগবদ্গীতা পাঠ শুনে, ক্রমশ আমরা কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে পারি। ‘ঈশ্বর ঃ সর্বভূতানাম্’Ñকৃষ্ণ সব সময় আমাদের হৃদয়ে বিরাজমান আছেন। জীবাত্মা ও পরমাত্মা উভয়ই দেহরূপবৃক্ষে বসে আছে। জীবাত্মা বৃক্ষের ফল খাচ্ছে, আর পরমাত্মা সব লক্ষ্য করছে। যে-মাত্র জীব ভগবদ্ভক্তির পন্থা গ্রহণ করে, এবং ক্রমশ কৃষ্ণভাবনায় উন্নতি লাভ করতে আরম্ভ করে, তখন হৃদয়ে অবস্থিত পরমাত্মা চিত্তরূপ দর্পণের কলুষতাকে ধুলোমুক্ত করে তাকে সহায়তা করে। কৃষ্ণ সকল সাধু ব্যক্তিগণের সুহৃদ, আর কৃষ্ণভাবনাময় অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রয়াসও এক সৎ প্রয়াস। ‘শ্রবণং কীর্তনম্’Ñশুনে ও কীর্তন করে একজন কৃষ্ণতত্ত¡ বিজ্ঞান বুঝতে পারে এবং তার দ্বারা বোঝা যায় ও কৃষ্ণকে জানা যায়। আর কৃষ্ণজ্ঞান হলে, ঠিক মৃত্যুর সময় তৎক্ষণাৎ একজন চিজ্জগতে তাঁর ধামে ফিরে যেতে পারে। এই চিন্ময় জগতের বিবরণ ভগবদ্গীতায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেÑ

    ন তদ্ ভাসয়তে সূর্যো ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ।
    যদ্ গত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম\

    ‘‘আমার সেই ধাম সূর্য, চন্দ্র বা বিদ্যুৎ দ্বারা আলোকিত হয় না। যে সেই ধামে গিয়ে পৌঁছে, সে এই মর্ত্যলোকে কখনও ফিরে আসে না।’’ (গীতা ১৫/৬)

    এই মর্ত্যলোক সর্বদা অন্ধকারময়; তাই আমাদের সূর্য, চন্দ্র ও বিদ্যুতের প্রয়োজন। বেদ আমাদের এই অন্ধকারে বাস না করে আলোময় চিন্ময় জগতে ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়। ‘অন্ধকার’ শব্দের দু'রকম অর্থ। এর অর্থ আলোকহীন শুধু নয়, অজ্ঞানতাও বুঝায়।

    পরমেশ্বর ভগবানের শক্তি বিবিধ প্রকার। এমন নয় যে এই মর্ত্যলোকে তিনি কাজ করতে আসেন। বেদে উল্লেখ করা আছে যে পরমেশ্বর ভগবানের কাজ করবার কিছুই নেই। ভগবদ্গীতায় (৩/২২) শ্রীকৃষ্ণ বলেছেনÑ
    ন মে পার্থাস্তি কর্তব্যং ত্রিষু লোকেষু কিঞ্চন।
    নানবাপ্তমবাপ্তব্যং বর্ত এব চ কর্মণি\

    ‘‘হে পার্থ, এই ত্রিভুবনে আমার কর্তব্যকর্ম বলে কিছুই নেই। আমার কোন অভাব নেই, আমার কোন কিছুর প্রয়োজনও নেইÑআর তবু আমি কাজে নিয়োজিত।

    তাই আমাদের ভাবা উচিত নয় যে, কৃষ্ণের মর্ত্যলোকে অবতরণের প্রয়োজন এবং নানা কাজে নিয়োজিত হয়। কেউই কৃষ্ণের সমকক্ষ বা কৃষ্ণ অপেক্ষা শ্রেয় নয়, আর স্বাভাবিকভাবেই তিনি সমস্ত জ্ঞানের অধিকারি। এমন নয় যে জ্ঞানার্জনের জন্য তাঁকে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে অথবা যে কোন সময় তাঁকে জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে বা জ্ঞান লাভ করতে হবে। সকল সময়ে এবং সকল অবস্থায় তিনি জ্ঞানপূর্ণ। তিনি অর্জুনকে ভগবদ্গীতা শিক্ষা দিতে পারেন, কিন্তু তাঁকে আদৌ কখন ভগবদ্গীতা শিক্ষা লাভ করতে হয় নি। যে কৃষ্ণের এই স্বরূপ বুঝতে পারে তাকে এই মর্ত্যলোকে জন্ম ও মৃত্যুর চক্রে ফিরে আসতে হয় না। মায়ার বশে এই ভৌতিক পরিবেশের সাথে ঐক্য স্থাপন করার চেষ্টায় আমরা সমগ্র জীবন অতিবাহিত করি, কিন্তু এটি মানব জীবনের উদ্দেশ্য নয়। মানব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষ্ণতত্ত¡ বিজ্ঞান উপলব্ধি করা।

