হিন্দু ধর্মগ্রন্থানুসারে ঈশ্বরের ধারনা, যা পবিত্র কুরআনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ
ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য আল্লাহ তা’আলা কুরাআনের সুরা আল ইমরানের ৬৪ নাম্বার আয়াতে বলেছেন “এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক”। প্রত্যেকটি মুসলমানকে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন আহলে কিতাব বা অমুসলিমদের সাথে শুধু মাত্র সাদৃশ্য গুলো নিয়েই আলোচনা করতে । আমরা যখন কারো সাথে অমিল নিয়ে আলোচনা করি তখন আমাদের মধ্যে সাভাবিক ভাবেই বিরোধ বাধে। এতে অশান্তির সৃস্টি হয়। আর আল্লাহ পাক কুরাআনের অনেক জায়গায় বলেছেন তিনি অশান্তি পছন্দ করেন না । আর সে কারনেই আল্লাহ আমাদের উপর এ রকম নির্দেশ জারি করেছেন । বাইরে থেকে দেখলে হিন্দু ধর্ম ও ইসলামের মধ্যে কোনো রকম সাদৃশ্য খুজে পাওয়া যাবে না । কারন আমরা একজন হিন্দুর চাল-চলন কেই হিন্দু ধর্ম এবং একজন মুসলমানের আচার-ব্যবহার কেই ইসলাম ধর্ম মনে করি ।কিন্তু আমি এই প্রবন্ধে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে এমন সাদৃশ্য আলোচনা করব না । আমি এখানে আলোচনা করব হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোর উপর ভিত্তি করে । আর একটা কথা, আমি এখানে আলোচনা করব না সেই সব বিষয় নিয়ে যা আমরা সাধারনত জানি ।যেমন, দুটি ধর্মই বলে যে চুরি করা পাপ, দুটি ধর্মেই মিথ্যা কথা বলা পাপ ইত্যাদি । আমরা জানার চেস্টা করব এমন সব বিষয় যা আমরা সাধারনত জানি না । তাহলে আসুন আমরা সংক্ষেপে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য জানার চেস্টা করি ।
আসসালামু আলাইকুম(আপনাদের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
হিন্দুধর্ম গ্রন্থানুসারে সৃষ্টিকর্তা কেবল মাত্র একজন। বলা হয়েছেঃ ছান্দগ্য উপানিষদ ৬অধ্যায় ১অনু ২পরি, "এক্কাম এবাদিতিয়াম" অর্থাৎ ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ঋগবেদ গ্রন্থ ১, পরিচ্ছেদ ১৬৪, অনুচ্ছেদ ৪৬ "সত্য একটাই। ঈশ্বর একজনই। জ্ঞানীরা এক ঈশ্বরকে ডেকে থাকেন অনেক নামে।" হিন্দু ব্রম্মাসুত্র হলঃ (এক্কাম ব্রাহাম দিভিতিয়া নাস্তে নেইনা নাস্তে কিঞ্চান) অর্থাৎ ঈশ্বর একজনই দ্বিতীয় কেউ নেই, কেউ নেই, কেউ নেই, আর কখনো ছিল না।
পবিত্র কোরআনেও একই কথা বলা হয়েছেঃ বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, (সূরা ইখলাস আয়াত-১)
হিন্দু ধর্মগ্রন্থানুসারে সৃষ্টিকর্তাকে কেউ জন্ম দেয়নি, এবং তিনিও কাউকে জন্ম দেন নি। বলা হয়েছে শ্বেতাপত্র উপানিষদ, অধ্যায় ৬, অনু ৯ (না চাস ইয়া কাসচিজ জানিতা না কাধিপাহ) অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই, তার কোন প্রভু নেই।
পবিত্র কোরআনেও একই কথা বলা হয়েছেঃ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি (সূরা ইখলাস আয়াত-৩)
হিন্দু ধর্মগ্রন্থানুসারে সৃষ্টিকর্তার কোন প্রতিমা নেই। শ্বেতাপত্র উপানিষদ, ৪অধ্যায়, অনু ১৯ ও যজুর্বেদ অধ্যায় ৩২, স্লকা ৩ "(না তাস্তি প্রাতিমা আস্তি) অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই, মূর্তি নেই, ছবি নেই।
পবিত্র কোরআনেও একই কথা বলা হয়েছেঃ তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন। (সূরা শূরা আয়াত-১১)
হিন্দু ধর্মগ্রন্থানুসারে সৃষ্টিকর্তাকে কেউ দেখতে পাই না। শ্বেতাপত্র উপানিষদ, অধ্যায় ৪, স্লকা ২০ (না সামুদ্রা দৃষ্টি রূপম আসইয়া, না চাকুসা পাসইয়াতি কাস কানাইনাম) অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তাকে কেউ দেখতে পাই না।
পবিত্র কোরআনেও একই কথা বলা হয়েছেঃ দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ। (সূরা আনাম আয়াত-১০৩)
হিন্দু ধর্মগ্রন্থানুসারে সৃষ্টিকর্তা হল নিরাকার। যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০, স্লক ৮ সৃষ্টিকর্তা হল নিরাকার ও পবিত্র। হিন্দু ধর্মগ্রন্থানুসারে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির উপাসনা(পূজা) করা যাবে না। যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০, স্লকা ৯ (আন্ধাস্মা প্রাভিসান্তি ইয়ে আসাম্ভুতি মুপাস্তে) আন্ধাস্মা মানে অন্ধকার, প্রাভিসান্তি মানে প্রবেশ করা, আসাম্ভুতি মানে প্রাকৃতিক বস্তু( পানি, আগুন, সাপ, মানুষ ইত্যাদি) মুপাস্তে মানে উপাসনা করা। অর্থাৎ তারা অন্ধকারে যাচ্ছে যারা আসাম্ভুতি মানে প্রাকৃতিক বস্তু(পানি,আগুন, সাপ, মানুষ ইত্যাদির) উপাসনা করে। তারপর বলা হয়েছে 'তারা আরও অন্ধকারে যাচ্ছে যারা সাম্ভুতি মানে মানব সৃষ্টি বস্তু(চেয়ার,টেবিল,মূর্তি ইত্যাদির) উপাসনা করে। ভাগবাত গিতা অধ্যায় ৭ অনুচ্ছেদ ২০ ''সেসব লোক যাদের বিচার বুদ্ধি কেড়ে নিয়েছে জাগতিক আকাঙ্খা, তারাই মূর্তি পূজা করে।''
অতএব আমরা মুসলিমরা যে এক ঈশ্বর কে বিশ্বাস করি, যার কোন প্রতিমা নেই, তিনি হলেন পবিত্র,তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। সেই ঈশ্বরের কথা হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে।
অথচ অধিকাংশ হিন্দু এই বিশ্বাস স্থাপন করে না। “কোন ধর্মের দলিল ও প্রমান হল তার ধর্মের ধর্মীয়গ্রন্থ” । হিন্দু ভাই বোনেরা আপনারা আপনাদের ধর্ম গ্রন্থসমূহ পড়ুন সত্য ঈশ্বরকে বিশ্বাস করুন। আবার অনেকে দেখেও দেখে না শুনেও শুনে না।
পবিত্র কোরআনে তাই বলা হয়েছেঃ নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না।আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা বাক্বারাহ আয়াত-৬ও৭)
সূত্রঃ পবিত্র কুরআন ও হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহ
By Mohammad Roman
|