পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পোড়ানোর প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন(দয়া করে এই প্রেস নোটটি পড়ুন) - 30 May 2011 - হিন্দু ধর্ম ব্লগ - A Total Knowledge Of Hinduism, সনাতন ধর্ম
Hinduism Site
পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পোড়ানোর প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন
উপস্থিত সম্মানিত সাংবাদিক ভাই বন্ধু ও উপস্থিত সুধী মণ্ডলী। আজ অত্যন্ত—
বেদনা ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। মর্ম বেদনার রক্ত
ক্ষরণে আজ আমরা বাক্যহারা ও দিশেহারা। গত ২/৪/২০১১ ইং তারিখে আমাদের পবিত্র
ধর্ম গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা প্রকাশ্য দিবালোকে জন সম্মুখে ছিন্ন ভিন্ন
করে পোড়ানো হয়েছে।
আপনারা অবগত আছেন, আজ থেকে ৫৫৫ বছর পূর্বে শ্রীহট্ট যা বর্তমানে সিলেট এর
বিয়ানীবাজারস্থ খাঁসা পণ্ডিত পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর
অন্যতম পার্ষদ শ্রীবাস ঠাকুর। শ্রীবাস ঠাকুরের পৈতৃক বাড়ীটি প্রায় পাচঁ
বিঘা জমির উপরে অবস্থিত । এ বাড়ীর সাথে রয়েছে পুকুর ও ৫ শতাধিক বছরের
পুরাতন ল²ীনারায়ণ, পঞ্চতত্ত¡ ও শিব মন্দির। এছাড়াও শ্রীবাস প্রভুর বিখ্যাত
লাইব্রেরী ও সংস্কৃত প্রেস ছিল (যা ভগ্রপ্রায় অবস্থায় এখনো
দাঁড়িয়ে আছে)। পাঁচ শতাধিক বছরের পুরাতন মন্দির ও প্রাচীন নির্মাণ স্থাপত্য
এখনো খাঁসা পন্ডিত পাড়ার শ্রীবাস ঠাকুর ও পণ্ডিতদের ঐতিহ্য বহন করছে।
স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্র যা সরকারী দলের পরিচয় বহনকারী ব্যক্তি যাদের
গডফাদার জনাব দিপু। জনাব দিপু ও তার অনুসঙ্গীসহ পণ্ডিতদের পরিত্যক্ত বাড়ী ও
অন্যান্য জমি দখল করেই সন্তুষ্ট নয়। সে ইতিমধ্যে একটি শিব মন্দির ভেঙ্গে
উক্ত স্থানে তার অনুগত সন্ত্রাসী চক্রকে বসিয়েছেন এবং অপর যে মন্দিরটিতে
বর্তমানে নিয়মিত পূজার্চনা চলছে সেটিও দখল করে কারিগরি বিদ্যালয় ও হাসঁ
মুরগী, ছাগলের খামার বানানোর লক্ষ্যে সরকারী কাগজপত্র
তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে মন্দির দখলের জন্য সাবুল নামক এক
ব্যক্তির নেতৃত্বে বর্তমান ল²ীনারায়ণ, পঞ্চতত্ত¡ ও শিব মন্দির প্রাঙ্গণে গত
২/৪/২০১১ ইং তারিখে এক দল দুস্কৃতকারী আনুমানিক বেলা ১০ ঘটিকার সময়
পূজার্চনা চলাকালীন অবস্থায় হামলা চালায়। এ সময় মন্দিরের প্রণামী বাক্স
লুটপাট ও বিগ্রহ ভাংচুর সহ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রী সিদ্ধ গৌর দাস
ব্রহ্মচারীকে হত্যার চেষ্টা চালায় এবং মন্দিরের সকল ভাঙ্গা বিগ্রহ পুকুরে
ফেলে দেয়। মন্দিরে রক্ষিত সকল ধর্ম গ্রন্থ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা জনসম্মুখে
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে বিয়ানী বাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করা
হয় যার
নম্বর-০৩, তারিখ- ২/৪/২০১১ইং এবং ধারা সমূহ ১৪৩/৪৪৮/২৯৪/৩২৩/৩৭৯/৩৮০/৫০৬ দঃ বিঃ।
বন্ধুরা, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের অর্জিত মহান স্বাধীনতায়
সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান ছিল না, অথচ স্বাধীনতার অব্যাহতির পর থেকে আমরা
এদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ব্যাপক আশা ভঙ্গ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে চলেছি।
স্বাধীনতার পর পর মৃত এনিমি প্রপারটি কালো আইনটিকে পুনর্জ্জ্বীবিত করা হয়,
হাজার হাজার হিন্দুদের বিষয় সম্পত্তি থেকে বিচ্যুত করে তাদের অর্থনৈতিক
মেরুদণ্ডে চূড়ান্ত আঘাত হানা হয়। ১৯৭২ সালে সারা বাংলাদেশে দূর্গা প্রতিমা
ভাঙ্গা হয়, সরকারী সিদ্ধান্তে এদেশের অন্যতম হেরিটেজ রমনা কালি মন্দির
অপসারণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সংবিধানে
বিসমিল্লাহির রাহ্ মানির রাহিম’ সংযোজন ঐ সময় কালে ব্যাপক হারে দেবোত্তর