    আমাদের জাগতিক প্রয়োজন হচ্ছে এইগুলি ঃ আহার, স্ত্রীসঙ্গ, নিদ্রা, আমাদের আত্মরক্ষা ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি লাভের সমস্যা। এইগুলি মানুষ ও পশু উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান। পশুরা এই সমস্যা সমাধানে ব্যস্তভাবে নিয়োজিত আর আমরাও যদি এগুলি সমাধানে নিয়োজিত হই তাহলে, আমরা কোন্ভাবে পশুদের থেকে ভিন্ন? যা হোক মানুষের এক বিশেষ গুণ আছে যেজন্য সে দিব্য কৃষ্ণভাবনা জাগ্রত করতে পারে, কিন্তু সে যদি এই সুযোগ গ্রহণ না করে, তাহলে সে পশু শ্রেণীভুক্ত হয়। আধুনিক সভ্যতার ত্র“টি এই যে বেঁচে থাকা সমস্যা সমাধানের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে। চিন্ময় জীব হিসাবে এই জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে আমাদের মুক্ত হওয়া অবশ্য করণীয়। তাই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত যাতে আমরা মানব জীবনের এই বিশেষ সুযোগ না হারাই। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবদ্গীতা প্রদান করেন, এবং ভগবৎ ভাবনাময় হতে আমাদের সাহায্য করেন। বস্তুত এই সমগ্র পার্থিব সৃষ্টি আমাদের অনুশীলনে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সুযোগ এবং মানব জীবনের বিশেষ দান লাভ করেও আমরা যদি তা কৃষ্ণভাবনা জাগ্রত করতে ব্যবহার না করি, তাহলে আমরা এক দুর্লভ সুযোগ হারাব। সাধনার পথ খুব সরল ঃ ‘শ্রবণম্ কীর্তনম্’Ñ শ্রবণ এবং কীর্তন করা ছাড়া আর কিছু আমাদের করার নেই আর মনোযোগ দিয়ে শুনলে নিশ্চয় জ্ঞান-উপলব্ধির উদয় হবে। কৃষ্ণ অবশ্যই সাহায্য করবেন, কারণ তিনি আমাদের মধ্যে বিরাজিত। আমাদের শুধু চেষ্টা করতে হবে আর একটু সময় খরচ করতে হবে। আমাদেও কাউকে প্রশ্ন করা প্রয়োজন হবে না যে আমরা সাধনায় উন্নতি করছি কিনা। আমরা স্বত-ই জানব, যেমন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে যে, পর্যাপ্ত খাবার খেয়ে সে সন্তুষ্ট।

    প্রকৃতপক্ষে এই কৃষ্ণভাবনা বা আত্মোপলব্ধির পথ খুব কঠিন নয়। কৃষ্ণ অর্জুনকে ভগবদ্গীতায় এ শিক্ষা দেন, আর অর্জুন যেভাবে ভগবদ্গীতা বুঝেছিলেন আমরাও যদি সেভাবে বুঝি, তাহলে সাফল্য লাভে আমাদের কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু আমাদের জড়-বিদ্যায় শিক্ষিত মানসিকতার দ্বারা ভগবদ্গীতার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলে আমরা সব নষ্ট করব।

    যেমন আগেই বলা হয়েছে, এই হরেকৃষ্ণ কীর্তনই একমাত্র পথ যার দ্বারা ভৌতিক সংস্পর্শ-জাত সব কলুষতা চিত্তদর্পণ থেকে দূরীভূত হয়। কৃষ্ণভাবনা পুনর্জাগরণের জন্য বাইরের কোন সহায়তার প্রয়োজন নেই, কারণ কৃষ্ণভাবনা আমাদের আত্মার মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় আছে। প্রকৃতপক্ষে, এটিই হচ্ছে আত্মার যথার্থ ধর্ম। এই পন্থার দ্বারা আমাদের শুধু জাগ্রত করতে হবে। কৃষ্ণভাবনা শাশ্বত সত্য। এটি কোন সংগঠন দ্বারা আরোপিত মতবাদ বা এক ধরণের বিশ্বাস নয়। এটি মানুষ বা পশু সকল জীবের মধ্যেই আছে। প্রায় পাঁচশ বছর আগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু দক্ষিণ ভারতের বনের মধ্য দিয়ে যাবার সময় হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করছিলেন, আর বাঘ, হাতি, হরিণ সমস্ত পশুরা পবিত্র নাম কীর্তনের সঙ্গে নৃত্য করে যোগ দিয়েছিল। অবশ্যই এটি নির্ভর করে শুদ্ধ নাম-কীর্তনের ওপর। কীর্তনের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শুদ্ধতা নিশ্চয় হবে।
    Views: 931 | Added by: শকুন্তলা-দেবী | Tags: hare krishna hare rama, sril, probhupad, Krishna | Rating: 0.0/0
    Total comments: 0
    Only registered users can add comments.
    [ Registration | Login ]