ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মায়ের কাছে ভাত চেয়ে এবং সময়মত তা না পেয়ে
ক্ষোভে জেএসসি পরীক্ষার্থী অমর্ত্য চৌধুরী(১৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা
করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের মলাইশ
গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়। বুধবার নিহত ছাত্রের লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার জেএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে দরিদ্র
কৃষক সতীচরণ চৌধুরীর ছেলে অমর্ত্য চৌধুরী শাহবাজপুর কেন্দ্রে বাংলা
প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা শেষে বিকেলে সে বাড়ীতে ফিরে মা
মমতা রানীর কাছে ভাত চায়। টানাপোড়েনের সংসারে তখনও ভাতের জোগাড় হয়নি। ওদিকে
তার বাবা মাঠে ধান বোনার কাজ করছিল। পেটের ক্ষুধায় প্রচণ্ড ক্ষেপে যায়
অমর্ত্য। প্রলাপ করে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও
বাড়ি ফিরেনি অমর্ত্য। পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে থাকেন। ভাতের জোগাড় করে
রাতে কেরোসিনের বাতি ও হারিকেন দিয়ে ক্ষুধার্ত ছেলেকে চারিদিকে খুঁজতে
থাকেন মা মমতা রানী। রাত ৯টার দিকে তাদের বসত ঘরের পাশের খাল সংলগ্ন একটি
গাছের নীচে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় অমর্ত্যরের লাশ পান তার
মাতা। ছেলের মৃতদেহ দেখে চিৎকার দিয়ে উঠেন মমতা রানী। পরে প্রতিবেশী লোকজন
ঘটনাস্থলে আসেন। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, অমর্ত দেওড়া আদর্শ উচ্চ
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্র। মা-বাবা চার ভাই ও এক বোনসহ
সাত সদস্যের পরিবারে অমর্ত্য তৃতীয়। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও
পড়ালেখার প্রতি ছিল তার প্রচণ্ড আগ্রহ। শিক্ষাজীবন শেষ করে বড় চাকুরি করে
মা-বাবাসহ পুরো পরিবারকে সুখী করবে এমন স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু দারিদ্রতা ও
ক্ষোভ অমর্ত্যরের সকল স্বপ্ন ধ্বংস করে দিল। চিরদিনের জন্য আগুন জ্বালিয়ে
দিল গর্ভধারিণী মাতা মমতার বুকে। মা মমতা শুধুই কাঁদছেন আর মুর্চ্ছা
যাচ্ছেন। জন্মদাতা পিতা এখন নির্বাক। তিন ভাইসহ অন্যান্য স্বজনদের
আর্তচিৎকারে গ্রামের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। সমগ্র গ্রামেই চলছে শোকের মাতম।
স্কুল পড়ূয়া ছাত্র অমর্ত্যরে এ করুণ ও নির্মম আত্মহননে কোন শান্তনা খুঁজে
পাচ্ছে না বিদ্যালয়ের সহপাঠী ও শিক্ষকরা। বুধবার ছিল অমর্ত্যরে বাংলা
দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। কেন্দ্রে পরীক্ষা চলছে। কিন্তু অমর্ত্য লাশ হয়ে
পড়ে আছে বাড়িতে। এটাই নিয়তি। বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে
দেখা যায়, ৫৭৪৬০১ রোল নম্বরের আসনটি আজ শূন্য। যে আসনটিতে বসে প্রথম দিনের
পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল অমর্ত্য। সেই আসনটির দিকে ক’জন সহপাঠী বারবার
তাকাচ্ছে।
অত্যন্ত মর্মান্তিক, খুব খারাপ লাগছে, আমরা কত সময় কতভাবে টাকাপয়সা নষ্ট করি, শুধু খেতে ভাল লাগছেনা বলে প্লেটে ভাত নিয়ে ফেলে দেই, অথচ সেই ভাতের জন্য কেউ আত্মহত্যা করে, হৃদয়কে প্রবলভাবে নাড়া দিচ্ছে।