সম্পত্তি দখল, মঠ-মন্দির ধ্বংস করা হয়, আর এইসব ধ্বংস হওয়া মন্দিরের
বিগ্রহে সমৃদ্ধ হয় অনেক মিউজিয়াম। এরপর সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের কালো
সময়কাল জুড়ে চলে
লাগামহীন বৈষম্যের জোয়ার প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, আমরা হয়ে যাই
দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের বহু সাংবিধানিক ওমানবিক
অধিকার।
আজ বাংলাদেশের একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ‘হিবা’ আইনের সাহায্যে যেখানে
সামান্য খরচায় সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে সেখানে একজন সংখ্যালঘুকে অতি
উচ্চ মূল্যে পূর্ণ রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হয়।
ধর্মীয় শিক্ষা সমৃদ্ধ একজন মাদ্রাসা পাশ শিক্ষক যেখানে রেগুলার স্কেলে বেতন
পান সেখানে একজন কাব্যতীর্থ যিনি সংস্কৃত সাহিত্যের অতি উচ্চ ডিগ্রীধারী
শিক্ষক বেতন পান সাকুল্যে ১২০ টাকা। বোধকরি বিশ্বের সকল
বিবেকবান মানুষ এই বৈষম্যে লজ্জা পাবেন। আজ এই দেশের আরও পাচঁজন নাগরিকের
মত সংখ্যালঘুরাও টেক্স দেয় যার একটি অংশ রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যয় করা হয়
নওমুসলিম ও নও মুসলিমদের ভাতা প্রদানে অর্থাৎ রাষ্ট্র এখানে একদর্শী।
সংখ্যালঘুদের আয়ের এক অংশ ব্যবহৃত হয় তাদেরই বিরুদ্ধে।
কিছুদিন পূর্বের ঘটনা যা পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিল। ২২২ নং
লাল মোহন সাহা ষ্ট্রিট, সূত্রাপুর, ঢাকাস্থ শ্রীশ্রী রাধাকান্ত জিউ
মন্দিরটি প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মন্দির যা শ্রী মথুরা মোহন
শাহ্ বণিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। ভূমিদস্যু হাজী ইসলাম উদ্দিন, হাজী আফজাল
হোসেন ও ৭৭ নং ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ সভাপতি হাজী আবুল হোসেন আবুল গং মন্দিরটি
দখল করার হীন পায়তারা চালিয়ে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। গত
২৭/৩/২০১১ইং তারিখে জনাব ইঞ্জিনিয়ার আঃ মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার, সিটিএসবি, ঢাকা অফিসেই ভূমিদস্যু হাজী মোঃ আবুল হোসেন আবুল হুমকি
দেন, এটা মুসলমানের দেশ, মন্দির না ছাড়লে আপনাদের শান্তিতে থাকতে দেব না,
তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির হুমকি দেন। এ বিষয়ে দুইটি জিডি
করা হয় যার জিডি নং ১৮৪১ তাং ২৮/৩/১১ রমনা মডেল থানা অপরটি জিডি নং ১৫৫৬ তাং ২৮/৩/১১ সূত্রাপুর থানা।
সম্প্রতি একটি ঘটনা ঢাকার রামপুরায়, সেখানে ২০০-২২৫ টি পরিবার বসবাস করছে।
এখানে একটি বিখ্যাত শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির অবস্থিত। হাতির ঝিল
প্রকল্পের নামে এই মন্দির ও শশ্মানের ৭৫% জমি রাজউক দখল করে নিয়েছে যা
হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত এনেছে এলাকার হিন্দু জনসাধারণ ভীত ও আতংকিত
ভাবে জীবন যাপন করছে। তাদের কাছে মন্দিরটি প্রাণের চেয়েও প্রিয় কারণ এলাকায়
আর কোন মন্দির নেই। এলাকায় জনসাধারনের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়েছে।
মানিকগঞ্জ শহর হতে ২ কিঃমিঃ দূরে উকিয়ারা গ্রামে গোলক মন্ডল ও শরৎ মন্ডলের
বসতি। তাদের ২৩ শতাংশ জমিতে দুই ভাইয়ের দুই পরিবার ও মন্দির বসতি। অত্র
এলাকার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য জনাব জাহিদ মালিক স্বপন মন্দির আক্রমণ করে
ভাংচুর করে এবং তাদেরকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। তাদের দলিল পত্রাদিতে
পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সংসদ সদস্য চাচ্ছেন তাদের জমিতে হাসপাতাল তৈরী
করতে। কারো ব্যক্তিগত জমিতে হাসপাতাল তৈরী করা কতটুকু গণতান্ত্রিক ? এভাবেই
কি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে না ?
রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ী, জমি, ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান দখল, সুন্দরী মেয়ে ছিনতাই করা, জোর করে ধর্মান্তর করা, উচ্ছেদ ও
দেশান্তরণে বাধ্য করা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন আজ আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কারো কারো মনের সুপ্ত
বাসনা ‘এক ধর্ম এক দেশ’ নীতির বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা। যার ফলশ্র"তিতে ৪৭
উত্তর ৫০% সংখ্যালঘু আজ এদেশে ১৫% নেমে এসেছে। আক্ষেপের সাথে বলতে হয়
হিন্দুদের সংখ্যা ১৫% নামিয়ে আনতে ২০১১ পর্যন্ত সময় লাগলেও বর্তমান সরকারের
প্রস্তাবিত হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কার বাস্তবায়িত হলে আগামী ৫ বছরে
হিন্দুদের সংখ্যা ০ % নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছি। অথচ ভোট ব্যাংক হিসাবে
বছরের পর বছর চুড়ান্ত ভাবে নিগৃহীত হয়ে চলেছি আমরা। ২০০৯ থেকে ১ জুন ২০১০
পর্যন্ত বিভিনড়ব সূত্র থেকে আমাদের জানামতে বহু হিন্দু ব্যক্তি খুন হয়েছেন,
বহু হিন্দু নারী ও মেয়ে ধর্ষিতা হয়েছেন, বহু হিন্দু পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে
শারিরীক নির্যাতন করা হয়েছে, অনেক পরিবারকে সহায় সম্বলহীন করে দেশ থেকে
বিতাড়িত করা হয়েছে, অনেক ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে, অনেক ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে, এবং অনেক জনকে তাদের
সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় বর্তমানে এই বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার জন্য, নিজ ভুমিতে সম্মান ও
ধর্ম নিয়ে বাঁচতে হলে আজ আমাদেরকে সব মতপথ ভুলে সকল গণতান্ত্রিক ও ধর্ম
নিরপেক্ষ মানুষকে একত্রিত হতে হবে। কোন অবস্থাতেই এবং কোন ভাবেই পবিত্র
গীতা পোড়ানোর ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারীদের ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের উপযুক্ত
শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে এবং এই লক্ষ্যে সকল শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ
একত্রিত হউন। পবিত্র গীতা অবমাননাকারী দের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদে ফেটে পড়ুন। সরকারকে বাধ্য করুন এর প্রতিকার করতে। আসুন প্রয়োজনে
জীবন বাজী রেখে রক্ষা করি এদেশের অপসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য। যারা অবলীলায় দখল
করছে আমাদের মন্দির, পুড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। তাই আসুন পালিয়ে প্রাণ রক্ষা নয় সত্যিকার ভাবে বাঁচার
জন্য জীবন বাজি রেখে রুখে দাঁড়াই।
এদেশের শান্তিপ্রিয় শুভবু্দ্ধি সম্পন্ন সকল শ্রেণীপেশা, সকল স্তরের মানুষের
কাছে আমাদের আকুল আবেদন, নিজের বিবেককে জাগিয়ে তুলুন ধর্মগ্রন্থ
অবমাননাকারী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসুন।
রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ আসীনদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন সমদর্শী হন, এই
সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প আজ সমগ্র জাতির জন্য অশনিসংকেত। হিন্দু স¤প্রদায়ের
নিরাপত্তাহীনতা ও ক্ষোভ প্রশমনে এখনি তড়িৎ কার্যকরী ব্যবস্থা নিন ।